নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছাইয়ের নেই আগুনের ভয়

জুলিয়ান সিদ্দিকী

জগতের সব কাজই আমি পারি না। অনেক কাজে অলস হলেও লিখতে কখনও ক্লান্তি বোধ করি না। এতে করে আমার সময়গুলো ভালো কাটে।

জুলিয়ান সিদ্দিকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অল্পস্বল্প ব্লগিং ৩

১৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:২৮

অল্পস্বল্প ব্লগিং ১

অল্পস্বল্প ব্লগিং ২





দম ফেলতে পানির ওপর ভেসে উঠতেই মেয়েটির হাসি শুনতে পাই। হালকা সাঁতারে পৌঁছে যাই তার মুখোমুখি। তার একটি কাঁধে হাত রেখে শরীরটা ভাসিয়ে রাখি। সে অবস্থাতেই সে শরীর ডলতে ডলতে বলে, অনেকদিন নতুন মানুষ পাই না। কিন্তু আমি ভাবতিছি কী এমন কারণ ঘটল যে, সভ্য মানুষ নোংরা কাদায় ঝাঁপ দিলেন?



সব ক্ষেত্রে বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতার কৌতূহলটাই প্রকাশ পায় বেশি। কিন্তু আমার বেলা ঘটছে উলটোটা। জীবনভর যেমনটা হয়ে আসছে। তার কাঁধ ছেড়ে দিয়ে একটু সরে গিয়ে পানির নিচের মাটিতে পা লাগতেই দাঁড়িয়ে পড়ি। অন্ধকার ফুঁড়ে দেখতে চেষ্টা করি তার মুখ। নিজের তুলনা করতে সচেষ্ট হই আমার ভেতরকার ভিন্ন আমিটার সঙ্গে। বলি, আসলে মানুষ মাত্রেই হয়তো অসভ্য। সময়ে সভ্যতার মুখোশ পরি। আমাদের রক্তে যে বুনো গন্ধ আর অসভ্যতার বীজাণু লুকানো আছে তা দূর করে এমন কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয় নাই এখনো। বনের জীব-জন্তু সভ্য হয় নাই বলেই নিজেরটা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। মানুষের ভেতর যারা সেই বীজাণুর পরিমাণ রক্তে বেশি ধারণ করে তারাও অন্যের ব্যাপারে ছাড় দেবার কথা ভাবতে পারে না।



-হুম!



বলেই মেয়েটি চুলের বাঁধন খুলে দিয়ে আবার ডুব দিয়ে উঠে তীরের দিকে এগিয়ে যায়। আমি পানিতে হালকা সাঁতারে আবার ভাসতে থাকি। কিছুক্ষণ পরই সুগন্ধি সাবানের ভুরভুরে ঘ্রাণ এসে জাপটে ধরতেই আমার ভেতরে ঝিমিয়ে আসা কাতরতা ফের প্রাবল্যের দিকে ছুটতে আরম্ভ করে।

ফেরার পথে মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করতেই সে হেসে উঠে বলেছিল, আমাদের আবার নাম কি? জগত তো একটা নামেই চেনে।



-তবু, একটা নাম তো আছে। বাবা-মা যেটা আদর করে দিয়েছিলেন অথবা স্কুলের টিচাররা যে নামে রোল কল করতেন?



-হুম!



বলে, সঙ্গে সঙ্গে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলল, এখনো সেই নামই আছে। নাজমা। বোরখা পরে কি আর নাচ হয়?



ভেজা শরীরে প্যান্ট-সার্ট পরেছি বলে বেশ আরাম পাচ্ছিলাম। গরমটাও তেমন তীব্র মনে হচ্ছিল না। নদীর ওপর দিয়ে আনাগোনা করতে থাকা এলোমেলো হাওয়া ভুলিয়ে দিচ্ছিল এ কদিন গরমে কী কষ্টটাই না পেয়েছি। বিমান বন্দরের বাইরে এসে দাঁড়াতেই যে শরীর ঘামতে আরম্ভ করেছিল, মনে হচ্ছিল তার আর বিরাম হবে না।



নাজমার ঘরে ঢুকবার মুখে দুজন বদ চেহারার পুরুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। একজন বৃদ্ধ আর অন্যজন মাঝ বয়সী। তাদের দেখতে পেয়েই নাজমা প্রবল রোষে বলে উঠল, তোমাগের আর কবে লজ্জা হবে? আমার টাকার ভাত এখনো তোমাদের গলা দিয়ে নামে?



বৃদ্ধ লোকটি বলল, তোর সঙ্গে একটু কথা ছেলো।





-আইজ হবে না। সঙ্গে লোক আছে দেখতি পাও না?



-আচ্ছা, যাচ্ছি। কাইল সকালে আসি।



-যাও যাও! সুরুজের আলোতে আর মুখ দেখাও না জানি।



অন্ধকার যেদিকে আরো বেশি ঘন হয়ে পৃথিবীর অন্য প্রান্তের সঙ্গে দৃষ্টির সংযোগ বাধাগ্রস্ত করে তুলেছে সেদিকেই যেন দু বয়সের দুজন হারিয়ে গেল আস্তে ধীরে। হঠাৎ আমার একটি হাত ধরে ঘরের ভেতর টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় নাজমা। আমি কিছু বুঝে উঠবার আগেই সে বিছানার ওপর রাখা একটি বড় টিফিন ক্যারিয়ার খুলতে খুলতে বলল, আগে দুডো খেয়ে নেন। আমারও খিদে পাইছে অনেক!



খিদে আমারও ছিল। কিন্তু ঘরের দরজা বন্ধ করবার সঙ্গে সঙ্গে একটি গুমোট ভাব আমাকে আবার নিরাসক্ত করে তুলছিল। শরীর ঘামতে আরম্ভ করেছিল খুব।



টিফিন ক্যারিয়ারের বাটির ওপরকার ঢাকনা খুলবার আগেই একটি সাদা প্লাস্টিকের বোতল হাতে নিয়ে ঢাকনা খুলে নাকের কাছে নিয়ে ভেতরের উপাদানটার গন্ধ শোঁকে নাজমা। তারপর বোতলের ঢাকনা ফের পেঁচিয়ে লাগাতে লাগাতে নিজেকে শোনাতেই যেন বলছিল, চারিদিগে কেবল চোর আর বাটপার। কেমন কইরে মানষ্যির পকেট কাটবি সেই ধান্দার শেষ নেই! তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দরজা খুলে চড়া কণ্ঠে হেঁকে বলে সে- বিন্দু কুয়ানে গেলি?



প্রৌঢ়া ঘরের বাইরে থেকে দরজায় মুখ বাড়িয়ে বলল, আছি তো!



-পানি মেশানো। ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে ট্যারা স্বপনের কাছে যা!



আগের বাসি চাদরটা চার ভাঁজ করে বিছানায় পেতে নিয়ে তার ওপর বাটিগুলো নামিয়ে সাজিয়ে রাখে সে। দুটো বাটিতে ভাত আর দুটোতে ভুনা মাংস। আরেকটা বাটিতে কয়েক টুকরো কাঁচা পেয়াজ আর দুটো কাঁচা মরিচ। বিছানার এক পাশে বসে একটি ভাতের বাটি তুলে নিয়ে তাতে মাংসের খানিকটা খাবলা দিয়ে তুলে মাখাতে মাখাতে বলে, খেয়ে নেন চট কইরে। বাতি নিভাতি হবে। কেরোসিনের দর একশ বিশ টাকা!



খিদে থাকলেও খাওয়ার ইচ্ছেটা চলে গিয়েছিল। বললাম, আপনি খান, আমি একটু পরেই শুরু করছি।



-আচ্ছা।



নাজমা খেতে আরম্ভ করে। খাবার মুখে নিয়ে চিবাতে চিবাতে বলে আবার, মন যখন চায় খাতি পারবেন। কিন্তু খিদে পেটে কাজ করতি পারবেন তো? একে তো নতুন বস্তা, তায় আবার পরবাসী। দুই তিন ঝাড়াতেই না আবার বান খইসে যায়!



কথা শেষ করে হাসতে হাসতে আবার খাবারের গ্রাস মুখে তোলে সে।

টিনের কুপির স্বল্প আলোতে তার চেহারাটা কেমন ভয় ধরানো মনে হয়। সব মিলিয়ে হয়তো আমার শরীর সাড়া দেবে না। যে তাড়না আর প্রত্যাশা নিয়ে এতটা পথে ছুটে এসেছি, শেষটায় কিনা সবটাই পণ্ড হয়ে যায়!



দরজাটায় দুবার টোকা পড়তেই বাইরে থেকে খুলে গেল। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় বিন্দু মাসীর মুখ। তারপরই বোতলটা বাড়িয়ে ধরলে আমি হাতে নিতেই সে দরজা টেনে দেয় বাইরে থেকে। বোতলের মুখ তামিল বা মালায়লাম ভাষায় লেখা একটি লেবেল দিয়ে সিল করা। ভারতীয় মাল। আমাদের দেশে আছে কেরু এন্ড কোম্পানির মাল।



নাজমা আমার হাতের দিকে তাকিয়ে ছিল। ততক্ষণে ঢাকনা খুলে নাকের কাছে বোতলটা তুলতেই সে বলে উঠল, খিদে পেটে খারাপ। কয়ডা মাংসের টুকরো মুহে দিয়ে নেন।



ব্যাপারগুলো জানা আছে আমার। কড়া স্পিরিটের গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা দেয়। তারপরই এক ঢোক মুখে নিয়ে গিলে ফেলি। ঝাঁঝালো তিতকুটে স্বাদ। সেই সঙ্গে মুখের ভেতরটা ঝিনঝিন করে উঠল যেন। আমাদের ক্যাম্পের কোনো কোনো ড্রাইভার লুকিয়ে চুরিয়ে বাংলা মদ দিয়ে যেতো মাঝে মধ্যে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা আর ভারতের কেরালার কেউ কেউ খুব গোপনে এসব মদ বানায়। আঙুরের সময় আঙুর নয়তো খেজুরের সময় খেজুর দিয়ে। নেপালি আর ভারতীয়রা ভাত আর ফল মিশিয়ে বানায়। কিন্তু সেসব গিলে আমার মুখে কখনো ঝিনঝিনে ভাব হয়নি। কিন্তু এখনকার সামান্য যেটুকু গিলেছি পেটের ভেতর যেতে যেতে গলার কাছ থেকে পুরোটা অঞ্চল খবর করে দিয়েছে। এক টুকরো মাংস তুলে মুখে দিতেই মনে বেশ চমৎকার রান্না। সেদ্ধও হয়েছে ভালো।



নাজমার খাওয়া শেষ হতে হতে বোতলের অর্ধেক আর একটি বাটির পুরো মাংসই কখন সাবাড় করে দিয়েছি বুঝতে পারি না। নাজমার কথাতেই খেয়াল হয় ব্যাপারটা। কিন্তু আমার কাছে নাজমাকে আর নাজমা মনে হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল দেয়াল বা বেড়ার গায়ে ইতস্তত নড়তে থাকা কারো ছায়া বুঝি।



এক সময় ছায়াটার নড়াচড়াও ঝাপসা হয়ে আসে। সে সঙ্গে কমতে থাকে আমার দেহের ওজনও। এটা কেমন করে হয়। চাঁদে বাতাস নেই বলে ওজনের কোনো ঝামেলা নেই। কিন্তু পৃথিবীতে ওজন হারাবার আরেকটি জায়গা আছে। আর তা হলো পানি। নদী, খাল, সমুদ্র বা সুইমিং পুলে নামলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে আমার অস্তিত্ব বিস্মৃত হবার আগে টের পাচ্ছিলাম যে, আমার ভেতরেই আরো একটি শক্তি জেগে উঠছে। যার হাত-পা, নাক-মুখ-চোখ কিছুই নেই। যার পুরো অস্তিত্ব জুড়েই আছে প্রবল ক্ষুধা। দীর্ঘকাল ঘুমিয়ে থাকার পর হঠাৎ জেগে উঠবার পর পরই সর্বগ্রাসী এক ক্ষুধা নিয়ে নেমে পড়েছে সেই কাঙ্ক্ষিত পথের সন্ধানে। যে পথ অতিক্রমণের ভেতর দিয়েই সে পেয়ে যাবে তার ক্ষুধা নিবৃত্তির যাবতীয় সমাধান।



(আর অল্প কিছুটা বাকি আছে।)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৪১

সকাল রয় বলেছেন: Valoy Lagsa Porta....

২০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৩৬

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ রয়।

২| ২০ শে মে, ২০১৪ সকাল ৮:৩৮

মামুন রশিদ বলেছেন: অসাধারণ! চমৎকার একটা পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে গল্পটা । এ পর্বে এসে অস্তিত্ব বিস্মৃত হবার অংশের বর্ণনা বেশি ভালো লেগেছে ।

২০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৩৭

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন। ভালো থাকুন সব সময়।

৩| ২০ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:১৪

ঢাকাবাসী বলেছেন: চমৎকার।

২০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৩৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ঢাকাবাসী ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন।

৪| ২০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:১৬

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
বর্ণনাশৈলী ভাল লাগল ৷ ভাল থাকুন ৷

২০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৩৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ আলজাহাঙ্গীর। ভালো থাকুন নিরন্তর।

৫| ২০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:১০

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
//আসলে মানুষ মাত্রেই হয়তো অসভ্য। সময়ে সভ্যতার মুখোশ পরি।//

-উদ্ধৃতি করতে ভালোবাসি। নিজে লিখতে না পারলে কী হবে পড়তে তো পারি!



বাকিটুকু পড়ে বাকি মন্তব্য দেবো :)

২০ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৪৭

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: বেশ। বাকিটুকু পড়েই না হয় বাকিটা বললেন। ততক্ষণ ভালো থাকুন।

৬| ২০ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:১৯

রাবেয়া রব্বানি বলেছেন: আজকেও হুম বললাম। তবে লেখা মনে ধরে নাই এটা ভুল ধারনা। পুরোটা শেষ হোক বলব।

২০ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৪৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: আচ্ছা, বাকিটা দিয়ে দিচ্ছি। শুনি তবে...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.