নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছাইয়ের নেই আগুনের ভয়

জুলিয়ান সিদ্দিকী

জগতের সব কাজই আমি পারি না। অনেক কাজে অলস হলেও লিখতে কখনও ক্লান্তি বোধ করি না। এতে করে আমার সময়গুলো ভালো কাটে।

জুলিয়ান সিদ্দিকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিঘির নাম কালশা

১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৮







সকালের ক্লাস শেষ হয়ে গিয়েছিল বিকেল চারটার দিকেই। বাসায় ফিরবে কি ফিরবে না তা নিয়েও কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিল সে। তার আশ্রয়দাত্রী হ্যাঁ আশ্রয়দাত্রীই বলবে সে, আর এমন কথা বলবার পেছনে তার যুক্তিটাও কম জোরালো নয়। সে যখন ক্লাস ফোর-ফাইভের ছাত্র তখন থেকেই জানে যে লোপা তার সহোদরা নয়। মা বলে সে যাকে জানে তিনি তার জন্মদাত্রী নন। তবু কোনো কারণে বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে গেলে মা-মেয়ে দুজনেই অস্থির হয়ে ওঠেন। ফোনের পর ফোন করে তাকে অস্থির করে ফেলে যতক্ষণ না জানাচ্ছে যে, কোথায় আছে সে। তাদের সঙ্গে তার রক্তের সম্পর্ক না হলেও সে নিজেও উপেক্ষা করতে পারে না সম্পর্কটি।



তুই আমার মায়ের পেটের ভাই না হলে কি হলো। তবু তো তুই আমার ভাই। আর তুই যখন আমাকে আপু বলিস, আম্মুকে আম্মু বলিস তখন কি তোর মনে হয় যে, তুই আমাদের কেউ না?



সকাল কী বলবে ভেবে পায়নি সেদিন। জিভ দিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে বলেছিল, না। এমন মনে হলে কি আর তোমাদের কাছে থাকতাম? তোমাদের স্নেহ-মমতা না পেলে আমিই বা এতটা বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকতাম কী করে? হয়তো এতদিনে টোকাই থেকে বড় হয়ে কোথাও ছোটখাটো কাজ-কর্ম করে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করতাম। নয়তো বা বাজে সঙ্গের কারণে ফুরিয়ে যেতে পারতাম। তোমরা আমার কেউ না হলেও কোনো না কোনো ভাবে আগের জন্মে কেউ অবশ্যই ছিলে।



আরে গাধা জন্মান্তর একটা অলীক ব্যাপার। মানুষ যা নাগালে পায় না তা কল্পনায় বানিয়ে নেয়। বলে হেসে উঠেছিল লোপা। লোপা যখন তার সঙ্গে কথা বলে, তার গলার স্বর পালটে গিয়ে কেমন আদুরে হয়ে ওঠে। দুজনের বয়সের খুব বেশি পার্থক্য না থাকলেও লোপার আচরণে মনে হয়, সত্যি সত্যিই সকাল যেন একটি শিশু। আর এ ব্যাপারটা তার ভালো লাগে খুব। মনে হয় জীবনটা নিতান্তই ফ্যালনা নয়।



আম্মু বলে যাকে সে ডাকে, সেই মণিমালা দত্ত একটি স্কুলের অংকের টিচার। এমনিতে তার ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে খুব রাগী মহিলা হিসেবে জানলেও সকালের কখনো মনে হয়নি যে, তিনি কখনো কোনো কারণে রাগ করতে পারেন। তার কথা অনুযায়ী স্কুলে মা মাসীদের মতো আদর দেখালে ছেলে-মেয়েরা সবগুলো বানর হয়ে যাবে দুদিনেই। শিক্ষক আর মা-মাসীদের মাঝে একটি দেয়াল থাকা জরুরি।



সিটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় সকালের ক্লাসমেট জাহিদ আর রাইসা একবার বলেছিল, তুই মুসলিম আর তোর মা-বোন খ্রিস্টান, ব্যাপারটা ঠিক মেলাতে পারি না। তুই কি আসলেই তাদের কেউ, নাকি ছোটবেলা তোকে কুড়িয়ে পেয়েছিল?



এমনটা ভাবছিস কেন তোরা? বলে, হেসে উঠেছিল সকাল। বলেছিল, আমি নিজেই নিজের ধর্ম পালটে নিয়েছি। বছর কয়েক আগে একটি নাটক দেখেছিলাম। যেখানে হুমায়ুন ফরিদীর চরিত্রটি ছিলেন অনাথ। বড় হয়ে যিনি নিজেকে হিন্দু বলে ধরে নিয়েছিলেন কেবল নিজের নুনু দেখে। সংলাপেও কথাটা ছিল। আমার অবশ্য এমন কোনো ব্যাপার নেই।



তবু ঘটনাটা মেলাতে পারি না। বলেই, কেমন সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল রাইসা।



এত কিছু ভেবে কী হবে? মা আর বোন এ দুটি সম্পর্কের ভেতর ধর্ম উঁকি দেবার তো কোনো সুযোগ দেখি না। বলে, একবার রাইসা আর জাহিদের চোখে চোখ ফেলে আবার বলে উঠেছিল সকাল, জানিস তারা আমার আকিকা করিয়েছে। আম্মু আমাকে নামাজ পড়া শিখিয়েছে। ছোট্ট একটা নামাজ শিক্ষাও কিনে দিয়েছিলেন। ছোটবেলায় লোপা আপু আমাকে প্রতিদিন সকালে বাড়ির পাশের মসজিদে নিয়ে যেত কায়দা পড়তে। কিন্তু হুজুরটা বেশি ভালো ছিল না বলে বেশিদিন যাওয়া হয় নি।



জাহিদ কিছুটা অস্থির হয়ে বলে উঠেছিল, তাহলে নিশ্চয় তারা জানতেন তোকে আগে থেকে।



হতে পারে। বললেও সত্যিটা কিছুতেই স্বীকার করতে পারলো না সকাল যে, তার মা স্বামী-শাশুড়ির অত্যাচার সইতে না পেরে তাকে নিয়েই পালিয়ে চলে এসেছিলেন ঢাকা শহরে। সেই দুর্দিনে তার মায়ের আশ্রয় জুটেছিল তাদের কাছেই। বাপ-ভাইয়ের অবস্থা ভালো থাকলেও ফিরে যাননি বাবার বাড়িতে। এসব ঘটনার কিছু মায়ের মুখ থেকে কিছু তার আম্মু মণিমালা দত্তের মুখ থেকে জেনেছে সে।



-এমন মানুষ হয় নাকি? একদিন তোর আম্মু আর আপুর সঙ্গে আমাদের দেখা করিয়ে দে না দোস্ত! অন্তত অন্যের কাছে না পারি আমাদের সন্তানদের কাছে বলতে পারি যে, এমন মানুষ সত্যিই পৃথিবীতে আছে।



জাহিদের কথার সূত্র ধরেই সকাল বলেছিল, আচ্ছা নিয়ে যাবো। কিন্তু তা আর হয়নি। পরীক্ষার ব্যস্ততায় আর পরীক্ষার পর কে কোনদিকে ছিটকে পড়েছে তাতেই তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।



হঠাৎ করেই তখন দেশের অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। এরশাদের বিরুদ্ধে মানুষ জেগে উঠল চারদিকে। তেমন সময়ে একদিন তার মা হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। হরতালে গাড়ি-রিকশা ডাক্তার কিছু পাওয়া যায়নি। তবু শেষে একটি ঠেলাগাড়িতে করে মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তিনি বাঁচেন নি। হয়তো তিনি তার পরিণতির কথা জানতেন। জানতেন খুব বেশিদিন পৃথিবীতে থাকতে পারবেন না। তাই হয়তো কৌশলে মণিমালা দত্তকে আম্মু ডাকতে শিখিয়েছিলেন আরো আগে থেকেই। নিজের ছেলে ছিল না বলে হয়তো তিনিও ব্যাপারটাতে খুশি হয়েছিলেন। লোপাকে সে এমনিতেই আপু ডাকতো।

অনেকদিন পর হঠাৎ করেই তার মনে পড়ে যায় জন্মদাত্রীর কথা। সার্টের কলারের কাছে হাত দিয়ে গলার সোনার চেইনটা একবার স্পর্শ করেই ফের হাত নামিয়ে নেয় সে। বাইরে বের হলে খুব সতর্ক থাকে যে, কোনোভাবে চেইনটা যেন কারো দৃষ্টিগোচর না হয়। কখনো পথেঘাটে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে বা ছিনতাই-রাহাজানির ভয় থাকলে সেটা খুলে সে পকেটে রেখে দেয়। মায়ের স্মৃতি বলতে তো এই চেইনটাই তার সম্বল।



বাসায় মায়ের একটি শাড়ি আছে। যেটাতে এখনও মায়ের শরীরের ঘ্রাণ লেগে আছে মনে হয়। সুটকেসের ভেতর একটি প্যাকেটে খুব যত্ন করে রেখেছে সে। যখন কোনো কারণে মন খুব বেশি খারাপ থাকে তখন শাড়িটা বের করে নাকে মুখে চেপে ধরে ঘ্রাণ নেয়। বুকে জড়িয়ে ধরে রাখে অনেকক্ষণ। এমন ব্যাপারটায় অবশ্য মনে খুব কষ্ট পান মণিমালা দত্ত। ভাবেন যে, তিনি তাকে যথেষ্ট আদর স্নেহ দিতে পারছেন না। তাই ব্যাপারটা এখন লুকিয়ে রাখে সে।



মায়ের সঙ্গে অনেক গল্প হতো তার। রাতে ঘুমানোর আগে মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে তার বাবার বাড়ির অনেক গল্প করতেন। তাদের গ্রামের নামটা সে ভুলে গেছে। সেখানে একটা বড় দিঘি আছে। একজন দরবেশের আদেশে কাটা হয়েছিল সেই দিঘি। পরে তার নামেই সে দিঘির নাম হয়েছিল। দিঘির নামটা আজকাল ঠিক মনে করতে পারে না সে। সেই দিঘিতে নাকি অনেক আগে মানুষের সাময়িক চাহিদা মতো তামা কাসার হাড়ি-পাতিল-থালা-বাটি উঠে আসতো। সবই আজ গল্প মনে হয়। মনে হয় তার মাও যেন কোনো এক গল্পলোকের বায়বীয় চরিত্র। আর তাই মায়ের স্মৃতিও যেন তার কাছে কোনো একটি দীর্ঘ স্বপ্নের মতোই।



ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়ে সকালের মনে হলো, আজ অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। পকেট থেকে সেল ফোনটা বের করে সময় দেখে মুখে চুক চুক শব্দ করে মাথা নাড়ে সে।



আধঘণ্টা বেশি হয়ে গেছে এরই মধ্যে। বাস পেতে পেতে আর ক্যান্টনমেন্ট পৌঁছুতে পৌঁছুতে আরো দেরি হয়ে যাবে। তাই সে ফোন করে ক্লাস এইটের ছাত্র জিসানকে জানিয়ে দেয় যে, সে আসতে পারছে না। বাসায় ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি।



ওপাশ থেকে জিসান খুশি হয়ে জানালো যে, কিছুক্ষণ পর তারাই তাকে আজ আসতে মানা করতো। গ্রামের বাড়ি থেকে অনেক আত্মীয়-স্বজন চলে এসেছে। পড়া-লেখার পরিবেশ নেই।



মনেমনে খুশিই হয় সকাল। আস্তে ধীরে সে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার ফুটপাতে উঠে যায়। বাস-স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখতে পায় রাকা আর বিন্নি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে।



তারা সকালকে দেখতে পেয়েই হাতছানি দিয়ে বলল, এই ছেলে আইসক্রিম খাবি?



তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে সে বলল, এই রোজা-রমজানের মাসে তোরা বাইরে আইসক্রিম খাচ্ছিস? ছি ছি!



রাকা বলল, আঙুর ফল চুক্কা!



বিন্নি বলল, রোজার মাস ঠিক আছে, কিন্তু এখন দিনের বেলা না। ইফতার টাইম চলছে।



তুই কি এখনও রোজা আছিস? বলে, হাসল রাকা।



দুপুর থেকে কিছু খাইনি। বলে, হাত পাতে সকাল।



সত্যি রোজাদার হলে খাওয়াতাম। আইসক্রিম চুষে নিয়ে বলল বিন্নি।



তখনই একবার পেছনে ফিরে সকাল বলল, যাইরে, তোরা এটাতে উঠতে পারবি না। সিএনজি নিয়ে চলে যা।



বাসের ভেতর বেজায় ভিড়। ভেতরকার যাত্রীদের গায়ের ঘাম-আর দুর্গন্ধের সঙ্গে কারো কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ মিশে বিশ্রী একটা গন্ধের ঝাপটা এসে লাগছিল সকালের নাকে। মুখটা বাইরের দিকে করে গেটের কাছেই প্রায় ঝুলে থাকলো কিছুক্ষণ। আর তখনই হঠাৎ গলার কাছে সার্টের কলারের ওপর কারো হাত পড়লো বুঝতে পারলেও কিছু করবার থাকে না তার। দুহাতে বাসের দরজা আর হ্যান্ডেল আঁকড়ে ধরেছিল বলে দেখতেও পারছিল না চেইনটা সত্যিই বেহাত হয়ে গেল কিনা। সামনের একটি স্টেশনে গিয়ে থামতেই ভেতরের দিকে জায়গা পেয়ে উঠে গেল সে। আর হাত দুটো মুক্ত হতেই এক হাতে ব্যাগটা নিয়ে আরেক হাতে গলায় হাত দিয়ে দেখল, নাহ, সত্যিই চেইনটা নেই। অনেককাল খুব সতর্ক হয়েই রক্ষা করেছিল মায়ের স্মৃতিটা। কী কুক্ষণে যে রাকা আর বিন্নির সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। নয়তো চেইনের ব্যাপারটা কিছুতেই ভুলে যেতো না সে। মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় তার। ইচ্ছে হচ্ছিল গলা ছেড়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে বাসের ভেতরই। কিন্তু প্রকৃতি আর সময় তাকে সংযম শিখিয়েছে বলে, আবেগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো।



বাসায় ফিরে চেইন ছিনতাই হবার কথাটা কাউকে না বললেও মনের ভেতরকার বেদনা চাপা ছিল না। লোপা তাকে দেখতে পেয়েই বলল, কিরে, কিছু ঘটেছে নাকি?



তারপরই তার গলার দিকে চোখ পড়তেই বলে উঠল, চেইনটা কি আজ পরিস নাই?



-পরেছিলাম। বাসে উঠবার আগ পর্যন্ত ছিল। মনে হলো কেউ গলায় হাত দিয়েছিল।



-কতবার বলেছি যে, সাবধানে থাকিস। তবু ভালো যে, রাস্তাঘাটে ছুরি-পিস্তলের মুখে পড়তে হয় নাই।



চেইন হারিয়ে সকালের মনটা বেজায় খারাপ ছিল। তার ওপর লোপার কথা শুনে ভেতরটা কেমন হাহাকার করে উঠল সঙ্গে সঙ্গেই। চোখ দুটো জ্বালা করে ভিজে উঠতে চাইলে সে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। তারপর সেখান থেকে বের হয়ে রাতের খাওয়া সেরে নিজের রুমে এসেই শুয়ে পড়ে বিছানার ওপর। কিছুক্ষণ পর উঠে সুটকেস থেকে মায়ের শাড়িটা বের করে বুকে চেপে ধরে রাখে কিছুক্ষণ। নাকে-মুখে চাপা দিয়ে ঘ্রাণ শোঁকে। মনেমনে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে, মা, তোমার স্মৃতিটা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারি নাই। আমি স্যরি!



এভাবে কতক্ষণ কেটেছে বলতে পারবে না সে। এক সময় ধাতস্থ হতেই পিসি খুলে প্রথম ইমেইল চেক করে সে। যদিও স্মার্ট ফোন তারও আছে, তবু ফোনে এসব তার ভালো লাগে না। ফেসবুক ওপেন করতেই ইনবক্সে বেশ কয়েকটি ম্যাসেজ দেখতে পায়।



কোনো কাজের ম্যাসেজ নেই। নোটিফিকেশন আছে গোটাকয়েক। সেখানে ক্লিক করতেই একটা নদী বা পুকুরের ছবি ভেসে ওঠে। বন্ধু তালিকার তুহিন আপলোড করেছে ছবিটা। কয়েকদিন আগে এমন একটি ছবি দেখে আরো আপলোড করতে বলেছিল তার কমেন্ট বক্সে। হয়তো সে গ্রামে গিয়েছিল দু একদিনের ভেতর। ছবি তুলে এনেছে স্মার্ট ফোনের ক্যামেরা দিয়েই।



লিঙ্কটাতে ক্লিক করে ছবিটা ওপেন করতেই সেখানে খানিকটা বর্ণনাও দেখতে পায়। গফরগাঁও, মাইজ বাড়ি। নদী বা পুকুর নয়। কালশা দিঘি বলে লিখেছে। আর তখনই যেন তার হৃৎপিণ্ডের ধুকপুক বন্ধ হয়ে যাবার অবস্হথা হয়। তার মনে পড়ে যায় ঘুমানোর আগে মায়ের মুখে অনেকবার শুনেছে কালশা দিঘির কথা। সে দিঘিতে ছোটবেলায় মায়ের ঝাঁপাঝাঁপি ডুব সাঁতার, চিৎ সাঁতারের গল্প। আহা মা। তোমার সেই কালশা দিঘি। আমি কালই যাবো সেখানে। বলতে বলতে অঝোরে তার দুচোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে। আর তার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের চিহ্ন হারিয়ে ফেলার অপরাধ বোধটাও যেন হালকা হয়ে আসে। সেই দিঘি। মায়ের শৈশব মিশে আছে যার পানিতে। তার চেয়ে বড় স্মৃতি আর কী হতে পারে? কিন্তু মায়ের বাপের নাম, ভাইয়ের নাম কিছুই তার মনে নেই। তাই মায়ের জন্মস্থানে গেলেও সে জানতে পারবে না, কে তার নানা, কে তার মামা। কেবল মায়ের নীরব স্মৃতিচিহ্নের সাক্ষী হয়েই তার জীবনে থেকে যাবে কালশা দিঘি। মাইজ বাড়ি। মায়ের বাপের বাড়ি। জন্মস্থান। যে গ্রামের ধুলোতে মিশে আছে মায়ের শৈশব কৈশোর আর যৌবনের কত না পায়ের ছাপ।



পিসির মনিটরের ওপর দিয়েই ছবিটার ওপর হাত বুলাতে থাকে সকাল। যেন কতকালের আপন এই কালশা দিঘি। মায়ের ঘ্রাণ মিশে আছে যে দিঘির শান্ত জলে।



(সমাপ্ত)



মন্তব্য ৩৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:১৮

ডি মুন বলেছেন:
গল্প ভালো লেগেছে। ছিমছাম নিরিবিলি গল্প।

শুভকামনা রইল।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৩৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ ডি মুন। ভালো থাকেন সব সময়।

২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৫৯

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: মণিমালা দত্ত দের মত মানুষ এখনো পৃথিবীতে আছে বলেই পৃথিবীটা এখনো টিকে আছে। টাচি একটা গল্প। খুব ভালো লাগল।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৬

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ প্রবাসী পাঠক।

ভালোবাসা-স্নেহ-মমতা আছে বলেই পৃথিবী টিকে আছে।

৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:২৫

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


ভাল লাগল +++

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ কান্ডারি অথর্ব।

ভালো থাইকেন সব সময়।

৪| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৯

মামুন রশিদ বলেছেন: মা এবং বোন হওয়ার জন্য সম্পর্ক লাগেনা, লাগে মমত্ববোধ । মণিমালা আর লোপা তাকে সেই মমতার বাঁধনে জড়িয়ে রেখেছে । সব কিছু ছাড়িয়ে মায়ের ঘ্রাণ মাখা দিঘীর জন্য আকুলতা হলো নাড়ির টান, সেই টান উপেক্ষার নয় ।

ভালো লেগেছে স্নিগ্ধ ভালোবাসার গল্প ।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৪৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন রশিদ।


মা এবং বোন হওয়ার জন্য সম্পর্ক লাগেনা, লাগে মমত্ববোধ ।

-কিন্তু আজকাল এমন ব্যাপারগুলো ধীরে ধীরে উধাও হয়ে যাচ্ছে। মানুষও ভাবনার দিক দিয়ে নষ্টদের দলের দিকে ছুটছে।

ভালো থাইকেন আপনি।

৫| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:২৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৫৩

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান মাহবুব।

ভালো থাকেন সব সময়।

৬| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:২২

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ভালবাসা আর স্নেহ মমত্ব সব ছেড়ে। এর উপর কিছু নেই।।
সেই দিঘিতে নাকি অনেক আগে মানুষের সাময়িক চাহিদা মতো তামা কাসার হাড়ি-পাতিল-থালা-বাটি উঠে আসতো- এই প্রবাদ বা কল্প-কাহিনী যাই বলুন না কেন, বোধহয় বিক্রমপুর অঞ্চলেই বেশী।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:০১

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ সচেতনহ্যাপী।


তামা-কাঁসার হাড়ি পাতিল থালা বাটির গল্প আমি শুনেছি আমার গ্রামেই, এমন কি আমার এক চাচাত বোনও এমন কথা বলেছেন, যে তিনি নিজেই এমন জিনিস ব্যবহার করেছেন। আরো অনেক বর্ষীয়ান মহিলার মুখেও এসব ঘটনার সত্যতার কথা শুনেছি। আর এমন কাহিনী সব জেলাতেই আছে, আছে এমন পুকুর বা দিঘি।

ভালো থাকুন সব সময়।

৭| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:২৩

জাফরুল মবীন বলেছেন: “বাসায় মায়ের একটি শাড়ি আছে। যেটাতে এখনও মায়ের শরীরের ঘ্রাণ লেগে আছে মনে হয়। সুটকেসের ভেতর একটি প্যাকেটে খুব যত্ন করে রেখেছে সে। যখন কোনো কারণে মন খুব বেশি খারাপ থাকে তখন শাড়িটা বের করে নাকে মুখে চেপে ধরে ঘ্রাণ নেয়। বুকে জড়িয়ে ধরে রাখে অনেকক্ষণ”-জুলিয়ান ভাই পুরো গল্পটাই ভাল লেগেছে;আর এ কটা কথাতো সার্বজনীন অনুভূতির,তাই হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ জাফরুল মবীন।

ভালো থাকুন সব সময়।

৮| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৪৬

ঢাকাবাসী বলেছেন: গল্প ভাল লাগল।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৩

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ ঢাকাবাসী।

ভালো থাকেন সব সময়।

৯| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৬

আবু শাকিল বলেছেন: চমৎকার লেখনী ।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৫১

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ আবু শাকিল। ভালো থাকুন সব সময়।

১০| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:২৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হৃদয় ছোঁয়া গল্প!

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৫৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ বিদ্রোহী ভৃগু। ভালো থাকুন সব সময়।

১১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:০৫

একজন ঘূণপোকা বলেছেন: চমৎকার!

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:০০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ একজন ঘূণপোকা। ভালো থাকুন সব সময়।

১২| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৫৭

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: সুন্দর ।ভাল থাকুন সব সময় ।

১৮ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:০৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন আপনিও।

১৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৬:৪০

সুমাইয়া বরকতউল্লাহ বলেছেন: আজকে সময় করে আপনার কয়েকটা লেখা পড়লাম।
আপনি দেখি বিরাট বড় রাইটার!
অনেক সুন্দর লেখেন আপনি।
লেখা আরো ছোট করে লিখলে ভালো হতো।।
আপনার জন্য শুভকামনা।

ছোটদের জন্য না লিখলে আপনার সাথে আড়ি।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:০৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: না না সুমাইয়া
ভয়ে থাকি ঝিমাইয়া
দিয়েন না গো আড়ি
ছোটদের জন্যি লিখবু তাড়াতাড়ি! :D

ভালো থাকেন সব সময়।

১৪| ২০ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৫

উপপাদ্য বলেছেন: আজ কবিতাই পড়ছিলাম, আপনার এখানে ঢু মেরে দেখি গল্প।

কবিতা দিবসে একটা গল্প পড়ে ফেললাম। খুব খারাপ কিছু করিনি। অপরাধ হবেনা।

চমৎকার লেগেছে।

ধন্যবাদ জুলিয়ান ভাই।

২২ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:০৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ উপপাদ্য।

কবিতার চেয়ে গল্প সরল। রসাস্বাদনে মাথা খোঁড়ার কষ্ট কম। :)


মাঝে মাঝে তাই গল্পও পড়তে হয়। ভালো থাকুন সব সময়।

১৫| ২১ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: জুলিয়ান সিদ্দিকী ,




মা'য়ের শূন্যস্থান যে পুরনীয় নয় তা বলার পাশাপাশি মাতৃস্নেহ, মায়া, মমতা যে জাতপাত মানেনা সে কথাও সুন্দর ফুঁটিয়েছেন গল্পে ।

এক মায়ের ঘ্রাণ মিশে থাকা আবেগ প্রধান গল্প ।

শুভেচ্ছান্তে ।

২২ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:১৫

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ আহমেদ জী এস। ভালো থাকবেন সব সময়।

১৬| ২২ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:১০

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ভালো লেগেছে গল্পটা। শুভেচ্ছা।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:০৩

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ রেজওয়ানা আলী তনিমা। ভালো থাকুন সব সময়।

১৭| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: মাঝে মাঝে ডুব দেওয়া খারাপ কিছু না দেখা যায়। একটানে পড়ার মতো অনেক গল্প পাওয়া যায়।

অল্প কথায় মণিমালা আর লোপার সুন্দর চরিত্রায়ন করেছেন, ভাল লাগল।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ প্রোফেসর শঙ্কু।

ডুব দিলে অনেক সময় অভিমান ভেবে ভুল করতে পারে অনেকে। ডুব দেওয়া খারাপ!

পুনরায় ভেসে ঊঠবার কারণে আপনার জন্য থাকল অফুরান শুভেচ্ছা।

১৮| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১৭

হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: ভালো

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ।

ভালো থাকেন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.