নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত্যুপূরী থেকে ফিরেঃ-১২লাহোর থেকে অ্যাবোটাবাদ(২য় পর্ব)

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:২৮

মৃত্যুপূরী থেকে ফিরেঃ-১২
লাহোর থেকে অ্যাবোটাবাদ(২য় পর্ব)

আলোচনা প্রসংগে বৃঃজেঃ সেজাদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও রাজনীতি নিয়ে কথা বললেন। তিনি স্বীকার করেন-একটি রাজনৈতিক সমস্যাকে সামরিকীকরনের জন্যই পাকিস্তান ভেংগে গিয়েছিল। যার জন্য সাধারন পাকিস্তানীরা দায়ীছিলনা-দায়ীছিল ভূট্টো ও সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা। তিনি বংগবন্ধুকে একজন গ্রেট পলিটিশিয়ান মনে করেন। জিয়াউর রহমানের সাহসিকতা ও সততার প্রশংসা করেন এবং বর্তমানে শেখ হাসিনা সরকারের ভারত তোষণ নীতির কথা বলেন। তিনি জানালেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বেশ কয়েকটা খন্ড যুদ্ধের স্পেশালী কামাল পুর যুদ্ধের(**প্রিয় পাঠক, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কামালপূরে পাকিস্তানী সেনাদের সাথে অকুতভয় বীর মুক্তি যোদ্ধা, মিত্র বাহিনীর অনেকগুলো খন্ড যুদ্ধের বিষয় এই পর্বের শেষে উল্লেখ করতে চেষ্টা করবো) টেকনিক্যাল রেফারেন্স এখন পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমীর ট্রেনিং লেসন অন্তর্ভুক্ত! আমি মজা করে প্রশ্ন করি-Those liberation war lessons which you teach your officers, there what position of Pakistan Army you showed to officers? Is that winner or looser side?
তিনি হাসিমুখে উত্তর দিলেন- It’s not important who is the winner or loser in the specific battle. The main vital thing is military tactics, strategic and technical importance of that warfare which we include our curriculum and train our officers.

আমরা আলোচনা করছি ওসামাকে নিয়ে, পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। আলোচনায় একটা বিষয় লক্ষনীয়-সেনা অফিসার থেকে শুরু করে প্রতিটা পাকিস্তানী যতটানা ভারত কিম্বা ইজরাইল বিদ্বেশী তার থেকে হাজারগুণ বেশী “আমেরিকান প্রশাসন” বিদ্বেসী। পাকিস্তানীরা মনে করে-সাধারন আমেরিকানরা ততটা খারাপ নয়-কিন্তু আমেরিকান রাস্ট্রীয় নীতি আগ্রাসী, সাম্রাজ্যবাদী এবং লুন্ঠনকারী! সব পাকিস্তানীরাই মনে করে- আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শয়তান। এমনকি ওবামা থেকে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বুশদ্বয় কম ভন্ড। আমি ব্রীঃজেঃ সেজাদকে প্রশ্ন করি- লাদেন কেনো মিলিটারী শহর অ্যাবোটাবাদ আশ্রয় নিয়েছিলেন? এই প্রশ্নের উওরে ফুটে উঠেছে-অ্যাবোটাবাদ এর ইতিহাস-ঐতিহ্য। ব্রীঃজেঃ সেজাদ বলেন-

“সত্যি কথা বলতে কী-পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর মধ্যে কিম্বা সাধারন মানুষের মধ্যে কে তালেবান নয়, কে হাক্কানী নয় তা আলাদা করা খুব সহজ নয়। তালেবান-হাক্কানী এবং আফগানিস্তান, পাকিস্তানীদের একটাই বিশ্বাস তা হচ্ছে আমেরিকা পাকিস্তানের শত্রু, মুসলিমদের শত্রু! একারনে মার্কিনীদের বিরুদ্ধে সবাই এক হাট্টা! সে কারনেই হাক্কানী-তালেবান-লাদেনদের যেকোনো অবস্থানে লুকিয়ে থাকা সম্ভব হয়েছে।“

অ্যাবোটাবাদে পাকিস্তানের বিখ্যাত কাকুল মিলিটারি একাডেমী। এখানে সেনা অফিসারদের সমরশিক্ষা/ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। একাডেমীতে রয়েছে তিনটি ট্রেনিং ব্যাটালিয়ন ও ১২টি কোম্পানি। এখানে বৃটিশ, আমেরিকা, রাশিয়া, ভারত,বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩৪টি দেশের সামরিক অফিসাররা প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। পাকিস্তানের কাকুল মিলিটারি একাডেমী একটি বিশাল সংরক্ষিত এলাকা। এর চারদিকে বাউন্ডারী দেয়া। সামরিক বাহিনীর সব অফিসার ও সেনারা এর ভেতরে বাস করে। বৃঃজেঃ সেজাদ বলেন- কাকুল মিলিটারি একাডেমী একটি মিলিটারী ভিলেজ। এটা নিজের মধ্যে নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখানে রয়েছে নিজস্ব দোকানপাট, বাজার। এখানকার লোকদের মধ্যে একটা নিজস্ব সামাজিক পরিমণ্ডল রয়েছে। এখানকার মানুষদের বাইরে যেতে হয় না এবং বাইরে থেকেও কেউ ভেতরে যায় না। হয়ত সেকারনেই ওসামা কিম্বা অন্যকোনো আগুন্তুকের প্রতি কারোরই কোনো দৃস্টি ছিলনা-যা আমাদের সামগ্রীক গোয়েন্দা অব্যাবস্থাপনার প্রমাণ কিম্বা বিষয়টা সর্বচ্চ গোয়েন্দা প্রশাসনের সহায়তায় ঘটে থাকবে।’

অ্যাবোটাবাদ পাকিস্তানের হাজারা অঞ্চলে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের অন্তর্গত একটি শহর। ওরাশ ভ্যালির ওপর এ শহরটি সুন্দর সাজানো গোছানো। রাজধানী শহর ইসলামাবাদ থেকে ৫৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে আর পেশোয়ার থেকে ১৫০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এ শহর। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৪,১৩৪ ফুট। মনোরম আবহাওয়া, উঁচুমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামরিক স্থাপনার জন্য এটা পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর একটি।
ব্রিটিশ আমলে অ্যাবোটাবাদ ছিল হাজারা জেলা সদর। অ্যাবোটাবাদ নাম রাখা হয় মেজর জেমস অ্যাবোট নামের এক বৃটিশ সামরিক অফিসারের নামে। হাজারা জেলার ডেপুটি কমিশনার হিসেবে তিনি ১৮৪৯- ১৮৫৩ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। মেজর অ্যাবোট চাকরি শেষে ‘অ্যাবোটাবাদ’ নামের একটি কবিতা লেখেন, এতে নিজের প্রতিষ্ঠিত শহরটির প্রতি তার ভালোবাসা এবং সেটা ছেড়ে যেতে হচ্ছে বলে তার কষ্টের কথা লেখা হয়-যা এখনও জেলা পরিষদ কার্যালয়ে বাঁধানো আছে। ২০ শতকের প্রথম দিকে অ্যাবোটাবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যান্টনমেন্ট ও স্বাস্থ্যনিবাস হিসেবে গড়ে ওঠে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ রেডক্রস এখানে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে। এই হাসপাতালে কাশ্মীরাঞ্চলে যুদ্ধরত হাজার হাজার আহতকে চিকিত্সাসেবা দেয়া হয়।

অ্যাবোটাবাদ শহরটিকে চারপাশ থেকে ঘিরে আছে সারবান পাহাড়শ্রেণী। ঐ পাহাড়ে উঠে দাঁড়ালে স্থানীয় অধিবাসী এবং ভ্রমণকারীরা শহর ও এর চারপাশের মনোরম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়। শহরের অবস্থান ও পাহাড়শ্রেণীর কারণে অ্যাবোটাবাদের আবহাওয়া গরমের সময় আরামদায়ক ও শীতকালে ঠাণ্ডা। অ্যাবোটাবাদের উত্তরে মানশেরাহ, পূর্বে মুজাফফরাবাদ, পশ্চিমে হরিপুর ও দক্ষিণে রাওয়ালপিন্ডি। অ্যাবোটাবাদের পশ্চিমে তারবেলা নামের বিখ্যাত বাঁধ।

শুরু থেকেই অ্যাবোটাবাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। পাকিস্তানের নাথিয়াগালাই ও নারানের মতো ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি আকর্ষণের মতো প্রচুর দর্শনীয় স্থান রয়েছে এখানে। গ্রীষ্মকালে পাঞ্জাব ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের তাপমাত্রা যখন ৪৫ ডিগ্রিতে ওঠে, পর্যটকদের একটা বড় অংশ তখন উত্তরে অ্যাবোটাবাদের দিকে সরে আসে। অ্যাবোটাবাদকে বলা হয় “সিটি অব স্কুলস” বা স্কুলের শহর। পাহাড়বেষ্টিত মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই ছোট্ট অ্যাবোটাবাদ অনেক পাকিস্তানীদের কাছে “পাকিস্তানি সানফ্রান্সিসকো”। এখানে দেশী পর্যটকদের ভীড় লেগে থাকে বছর জুড়ে। ২০০৫ সালের ভূমিকম্পের পর অ্যাবোটাবাদে সোয়াত উপত্যকা থেকে প্রচুর লোক আসতে শুরু করে। তালেবানের আক্রমণে বিপর্যস্ত লোকজনের আনাগোনাও বেড়েছে। সোয়াতের মানুষরা বিশাল কম্পাউন্ডওয়ালা বাড়িতে বাস করতে পছন্দ করে।

প্রাচীনকাল থেকে অ্যাবোটাবাদ একটি স্বাস্থ্যনিবাস হিসেবে পরিচিত। সে সুবাদে প্রচুর লোকের সমাগম এখানে। সুতরাং অ্যাবোটাবাদে নানা দেশের নানা লোকের বসবাস। সোয়াতের উদ্বাস্তু, দেশের ধনী লোকজন ও স্বাস্থ্যোদ্ধারে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকদের আবাসভূমি হচ্ছে এই অ্যাবোটাবাদ। এখানে প্রতিবেশীরাও একে অন্যকে ভালো করে চেনে না। আর যারা নতুন আসে তাদের সঙ্গেও কেউ যেচে আলাপ করে না। এখানকার মানুষ নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে থাকে। একে অন্যের প্রতি মনোযোগ দেয় খুব কমই। কেউ কারও প্রাচুর্য দেখে মুগ্ধ কিংবা বিস্মিত হয় না। অ্যাবোটাবাদের এ বৈশিষ্ট্যও হয়তো বিন লাদেনকে উদ্বুদ্ধ করেছে-ওখানে আশ্রয় নিতে।


দূপুড় গড়িয়ে বিকেল।
শহরের রাস্তায় তখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা হাত ধরাধরি করে স্কুল শেষে বাড়ি ফিরছে।

সাইকেল-মোটর সাইকেল চেপে অফিসথেকে বাড়ি ফেরার ঢল।
আর আমি ফিরছিলাম এক অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে। বিখ্যাত এই অ্যাবোটাবাদ শহরের মানুষগুলো এখন কত স্বাভাবিক। শুধু তাদের কাছে নয়, পুরো পাকিস্তানের মানুষই এখন স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিয়েছে পাকিস্তানজুড়ে সন্ত্রাসী ঘটনাকে। বোমা ফাটবে,মানুষ মরবে তাই বলে স্বাভাবিক জীবন তো থেমে থাকতে পারে না। আল কায়দা বা তালেবান হুমকি তাদের কাছে এখন স্বাভাবিক বিষয়। আত্মঘাতী হামলায় মৃতের সংখ্যা ১০০ হলেও তা হয়তো কয়েক মিনিট-বড়জোড় কয়েক ঘণ্টার জন্য থামাতে পারে স্বাভাবিক ছন্দ। কিন্তু আবারও খুব অল্প সময়ে শুরু হয় স্বাভাবিক জীবন। আমি নিজেও মেনে নেই-এই জীবন। জীবনের স্বাভাবিকতা কারো জন্য থেমে থাকেনা শুধু থমকে যেতে পারে।

** বাংলাদেশের স্বাধীনতা/মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কামালপূর যুদ্ধ বিশ্ব সমর ইতিহাসে এক বিষেশ স্থান অধিকার করে আছে-যে ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্ধ অংশ হয়ে আছে বীর বাংগালী স্বাধীনতাকামী একদল মুক্তি যোদ্ধাদের সাহসিকতার দৃষ্টান্ত। কামালপুরের অবস্থান বর্তমান জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ থানার ধানুয়া ইউনিয়নের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম।কামালপুর ততকালীন ইপিআর(বর্তমান বিজিবি) একটি বিওপি। সামরিক গুরুত্ব বিবেচনায় কামালপুর বিওপি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সেনা পোস্ট, তেমনি মুক্তি বাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কাছেও এই সেনা পোস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ একটি ঘাটি। অর্থাৎ এই সেনা পোস্ট যে বাহিনীর দখলে-সেই বাহিনীই সামরিক কৌশলে অধিকতর এগিয়ে!

স্বাধীনতা যুদ্ধ কালীন সময় অসংখ্যবার পাকিস্তানী সেনাদের সাথে মুক্তিবাহিনী, মিত্র বাহিনীর সাথে সন্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। এখানে যুদ্ধ হয়েছে বাঘে-মহিষে নয়-যুদ্ধ হয়েছিল-বাঘে-বাঘে/সিংহে সিংহে বলাই শ্রেয়! স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের “সামরিক পরিকল্পিত নিয়মে মুক্তিযোদ্ধা-পাকিস্তানী হানাদারদের সাথে প্রথম সন্মুখ যুদ্ধ” হয়েছিল এই কামালপুরেই। স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তি যোদ্ধাদের সেক্টর ভাগ হবার পূর্বেই ভারতীয় বাহিনীর সহায়তায়, জেনারেল ওসমানীর নির্দেশে জেড ফোর্স প্রধান মেজর জিয়ার সামরিক পরিকল্পনায় কামালপুর বিওপি আক্রমন করে। সেই যুদ্ধে সরাসরি নেতৃত্ব দেন ফোর্স কমান্ডার মেজর জিয়া, রেজিমেন্ট কমান্ডার মেজর মইন, রেজিমেন্ট সাব কমান্ডার ক্যাপ্টেন বজলুল গণি পাটোয়ারী, এ কোম্পানী কমান্ডার ক্যাপ্টেন মাহবুব, বি কোম্পানী কমান্ডার ক্যাপ্টেন হাফিজ,সি কোম্পানী কমান্ডার লেঃ মান্নান,ডি কোম্পানী কমান্ডার ক্যাপ্টেন সালাউদ্দীন মমতার(শহীদ/বীর শ্রেষ্ঠ), য়্যাডজুট্যান্ট ফ্লাইট লেঃ লিয়াকত এবং মেডিক্যাল অফিসার মজিবর রহমান ফকির। ৩০০ জন মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সেনা বাহিনী, ইপিআর সদস্য ছিল ৪৮ জন, বাকী সব সদস্য ১-৩ সপ্তাহ ট্রেনিং নেয়া ছাত্র, কৃষক জনতা-যাদের অনেকেই ১-৩ সপ্তাহ আগে পর্যন্ত কোনোদিন রাইফেল/গ্রেনেড চোখেও দেখেনি। অন্যদিকে পাকিস্তানী বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল মেজর কাইয়ুম, ক্যাপ্টেন আহসান মালিক ছাড়াও ১৬ জন জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারের সাথে ছিল দূর্ধর্ষ বালুচ রেজিমেন্টের ৩১ রেজিমেন্টের ১ প্লাটুন ২০০ নিয়মিত সৈনিক, ২০০ পাকিস্তানী রেঞ্জার ছাড়াও কয়েক শত এদেশীয় রাজাকার/বিহারী সহযোগী। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর সিগনাল ও আর্টিলারী সাপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও যুদ্ধের সময় অজ্ঞাত কারনে ভারতীয় বাহিনীর কোন প্রকার মিলিটারী লজিষ্টিক সাপোর্ট পাওয়া যায়নি। এইযুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধির জন্য এবং প্রথম সন্মুখ যুদ্ধের ফলাফল দেখতে মুক্তিবাহিনীর ফোর্স কমান্ডার ও রেজিমেন্ট কমান্ডারও যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। বৈরী আবহাওয়া ও প্রতিকুল অবস্থার কারনে এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছিল। ক্যাপ্টেন সালাউদ্দীন মমতাজ বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে শহীদ হন(মুক্তি যুদ্ধে প্রথম বীর শ্রেষ্ঠ), ৫০ জন মুক্তি যোদ্ধাও শহীদ হন এবং ক্যাপ্টেন হাফিজ, লেঃ মান্নান ছাড়াও প্রায় ১০০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।

পরবর্তীতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৯৫ মাউন্টেন’র ব্রীগেড কমান্ডার ব্রীগেডিয়ার জেনারেল হরদেব সিং ক্লেয়ারের নেতৃত্বে ২টি ব্যাটালিয়ন(১ মারাঠা ও ১৩ গার্ডস) ২ বার কামালপুর বিওপি আক্রমন করে তেমন কোনো সাফল্য অর্জন করতে ব্যার্থ হয়। ব্রীগেডিয়ার জেনারেল ক্লেয়ারের নেতৃত্বে যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর দুইজন উচ্চপদস্থ্য সেনা কর্ম কর্তা ছাড়াও ২৬ জন ভারতীয় সেনা সদস্য এবং ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মেজর তাহের ১১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার নিয়োজিত হবারপর তাঁর নেতৃত্বে ১৬ বার কামালপুর বিওপি আক্রমন করা হয়েছিল। প্রতিবার আক্রমনেই উভয় পক্ষের বিপুল প্রান হানী ঘটলেও কোনো পক্ষই চড়ান্ত সাফল্য অর্জন করতে ব্যার্থ হয়। তেমন এক যুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার মেজর তাহের গুরুতর আহত হয়ে একটি পা হারান। ব্রীগেডিয়ার জেনারেল ক্লেয়ারের নেতৃত্বে কামালপুর বিওপি অবরুদ্ধ করে রাখা হলেও পাকিস্তানী সেনারা আত্মসমর্পনে রাজী হয়নি বরং পালটা আক্রমন করে মুক্তি বাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে চলছিল! ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ারপর ভারতীয় বাহিনী মুক্তি যোদ্ধাদের নিয়ে ৩ ডিসেম্বর মেজর জেনারেল জি এস গীল এর নেতৃত্বে ৯৫ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন ও ১৫ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন সমন্বয়ে পূণরায় কামালপুর বিওপি আক্রমন করে। এই যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনী পূর্ণ শক্তির পদাতিক বাহিনীর সাজোয়া যান, ট্যাঙ্ক, ভারতীয় বিমান বাহিনীর ১ স্কোয়াডন যুদ্ধ বিমানের সাহায্যে যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু স্বল্প সংখ্যক সেনা নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আহসান মালিক দীর্ঘ ২১ দিন যৌথ/মিত্র বাহিনীকে প্রতিরোধ করে রেখে অসম সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সেনা প্রধান জেনারেল মানেকশ এবং অপারেশন কমান্ডার জেনারেল গীল এর লিখিত যৌথ সম্মানজনক নিরাপত্তা ও আশ্বাসে ক্যাপ্টেন আহসান মালিক মাত্র একজন জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার ৬০ জন পাকিস্তানী সেনা, ৪০ জন রেঞ্জার্স ও কিছু ৪১ জন রাজাকার নিয়ে আত্মসমর্পন করেছিলেন। মুষ্টিমেয় সমরাস্ত্র ও সেনা নিয়ে বিশাল ভারতীয় বাহিনীকে ২১ দিন পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখার জন্য জেনারেল মানেকশ ক্যাপ্টেন আহসান মালিক এবং যুদ্ধবন্দীদের সাথে শ্রদ্ধা ও সহয়ানুভূতির সংগে আচরণ করতে জেনারেল গীলকে নির্দেশ দেন।

কামালপুর যুদ্ধে মিত্র বাহিনী ও পাকিস্তানী বাহিনীর বিপূল পরিমান যান-মালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য শুধু মাত্র কামালপুর যুদ্ধের ২৯ জন মুক্তি যোদ্ধা সর্বচ্চ সাহসীকতার খেতাব বীর শ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হয়েছেন-যা একটি বিরল দৃষ্টান্ত। কামালপুর বিওপি’র পাকিস্তানী বাহিনীর প্রধান পরাজিত সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন আহসান মালিক তার সাহসীকতার জন্য ভারতীয় সেনা প্রধান জেনারেল মানেকশ কর্তিক প্রসংশিত হয়েছিলেন একই সাথে পাকিস্তান সরকাররেও সর্বচ্চ সামরিক খেতাব অর্জন করেছিলেন। অন্যদিকে দূর্ধর্ষ সেনা অফিসার আহসান মালিককে আত্মসমর্পনে বাধ্য করিয়ে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জি এস গীল ভারত সরকার কর্তিক ২য় সর্বচ্চ সামরিক খেতাব অর্জন করেছিলেন।

কামালপুর যুদ্ধে বিশ্ব সমর বিশারদগন দেখেছেন-শুধু মাত্র দেশ প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে অপ্রশিক্ষিত একদল ছাত্র কৃষক জনতার সমন্বয়ে গড়া মুক্তিযোদ্ধারা কী অসীম সাহসিকতার সাথে দীর্ঘ ৯ মাস লড়াই করেছে দূধর্ষ পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে। বিশাল ভারতীয় বাহিনীর কাছে পাকিস্তানী বাহিনীর কামালপুর বিওপি’র সেনারা প্রমান করেছে-স্বল্প সংখ্যক সেনাবল নিয়েও কিভাবে নিজ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়। কৌশলগত রণক্ষেত্র কামালপুর যুদ্ধ শুধু বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সেনা বাহিনীর জন্যই দৃষ্টান্ত মূলক নয়-সারা বিশ্বের সমরবিদদের কাছে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে আজ অনেক দেশেই সেনা অফিসারদের “কামালপুর যুদ্ধ” শিক্ষনীয় পাঠ্য।


(পরের পর্বে.........)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.