![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
মৃত্যুপূরী থেকে ফিরেঃ-১৩ (পাকিস্তান জুড়েই চলমান শিল্প কর্ম!)
পাকিস্তান নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে ভেসে ওঠে সংঘাত, জঙ্গি হামলা, আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ এবং ড্রোন হামলার ভয়াবহ চিত্র। কিন্তু এর বাইরেও যে একটি রূপ আছে, তা পাকিস্তানে না গেলে দেখার উপায় নেই। পাকিস্তান একটি সুন্দর দেশই শুধু নয়, ভ্রমণপিপাসু মানুষ বা পর্যটকদের জন্য অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। প্রাকৃতিক সম্পদ ও ঐতিহ্যে ভরপুর এ দেশটি। সঙ্গীতের তো তুলনা নেই। বিশেষ করে মেহেদি হাসান, নূরজাহান, গোলাম আলী, নুসরত ফতেহ আলী খান, রিফাত ফতেহ আলী খান প্রমুখ সঙ্গীতজ্ঞের সঙ্গীতের মাদকতায় মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না।
উপমহাদেশ ও সংলগ্ন দেশগুলোতে এখন যাত্রী পরিবহনে বিলাশবহুল বাসের অভাব নেই-বিশেষ করে আন্তজেলা পরিবহনে।আমাদের রাজধানী ঢাকাতেও ভলবো, হিনো, টাটার আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন বাসের কমতি নেই।কিন্তু এই ক্ষেত্রে পাকিস্তান অনেক পিছিয়ে আছে বললে ভুল বলা হবেনা। পাকিস্তানের আন্তঃজেলা তথা লং রুটের যাত্রী পরিবহনে তেমন ভালো বাস/কোচ আমার নজরে পরেনি।তবে পাকিস্তানের গনপরিবহনে নতুন সংযোজন হচ্ছে-পিপিপি প্রকৃয়ায় পাকিস্তান কোরিয়া যৌথ পরিবহন সুবিধা। তাহচ্ছে-পাকিস্তানের বিভিন্ন লং রুটে কোরিয়ান কোম্পানী DAEWOO Express Bus Service সরকারের সহযোগীতায় সম্পুর্ণ আলাদা ভাবে চমতকার পরিবহন সেবা দিচ্ছে। সেই বাসগুলো তেমন অত্যাধুনিক, নিয়মানূবর্তী পরিসেবা প্রদান করছে। উক্ত পরিবহন সেবায় সম্পুর্ণ ভিন্ন ভিন্ন বাস টার্মিনাল নির্মাণকরে যাত্রী সেবা প্রদান করছে।
পাকিস্তান সফরে গেলে একজন বিদেশির চোখ দু’টি বাহনে গেঁথে যেতে পারে। এ দু’টি বাহন হলো ট্রাক আর বাসের অলঙ্করণ। এটা যেন এক ‘চলমান শিল্প’। বাসগুলোর সাজসজ্জা অনেকটা বাংলাদেশের রিকশার অলঙ্করণের মতো। অসাধারণ এই অলঙ্করণ। স্টাইলের কারণে বিশ্বের যে কোনো দেশের বাস-ট্রাক থেকে পাকিস্তানি বাস-ট্রাকের অলঙ্করণ একেবারেই আলাদা। অলংকরণ মানেই নানান ছবি, লেখা-যা সমস্ত বাস-ট্রাক জুড়েই–যা ব্যয়বহুল হলেও পাকিস্তানি এ খাতে টাকা ঢালতে কার্পণ্য করেন না।আমার কাছে বিষয়টা মনে হয়েছে- যেকোনো অনুষ্ঠানাদিতে ঢাকাইয়া মহিলাদের প্রচুর অলংকার পরিধানেরমতই! যতই লেটেস্ট মডেলের ইঞ্জিন হোকনাকেন-বেশীরভাগ বাস/ট্রাকের বডিই সেই সেকেলে মুড়িরটিন মার্কা বাসের আদলে তৈরী হবে-কিন্তু সাজ স্বজ্জার কোনো কমতি নেই! এ জাতীয় অলঙ্করণ আমাদের চোখে ভাল নালাগলেও পাকিস্তানীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
পাকিস্তানিদের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করলে বলে- এটা তাদের একটা ঐতিহ্য। পাকিস্তানি মালিকরা অলঙ্করণ খাতে প্রতিটি বাস অথবা ট্রাকের পেছনে তিন থেকে পাঁচ হাজার ডলার খরচ করেন। এই অলঙ্করণের মাধ্যমে বাস-ট্রাকের গাঠনিক কাঠামোও বেশ খানিকটা পাল্টে যায়। তারপরও বর্ণীল পেইন্টিংস আর ক্যালিগ্রাফি, আয়না ও কাঠের কারুকাজ করে বাস/ট্রাককে রাস্তায় নামায়। এই অলঙ্করণের দিক থেকে বাসের চেয়ে পাকিস্তানি ট্রাক অনেক এগিয়ে রয়েছে। ট্রাকের চারপাশজুড়ে শোভা পায় হরেক অলঙ্করণের জৌলুস। ধাতব অলঙ্করণও তাতে বাদ যায় না! তবে অঞ্চলভেদে এসব অলঙ্করণে পার্থক্য রয়েছে। এ কারণে করাচি, পেশোয়ার, লাহোর, সোয়াত, রাওয়ালপিন্ডি আর কোয়েটার বাস-ট্রাকের অলঙ্করণে একই শৈলী অনুসৃত হয় না। বেলুচিস্তানি ও পেশোয়ারি বাস-ট্রাকে কাঠের কারুকাজ বেশি থাকে। রাওয়ালপিন্ডি আর ইসলামাবাদের বাস-ট্রাকে থাকে প্লাস্টিক শিল্পকর্মের প্রাধান্য।
আবার সিন্ধু প্রদেশের শিল্পীরা অলঙ্করণের জন্য উটের হাড় এক নম্বরে রাখেন। বাসে অলঙ্করণ করাচিতে একটু বেশি। ঐসব বাসে আবার রাতে জ্বলে মরিচা বাতি! এসব শিল্পকর্ম নিয়ে দেশ-বিদেশের লকজ ঐতিহ্য গবেষণার অনেক খ্যাতিমান গবেষক গবেষণাও করেছেন। এই শিল্পকর্মের পেছনে কোন ধরনের প্রেরণা কাজ করছে, তা নির্ণয়েও তাদের আগ্রহ রয়েছে। তারা পাকিস্তানি ট্রাকের নাম দিয়েছেন ‘যান্ত্রিক ডাইনোসর’। মূল গাড়ির উপর বাড়তি অলঙ্করণের পর এসব ট্রাকের বাহ্যিক আয়তন অনেকখানি বেড়ে কিছুটা দৈত্যাকৃতির হয়েযায়! আমার চোখে যা দৈত্যাক্রিতির মনে হয়েছে-তা পাকিস্তানের জনপ্রিয় লোকজ শিল্প।
পাকিস্তানি ট্রাকের পেছনে খুঁজে পাওয়া যায় দেশটির সামাজিক সাংস্কৃতিক মানচিত্র।কোনো কোনো বাস ট্রাকে দেখেছি- মক্কা-মদিনা থেকে শুরু করে জাতীয় বীর ও ফিল্মি তারকার ছবি শোভা পায়। লাদেন, সাদ্দাম হোসেন, হারকিউলিস, মোনালিসা আর প্রিন্সেস ডায়ানা, ইমরান খান, আফ্রিদীর ছবিও তাতে বাদ যায় না।সীমান্ত এলাকার কিছু কিছু গাড়িতে বুশ-ওবামাকে জুতাপেটা করার ছবির সাথে আমেরিকান পতাকা পোড়ানোর ছবিও দেখেছি! বলা যায়, পাকিস্তানি ট্রাক পেইন্টাররা নিজেদের মতো করে পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে বিদ্বেষ ও সেতুবন্ধন গড়ে তোলেন। এফ-১৬ জঙ্গি বিমান আর পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র ঘোরি ও শাহীনের ছবিও প্রায়ই চোখে পড়ে। তবে যানবাহনের গতির ধারণাটি ফুটিয়ে তুলতে তারা প্রায়ই ট্রাকের পেছনে বোরাক অথবা রকেটের ছবি এঁকে দেন।
পাকিস্তানে বাস-ট্রাক অলঙ্করণ একটি বিকাশমান শিল্পে পরিণত হয়েছে। আরব সাগরের তীরে এক কোটি ৪০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত বন্দরনগরী করাচিতে রয়েছেন ৫০ হাজার শিল্পী, যারা শুধু বাস অথবা ট্রাকের গায়ে অলঙ্করণ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন।পাকিস্তানের অনেক এলাকার গাড়ির শৌখিন মালিক করাচী থেকে বাস/ট্রাকে ছবি অলংকরণের জন্য শিল্পী হায়ার করেনেন!
(পরের পর্বে.........)
©somewhere in net ltd.