নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
নাজিম হিকমতঃ পিডিয়া....
'আমি মারা যেতে চাই ইস্তাম্বুলে, মস্কোয় এবং প্যারিসেও। আমার মৃত্যু গুলিকে আমি পৃথিবীর উপর বীজের মতো ছড়িয়ে দিয়েছি.....
সবচেয়ে যে দেশকে আমি ভালোবাসি সেটি হচ্ছে পৃথিবী।
ইতিহাস খ্যাত, সম্ভ্রান্ত অটোমান পরিবারে ১৯০২ সালে জন্ম নিলেও কবি নাজিম হিকমত, নিপীড়িত মানুষের দম বন্ধ করা- না বলতে পারা কথাগুলো মূর্ত করে তুলতে নিজের জীবন যৌবন কে বাজি রেখেছিলেন অবহেলায়। অত্যাচারী শাসকের হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে তুলেছেন বারবার- তাঁর কবিতা-নাটক-গদ্যের গর্জনে।
তাঁর কবিতার কেন্দ্রবিন্দুতে কেবলমাত্র তুরস্কের মানুষই নয় সারা পৃথিবীর সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন এবং দাবি।
তুরস্কের রাষ্ট্রযন্ত্রের চোখে তিনি ছিলেন রাষ্ট্রদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক। কোন দেওয়ানী ও ফৌজদারী অপরাধের জন্য নয়, মানুষের সাম্যের কথা, ন্যায্য অধিকারের কথা বলার এবং অপরকে উদ্বুদ্ধ করাই ছিল তাঁর অপরাধ। বামপন্থী আদর্শের সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকা ছিল এক নিদারুন ষড়যন্ত্রমূলক রাষ্ট্রদ্রোহিতা।
'জেলখানার চিঠি' প্রথম পড়েছিলাম সম্ভবত সত্তর দশকের। কবিতাটি বারবার পড়তে হয়েছিল-
এটি কি প্রতিবাদী কবিতা? প্রেম- বিরহ- বিচ্ছিন্নতা, একইসঙ্গে দুর্বার প্রতিবাদ এবং দুর্নিবার আশাবাদ পরস্পর যেন এক অনুভব থেকে আরেক অনুভবের গভীরে মিলিয়ে যাচ্ছিল। একটি ভাবের অনুরণন যেন অপরটির গভীরে সড়া তুলছিল। বিদ্রোহ এবং প্রেম শব্দ দুটি আপাত বৈপরীত্য নিয়েই যেন নাজিম হিকমত নামের সমার্থক হয়ে ওঠে - আমার কাছে। তার কবিতা জুড়ে জেগে থাকে বিদ্রোহের, প্রতিবাদের, অনন্ত ফুলকিরা।
আর বিদ্রোহী ফুলকি গুলির উৎসার তো নিপীড়িত মানুষের বৈষম্য জনিত অসহায়তার প্রতি, গভীর এক প্রেম ...... যা সমষ্টিকে সঙ্ঘবদ্ধ করতে চায় । চায়, অসহায় মানুষী দুর্বলতাকে বলিষ্ঠতার অভিমুখী করে তুলতে।
তাঁর কবিতার ভাব , ভাষা, অগ্নিগর্ভ প্রতিবাদ --- তুরস্কের সীমানা পার করে পৃথিবীর সমস্ত বঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। একই সঙ্গে ক্ষমতার অলিন্দে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। নিজেকে তিনি শাসকের কাছে এতটাই বিপজ্জনক করে তুলেছিলেন যে তাঁকে খোলা আকাশের নিচে সাধারণের মধ্যে মুক্ত রাখা, শাসকের কাছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হতে থাকে।
ফলত স্বদেশে নাজিমকে জীবনের অধিকাংশ সময়ই কারান্তরালে কাটাতে হয়। হয়ত সেই কারনেই তাঁর জীবনের অধিকাংশ মহত্তম লেখাগুলি লিখিত হয়েছে নারকীয় গারদের প্রায়ান্ধকার অন্তরালে। তাঁর কবিতার শরীর এবং অবয়বে এত আলোর ঝলকানি, শব্দের অবয়বে জেগে থাকে, মানুষী-মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষা।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রবাহিনী তুরস্কে ঘাঁটি গেড়ে বসলে তিনি রাশিয়ায় এবং এই সময় রাশিয়ার জাগরণে সমাজতন্ত্রের ভূমিকা কি , এটাও বোঝার উদ্দশ্যে মস্কোতে চলে আসেন। মস্কোয় ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগও করে নেন। এবং তখনো জীবিত ---- লেনিনের সর্বহারার মতাদর্শের গভীর অনুরাগী হয়ে ওঠেন। মায়াকোভস্কি র বন্ধুতা এবং সঙ্গ, এক নতুন শোষণমুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে এবং তার জন্য সংগ্রামী হতে শেখায়, নাজিমকে।
১৯২৪ এ তুরস্কের স্বাধীনতায় দেশে ফিরে আসেন নাজিম। শাসকের বদল ঘটে যদিও, কিন্তু শোষণের বদল হয় না। প্রতিবাদী নাজিমও উচ্চকণ্ঠ হতে থাকেন । দেশজুড়ে প্রতিবাদীদের ধরপাকড়- জেল- গারদ- গ্রেপ্তার, এ সব এড়াতে নাজিম আবার চলে আসেন রাশিয়ায়। ১৯২৮ এ স্বদেশে গণ-ক্ষমার আবহে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তুরস্কের কমিউনিস্ট পার্টিকে ততদিনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চারিদিকে গুপ্তচরের নজরদারি। প্রতিবাদীদের ধরপাকড়। তারমধ্যে নাজিমের লেখনী তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। পরিণামে পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে পাঁচ বছর তাঁর জেলখানায় কাটে। কিন্তু এই জেলখানা গুলি হয়ে ওঠে এই অপরাজেয় কথাশিল্পীর মহৎ সৃষ্টির ধাত্রীভূমি।
তার অগ্নিগর্ভ কবিতা ও রচনাবলী সেনাবাহিনী এবং তরুন যুব সম্প্রদায় কে বিপ্লবে উস্কানি দিচ্ছে- সমাজতন্ত্রের দিকে প্ররোচিত করছে- এই অভিযোগে তাকে ১৯৩৮ সালে আবার গ্রেফতার করা হয়। এবং অপরাধের শাস্তি স্বরূপ ২৮ বছর কারাবাসের ঘোষণা করেন বিচারক।
১২ বছর ধরে জেলের নারকীয় পরিবেশে বিধ্বস্ত নাজিম , অনশন শুরু করেন ১৯৪৯ সালে। একই সঙ্গে এই কারাবাস আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন তোলে। প্রতিবাদ শুরু হয়।
নাজিমের মুক্তির দাবিতে এক আন্তর্জাতিক কমিটি গঠিত হয় - পাবলো নেরুদা, জাঁ পল সার্ত্রে, পল রোবসন প্রমুখের নেতৃত্বে।
১৯৫০ এ যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন , কবি পাবলো নেরুদার সঙ্গে। একই সময়ে তুরস্কের ক্ষমতায় গণতান্ত্রিক সরকারের উত্থান। নাজিম জেল থেকে মুক্তি পান।
শাসকের বদল, শাসনের ধারাকে বদলায়না। দু-দুবার হত্যার চেষ্টা হয় নাজিমকে। তিনি বেঁচে যান। এবার একটি ছোট মোটর বোটে করে বসফরাস প্রণালী পাড়ি দেন নাজিম। বুলগেরিয়া হয়ে রাশিয়ায়, রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। প্রিয় স্বদেশের ভীত শাসকেরা, তাঁর নাগরিকত্বের অধিকারও কেড়ে নেয়।
অবশ্য তার মৃত্যুর প্রায় ৫০ বছর পর ৫ লাখ তুরস্কের নাগরিক, সরকারের কাছে নাজিমের দেহাবশেষ, মস্কো থেকে ইস্তাম্বুল আনার এবং তাঁর নাগরিকত্বের পুনর্বহালের লিখিত দাবি জানায়। এসবের যখন তাঁর আর কোন প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু আত্মসম্মান সম্পন্ন স্বদেশবাসীর ছিল।
স্বদেশের সাম্রাজ্যবাদী-রাষ্ট্রবাদী শাসকবৃন্দ তাঁকে যতই বঞ্চিত করুক, যতই অত্যাচার করুক তবুও নাজিম , নাজিমই! তাঁর নাটক উপন্যাস এবং সর্বোপরি কবিতা যা তাঁর বিপর্যস্ত জীবন জুড়ে, সঞ্জীবনী মন্ত্র হয়ে বয়ে চলে শিরায় শিরায়।
আর মানুষের জন্য তা হয়েওঠে জাগরনের গান। একইসঙ্গে বিদ্রোহে এবং প্রেমে.... কখনো তরবারি নামিয়ে রেখে হৃদয়ের বাগানে, নাজিম ফুটিয়ে তোলেন , বসরাই গোলাপ।
সোভিয়েত বন্ধুরা কখনো কখনো তাঁকে ডাকতো, "নীল চোখো দানব" বলে। নারীরা তাঁকে ভালোবাসতেন। এমনি এক সময়ে - ৬০ বছরের চিরবিদ্রোহী, চিরতরুণ এর জীবন, হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে ভেসে যায়, এক উথালপাতাল প্রেমের দুকুল ভাসানো তীব্র জোয়ারে। যে জোয়ারের নাম- ভেরা তুলিয়াকোভা।
৩০ বছরের দিপ্তীময়ী রুশ সুন্দরী। এক কন্যাসন্তানের জননী, ভেরা ছিলেন নাজিমের জীবনে চতুর্থ এবং সর্বশেষ প্রেমিকা। সুন্দরী ভেরা নিজের অজান্তেই , এই চলমান কিংবদন্তির , আকুল হৃদয়ের গভীরে বসরাই গোলাপের সুবাস হয়ে জেগে থাকেন......
*******************************************
ভেরা তুলিয়াকোভাকে নাজিম কিছুতেই ভুলতে পারেন না। তাঁর সঙ্গ ছাড়া নাজিমের বাঁচার যেন আর কোন পথই নেই --- এমন মনে হয় তাঁর। নিরন্তর ভেরার সঙ্গ কামনা তাকে একইসঙ্গে আবিষ্ট এবং চঞ্চল করে রাখে। ভেরা কে তিনি অনুরোধ করেন পুরনো একটি চলচ্চিত্র দেখাবার জন্য।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর চলচ্চিত্রটি জোগাড় করে প্রদর্শনীর আয়োজন করেন ভেরা। নাজিম কয়েকজন সঙ্গীসহ সেই প্রদর্শনীতে আসেন। চমৎকার ছবিটি। মুগ্ধ হয়ে দেখছিলেন ভেরা। হঠাৎ তাঁকে অবাক করে মাঝপথে উঠে পড়েন নাজিম। ভেরা কে সিঁড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেবার অনুরোধ করেন।
ভেরাঃ ছবিটি কি তোমার ভালো লাগেনি?
অতি দ্রুত পায়ে নামতে নামতে সিঁড়ির মাঝে দাঁড়িয়ে পড়েন নাজিম। কনুই এর কাছে হাতটা ধরে কিছুক্ষণের নীরবতা। তারপর ভেরা র মুখের উপর চঞ্চল দৃষ্টি বুলিয়ে হঠাৎ বলেন, "আমি তোমাকে ভালবাসি ভেরা"।
'দস্যু'র মত পুরুষটির নীল চোখ বেয়ে টপটপ করে গড়িয়ে পড়া অশ্রু, বিপর্যস্ত করে দেয় ভেরাকে। এমন একজন পুরুষের চোখে জল!
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিখ্যাত মানুষটির কান্নাভেজা চেহারার দিকে হতবাক, তাকিয়ে থাকে ভেরা।...........
দৃশ্যান্তরে অসম্মতি..... তর্ক-বিতর্ক.......
একটা আশ্চর্য রকমের জেদি, নাছোড়বান্দা ,অবুঝ মানুষ........
ভেরার নিজের সন্তান ......সংসার.....
মানুষটির উন্মাদের মতো সীমাহীন আগল ভাঙা ভালোবাসা........ ভেরা যেন অথৈ জলে......
ভেরার সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর জন্য একসঙ্গে নাটক লেখা শুরু করেন নাজিম। ভেরাকে নিয়ে অসংখ্য কবিতা.... পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে অজস্র চিঠি পাঠান তিনি।
নাজিমের হৃদরোগ ধরা পড়েছে- তিনি বেশি দিন বাঁচবেন না। কিন্তু বেঁচে থাকা সেই অল্প সময়ের জন্যই, ভেরাকে চোখের আড়াল হতে দিতে পারবেন না তিনি। মাঝে মাঝেই তাকে বিদেশ যেতে হয়, কিন্তু বিবাহ ছাড়া ভেরাকে সঙ্গে নেবেন কি করে?
ভেরাকে ছাড়া কোথাও যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভবই নয়। আর কোন হোটেলে তো একসঙ্গে থাকতেও দেবে না, অবিবাহিতদের। তাহলে?
ভেরাকে বিয়ে ছাড়া, অন্য কোন কিছু ভাবার জায়গায়ই নেই নাজিমের কাছে! নাজিমের আগের প্রেমিকা , মুনেভভার, ইস্তাম্বুল কন্যা। গ্যালিনা তাঁর স্ত্রী। গ্যালিনার সঙ্গ ই সবচেয়ে বেশিদিন পেয়েছেন নাজিম। আট বছর। গ্যালিনা র সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান তিনি।
দুজনে মিলে উপার্জিত, যা কিছু স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ৯০,০০০ রুবল মূল্যমানের , নিঃশর্তে গ্যালিনার হাতে তুলে দেন নাজিম। সঙ্গে একটি চিঠিও;
----"স্বামী হিসাবে তোমাকে ত্যাগ করছি। কিন্তু সারা জীবন তোমার বন্ধু হিসাবে থেকে যাবো। সে তুমি চাও, বা না চাও"।
গররাজি ভেরা কে সামলাতে বন্ধু ভোলপিনকে দিয়েও দূতিয়ালি চালান নাজিম। ভেরা ভেবে পায় না কি করবে সে! ভয় পায়, নাজিমের আগ্রাসী ভালোবাসাকে। একসময় নাজিম হয়তো তাঁরই কাছে গল্প করা, কোন কোন তুর্কি গ্রাম্য পুরুষেদের মতো, তাঁকে বন্দি করে রাখবে। ঢেকে দেবে মুখ রুমাল দিয়ে।
অসম্ভব ---- এমন আগ্রাসী ভালোবাসা নরক করে তুলবে আমার জীবনটাকে - বলেই ফেলে ভেরা।
ভোলপিনের দৌত্য চলতেই থাকে। ভেরাকে বলে, নাজিম এর মধ্যে প্রেমিক মানুষটিকেই তুমি বিয়ে করো।
নাজিমের যুক্তি আমার বয়স যদি কম হতো, আমি অনেক সময় পেতাম, ভালোবাসার জন্য। সে বয়সে আমি এত কষ্ট পেতাম না। ভালোবাসাও হতো প্রশান্ত।
দেখো আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে। ভালোবাসার জন্য আমার সময় খুব কম। আমি আমার প্রতিটি মুহূর্ত জুড়ে, ভেরার মুখটাকে দেখতে চাই। অন্য কারো সঙ্গে ওকে দেখলে আমি সহ্য করতে পারি না, যদি না আমি ওর সঙ্গে থাকি। এমনকি রাগের মাথায় ওদের গায়ে হাতে তুলে দিতে পারি....
স্বপ্নদেখা নাজিম তার ১৭ বছরের জেল জীবনে এক বিমুর্ত প্রেমিকার রূপকল্প তৈরি করেছিলেন। হয়তো দুঃসহ শ্রমশীল জীবন টাকে সহনীয়, মধুর করে তুলতে। সেই রূপকল্পই যেন ভেরার মধ্যে অকষ্মাৎ রক্তমাংসের প্রেমিকা হয়ে দেখা দিল ।
নাজিম বলেন - ভালোবাসা সব সময় খুব বুদ্ধিমান যৌক্তিক বিষয় নয়। বেশিরভাগ সময়েই বোকাবোকা ব্যাপার হয়। সেই জন্যই তো কষ্ট পাই। ভেরার সহযোগিতা আমার চাইই চাই। আমি জানি বিয়ে হয়তো এ অবস্থা থেকে মুক্তি দেবে না, কে জানে, আবার দিতেও তো পারে। একবার চেষ্টা তো করে দেখা যাক।
দুজনের যৌথ জীবন শুরু হয় ১৯৬০ এর মার্চ থেকে ভেরা প্রথমে তাঁর পূর্বতন স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ নেননি। কিন্তু ৬০ বছরের আগ্রাসী তরুণের তীব্র ভালোবাসা , তাঁর জন্য আর কোনো পথ খোলা রাখতে দেয়নি।
১৯৬০ এর নভেম্বরে তাঁদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহ রেজিস্ট্রার অফিসে তিনজন আসেন। পেছনে নেমে ট্যাক্সি ভাড়া মেটাবার সময়, ট্যাক্সি ড্রাইভার এর প্রশ্ন---
---- ক্ষমা করবেন, আপনিই কি নাজিম
হিকমত ?
---- হ্যাঁ ভাই , আমিই নাজিম হিকমত ।
---- ক্ষমা করবেন , আপনি কি বিয়ে করতে
এসেছেন ?
---- হ্যাঁ ভাই, আমি বিয়ে করতেই এসেছি
---- কমরেড, কমরেড হিকমত, আপনি এতগুলো
বছর জেলখানায় ছিলেন, তারপরও বন্দি
জীবনের প্রতি এত আগ্রহ আপনার?
---- বন্দি জীবনটাই যে অভ্যাস হয়ে গেছেরে ভাই,
আর কিছুই করার নেই।
নাজিমের মৃত্যু ৩রা জুন ১৯৬৩ সকালে। পাশের ঘরে শুয়ে থাকা ভেরা বুঝতেই পারেননি। সাড়া না পেয়ে খোঁজ করতে গিয়ে, দরজার গায়ে হেলান দিয়ে বসে থাকা নাজিমের নিথর শরীর দেখেই বাকরুদ্ধ হয়ে যান। তার সামনে সমস্ত চরাচর শব্দহীন..... অন্ধকার ......
মস্কোর নেভাদেভিচি কবরখানায় সমাধিস্থ করা হয় নাজিমকে ।
মাত্র কয়েক বছরের যুগলবন্দি! ভয় ছিল, তবুও ভাবতেই পারেননি ভেরা, সেই আগ্রাসী ভালোবাসা এত দ্রুত অন্তিম বিচ্ছেদ ব্যথার অন্ধকারে অকষ্মাৎ ডুবে যাবে। সেই মধুর সময়ে র পদাবলী, এত সহজেই কি মৃত্যুর কুয়াশায় বিলীন হতে পারে?
না, তা হয়ও না।
ভেরা প্রতিদিন সেই সমাধিতে এসে বসেন। প্রতিদিন! তাঁর মুখ না দেখে নাজিম থাকতে পারতেন না। তিনি নিজেও তো পারতেন না আর, নাজিমের সঙ্গছাড়া হতে। তার সমগ্র সত্তা জুড়ে এখন কেবল নাজিম -নাজিম -নাজিম.......
তাঁরই পাশে শেষ আশ্রয় না পাওয়া পর্যন্ত, নাজিমের কাছ থেকে পরিত্রাণ নেই তাঁর। আর সে পরিত্রান তিনি নিজেই চান না। অবুঝ, অভিমানী, পাতালবাসী র সঙ্গে অন্তহীন সংলাপ তাঁর চলতেই থাকে ---- সেই শব্দহীন অলৌকিক ভাষায় ---- যে ভাষায় প্রেমিক-প্রেমিকারা বিরহে , দূর নক্ষত্রের দ্যুতির সঙ্গে.... কাস্তের মত চাঁদের ভেলায় ভাসতে ভাসতে কথা কয়ে যায়.......
অনির্বচনীয় কয়েকটি মাত্র বছরের স্মৃতি! যুগ-যুগান্তরের বলেই মনে হয়। নাজিম ছাড়া কোন অতীত যেন ছিল না তাঁর!
কত কত কত.... কথা ...কথারা আর শেষ হতে চায় না , কেন ......
ডানা মেলে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসতে থাকে..... আসতেই থাকে ...... যতক্ষণ না ক্লান্ত-ডানা পাখিরা অন্ধকার নেমে এলে
নীড়াভিমুখী হয়.....
এভাবেই একক সংলাপ যুগলবন্দী হয়ে বাজতে থাকে হৃদয়বীণায়। প্রত্যুত্তর ও ফিরে ফিরে আসে।
সমাধিস্থলে এইসব দিনের পর দিন চলতে থাকা অন্তহীন পদাবলী রুশীয় আখরে প্রকাশিত হয় ২০০৯ এ ---- 'আমার চোখে নাজিম হিকমত'--- ভেরা তুলিয়াকোভা।
অবশেষে ২০০১ এ ১৯ এ মার্চ নাজিমের পাশে শেষ আশ্রয় নেন ভেরা।
এক সমাধিতেই যুগলবন্দি --- নাজিম-ভেরা ।।।
মৃত্যুর সেই সকালেই ভেরা তার নিজের একটি ছবি দেখতে পান । উল্টে দেখেন, পিছনে নাজিমের একটি কবিতা ভেরাকে, গোটা গোটা অক্ষরে
লেখাঃ দ্রুত এসো আমার কাছে - বলেছিলে
আনন্দ দাও আমাকে - বলেছিলে
আমাকে ভালোবাসো - বলেছিলে
নিজেকে শেষ করে দাও -বলেছিলে
দ্রুত এসেছি
আনন্দ দিয়েছি
ভালোবেসেছি
মরে গেছি।
কবে এই ক'টি লাইন যে লিখে রেখেছেন নাজিম! কবে.... কবে ..... কবে.... মাথার মধ্যে অক্ষর গুলো মৌমাছির গুঞ্জন তুলে চলে অবিরাম...... কবে লেখা? ..... আজই কি?.... না কাল ?
"সবচেয়ে সুন্দর কথা গুলি আজও আমার বলা হয়নি " - লিখেছিলেন নাজিম।
এই কি ছিল তাঁর সেই সংক্ষিপ্ত ,ঋজু , সুন্দরতম কথার নিঃশব্দ কথকতা।
তথ্য ঋণঃ অন্তর্জাল
১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩১
জুল ভার্ন বলেছেন: হ্যা রাশিয়াতে তাঁর অনেক যুগান্তকারি লেখা রয়েছে।
২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:১৮
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: যেটুকু পড়েছি কবির সম্পর্কে ভাল লেকেছেন -----------
কিছু জানলাম
১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:২৪
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৩৭
কামাল১৮ বলেছেন: শোষণ ,নিপীড়ন ও বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখতেন নাজিম হিকমত।
৪| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন।
পোষ্ট টি মন দিয়ে পড়লাম।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
মস্কোতে স্হায়ী হওয়ার পর, তিনি কিছু লিখেছিলেন?