নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
সাইকেল শেখা......
গ্রীন রোড স্টাফ কোয়ার্টার মাঠের পশ্চিম প্রান্তে প্রতিদিন সকালে বাজার বসে। দেশীয় তাজা মাছ, মুরগী শাকসবজি পাওয়া যায়। সকালে হাটতে বেরিয়ে মাঝেমধ্যে ওখান থেকে মাছ সব্জির কিনে বাড়ি ফিরি। সেদিনও বেরিয়েছিলাম। হঠাৎ নজর আটকে গেল একটা খুব পরিচিত দৃশ্যে, যা প্রায়শই আমাদের নজরে পড়ে, কিন্তু অতটা খেয়াল করিনা...
মাঠে এক ভদ্রলোক তার ছেলেকে সাইকেল চালানো শেখাচ্ছেন। ছেলেকে সীটের উপর বসিয়ে বাবা কিছুটা ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন। ছেলেও কিছুটা চালাতে পারছে, তারপর পড়ে যাচ্ছে। বাবা দৌড়ে গিয়ে তাকে আবার তুলে ধরছেন। সীটে বসিয়ে আবার তাকে কিছুটা ঠেলে দিয়ে বলছেন, "এই তো হচ্ছে, সামনের দিকে তাকাও, দূরে তাকাও। ভয় পেওনা। এই তো ব্যালেন্স এসে গেছে। এই তো হচ্ছে... হচ্ছে, হচ্ছে, সাবাস...হচ্ছে। চালাও..."
আমার বেশ লাগছে দেখতে। দাঁড়িয়ে গেলাম৷
ছেলেটা আবার পড়ে গেল। বাবা ছুটে গিয়ে তুলে দাঁড় করালেন। ছেলেটা আজ আর শিখতে চাইছে না। বাবা আবার তাকে জোর করে সাইকেলে তুলে বললেন, "আর দুপাক চালাও, পুরো শিখে যাবে।"
ছেলে আবার প্যাডেলে চাপ দিল। একটু বেঁকতে বেঁকতে দেহের ভারসাম্য হারিয়েও নিজেকে সোজা করে নিল৷ প্যাডেলে চাপ দিয়ে কিছুটা এগিয়ে গেল৷ কি আশ্চর্য্য! আর পড়ে যাচ্ছে না। সুন্দর চালাচ্ছে!
বাবা মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কিছু বলছেন, তবে সে আওয়াজ ছাপিয়ে ছেলের গলা শোনা যাচ্ছে, "বাবা আমি পারছি। আমি পারছি। পারছিইইই..."।
ছেলের চোখে মুখে বিজয়ীর হাসি। বাবার মুখে পরিতৃপ্তির। সাইকেল ঘুরে চলেছে....একপাক, দুপাক, তিনপাক....
স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল আমি টাইম মেশিনে চেপে তেপ্পান্ন বছর পিছিয়ে গেছি ............
বাড়ির সামনে ধানমণ্ডি মাঠ(এখন শেখ জামাল ক্লাব)আমার বাবা আমাকে বলছেন "সাবাস, এই তো হচ্ছে। জোরসে প্যাডেল ঘোরাও। ভয় পাবেনা। দূরে তাকাও... চাকার দিকে তাকাবেনা, সামনে তাকিয়ে প্যাডেল করো"......
আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মত কানে সেই শব্দগুলো শুনছি আর পালন করে যাচ্ছি সাধ্যমত।
মনে হচ্ছে আমি সাইকেল চালানো শিখছি... মাঝে মাঝে পড়ে যাচ্ছি। আবার উঠছি। আব্বু দৌড়ে এসে সোজা দাঁড় করাচ্ছেন। আমি বলছি, "আব্বু আজ আর না। আবার কাল....."। আব্বু বলেন, "তুমিতো শিখেই গিয়েছো... আর দশমিনিট চালাও- পুরো শিখে যাবে।"
অগত্যা সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিলাম কিছুটা অনিচ্ছায়। পড়তে পড়তেও নিজেকে সামলে নিলাম, মনের জেদে...
আরে! আমি তো সত্যিই আর পড়ে যাচ্ছি না। মনে মনে ঠিক করলাম আর পড়ে যাব না।
"এই তো হচ্ছে"- আব্বু সমানে বলে যাচ্ছেন- "ভয় পেওনা, সাবাশ, এই তো হচ্ছে, সামনের দিকে তাকিয়ে জোরে প্যাডেল করো।"
আমি সামনের দিকে না তাকিয়েই সাইকেল চালাচ্ছি...তাকিয়ে দেখলাম, আব্বুর মুখে পরিতৃপ্তির হাসি। আমারও খুব আনন্দ হচ্ছে। আব্বু মাঠের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন, আমি আব্বুকে ঘিরে পাক খাচ্ছি মনের অনন্দে.......
একপাক, দুপাক, তিনপাক......
যেন মাইলের পর মাইল সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি.....
এ এক পার্থিব সত্য, সব বাবারাই ছেলেকে বলেন, "অন্যরা পারলে তুমিও পারবে৷ মন দিয়ে কর, এগিয়ে চল। জিততে তোমায় হবেই"।
...... আব্বু বেঁচে নেই দুই যুগ হলো....
আমার জীবনের পরাজয় তোমাকে দেখে যেতে হয়নি....
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৪৬
জুল ভার্ন বলেছেন: আমার প্রথম দিনের সাইকেল চালনা ছিলো এক ভয়ংকর এডভেঞ্চার। আমাদের বাড়ির কেয়ার টেকারের সাইকেল কাউকে না বলেই নিয়ে যাই ধানমণ্ডি ১০ নম্বর রোডের ব্রিজের ওপর। তখন এই ব্রিজ অনেক উঁচু ছিলো। ব্রিজ সংযুক্ত দুই পাশের রোড ছিলো নীঁচু। আমি সাইকেল ঠেলে নিয়ে ব্রিজের ওপর উঠে সাইকেলের সীটে বসে একজন পথচারীকে ঠেলে দিতে বলি। পথচারী কিছু জিজ্ঞেস না করেই সাইকেল ঠেলে দেয়। আমি সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে থাকি কিন্তু ব্যালেন্স রাখতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পরে নাক কেটে যায়....তারপর আব্বা আমাকে সাইকেল শেখায়।
২| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৭:২০
শেরজা তপন বলেছেন: বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল!
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৪৭
জুল ভার্ন বলেছেন: স্মৃতি আমাদের এমন করেই বিমূর্ত করে দেয়।
৩| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:০৩
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ফ্লাটের মধ্যে লম্বা জায়গায় ছোট সাইকেল চালানো শিখেছিলাম নিজে নিজে ক্লাস ফোরে যখন ছিলাম। প্রথম প্রথম বাসার ভিতরেই চালিয়েছি কয়েকদিন। ক্লাস ফাইভে যখন পড়ি তখন সাইকেল নিয়ে ২/৩ কিলো পর্যন্ত ঘুরেছি বাসার আশেপাশে।
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:১০
জুল ভার্ন বলেছেন: ছেলে বেলায় সুযোগ পেলেই যত্রতত্র সাইকেল চালানো ছিলো এডভেঞ্চার।
৪| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:১৮
অপু তানভীর বলেছেন: আমার বাবা নিজেই সাইকেল চালাতে পারেন না । সে ব্যাথা পাওয়া ভয়ে কোন দিন সাইকেল চালানো শিখেন নি । সবাই বলতো যে আমিও তাই হব । কোন দিন সাইকেল চালানো শিখতে পারবো না । পরে অবশ্য বড় ভাইয়ের বদৌলতে শিখে ফেলেছি ।
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৪৮
জুল ভার্ন বলেছেন: শাব্বাস!
৫| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৪৭
শাহ আজিজ বলেছেন: বাড়ির ভিতরে রাস্তায় একটা ১৮ ইঞ্চি রেলে সাইকেল সিটটা বগলের নিচে দিয়ে এক পা দিয়ে শুরু । চেনে পা কেটে যেত তবুও সংগ্রাম চলত । এই সাইকেল বাবা কলকাতায় তার শিক্ষকতার জীবনে ব্যাবহার করতেন সেই ১৯৩২ সাল থেকে ৪৭ সাল তক । জিদের চোটে একদিন সিটে বসে গেলাম । পিকিং জীবন পর্যন্ত চালিয়েছি । উত্তরবংগ সাইকেল ট্যুর করেছি ৭৮ সালে।
জিদ থাকা চাই -------------- আর তাতেই হবে ।
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৫
জুল ভার্ন বলেছেন: একমত। যেকোনো কিছু শিখতে চাই জেদ এবং শেখার আনন্দ।
৬| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৫২
জুন বলেছেন: আমার খালাতো বোন খুব ভালো সাইকেল চালাতো। আমাকে শেখাতে চাইছিল খুব। কিন্ত দুইবার লনের মধ্যে বোন সহ, সাইকেল সহ পরে গেলে এই ব্যাপারে আমার মধ্যে একটা ভীতি চলে আসে। আর চেষ্টা করিনি।
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৭
জুল ভার্ন বলেছেন: সাইকেল চালানো শেখার সময় ছোট খাটো দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী।
৭| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৫৫
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: ছোটবেলায় সাইকেলের সাথে ধাক্কা লেগে আমার মাড়ির একটা দাঁত পড়ে গিয়েছিলো।যদিও পরে উঠেছিলো সেই দাঁত,তবুও ভয়ে আর সাইকেল চালানো শিখিনি। এখনো পারি না। বছর দুয়েক আগে শিখতে গিয়ে বাড়ি খেলাম কবরস্থানের দেয়ালে।সে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। আমি এখনো সাইকেল চালাতে পারি না। ভয় পেতাম বলে বাবাও আর শেখান নি।
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৯
জুল ভার্ন বলেছেন: আমার নাক কেটে গিয়েছিল, সেই দাগ এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি!
৮| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৪২
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: বাবা বাবাই। যারা পেয়েছে এমন বাবা তারা ভাগ্যবান।
আমিও নিজে নিজে বহু কসরত ঘন্টা হিসাবে সাইকেল ভাড়া করে চালানো শিখেছিলাম ।আর শিখার পরের দিন আমার ছোট ফুফুর বিয়ের দিন এক মেহমানের সাইকেল এক ফাকে নিয়ে পগারপাড়(সোজা ঢাকা-চিটাগাং হাইওয়ে - ময়নামতি) ।আর ময়নামতি সেনানিবাসের টিপরাপাড়া বাজারের সামনের ঢাল থেকে নামার সময় বাসের চুমায় (ধাক্কায়) ট্রাকের চাকার নিচে সাইকেলের গমন এবং সাইকেল ভর্তা (শেষ সাইকেল ) আর কোনক্রমে মরতে মরতে বেঁচে যাওয়া এই আমি এখনো যার স্মৃতি বহন করে চলছি শরীরে ও মনে ।
আহা বড়ই মধুর সেই স্মৃতি ও ঘটনা।
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:১১
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি যেকোনো রোড ট্রান্সপোর্ট ড্রাইভার হিসেবে খুব ভালো। আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সের বয়স ৪৪ বছর।
৯| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪৩
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আমি সাইকেল চালানো শিখেছি একটি মাঠের উঁচু অংশ থেকে নিচুর দিকে নামর গতির সুবিধা নিয়ে।
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১৩
জুল ভার্ন বলেছেন: আমার প্রথম দিনের সাইকেল চালনা ছিলো এক ভয়ংকর এডভেঞ্চার। আমাদের বাড়ির কেয়ার টেকারের সাইকেল কাউকে না বলেই নিয়ে যাই ধানমণ্ডি ১০ নম্বর রোডের ব্রিজের ওপর। তখন এই ব্রিজ অনেক উঁচু ছিলো। ব্রিজ সংযুক্ত দুই পাশের রোড ছিলো নীঁচু। আমি সাইকেল ঠেলে নিয়ে ব্রিজের ওপর উঠে সাইকেলের সীটে বসে একজন পথচারীকে ঠেলে দিতে বলি। পথচারী কিছু জিজ্ঞেস না করেই সাইকেল ঠেলে দেয়। আমি সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে থাকি কিন্তু ব্যালেন্স রাখতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পরে নাক কেটে যায়....তারপর আব্বা আমাকে সাইকেল শেখায়।
১০| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার এই পোষ্ট পড়ে আমার মাথায় একটা লেখা চলে এসেছে। লেখাটা এখন লিখব।
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১৪
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
১১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৩৮
মনিরা সুলতানা বলেছেন: কী চমৎকার ! মনছুঁয়ে যায় !
আমি আছি এই বিশ্বাস জীবন পাল্টে দেয়।
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১৪
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ ভোর ৬:০৮
স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: বাবারা যেভাবে আমাদের চলতে শিখান তা আমাদের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মাথা উঁচু করেই চলতে সাহায্য করে।
আমার সাইকেল শেখা ঢাকার শ্যামলী এলাকাতে - সেই গলিটি ফাঁকা থাকতো এবং গলি শেষ হতো জলাভূমিতে যার ওপারে ছিল আগারগাঁও। মোটামুটি বাধাবিপত্তি ছাড়াই চালানো শিখছিলাম, কিন্তু শেষ দিকে বাচ্চা কোলে এক দশ-বারো বছরের মেয়ের গায়ে আমার সাইকেল উঠে যায়। যদিও তারা মাটিতে পড়ে যায় নি বা সেরকম ব্যাথা পায় নি, তারপরও সেকি বিব্রতকর অভিজ্ঞতা যা বলার মতো নয়।