নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
মৃত্যুঞ্জয়ী রেহানে জাবারি...
নিশ্চয়ই আমাদের অনেকেরই মনে আছে ২২ অক্টোবর ২০১৪, ফাঁসি হয় ২৬ বছর বয়সী রেহানে জাবারির। ধর্ষণ এড়াতে ধর্ষকামী সরকারি কর্মকর্তার বুকে ছুরি বসানোর অপরাধে তাকে প্রাণদণ্ড দেয় ইরানের সুপ্রিম কোর্ট। রেহানের ফাঁসির আদেশের বিরোধিতা করে গোটা বিশ্বের অজস্র মানবাধিকার সংগঠন এবং রাস্ট্র ও সরকার প্রধান প্রাণ ভিক্ষার আবাদন জানায়। এমনকি, মেয়ে রেহানের বদলে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানোর মিনতি করেন রেহানের মা শোলেহ। কিন্তু কোনো কিছুতেই কান দেয়নি ইরান সরকার। ছয় বছরের বিচার প্রক্রিয়া শেষে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই নিভিয়ে দেওয়া হয় ছাব্বিশের তরতাজা প্রাণ রেহানেকে। মৃত্যুর আগে মাকে শেষ চিঠি লিখে গিয়েছেন রেহানে। হৃদয় নিংড়ানো সেই চিঠিতে মাকে শোকগ্রস্ত হতে বারণ করেছেন তিনি। মৃত্যুকে তিনি অভিহিত করেছেন নিয়তির বিধান হিসেবে, তবে সে জন্য তিনি বিন্দুমাত্র অনুতাপ করেননি। বরং ফাঁসির পর তার দেহাংশ দান করার অনুরোধ জানিয়েছেন। রেহানের সেই মর্মস্পর্শী চিঠি গণমাধ্যমের হাতে তুলে দিয়েছেন মানবাধিকার সংগঠন ও শান্তিকামী গোষ্ঠীর সদস্যরা। মাকে লেখা রেহানে জাবারির শেষ চিঠি বিশ্ববাসীর সাথে আমাদের দেশের মিডিয়াও ফলাও করে প্রচার করেছিল। তখন অনেকের মতো আমিও ফেসবুকে আমার টাইম লাইনে সেই চিঠি শেয়ার করেছিলাম- যা আজ আবারও শেয়ার করছিঃ-
প্রিয় মা শোলেহ,
'আজ জানতে পারলাম এবার আমার কিসাস (ইরানের আইনব্যবস্থায় কর্মফলবিষয়ক বিধি)-এর সম্মুখীন হওয়ার সময় হয়েছে। জীবনের শেষ দৃশ্যে যে পৌঁছে গিয়েছি, তা তুমি নিজের মুখে আমায় জানাওনি ভেবে খারাপ লাগছে। তোমার কি মনে হয়নি যে এটা আমার আগেই জানা উচিত ছিল? তুমি দুঃখে ভেঙে পড়েছ জেনে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছি। ফাঁসির আদেশ শোনার পর তোমার আর বাবার হাতে চুমু খেতে দাওনি কেন আমায়?
দুনিয়া আমায় ১৯ বছর বাঁচতে দিয়েছে। সেই অভিশপ্ত রাতে আমারই তো মরে যাওয়া উচিত ছিল, তাই না? আমার মৃতদেহ ছুড়ে ফেলার কথা ছিল শহরের কোনো অজ্ঞাত কোণে। কয়েক দিন পর মর্গে যা শনাক্ত করার কথা ছিল তোমার। সঙ্গে এটাও জানতে পারতে যে হত্যার আগে আমাকে ধর্ষণও করা হয়েছিল। হত্যাকারীরা অবশ্যই ধরা পড়ত না, কারণ আমাদের না আছে অর্থ, না ক্ষমতা। তারপর বাকি জীবনটা সীমাহীন শোক ও অসহ্য লজ্জায় কাটিয়ে কয়েক বছর পর তোমারও মৃত্যু হতো। এটাই যে হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু সেই দুঃসময়ে আকস্মিক আঘাত সব কিছু ওলোটপালট করে দিল।
শহরের কোনো গলি নয়, আমার শরীরটা প্রথমে ছুড়ে ফেলা হলো এভিন জেলের নিঃসঙ্গ কুঠুরিতে, আর সেখান থেকে কবরের মতো এই 'শাহর কারাগার'র সেলে। কিন্তু এ নিয়ে অনুযোগ ক'রো না মা, এটাই নিয়তির বিধান। আর তুমি তো জানো যে মৃত্যুতেই সব শেষ হয়ে যায় না।
মা, তুমিই তো শিখিয়েছ অভিজ্ঞতা লাভ ও শিক্ষা পাওয়ার জন্যই আমাদের মতো মেয়েদের জন্ম। তুমি বলেছিলে, প্রত্যেক জন্মে আমাদের কাঁধে এক বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া থাকে। মাঝে মাঝে লড়াই করতে হয়, সে শিক্ষা তো তোমার থেকেই পেয়েছি মা।
আজ আবার সেই গল্পটা মনে পড়ছে, চাবুকের আঘাত সহ্য করতে করতে একবার প্রতিবাদ জানানোর ফলে আরও নির্মমতার শিকার হয়েছিল এক ব্যক্তি। শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হয়। কিন্তু প্রতিবাদ তো সে করেছিল! আমি শিখেছি, সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে অধ্যবসায় প্রয়োজন। তার জন্য যদি মৃত্যুও আসে, তাকেই মেনে নিতে। স্কুলে যাওয়ার সময় তুমি শিখিয়েছিলে, নালিশ ও ঝগড়াঝাটির মাঝেও যেন নিজের নারীসত্ত্বাকে বিসর্জন না দিই। তোমার মনে আছে মা, কত যত্ন করেই না মেয়েদের খুঁটিনাটি সহবত শিখিয়েছিলে আমাদের? কিন্তু তুমি ভুল জানতে মা। এই ঘটনার সময় আমার সে সব তালিম একেবারেই কাজে লাগেনি। আদালতে আমায় এক ঠাণ্ডা মাথার খুনি হিসেবে পেশ করা হয়। কিন্তু আমি চোখের পানি ফেলিনি। প্রাণভিক্ষাও করিনি। আমি কাঁদিনি কারণ আইনের প্রতি আমার অটুট আস্থা। কিন্তু বিচারে বলা হলো, খুনের অভিযোগের মুখেও নাকি আমি নিরুত্তাপ! আচ্ছা মা, আমি তো কোনোদিন একটা মশাও মারিনি। আরশোলাদের চটিপেটা না করে শুঁড় ধরে জানলার বাইরে ফেলে দিয়েছি। সেই আমিই নাকি মাথা খাটিয়ে মানুষ খুন করেছি! উল্টো ছোটবেলার ওই কথাগুলো শুনে বিচারপতি বললেন, আমি নাকি মনে মনে পুরুষালি! তিনি একবার চেয়েও দেখলেন না, ঘটনার সময় আমার হাতের লম্বা নখের ওপর কী সুন্দর নেল পালিশের জেল্লা ছিল। হাতের তালু কত নরম তুলতুলে ছিল। সেই বিচারকের হাত থেকে সুবিচার পাওয়ার আশা অতি বড় আশাবাদীও করতে পারে কি? তাই তো নারীত্বের পুরস্কার হিসেবে মৃত্যু দণের আগে আমার মাথা মুড়িয়ে ১১ দিনের নির্জনবাসের হুকুম দেওয়া হলো...দেখেছ মা, তোমার ছোট্ট রেহানে এই কয়েক দিনেই কতটা বড় হয়ে গিয়েছে!
এবার আমার অন্তিম ইচ্ছেটা শোনো। কেঁদো না মা, এখন শোকের সময় নয়। ওরা আমায় ফাঁসি দেওয়ার পর আমার চোখ, কিডনি, হৃদযন্ত্র, হাড় আর যা যা কিছু দরকার যেন আর কারও জীবন রক্ষা করতে কাজে লাগানো হয়। তবে যিনিই এসব পাবেন, কখনোই যেন আমার নাম না জানেন। আমি চাই না এর জন্য আমার সমাধিতে কেউ ফুলের তোড়া রেখে আসুক। এমনকি তুমিও নয়। আমি চাই না আমার কবরের সামনে বসে কালো পোশাক পরে কান্নায় ভেঙে পড়ো তুমি। বরং দুঃখের দিনগুলো সব হাওয়ায় ভাসিয়ে দিও। এই পৃথিবী আমাদের ভালোবাসেনি, মা। চায়নি আমি সুখী হই। এবার মৃত্যুর আলিঙ্গনে তার পরিসমাপ্তি ঘটতে চলেছে। তবে সৃষ্টিকর্তার এজলাসে সুবিচার আমি পাবই। সেখানে দাঁড়িয়ে আমি অভিযোগের আঙুল তুলব সেই সমস্ত পুলিশ অফিসারের দিকে, বিচারকদের দিকে, আইনজীবীদের দিকে, আর তাদের দিকে যারা আমার অধিকার বুটের নিচে পিষে দিয়েছে, বিচারের নামে মিথ্যা ও অজ্ঞানতার কুয়াশায় সত্যকে আড়াল করেছে। যারা একবারও বোঝার চেষ্টা করেনি, চোখের সামনে যা দেখা যায় সেটাই সর্বদা সত্যি নয়।
আমার নরম মনের শোলেহ, মনে রেখো সেই দুনিয়ায় তুমি আর আমি থাকব অভিযোগকারীর আসনে। আর ওরা দাঁড়াবে আসামির কাঠগড়ায়। দেখিই না, সৃষ্টিকর্তা কী চান! তবে একটাই আরজি, মৃত্যুর হাত ধরে দীর্ঘ যাত্রা শুরুর প্রাক মুহূর্ত পর্যন্ত তোমায় জড়িয়ে থাকতে চাই, মাগো! তোমায় খুব খু-উ-ব ভালবাসি।।'
***************************************
আমার কথাঃ- রাষ্ট্র নাকি কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রকে জনগণের সামগ্রিক কল্যাণে নিয়োজিত সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান হিসেবেই সবাই জানে। শুধু ইরান নয়, মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সকল রাষ্ট্র, বাংলাদেশ সহ এশিয়ার বেশকিছু রাষ্ট্র এবং আফ্রিকার অধিকাংশ রাষ্ট্রের চরিত্রই প্রায় একইরকম।
রেহানে জাবারির মতো কতশত কতহাজার নারী-পুরুষের জীবন হারিয়ে যাচ্ছে আইন নামক ওসব ‘অন্ধকার যুগ’-এর অন্ধকারে, সে হিসেব অজানা। ‘আল্লাহু আকবর’ বলে মানুষের শিরোচ্ছেদ করা অথবা সৎ এবং ভাল মানুষদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা ওসব দেশের নিত্যদিনের কাজ।
একজন সরকারি কর্মকর্তার কাছে ধর্ষিত হওয়ার ঠিক পূর্বমুহুর্তে সুযোগ পেয়ে ধর্ষকের বুকে ছুরিকাঘাত করেছিলেন রেহানে জাবারি। ঘটনার অনেক পরে লোকটি মারা যায়। তবে একটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট যে, মেয়েটি কোনোমতেই ঠাণ্ডামাথার খুনি নয়। কিন্তু ‘প্রাণের বদলে প্রাণ’-এই অমানবিক নীতির উপর দাঁড়ানো ‘কিসাস’ নামক শরীয়া আইনে নিস্পাপ মেয়েটিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিল ইরান সরকার।
নিজেকে রক্ষা করতে মেয়েটি নিরূপায় হয়ে আঘাত করেছিলেন ধর্ষকামী পুরুষটিকে আর একবিংশ শতাব্দিতে এসেও স্বয়ং রাষ্ট্র নিজে আইন দিয়ে মেয়েটিকে হত্যা করলো।
রেহানে জাবারি আমাদের শিখিয়ে গিয়েছেন- "মৃত্যুতেই সব শেষ হয়ে যায় না।"
এমন আকাশ-সমান উঁচু দর্শন অন্তরে ধারণকারী রেহানে জাবারির মতো মহান একজন মেয়ে জন্ম দিতে পারায় অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে রেহানের মা ‘শোলেহ’-কে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:২৫
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৩:৫৭
বংগল কক বলেছেন: ইরান হইল একটা "বালছিড়া জনতার" দেশ। এর থেইকে "বংগল দেশ" অপেক্ষাকৃত ভাল।
৩| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:৫০
চাঁদগাজী বলেছেন:
পারস্য ছিলো মধ্যযুগের জ্ঞানের কেন্দ্র; আজকের ইরান হলো সন্ত্রাসের মগজ।
০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:২৪
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি বিশ্বাস করি না ইরান সন্ত্রাসী রাস্ট্র। বরং বিশ্বাস করি -ইরান পরাশক্তির সন্ত্রাসের শিকার।
৪| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:৫০
চাঁদগাজী বলেছেন:
পারস্য ছিলো মধ্যযুগের জ্ঞানের কেন্দ্র; আজকের ইরান হলো "ধর্মীয়" সন্ত্রাসের মগজ।
৫| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:১৮
জ্যাকেল বলেছেন: খুব দুঃখজনক। এইসব অবিচার সমাজকে ভুল পথে পরিচালিত করে। সম্পুর্ণ ভিন্ন একটি ওয়েব সুচনা হয় যেটার এক প্রান্তে অপরাধীর মনে উৎসাহ আসে আর রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা হারিয়ে মানুষ অন্য ধান্দা চিন্তা করে। ফলাফল তো দেখাই যাচ্ছে।
০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:২৪
জুল ভার্ন বলেছেন: ঠিক বলেছেন।
৬| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি পড়ে মন খারাপ হলো।
০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৩১
জুল ভার্ন বলেছেন: হৃদয়বিদারক!
৭| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:৩২
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
প্রিয় মা কে লেখা চিঠিটি হৃদয় ছুয়ে যায় ...।
ইসলামী শরিয়া আইনে মহিলাদের ন্যায়বিচার পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
৪ জন পুরুষ শাক্ষী হাজির না করলে .।
০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৩২
জুল ভার্ন বলেছেন: একমত।
৮| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৫৩
শেরজা তপন বলেছেন: ~আমি বিশ্বাস করি না ইরান সন্ত্রাসী রাস্ট্র। বরং বিশ্বাস করি -ইরান পরাশক্তির সন্ত্রাসের শিকার।- ঠিক বলেছেন
দারুন একটা বিষয় তুলে ধরেছেন।
০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৩২
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৯| ১১ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:০৪
সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: কি হৃদয়বিদারক! আগে পড়িনি, শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ।
১১ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৩৩
জুল ভার্ন বলেছেন: পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:০২
অধীতি বলেছেন: ঘটনাটা তখন মনে খুব বিঁধেছিল।