নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
স্মাইল প্লিজ, স্মাইল....
একদা ক্যামেরা ম্যানের কমন ডায়লগ ছিলো 'স্মাইল প্লিজ'! সেটা আমার ছেলে বেলার কথা। আমাদের বৃহত্তর যৌথ পরিবারে বেশ কয়েকটি ক্যামেরা ছিলো। সব থেকে পুরনো ক্যামেরাটার মালিক ছিলেন বড়ো চাচা। বড়ো চাচা ১৯৩৬ সনের গ্রাজুয়েট। ইন্ডিয়ান রেলওয়ের মাঝারি মানের কর্মকর্তা ছিলেন। সেই চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতাকেই ব্রত করে সুনামধন্য হয়েছিলেন। একজন সৌখিন ফটোগ্রাফার ছিলেন।
বড়ো চাচার বেশ কয়েকটি ক্যামেরা ছিলো। তবে বিশেষ ধরনের একটা ক্যামেরা ছিলো, যেটা ছোট সাইজের একটা আলমারির মতো। ওটা কালো মোটা কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকতো। যাদের ছবি তোলা হতো তাদের বাক্সটার সামনে বেঞ্চিতে বসিয়ে কালো কাপড়ে ঢেকে দিয়ে চাচা বাক্সের পেছনের নিজেও কালো কাপড়ের ভিতর অর্ধেকটা ঢুকিয়ে কীসব করে ছবি তুলতেন।
তখনকারদিনে ছবি তোলা(তখন বলা হতো ফটো তোলা) মানেই বিরাট এক এন্তেজাম! ঘরের মধ্যেই বা বাড়ির সামনের বাগানে সেট সাজানো হতো। বড়ো চাচা হেকে বলতেন, "হিমু, জামাটা বদলে এসো/কল্পনা, চুল- বেণি ঠিক করো/ রানু, শাড়ির আঁচলটা টেনে দাও/ মুখে হালকা পাউডার লাগাও/ বাঁদিকে সরো/ তোমরা একটু চেপে বসো/ ঘাড় উঁচু করো/ স্মাইল প্লিজ"- এসব করতে করতে বেশ কিছু সময় পর বড়ো চাচা শাটার টিপতেন। খ্যাটাশ করে একটা শব্দ হতো....
বড়ো চাচা খুব গোপনে ওখান থেকে কিছু একটা বের করে নিয়ে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকতেন ইলেক্ট্রিক লাইট বন্ধ করে। আগে থেকে জ্বালিয়ে রাখা হারিকেন নিয়ে কিসব করে ১৫/২০ মিনিট পর চাচা ভেজা পেপারে ছবি নিয়ে বেরিয়ে সেগুলো রোদে শুকানোর পর সবার সামনে নিয়ে আসতেন। ছবি দেখে থ! আমি ছিলাম লাল জামা, বেণি বাধা বুবু নীল ফ্রক, রানু আপা প্রিন্ট শাড়ী... কিন্তু ছবিতে সবাই সাদা-কালো!
মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পরিবার অনেকটাই যাযাবরের মতো ছিলো। আমরা ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাই। সংসারের অনেক জিনিসপত্রের সাথে সেই আলমারির মতো ক্যামেরাটাও কোথায় হারিয়ে গেছে জানিনা।
আমার বাবা চাচারা ছিলেন চার ভাই। ভাইদের মধ্যে বাবা মেঝ। বড়ো চাচা ছাড়া অন্য দুই জনের একজনকে ডাকতাম চাচাজী আর ছোট জনকে ছোট কাকু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স-মাস্টার্স করেও তার নির্দিষ্ট রোজগারের কোনো পেশা ছিলো না। কিন্তু চাচাজী ছিলেন বিলাসী জীবন যাপনে অভ্যস্ত।উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি বেশুমার খরচ করতেন। যখন যা মনে চাইতো তাই করতেন। যাত্রা দলের মালিক হয়ে কয়েক বছর যাত্রা নিয়ে মেতেছিলেন, সিনেমা প্রোযোজনা করতেন আর দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াতেন। বরিশাল শহরে দীপালি (পরবর্তীতে নাম বদলে হয় অভিরুচি) সিনেমা হল কিনে কয়েক বছর চালিয়ে ব্যপক লোকসান দিয়ে বিক্রি করে দেন। তার অনেকগুলো ক্যামেরা ছিলো। স্বাধীনতার আগেই তার মালিকানায় প্রথম মুভি ক্যামেরা হাতে নিয়ে দেখি। 'ক্যামেরার ভিতরে কি আছে' তা দেখার জন্য আমি গোপনে তাঁর একটা দামী ক্যামেরা খুলে সিকেডি করে নষ্ট করায় আমাকে তার ক্যামেরার ধারেকাছেও ঘেষতে দিতেন না। ক্যামেরার প্রতি আমার আকর্ষণ দেখে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আব্বা আমার জন্য একটা ক্যামেরা কিনে নিয়ে আসেন ১৯৬৯ সনে। সেই ক্যামেরার নাম ছিলো Kodak.
ছবি তোলা এতো সোজা, আগে জানা ছিল না-Kodak ক্যামেরার মালিক হবার আগে! রিল ভরো, দাঁড়াও, সাটার টিপে দাও, রিল নিয়ে স্টুডিওতে যাও, ওয়াশ করে ঘরে নাও। ছবি রেডি। তবে রঙ?
তখনও সাদা-কালোর যুগ। হোক সাদা-কালো, মনের রঙই ছবির রঙ। জীবনের রঙ। সাদা-কালো, তাই-ই ভালো।
দিন বদলালো। বাজারে নানান ক্যামেরা এলো। ইতোমধ্যে ফুফু, মামা এবং খালাদের বদৌলতে আমার মালিকানায় একাধিক ক্যামেরা এবং ফটোগ্রাফির উপর অনেক গুলো বই! ১৯৭৬ সনে ছোট কাকু জাপান থেকে আমার জন্য একটা ক্যামেরা নিয়ে এলেন। এটা Instant Polaroid Camera. ক্লিক করার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে রংগীন ছবি বেরিয়ে আসে! লাল জামা তো লাল জামা, নীল শাড়ি তো নীল শাড়ি। মনের রঙ আর শাড়ির রঙ, ফুলের রঙ হুবহু এক। আলটিমেটলি ছবিতে প্রীতি আর স্মৃতির অপূর্ব মিলন। কিন্তু এই ক্যামেরায় ছবি তোলা অত্যন্ত এক্সপেন্সিভ! ক্যামেরার প্রতি আমার এহেন আকর্ষণ দেখে চাচাজী তাঁর সংগ্রহ থেকে একটা ক্যামেরা দিলেন। নাম Zenit. Made in USSR. ক্যামেরাটা হাতে নেওয়ার আগে আমি জিজ্ঞেস করে নিলাম, "চাচাজী, এটা আমাকে এক্কেবারেই দিয়েছেন, না কি আবার ফেরত নিয়ে নিবেন?"
তিনি আমার কানের পাশের চিপস টেনে দিয়ে বললেন, "এক্কেবারেই দিয়েছি- যা ভাগ"! মাত্র ৪০ বছর বয়সে চাচাজী মস্তিষ্কে রক্তক্ষরনে ইন্তেকাল করেন।
ক্যামেরা আর ফটোগ্রাফি নিয়ে অনেক কিছু বলার আছে কিন্তু লিখতে ইচ্ছে করে না। লিখে কি হবে!
১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:০৭
জুল ভার্ন বলেছেন: তুলি যখন যেখানে যাই প্রকৃতিক ছবি তুলি।
২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:২৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
১৯৬৯ সালে আপনি কোন ক্লাশে পড়তেন?
১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:১০
জুল ভার্ন বলেছেন: ক্লাস সেভেন।
বয়স জানতে চান? ৬৪+
৩| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:৪২
কবিতা ক্থ্য বলেছেন: এখন কোন ক্যমেরা ব্যবহার করেন?
১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:১২
জুল ভার্ন বলেছেন: ক্যামেরা আছে বেশ কয়েকটি, যার মালিকানা এখন দুই ছেলের। আর আমি এখন মোবাইল ফোনের ক্যামেরা বেশী ব্যবহার করি।
৪| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:৫৮
অপু তানভীর বলেছেন: লিখে ফেলুন । লিখলে মনে শান্তি আসবে ! লিখে অনেক কিছুই হবে !
দামী ক্যামেরা জিনিসটা কেন জানি আমার কোন কালেই খুব একটা টানে নি । আমার কাছে আমার মোবাইলের ক্যামেরাই সেরা । যখন ডিজিটাল ক্যামেরার যুগের শুরু তখন একটা ক্যামেরা হাতে এসেছিলো কিন্তু সেটা দিয়ে ছবি তুলে কোন ভাবেই মজা পেতাম না । মোবাইল ক্যামেরা দিয়েই ছবি তুলি ।
আপনার ক্যামেরা কথনের অপেক্ষাতে রইলাম !
১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:১৩
জুল ভার্ন বলেছেন: ওকে।
৫| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: লিখতে থাকুন। লেখা অব্যহত রাখুন।
১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:১৩
জুল ভার্ন বলেছেন: লিখি কম বেশী।
৬| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:১১
ইসিয়াক বলেছেন: পোস্ট প্রিয়তে নিলাম।ভীষণ ভালো লাগলো। আপনি নিশ্চয় লিখবেন। জানি লিখে কিছু হয় না। তবুও লিখবেন।অনেকেই পড়বে এখন না হয় অন্য কোন সময় পড়বে। এই লেখার মাধ্যমে আপনি বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।
১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:৩১
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ইসিয়াক।
৭| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:৩২
জটিল ভাই বলেছেন:
গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে বলো কি হবে টাইপ শেষ চাই না। কি হবে না হবে না ভেবে লিখবেন নিজের জন্য এই প্রত্যাশা রইল।
১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:৪২
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ জটিল ভাই।
৮| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:২৮
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রচন্ড নেট সমস্যা। ভীষণ পরলো চলছে। এই কমেন্টটি হবে কিনা বুঝতে পারছি না।আগেও একবার অফ লাইন হয়ে গেছি।
খুব ভালো স্মৃতিচারণ লিখলেন। আপনার জাপানি আত্মীয়ের মাধ্যমে ও একবার ক্যামেরা গিফট পাওয়ার কথা শুনেছিলাম।ছোট থেকেই এত আগ্রহ থাকায় আপনার ছবিগুলো সত্যিই অনন্য। জানিনা কমেন্টটি হবে কিনা ভাইজান
১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৩৮
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ভাই।
৯| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:২৬
কামাল১৮ বলেছেন: সুন্দর স্মৃতিচারণ।৭১ কি বরিশাল ছিলেন?
১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৩৭
জুল ভার্ন বলেছেন: ৭১ সনে বরিশাল থাকা বিষয়টাকে একটু ব্যাখ্যা দিচ্ছি- আমার জন্ম এবং স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকি। বরিশাল আমার দাদা বাড়ি।।
৭১ সনে আমাদের বৃহত্তর পরিবারের অনেকেই ইন্ডিয়া চলে যায়, কেউ কেউ গ্রামে। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে ক্যাডেট কলেজ থেকে ফিরে ঢাকার বাড়িতে এসে কেয়ার টেকার এর কাছে সব শুনে অনেক কষ্ট করে আমার দাদা বাড়ি পৌঁছে দেখি সেখানে কেউ নাই। আমার বড়ো ভাই, মামা, কাজীনরা মুক্তি যুদ্ধে জয়েন করেছেন। তারা অবস্থান করছিলেন ততকালীন পটুয়াখালী জেলার বামনা থানাধীন প্রত্যান্তাঞ্চল বুকাবুনিয়া নামক গ্রামে। আমার মামা যেকোনো ভাবে জানতে পারেন আমার অবস্থান। তিনি আমাকে তাদের কাছে নিয়ে যান। দেশ স্বাধীন হবার একমাস আগে পর্যন্ত আমি মুক্তিযুদ্ধের নয় নম্বর সাব-সেক্টর হেড কোয়ার্টার এলাকায় থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ইনফরমার হিসেবে কাজ করি।
১০| ১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: লিখি কম বেশী।
একটা পোষ্ট দেওয়ার পর কি আপনার আনন্দ আনন্দ লাগে না?
১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৪০
জুল ভার্ন বলেছেন: পোস্ট লিখে/দিয়ে ভালোই লাগে কিন্তু হতাশ হই-যখন দেখি নূণ্যতম পাঠক রেসপন্স নাই।
১১| ১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৮:০৯
শেরজা তপন বলেছেন: আমি আপনি সহ সবাই জানে লিখে কিছু হবে না।আমরা সবাই অপ্রয়োজনীয় কাজ করে যাচ্ছি।
তবুও লিখুন- সময় কাটবে, হতাশা কেটে যাবে। জীবনটা স্থবির হয়ে যাবে না।
১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৪১
জুল ভার্ন বলেছেন: একদম তাই করছি।
১২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:০৪
জুন বলেছেন: ছবি তোলা নিয়ে লেখাটি ভালো লাগলো অনেক। স্মাইল প্লীজের পর আসলো চীইইজ শব্দটি
+
১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:০৭
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপনি অনেক দিন নতুন লেখা দিচ্ছেন না!
শুভ কামনা।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:০৫
রানার ব্লগ বলেছেন: ছবি তোলা শুরু করুন! আসে পাশে অসংখ্য সাব্জেক্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমি ছবি তুলতে পারি না পারলে আমি দেখিয়ে দিতাম।