নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
~~শুন্যতাই তুমি~~
বাবুয়ার মন খারাপ....
হরতালের জন্য স্বৈরশাসক এরশাদ যখন তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়! শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ মানেই আবাসিক হল বন্ধ, হল বন্ধ হলেই লিলুয়াকে ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে হয় চট্টগ্রাম
লিলুয়ার সাথে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেখা হবেনা।
প্রচণ্ড ভীড়! কনফার্ম সীট ছাড়া যাত্রী দ্বিগুণেরও বেশী। ঠেলে ঠুলে নির্দিষ্ট সীটে বসতে না বসতেই ট্রেন ছেড়ে দেয়। প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে বাবুয়া জানলায় লিলুয়ার হাতের আংগুল ছুঁয়ে আছে...
হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন আস্তে আস্তে সরতে শুরু করেছে জানালাটা দূরে চলে যাচ্ছে। বাবুয়া হাঁটতে হাঁটতে, দৌড়ে দৌড়ে প্ল্যাটফর্মের একদম শেষ মাথা পর্যন্ত দুজন দুজনের আংগুলের ছোঁয়াটুকু অবিচ্ছিন্ন রাখতে চেষ্টা করেছে... লিলুয়ার সজল চোখ...বাবুয়ার প্রাণপাখি উড়ে যাচ্ছে....
লিলুয়া তখনো তাকিয়ে- বাবুয়াকে শেষ পর্যন্ত দেখতে, বাবুয়া তাকিয়ে ক্রমাগত দূরে চলে যাওয়া লিলুয়ার দিকে... আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় লিলুয়ার মুখ, হারিয়ে যায় জানালা... জানালা গলিয়ে লিলুয়ার হাত নাড়ানো দেখা যায়....
অনেক দূরে চলে গেছে ট্রেন। আর দেখা যাচ্ছে না লিলুয়ার হাত নাড়ানো! দেখা যায় শুধু ট্রেনের পেছনটা।
বাবুয়া তাকিয়ে ট্রেনটাকেই দেখছে—ট্রেনটাই যেনো লিলুয়া।
বহুদূরে চলে গেছে ট্রেন। দিগন্তে মিলিয়ে গেছে, এখন ক্ষুদ্রতম চিহ্নমাত্র। বাবুয়া তাকিয়ে আছে ক্ষুদ্রতম চিহ্নে- ক্ষুদ্রতম চিহ্নই লিলুয়া।
মিলিয়ে গেছে ট্রেন। সামনে শূন্যতা।
বাবুয়া তাকিয়ে আছে শূন্যে- শূন্যতাই লিলুয়া।
তারপর যেদিকেই তাকায়- শূন্য। মানে, লিলুয়াহীন সবটাই শুন্য...
ছুঁয়ে ফেলা সীমারেখা ছাড়িয়ে বহু দূরে গিয়েও ছুঁয়ে ফেলা বৃত্তের আরও বেশি ভিতরে ফিরে আসে যে মানুষ, তাকেই নিশ্চিত ভালোবাসার মানুষ বলে চিনে নেওয়া যায়।
তেত্রিশ বছর কেটে গেছে।
বাবুয়া তাকিয়ে থাকে শূন্যে।
কারণ,
লিলুয়া যখন ছিলো, তখন সবটুকু জুড়েই ছিল লিলুয়া। এখন লিলুয়া নেই, তার মানে সব শুন্যতাই লিলুয়া। সব 'নেই' জুড়েই লিলুয়া আছে!
*************
বছর তিনেক আগের কথা। ব্যাংকক যেতে হবে, হার্টের একটা ছোট অপারেশন করানো অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। তাই এই সকালেই এয়ারপোর্টে। আমার ফ্লাইট তখনো ঢের সময় বাকি। বোর্ডিং ফরমালিটিস সেরে প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জে একটা কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছি, হঠাৎ চোখ গেল কিছুটা দূরের একটা চেয়ারে.... লিলুয়া না, হ্যাঁ লিলুয়াই তো!
বুকের ভিতর ধড়াস করে উঠলো। সেকেন্ডের মধ্যে মনটা চলে গেল পয়ত্রিশ বছর আগে...। লিলুয়ার সাথে শেষ দেখা প্রায় পয়ত্রিশ বছর আগে। না ওর বিয়ের পর আর দেখা হয়নি আমাদের। অথচ আমরা চার চারটা বছর একে অপরকে ভালোবেসেছি। সেই যে হরতালের সময় ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রামে চলে গিয়েছিল... একদিন শুনলাম লিলুয়া কোন এক প্রবাসীকে বিয়ে করে বিদেশে চলে গেছে।
পয়ত্রিশ বছর আগের প্রত্যেকটা মুহূর্তকে যেন দেখতে পাচ্ছি সেলুলয়েডের সাদাকালো চিত্রে... আজ আমার উত্তরটা চাইবো। কেন সেদিন...
পায়ে পায়ে এগিয়ে যেতে দেখলাম না- লিলুয়া নয়, ত্রিশ-বত্রিশ বছরের এক মহিলা বসে বসে মোবাইল ঘাঁটছে। আশ্চর্য এত মিল হয়?
কাছে গিয়ে আরও একটু নিবিড় ভাবে দেখার চেষ্টা করতেই মহিলা বললেন-
- কিছু বলবেন?
- না, মানে আপনাকে চেনা একজন মানুষ মনে করেছিলাম...
মহিলাটি এবার বাবুয়ার মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো। বাবুয়ার অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। তাই জিজ্ঞেস করলো, কোথায় যাবেন?
-"আমেরিকা, মিশিগান। আপনি?"
-আমি ব্যাংকক।
-"বিজনেস ট্রিপ?"
-না। আমি ওখানে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছি।
-"ও, আচ্ছা, আপনি কি ঢাকা থাকেন?"
- হ্যা, কেন?
-"আপনাকে আমি দেখেছি মনে হয় আগে....."
- আপনি কি ঢাকা থাকেন?
- না, আমি চট্টগ্রামের বাসিন্দা। মিশিগান ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি শেষ করে ওখানেই পড়াই..."
- তাহলে আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।
- "তা হবে, তবু...খুব চেনা মনে হচ্ছে..."
-মেয়েটি হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ পর বললো, "আপনি চট্টগ্রামের কুলশী চেনেন?"
এবার আমার অবাক হওয়ার পালা! নীরবে হ্যাঁ সূচক ঘাড় নাড়ি। সময় শেষ, এনাউন্সমেন্ট হচ্ছে এবার প্লেনে ওঠার জন্য যেতে হবে মহিলাকে... ও উঠে পড়লো যাওয়ার সময় বললো-
- "আপনাকে আগে না দেখলেও আমার ধারণা, আপনি সম্ভবত বাবুয়া!"
আমি চমকে ওর দিকে তাকালাম, ও তখন অনেকটা এগিয়ে গেছে সেখান থেকেই চিৎকার করে বললো-
- 'আমার মায়ের নাম লিলুয়া মীর্জা। মায়ের এলবামে আমি আপনাকে দেখেছি।"
আমি উঠে দাঁড়ালাম, মহিলাটি তখন অনেক দূরে চলে গেছে...
০৯ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:২৩
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: এটা কি আপনার পুরোনো লেখা?
০৯ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:২৪
জুল ভার্ন বলেছেন: হায়, ফেসবুকে লিখেছিলাম বছর দুই আগে।
৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:১৭
শেরজা তপন বলেছেন: শেষটায় এসে বুকে মোচড় দিয়ে উঠল।
ছোট্ট অথচ ভারি সুন্দর লেখা।
০৯ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:২৪
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ০৯ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:০৪
ফুয়াদের বাপ বলেছেন: আবেগে স্পর্শ করা ভালো গল্প...
১০ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:২৬
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৫| ০৯ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১৫
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: গল্পটা অনেক ভালো লাগলো। জায়গাটার নাম সম্ভবত খুলশি। কুলশি নয়।
১০ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:২৭
জুল ভার্ন বলেছেন: আপনি ঠিক বলেছেন-কুলশী নয়, সঠিক নাম খুলশী।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২৯
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: খুব ভালো লাগল।