নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ \n\nএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধার চোখে স্বাধীনতা যুদ্ধে বুকাবুনিয়া.........

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:১৩

একজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধার চোখে স্বাধীনতা যুদ্ধে বুকাবুনিয়া.........

অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে মহান মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের অধীনস্থ বরগুনার বামনা উপজেলায় সাব-সেক্টর হেড কোয়ার্টার বুকাবুনিয়া এবং এখানকার মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ। এখানে নেই স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ইতিহাস জানার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও সংগ্রহশালা। মাটিতে প্রায় বিলীন হয়ে গেছে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অস্ত্রাগার ও জিনিসপত্র।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে উপকূলীয় এলাকার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে সংগঠিত মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। উপকূলীয় এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনকেন্দ্র পরবর্তীতে নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর হেড কোয়ার্টার করা হয় বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়াকে। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে ২০১৩ সালে ১৯ নভেম্বর বুকাবুনিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। তিনি তখন ঘোষণা দিয়েছিলেন- বুকাবুনিয়ায় "মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ" করার। কিন্তু স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও সেখানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়নি। সংগ্রহ করা হয়নি তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বুকাবুনিয়া অরক্ষিত পড়ে আছে।

মুক্তি যুদ্ধের সূচনাঃ ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বাধীনতা যুদ্ধে বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া বাজারে সাব-সেক্টর অধিনায়ক ক্যাপ্টেন মেহেদী আলী ঈমাম(পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই সেনা কর্মকর্তা এপ্রিল মাসে ছুটিতে এসে দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় ছুটি শেষ করে পশ্চিম পাকিস্তান ফিরে যাননি) স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে সাব সেক্টর হেড কোয়ার্টা অফিস উদ্বোধন করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সুবেদার মেজর আঃ মজিদ মিয়া, হাবিলদার মোবারক আলী মল্লিক, ঝিনেদা ক্যাডেট কলেজ থেকে সদ্য পাশ করা ক্যাডেট শামশুল আলম জাহাংগীর যিনি ইতোমধ্যেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে লং কোর্স ক্যাডেট অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে পিএমএ তে যোগ দেওয়ার জন্য নির্বাচিত, মোঃ মতিন আল হোসাইন, সেলিম সরদার যারযার পারিবারিক লাইসেন্সধারী বন্দুক, পিস্তল, পয়েন্ট টু টুবোর রাইফেল দিয়েই সাব সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু করেন। বামনা, মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা, বরগুনা, বেতাগী, আমতলী, তালতলী, কাঁঠালিয়া উপজেলাসহ দেশে বিভিন্ন এলাকার প্রায় সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধা বুকাবুনিয়া সাব সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এএসএম গোলাম মাওলার নেতৃত্বে বামনা বাজার ও ছলিম খন্দকারের বাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় হানাদার বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের কাজে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত উপজেলার পশ্চিম সফিপুর গ্রামের মো. লাল মিয়া, মৃত আ. কুদ্দুস এবং মঠবাড়ীয়া থানার দক্ষিণ দেবত্র গ্রামের রুস্তম আলীর নৌকায় বিষখালী নদীতে পাকিস্তানি হানাদারদের লঞ্চে আক্রমন করলে এক পর্যায়ে তিনটি নৌকাই মর্টার সেল মেরে ডুবিয়ে দেয়। ডৌয়াতলা ইউনিয়নের নেসার আহমেদ মৃধার বাড়ি, আবুল হাসেম জমাদ্দার বাড়ি ও ইব্রাহীম সিকদারের বাড়িও পাকিস্তানি হানাদাররা পুড়িয়ে দিয়েছিল। এই অবস্থায় বুকাবুনিয়া সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা পাথরঘাটা উপজেলার লেমুয়াতে প্রথম বার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালের ২৩ নভেম্বর সকালে বুকাবুনিয়া থেকে পূর্বদিকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। একজন কিশোর ইনফর্মার মুক্তিযোদ্ধা বামনা অঞ্চলের উপ-অধিনায়ক টু-আইসি আলমগীর হোসেন এর কাছে এসে জানায়- পাকিস্তানি হানাদাররা আল-আকরাম লঞ্চযোগে বামনার বিষখালী নদীর ওপারে বদনীখালী বাজারে এসে দোকানপাটে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে। তখন উপ-অধিনায়ক বামনা বাজারে আক্রমণ হতে পারে ভেবে ৫২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে বুকাবুনিয়া থেকে বামনা রওয়ানা হন।

তখনও গোলাগুলির শব্দে বামনা বাজারে ছোটাছুটি করছেন ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ। মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিল বামনা আমুয়ার খাল রাস্তার পশ্চিম ঢালে ও আমজাদ খান সাহেবের বাড়ির পিছনের বাগানে। সেখান থেকে বামনা থানার দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার।

বামনা থানার অভ্যন্তরে ১৩৫ জন পুলিশ ও রাজাকার অবস্থান করছিল। মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান ও শামশুল আলম জাহাংগীরের নেত্রীত্বে ১০ জন করে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধার দুইটি দল বামনা বাজারের দক্ষিণ খাল পার হয়ে অবস্থান নেন। এদিকে বিষখালী নদী তীরবর্তী বদনীখালী বাজার জ্বালিয়ে সৈন্য বহনকারী লঞ্চ ‘আল আকরাম’ বামনা বন্দরের দিকে আসতে শুরু করল। বামনা লঞ্চঘাট সংলগ্ন পুরাতন বামনা বাজারের কাছাকাছি আসতেই মুক্তিযোদ্ধারা নদীর তীরে অবস্থান নিয়ে ফায়ার শুরু করেন। পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষ থেকেও পাল্টা গোলাগুলি শুরু হয়।

এভাবে প্রায় ঘন্টা দুই বৃষ্টির মত গুলিবর্ষণ চলতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে থাকা ভারতীয় দুইটি মেশিনগানই বিকল হয়ে যায়। পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতিয়ার ও গোলাবারুদের পরিমাণ মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে অনেক বেশি এবং আধুনিক ছিল। তারপরও মুক্তিযোদ্ধা এম আজিজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি দুই ইঞ্চি মর্টার দিয়ে মুহুর্মুহু আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ অবস্থার মধ্যে হানাদার বাহিনী লঞ্চ ঘুরিয়ে বেতাগীর দিকে পিছু হটে।

এদিকে বামনা থানা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা হতে পারে ভেবে তারা বাজার থেকে সরে গিয়ে কাটাখালীর পশ্চিম দিকে খালের পাড়ে এবং মোঃ লাল মিয়া ও আব্দুল কুদ্দুসের নৌকায় অবস্থান নেন। রাতভর মুক্তিযোদ্ধারাও সেখানেই অবস্থান করেন।

পরদিন ২৪ নভেম্বর ভোর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের হাত থেকে বামনা থানা মুক্ত করার জন্য থানা আক্রমন করে। থানার অভ্যন্তরে থেকে পুলিশ ও রাজাকার বাহিনী প্রচণ্ডভাবে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু অদম্য মুক্তিযোদ্ধারা থানার উত্তর ও দক্ষিণ দিকে আশপাশে একটি বেষ্টনী বলয় গড়ে থানা লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নায়েক আমীর হোসেন থানা ভবনে দিকে কয়েকটি গ্রেনেড ছুড়লে পুলিশ ও রাজাকার বাহিনীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণ পরই তারা মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য শক্তির কাছে পিছু হটে বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পন করে। এসময় কয়েকজন রাজাকার সহ পাকিস্তানি সেনা এ যুদ্ধে নিহত হয়। ওই দিনই বামনা থানায় মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উত্তোলন করে বিজয় উল্লাস করে বামনা শক্র মুক্ত করে সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের অভিনন্দন এবং সাহস যোগাতে রাজাপুর থেকে সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাজাহান ওমর বুকাবুনিয়ায় উপস্থিত হন।

পরে সাবসেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা আশপাশের বেশ কিছু এলাকা মুক্ত করে। ৩ ডিসেম্বর বুকাবুনিয়া সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা আঃ সত্তারের(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র) নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা বরগুনাকে হানাদার মুক্ত করার জন্য ভোররাতে বরগুনায় আসেন। ফজরের আজানের পরপরই বরগুনাকে মুক্ত করার জন্য কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে গুলিবর্ষণ করতে শুরু করেন তারা। হঠাৎ করে গুলির শব্দ শুনে হানাদার বাহিনী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা পাল্টা গুলি চালালেও বেশি সময় টিকতে পারেনি। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় তারা। বুকাবুনিয়া সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে বরগুনা মুক্ত হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের মধ্যে ক্যাপ্টেন শাজাহান ওমর (পরবর্রতীতে বীর উত্তম খেতাব প্রাপ্ত) এর নেতৃত্বে এই নবম সেক্টরের সাব সেক্টর বুকাবুনিয়ায় অধিনায়ক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন ক্যাপটেন মেহেদী আলী ইমাম (বীর বিক্রম) ও উপ-অধিনায়ক আলমগীর হোসেন(বীর প্রতীক)। তাদের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত বুকাবুনিয়া আদর্শ মাধ্যামিক বিদ্যালয় সংস্কারের অভাবে ভেঙে পড়ছে। সংরক্ষন করা হয়নি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। সাব-সেক্টরের অস্ত্রাগার ধ্বংসের মুখে। এই স্কুলের শিক্ষক হরিপদ দাস, আবদুল মজিদ মিয়া এবং আবদুল ওয়াহেদ মোল্লা সক্রিয় মুক্তি যুদ্ধে অংশ নেন। উল্লেখিত তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক এখনো বেঁচে আছেন। আমার সৌভাগ্য আমি তাদের স্নেহধন্য ছিলাম এবং এখনো আমাকে মনে রেখেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের নবম সাব সেক্টর হেড কোয়ার্টা বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া বাজারের যে পোল(ব্রিজ) এর উপর পাকিস্তানি সৈন্যদের হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধারা নদীতে ফেলে দিতেন সেই ঐতিহ্যবাহী পোলটি যা বরগুনা জেলার বামনা থানা-পিরোজপুর জেলার মঠবাড়ীয়া থানাকে সংযুক্ত করেছে সেই ঐতিহাসিক পোলটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে হাজারো মানুষ।

বুকাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সবুজ বলেন, বর্তমান প্রজন্মকে স্বাধীনতা যুদ্ধে বুকাবুনিয়া তথা অত্র এলাকার আমজনতার অবদানকে তুলে ধরতে মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের সাব সেক্টর হেড কোয়ার্টার বুকাবুনিয়াতে একটি মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা জরুরি।

যুদ্ধকালীন সময়ের প্রায় আট মাস আমি এখান থেকে ক্যাপ্টেন মেহেদী আলী ঈমাম (আমার ছোট চাচা) সাহেবের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ক্যাম্পে (বামনা, মঠবাড়িয়া, বেতাগী,কাঁঠালিয়া, রাজাপুর,নেয়ামতি এলাকায়) সংবাদ আদানপ্রদান এবং অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার মতো ঝুকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলাম। বয়সে যারা সিনিয়র তারা অনেকেই আমাকে মনে রেখেছেন। স্থানীয় তরুণরাও আমার কথা তাদের মুরুব্বীদের কাছে শুনেছেন। দীর্ঘ ২৪ বছর পর এই এলাকায় এসেছি। আমি বুকাবুনিয়া যাওয়ার খবরে অনেকেই আমাকে দেখতে এসেছেন!

যুদ্ধকালীন কমান্ডার এবং বরগুনা মহাকুমায় বিএলএফ সদস্য মোঃ আনোয়ার হোসেন মজনু খান আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন! তিনি বলেন, আমরা আশাকরি মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিবিজড়িত বুকাবুনিয়ায় বর্তমান সরকার একটি কমপ্লেক্স নির্মাণ করে বরগুনা-পিরোজপুর জেলাবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যারা এখনও গেজেটভুক্ত হতে পারেননি, তাদেরকে দ্রুত গ্রেজেটভুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ করছি।

বামনা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ জয়নাল আবেদীন খান বলেন, হাজারও স্মৃতিবিজড়িত সাব-সেক্টর হেড কোয়ার্টার বুকাবুনিয়ায় স্মৃতিস্তম্ভ দেখতে অনেক দর্শনার্থী আসেন। জরাজীর্ণ বুকাবুনিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন সংস্কার করে এটিকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তরুন প্রজন্ম তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রাগারটি দেখতে পেতো।

আমার সাথে দেখা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময় নৌকার মাঝি রুস্তুম আলী চাচার সাথে। অত্যন্ত সুঠাম দেহের অধিকারী রুস্তম আলীকে আমি ডাকতাম টার্জান চাচা। রুস্তম চাচা জিজ্ঞেস করতেন- "ভাতিজা, টার্জান কি?" যার নৌকায় করে, কখনো হেটে হেটে বিভিন্ন থানার ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্র পৌঁছে দিয়েছিলাম। এমন অনেক দিন হয়েছে- আমি বৃষ্টি কাদায় হাটতে হাটতে ক্লান্তিতে বসে পরতাম। কিন্তু চারিদিকে রাজাকারের শ্যেণদৃষ্টি এড়িয়ে সুঠামদেহী রুস্তম আলী চাচা আমাকে কাঁধে করে হেটে গিয়েছেন মাইলের পর মাইল! নৌকার মাঝি রুস্তম চাচার সাহস আর বীরত্বের কথা ক্যাপ্টেন শাজাহান ওমর, ক্যাপ্টেন মেহেদী ঈমাম অত্যন্ত সম্মানের সাথে মনে রেখেছেন বলেই তিনি তালিকাভূক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পেয়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম চাচা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন- তিনি আমাকে মনে রেখেছেন ভিন্ন ভাবে- তিনি তার ছেলের নাম রেখেছেন- আমার নামে! **

(প্রথম প্রকাশ: ২০১৩ ২৬ মার্চ, দৈনিক ইত্তেফাক, দ্বিতীয় প্রকাশ ৩০ মার্চ ২০১৬, বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত হয়েছিলো ভিন্ন শিরনামে। এবার কিছুটা এডিট করেছি)

** মুক্তি যুদ্ধের উপর আমার চারটি লেখা বিভিন্ন সময়ে দৈনিক ইত্তেফাক সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল যা এই বিজয়ের মাসে পুনঃপ্রকাশ করতে চেষ্টা করবো- কেউ পড়ে আমাকে ধন্যবাদ জানাবেন সেই প্রত্যাশায় নয়, একান্তই নিজ মনের তাগিদে।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৪৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার বয়সী মুক্তিযোদ্ধা সম্ভবত বেশী ছিল না মুক্তিবাহিনীতে। আপনি এবং আরও কিছু কিশোর মুক্তিযোদ্ধা সম্ভবত বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন ৭২ সালে। একটা ছবি আছে বঙ্গন্ধু একজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধাকে কোলে নিয়েছেন। উনি সম্ভবত কাদিরিয়া বাহিনীর সদস্য ছিল।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫৬

জুল ভার্ন বলেছেন: আপনি ঠিক বলেছেন, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলও কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি তখন ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। তার আব্বা ওয়াফিজ আহমেদ এবং বড়ো ভাই ইফতেখার আহমেদও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একবার পাক সেনাদের হাতে বন্দী হয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ছাড়া পেয়ে আবারও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ইন্ডিয়া চলে যান। বংগবন্ধু কিশোর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন, আমারও সৌভাগ্য হয়েছিলো সেখানে উপস্থিত হয়ে বংগ বন্ধুর হাতের স্পর্শ পাওয়ার। তিনি হেটে হেটে আমাদের কারোর কাঁধে হাত রেখে, কারোর মাথায় হাত বুলিয়ে, কারোর গাল টিপে আদর করছিলেন।

উল্লেখ্য, কিশোর মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রিত করে বংগ বন্ধুর সাথে দেখা করানোর উদ্যোক্তা ছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ভাইর আব্বা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াফিজ আহমেদ(ডব্লু আহমেদ নামে সমধিক পরিচিত)। তিনি তখন সরকারের উপ সচিব ছিলেন। শ্রদ্ধেয় ওয়াফিজ আহমেদ ১৯৮৪ সনে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কিম্বা সচিব হিসেবে অবসরে যান।

২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৪৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন:

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫৭

জুল ভার্ন বলেছেন:
১০/১২ বছর আগে কাদেরিয়া বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধা 'জাহাজ মারা হাবিব' স্যারের মুখে শুনেছিলাম, বংগবন্ধু ছবিতে যে শিশুকে কোলে তুলে আদর করেছিলেন সেই শিশুটি কাদেরিয়া বাহিনীর একজন মুক্তি যোদ্ধার সন্তান এবং যুদ্ধকালীন সময়ে কাদেরিয়া বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে থেকেছে।

৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২২

অপ্‌সরা বলেছেন: ভাইয়া অনেক ভালোবাসা। এই ব্লগে আরও একজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হক ভাইয়া।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫৮

জুল ভার্ন বলেছেন: জেনে ভালো লাগলো। সম্ভব হলে ওনার আইডি লিংক দিও।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৪| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:০৫

অপ্‌সরা বলেছেন: ভাইয়া এখন আর ব্লগে আসে না।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫২

জুল ভার্ন বলেছেন: ইশ ওনার সাথে পরিচিত হতে পারলে ভালো লাগতো। আমাদের আরও একজন অগ্রজ মুক্তিযোদ্ধা কামাল ভাইও ব্লগে আসছেন না!

৫| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কোনো লেখা পড়তে আমার ভালো লাগে। আমি আগ্রহ নিয়ে পড়ি।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫৪

জুল ভার্ন বলেছেন: দেশপ্রেমিক নাগরিকদের প্রথম পছন্দ মুক্তি যুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের সবকিছু। ❤️

৬| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:১৩

অনল চৌধুরী বলেছেন: আপনার নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা ভালো চলচ্চিত্র বানানো।
এসব ঘটনা বিস্তারিত লিখে রাখেন। ভবিষ্যতে কেউ বানাবে।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:০০

জুল ভার্ন বলেছেন: নাই বা হলো চলচ্চিত্র, শুধু প্রত্যাশা- এইসব ছোটো ছোটো স্মৃতি কথা, ছোটো ছোটো ত্যাগের কথা ভবিষ্যত প্রজন্ম মনে রেখে অনেক জীবন আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সচেষ্ট থাকবে।
ধন্যবাদ ভাইয়া।

৭| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৪৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন:

এমন বহূ জায়গা এখনো অযত্নেই পড়ে আছে। ফেনীর বিলোনিয়া সম্মুখ সমরে যুদ্ধ হয়েছে আর ওটা এখন চোরা কারবারী আর মাদক কারবারীদের অনেক রুট ।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:১৩

জুল ভার্ন বলেছেন: আমরা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি রক্ষা করতে জানিনা! অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকি!

৮| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৩৪

অপু তানভীর বলেছেন: এই সমস্ত মুক্তিযুদ্ধের গল্প গুলোই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস । আপনার কাছে অনুরোধ থাকবে লেখা গুলো আবারও প্রকাশিত করার।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪০

জুল ভার্ন বলেছেন: বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী আসল ইতিহাস লিখলে কপালে আরও খারাবী আছে....আমার এই পোস্টেই একজন জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করেছি- যার পিতা ছিলেন স্বাধীনতা বিরোধী.... অথচ এই লোকের সুপারিশ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তোলা যায়না!

৯| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:২৪

ঢাবিয়ান বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধা রইল। পোস্টে ++++++++

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৩

জুল ভার্ন বলেছেন: ভালোবাসা অফুরান ❤️

১০| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:১০

আহমেদ জী এস বলেছেন: জুল ভার্ন,




এইসব ছোটো ছোটো স্মৃতি কথা, ছোটো ছোটো ত্যাগের কথা জমা হয়ে হয়ে ইতিহাসের বিশাল মহীরুহ হবে। তার ছায়াতলে বসে অনেক জীবন আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভবিষ্যত প্রজন্ম নিজেদের কাজে লাগাতে পারবে।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৪০

জুল ভার্ন বলেছেন: প্রিয় জী এস ভাইজান, আপনার মন্তব্য আশাব্যাঞ্জক হলেও আমি হতাশ! আমার মনে হয়না- আমরা যে ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক তথা রাস্ট্রীয় অবক্ষয়ে নিমজ্জিত- সেখান থেকে আর কখনো না হলেও অদূর কিম্বা সুদূর ভবিষ্যতে স্বাভাবিক সুন্দরে ফিরে আসতে সক্ষম হব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.