নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ \n\nএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জিনাত লাইব্রেরী এবং এরিখ মারিয়া রেমার্ক.........

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:২৫

জিনাত লাইব্রেরী এবং এরিখ মারিয়া রেমার্ক........

১৭/০৪/২০২৩ ইংরেজি তারিখ প্রথম আলো পত্রিকা ঢাকা নিউমার্কেট এর ঐতিহ্যবাহী জিনাত লাইব্রেরী বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর পড়ে যেমন বিষাদে আক্রান্ত হয়েছি তেমনই নস্টালজিক হয়ে গিয়েছি। বই পড়ার প্রতি আমার নেশা সম্পর্কে বিভিন্ন সময় স্যোশাল মিডিয়ায় লিখে বই না পড়া দুই-একজন ব্লগারের টিজিং এর শিকার হয়েছি- সে কথা বলার জন্য এই পোস্ট নয়। এই পোস্টের বিষয় ঢাকা নিউমার্কেট এর ঐতিহ্যবাহী জিনাত লাইব্রেরী এবং সেই লাইব্রেরীকে ঘিরে আমার কিছু স্মৃতি শেয়ার করা।


আমাদের ছেলেবেলায় পাঠকদের অনেকেরই কমিকসের প্রতি ভালোবাসা জন্মেছে জিনাত বুকের হাত ধরে। ছেলেবেলায় কসমিকস, কার্টুন বই এবং কৈশোর উত্তীর্ণ-যুবাদের বিদেশী বইয়ের অনুবাদ এবং মূল বইয়ের অন্যতম প্রাপ্তিস্থান ছিলো ঢাকা নিউমার্কেট এর ঐতিহ্যবাহী জিনাত লাইব্রেরী। ১৯৬৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে জিনাত বুক সাপ্লাই লিমিটেড। জিনাত বুকের যখন রমরমা অবস্থা, তখন মানুষের হাতে হাতে মুঠোফোন ছিল না। ডিশের লাইন ছিল না, বিনোদনেরও তেমন কোনো মাধ্যম ছিল না। তখন ছোটরা অবিভাবকদের হাত ধরে বইয়ের দোকানে যেত। বই কিনত, বই পড়ত। ভালো বই পড়ার পাঠক তৈরীতে বিরাট ভূমিকা পালন করেছিলো জিনাত লাইব্রেরী।

এই লাইব্রেরীর মালিকের সাথে আমাদের বৃহত্তর যৌথ পরিবারের একটা সামাজিক বন্ধন গড়ে উঠেছিল। ১৯৫৫ সন পূর্ব গেন্ডারিয়ায় কাছাকাছি বাড়ি সেই সূত্রে জিনাত লাইব্রেরীর মালিক শ্রদ্ধেয় সৈয়দ আবু সালেহ মোহাম্মদ ফয়সাল সাহেবের বাবা সৈয়দ আবদুল মালেক সাহেবের সাথে বাবা-চাচা এবং বড়ো কাজীনদের একটা সুসম্পর্ক ছিল। ১৯৫৫ সালে ততকালীন DIT(Dacca Improvement Trust) ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকায় যৌথ পরিবার ভেঙে আমার আব্বা এবং ছোট চাচা ধানমণ্ডি চলে আসেন। আমাদের বড়ো চাচা, মেঝ চাচার পরিবার গেন্ডারিয়াতে স্থায়ীভাবে থেকে যান। বৈবাহিক সূত্রে দুই ফুফুদের একজন লালবাগ এবং অন্যজন মোহাম্মদপুর চলে যান। কিন্তু ১৯৬৩ সালে নিউমার্কেটে জিনাত লাইব্রেরীতে বই কেনার সুবাদে সবার সাথেই জিনাত লাইব্রেরী তথা লাইব্রেরীর প্রতিষ্ঠাতা মালিক সৈয়দ আবদুল মালেক এবং পরবর্তীতে সৈয়দ আবু সালেহ মোহাম্মদ ফয়সাল সাহেবের সম্পর্ক অটুট থাকে।


জিনাত লাইব্রেরী তথা সৈয়দ আবু সালেহ মোহাম্মদ ফয়সাল শুধু একজন বই বিক্রেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন অভিভাবকের মতো। যিনি পাঠকদের হাতে বিশ্ব সাহিত্যের ভান্ডার তুলে দিতেন যতটা না একজন ব্যাবসায়ী হিসেবে তার চাইতে অনেক বেশী একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে। এই লাইব্রেরীতে বই কিনতে গেলে যেকোনো নতুন আসা বইয়ের সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা দিতেন লাইব্রেরীর মালিক সৈয়দ আবু সালেহ মোহাম্মদ ফয়সাল সাহেব, একই সংগে তিনি বইয়ের লেখক সম্পর্কেও বলতেন। তিনি সব বইয়ের সারমর্মটা ক্রেতা পাঠকদের জানিয়ে দিতেন। ক্লাস টেন-ইলেভেনের সময় স্যারদের মুখে শুনতে পাই এরিখ মারিয়া রেমার্ক এর নাম এবং তার লেখা বেশকিছু বই সম্পর্কে।

লেখক এরিখ মারিয়া রেমার্ক সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য জানতে পারি সৈয়দ আবু সালেহ মোহাম্মদ ফয়সাল সাহেব এর কাছে। রেমার্কের বই পড়ার আগেই মুগ্ধ হই রেমার্কের জীবনচারিতায়। ১৯৭৪/১৯৭৫ সনে জিনাত লাইব্রেরী থেকে রেমার্কের লেখা 'অল কোয়ায়েন্ট অন দ্যা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট' এবং 'থ্রি কমরেডস' এর সাবলীল বাংলা অনুবাদ কিনে 'তিন বন্ধু' বন্ধুত্বের এমন মর্মস্পর্শী কাহিনী পড়ে অশ্রু সংবরণ করতে পারিনি। রেমার্কের আরও একটি ভালো উপন্যাস 'দ্যা রোড ব্যাক' - সেটিও বন্ধুত্বের কাহিনী নিয়ে লেখা। বইটি সম্পর্কে বলেছিলেন- লাইব্রেরীর মালিক। কিন্তু বইটির কোনো বাংলা অনুবাদ বের হয়নি। তখনও ইংরেজি বই পড়ায় ততটা সাবলীল নই, যদিও বুবুর সাথে বৃটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরীতে যাওয়ার সুবাদে শিশুতোষ ইংরেজি বই পড়তে মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে ছিলাম।
জিনাত লাইব্রেবীর মালিকের মুখে প্রাথমিক ভাবে বইয়ের সারমর্ম শুনে 'দ্যা রোড ব্যাক' মূল বইটি কিনে কষ্ট করে পড়লেও পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। বন্ধু এবং বন্ধুত্বের প্রতি রেমার্কের ছিলো অপরিসীম ভালোবাসা, সম্মান ও মুগ্ধতা। বন্ধুত্বের কাহিনী নিয়ে লেখা দুইটি পাঠকপ্রিয় বই 'থ্রি কমরেডস' এবং 'দ্যা রোড ব্যাক' নিয়ে প্রেসমিটে রেমার্ককে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন- 'আপনি কি আমেরিকানদের পছন্দ করেন?'
*রেমার্ক:- না।
'তবে কি জার্মানদের পছন্দ করেন?'
*রেমার্ক:- না।
'তাহলে ইংরেজ কিম্বা ফরাসীদের পছন্দ করেন?'
*রেমার্ক:- না।
'তাহলে আপনি কোন জাতের মানুষদের পছন্দ করেন?'
*রেমার্ক:- "কোনো জাতপাত, ধর্ম বর্ণ নয়, আমি পছন্দ করি আমার বন্ধুদের।"

এটাই ছিলো রেমার্কের বন্ধু দর্শন। এমন বন্ধুবতসল মানুষকে আমিও ভালোবাসি তার লেখকসত্বার চাইতেও বেশী। সেই থেকেই আমি এরিখ মারিয়া রেমার্ক ভক্ত।

শুধু বই পড়ে নয়, মুগ্ধ হয়েছিলাম এরিখ মারিয়া রেমার্ক এর বৈচিত্র্যময় জীবনের গল্পে। তিনি বিরাট অংকের একটা লটারি জিতে হঠাৎ করে বিরাট ধনাঢ্য ব্যক্তি হয়ে যান। তিনি স্বদেশ ছেড়ে চলে যান মার্কিন মুল্লুক এর অভিজাত এলাকা লসএঞ্জেলস। তিনি একতরফা ভাবে হলিউডের এক নায়িকার প্রেমে পড়েন। সেই নায়িকার প্রেমিক ছিলেন হলিউডের ততকালীন ক্ষমতাবান এবং বিখ্যাত অভিনেতা ডগলাস ফেয়ারব্যাংকস। রেমার্ক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে যান ডগলাস ফেয়ারব্যাংকস এর কাছে....


Erich Maria Remarque (জুন ২২, ১৮৯৮ – সেপ্টেম্বর ২৫, ১৯৭০) একজন জার্মান সাহিত্যিক ও স্বনামধন্য লেখক। তিনি তার যুদ্ধবিরোধী উপন্যাস “অল কোয়াইট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট”(All Quiet on the Western Front) এর জন্য বিখ্যাত। তার ছদ্মনাম ছিল এরিক পল রেমার্ক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একজন জার্মান সৈনিক ছিলেন এরিখ মারিয়া রেমার্ক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি ১৯২৯ সালে রচনা করেন বিখ্যাত উপন্যাস অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট।

(ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহিত )

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৪৯

নতুন নকিব বলেছেন:



একেবারে শেষ সময়ে যখন বন্ধ হয়ে যায় ঠিক তখনই পত্রিকান্তরে জেনেছিলাম জিনাত লাইব্রেরী সম্মন্ধে। বইয়ের ব্যবসার পাশাপাশি জ্ঞানের সেবায় তাদের ব্যতিক্রমী আন্তরিকতার সংবাদে মুগ্ধ হয়েছি। এমন গুণী ব্যক্তিরাই তখনকার সময় হাজারও পাঠকের জ্ঞান পিপাসা নিবারণে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন।

আর এরিখ মারিয়া রেমার্ক এর কোনো বই পড়া হয়নি। আপনার এই পোস্ট পাঠের পরে ইচ্ছে জাগছে। ধন্যবাদ।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৪

জুল ভার্ন বলেছেন: যখন জিনাত লাইব্রেরী বন্ধ হয়ে যায়- সেই সংবাদ পড়ে আমি ফেসবুকে একটা ছোট পোস্ট লিখেছিলাম, এবাই সেই পোস্ট একটু বড় করে লিখেছি। রচনাসমূহ উপন্যাস:
(১৯২৯) All Quiet on the Western Front)
(১৯৩১) The Road Back
(১৯৩৭) Three Comrades
(১৯৪১) Flotsam
(১৯৪৬) Arch of Triump
(১৯৫২) Spark of Life
(১৯৫৪) A Time to Live and a Time to Die
(১৯৫৬) The Black Obelisk
(১৯৬১) Heaven Has No Favorites
(১৯৬২) The Night in Lisbon
(১৯৭১) Shadows in Paradise
(১৯৯৮) Das Unbekannte Werk (৫ খন্ড) এই বইগুলো বিশ্ব বিখ্যাত।

২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫

ডার্ক ম্যান বলেছেন: আমার অনেক দিনের ইচ্ছে আমাদের এলাকায় একটা ভালো বুকশপ আর প্রকাশনী করবো।
গতবছর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুরু করেও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ঝামেলা একটার পর একটা লেগেই আছে।
কয়েক বছর পর হয়তো ভালোভাবে শুরু করতে পারবো।
এখন তো বুকশপে রিফ্রেশমেন্টের ব্যবস্থা রাখতে হয়। নাহলে খরচ তোলা সম্ভব না।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১০

জুল ভার্ন বলেছেন: আপনি ঠিক বলেছেন- এখন সেই আগের প্রচলিত লাইব্রেরীর ধারনা বদলে গিয়েছে। সাথে থাকতে হবে ক্যাফে! প্রকাশনা শিল্পের একখন করুণ দশা! তার মধ্যেও কেউ কেউ ভালো করেছেন। আমাদের সামু ব্লগের তরুণ ব্লগার আবু বকর রাজু (স্বরে অ প্রকাশনী) মাত্র তিন বছরেই প্রকাশনা ব্যাবসায় খুব ভালো করেছে।

৩| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৯

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: সৈয়দ আবু সালেহ মোহাম্মদ ফয়সাল সাহেবের কথা শুনে ভালো লাগলো। এসব নিভৃতচারী মানুষ প্রতক্ষ্য এবং পরোক্ষ্যভাবে সমাজ বিনির্মানে অসীম ভুমিকা রেখেছেন।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩৬

জুল ভার্ন বলেছেন: একমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.