নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
নোরা ইনায়েত খান....
নূর থেকে নোরা ইনায়েত খান ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে On Her Majesty's secret services এর প্রথম মহিলা গুপ্তচর!
১৩ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৪, ডাচাউ জার্মানি।
খুব ভোরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বন্দী শিবিরের ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করানো হলো ত্রিশ বছরের এক তরুণীকে। বিদ্ধস্ত বেশবাস আর শরীরে রক্তের দাগ দেখে বোঝাই যায় কি নারকীয় অত্যাচার করা হয়েছে মেয়েটির ওপর। জন্ম থেকে মুখচোরা মেয়েটি মুখ বন্ধ রেখেছিলেন গেস্টাপো বাহিনীর অকথ্য অত্যাচারেও। ফায়ারিং স্কোয়াডের গুলিতে মৃত্যুর আগে অস্ফুট উচ্চারণে বেরিয়েছিল শুধু- ‘লিবার্তে' মানে ‘মুক্তি’! বুলেটবিদ্ধ দেহটি তারপরেই লুটিয়ে পড়লো। অভিযোগ মারাত্মক, বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির হয়ে জার্মানির বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি!
যুদ্ধ থেকে শান্তি, যার দূরত্ব আলোকবর্ষ, সেই সুফিবাদী পরিবারে জন্ম হয়েছিল মেয়েটির। বাবা আদর করে নাম রেখেছিল নূর। বাবা ইনায়েত খান ছিলেন বরোদা রাজ্যের নামকরা সুফি সাধক এবং ধ্রুপদী সঙ্গীত শিল্পী, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত গাওয়ার জন্য রাজ দরবারেও ছিলেন সমাদৃত।
হায়দরাবাদের নিজামের কাছ থেকে ‘তানসেন’ উপাধি পাওয়া এই শিল্পী সুফিবাদকে নিয়ে গিয়েছিলেন পশ্চিমে। ইনায়তের দাদী কাসিম বিবি ছিলেন টিপু সুলতানের নাতনি। অর্থাৎ তাদের ধমনীতে বইতো সুলতান বংশের রক্ত। বাবার সান্নিধ্যে নূরও হয়ে ওঠেন সঙ্গীতানুরাগী।
এই মেয়েই একসময় নাৎসী বাহিনীর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল! যার জীবনী নিয়ে তৈরী হয়েছে রুদ্ধশ্বাস হলিউডি সিনেমা। শুধু তাই নয় সাহসিকতার জন্য পেয়েছেন বৃটেন ও ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান, উভয় দেশ ছাড়াও ভারতেও বেরিয়েছে তার নামাঙ্কিত নোট ও ডাকটিকিট!
তিনি ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে On Her Majesty's secret services এর প্রথম মহিলা গুপ্তচর! গায়িকা থেকে এক ভারতীয় নারীর গুপ্তচর হবার এক দুঃসাহসিক কাহিনী!
সুফিবাদের মাহাত্ম্য প্রচারের উদ্দেশ্যে সাগর পেরিয়ে ইনায়েত আসেন আমেরিকায়। সানফ্রানসিসকোতে এক মার্কিন মহিলার সাথে পরিচয় ও পরিণয়, বিয়ের পর জারের আমন্ত্রণে সস্ত্রীক যান মস্কোয় এবং সেখানেই ১৯১৪ সালে জন্ম হয় নূরের। জন্মের কয়েক মাস পরেই রাশিয়ায় শুরু হয় বলশেভিক বিদ্রোহ, সাথে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এনায়েত চলে আসেন প্যারিসে। পড়াশোনার সাথে সাথে নূর সঙ্গীত চর্চাও শুরু করে। তেরো বছর যখন বয়স হঠাৎই দুদিনের জ্বরে মারা যান বাবা, চার ভাই বোনকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম মায়ের সাহায্যে নূর গান গাইতে থাকে রেডিও প্যারিসে। সাথে শিশুদের জন্য শুরু করে বই ও নাটক লেখা। সংগীত ছিল রক্তে তাই অচিরেই বেশ নামডাক হলো।
শুরু হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, নাজী ফৌজ দখল করে নিলো প্যারিস। মা আর ভাইবোনদের নিয়ে পালিয়ে আসে ইংল্যান্ড। পরের ভাই বিলায়েত যোগ দেয় Royal Airforce এ সে নিজে Women’s Auxillary Air Force ভর্তি হয় প্রথম মহিলা শিক্ষানবিশী wireless operator । ১৯৪১ সালে তাকে Abingdon বম্বার কম্যান্ডে নিয়ে রিক্রুট করা হয় এবং Special Operations Executive (SOE) বাহিনীর সদস্য রূপে মারণাস্ত্র, বিস্ফোরক ও ধ্বংসাত্মক কাজের বিশেষ ট্রেণিং দেওয়া হয়। শেখানো হয় সাংকেতিক যোগাযোগ ও বিনা অস্ত্রে হত্যার কৌশল। দেড় বছর পর তাকে একদিন রাতের অন্ধকারে ফরাসী উপকূলে বিমান থেকে প্যারাশুটে নামিয়ে দেয়া হলো। নূর ইনায়েত খান ফ্রান্সের মাটিতে পা রাখলো "নোরা ম্যাডেলিন" পরিচয়ে, SOE এর প্রথম মহিলা এজেন্ট! স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিল ফ্রেঞ্চ রেজিস্ট্যান্স গ্রুপ।
তিনমাস ধরে নূর লাগাতার জার্মান সেনার অবস্থান নিখুঁত ভাবে বেতার মাধ্যমে জানিয়ে গেল মিত্রবাহিনীর দপ্তরে। ক্রমাগত অবস্থান বদলানোয় নাজী বাহিনী তাকে ছুঁতেও পারলো না। অনর্গল ফরাসী বলতে পারার জন্য পেয়ে গেল বাড়তি সুবিধা। অবশেষে এলো সেই কালো দিন, ১৯৪৩ সালের ১৩ই অক্টোবর..... এক ফরাসী ডবল এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় প্যারিসের উপকন্ঠ থেকে ধরা পড়লো সে গেষ্টাপোর হাতে।
নাৎসী গোয়েন্দা বিভাগ বা এসডি বাহিনীর জেরার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। তৎকালীন এসডি প্রধান কিয়েফ পরে স্বীকার করেছিলেন জেরায় নূরের মুখ থেকে তাঁর কাজ সংক্রান্ত কোনও কথা বলানো যায়নি। তিনি ক্রমাগত নিজের শৈশবের গল্প করে গিয়েছিলেন। বিভ্রান্ত করেছিলেন নাৎসি গোয়েন্দাদের। লাগাতার অত্যাচার চালিয়েও মুখ থেকে কোন কথা বের করতে পারলো না তারা।
গেস্টাপোদের কবল থেকে দু’বার পালানোর চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হলেন, তখন তাঁকে ‘অত্যন্ত "বিপজ্জনক বন্দী"র তকমা দিয়ে দেড়মাস পর পাঠিয়ে দেয়া হলো জার্মানির Pforzheim কারাগারে।
কারাগারে একটি সেলে একা বন্দী ছিলেন তিনি। হাতে পায়ে ছিল শিকল। রাতের অন্ধকারে শেকলে বাঁধা মেয়েটি চিৎকার করে কাঁদতো। সেই সময়কার অন্য বন্দিদের কাছে এই তথ্য পেয়েছিলেন তার জীবনীকাররা। সহ বন্দীদের বলে যেতে পেরেছিলেন প্রকৃত পরিচয়। জানিয়ে গিয়েছিলেন লন্ডনে তাঁর মায়ের ঠিকানা। অকথ্য অত্যাচারে একসময় দেখা দিলো মস্তিষ্ক বিকৃতি।
অবশেষে এলো সেই দিন... ১৩ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ সাল, ডাচাউ জেলের বধ্যভূমিতে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নোরার বয়স তখন মাত্র ত্রিশ বছর।
অভূতপূর্ব এই সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের জন্য ফরাসী সরকার তাকে মরণোত্তর Croix de Guerre এবং বৃটিশ সরকার George Cross সম্মানে ভূষিত করে। ২০১২ সালে লন্ডনের গর্ডন স্কোয়ারে নূর ইনায়েত খানের আবক্ষ ভাষ্কর্য উন্মোচন করেন স্বয়ং রানী এলিজাবেথ।
২০২০ সালের অগস্টে তাঁকে মুসলিম রীতিতে সমাহিত করা হয় ব্রিটেনের রাজকীয় ‘ব্লু প্লেক’ গোরস্থানে। ভারতীয় হিসেবে তিনিই এই সম্মানের প্রথম প্রাপক।
তবে কোন দেশকে তাঁর মাতৃভূমি বলে মনে করবেন? নিজেও কি জানতেন নূর? বাবার সুফিবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে গোটা বিশ্বই যে ছিল তাঁর কাছে দেশ। ডাচাউ ক্যাম্পের এক ওলন্দাজ বন্দী পরে জানিয়েছিলেন মৃত্যুর আগে নূরের শেষ উচ্চারিত শব্দ ছিল ‘লিবার্তে’।
কার মুক্তি চেয়েছিলেন শিকড়হীন এই ভারতীয় রাজ উত্তরসূরি? নিজের যন্ত্রণাবিদ্ধ জীবন থেকে কি? উত্তরটা নিয়ে গিয়েছে তাঁর মৃত্যুর সঙ্গেই।
Courtesy: "Noor Inayat Khan: remembering Britain's Muslim war heroine.
The Oxford Dictionary Nature Biography
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২০
জুল ভার্ন বলেছেন: মস্তিষ্ক বিকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু লেখা পাইনি। তথ্যসূত্র ইংরেজি বই। যেখানে "brain malformations"- উল্লেখ করেছে, আমি বাংলায় 'মস্তিষ্ক বিকৃতি' লিখেছি।
আমার ধারণা গুপ্তচর বৃত্তিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এবং দেশে নারীরা এগিয়ে। এই ব্লগেই আমি লিখেছিলাম 'ফাইভ আইজ' নিয়ে, যেখানে বৃটিশ, মার্কিন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং কানাডিয়ান গুপ্তচরদের অনেক বিখ্যাত ছিলেন নারীরা।
২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১১
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: অনেক সাহসী এক নারীর জীবন বিত্তান্ত জানতে পারলাম।
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২০
জুল ভার্ন বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৫
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
মস্তিষ্কের বিকৃতি কেমন রুপ ছিলো নোরার? গুপ্তচরবৃত্তিতে মহিলাদের সাকসেস রেট কেমন?