নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
"... শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের সমকালীন ইতিহাসের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। সমকালীন ইতিহাস চর্চা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ সমকালীন ইতিহাসের কুশীলবদের কেন্দ্র করে প্রচন্ড আবেগ উদ্বেলিত হয়। এদের প্রতি কারুর থাকে প্রচন্ড ভক্তি, আবার কারুর থাকে প্রচন্ড ঘৃণা। এই বিপরীতমুখী অনুভূতির প্রতি সুবিচার করা সহজ নয়। তদুপরি, সমকালীন ইতিহাসের অনেক তথ্য রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার বেড়াজালে বন্দী থাকে, ফলে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই সমকালীন রাজনীতি, কূটনীতি ও সমরনীতি সংক্রান্ত তথ্যাবলী সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ, সামরিক বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র বিভাগের আর্কাইভে সংরক্ষিত থাকে। এসব তথ্য বিশেষ সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার আগে প্রকাশ করা হয় না। ইংল্যান্ডে এসব তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য সময়সীমা পঞ্চাশ বছর। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে আবার তিরিশ বছর বলে শুনেছি। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর আটাশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। সুতরাং রাষ্ট্রীয় গোপন দলিল এখনও গবেষকদের ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা হয়নি। তাছাড়া বাংলাদেশে এ জাতীয় দলিল-দস্তাবেজ প্রকাশের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে কিনা তাও নিশ্চিত জানিনা। এখানে শেখ মুজিবুর রহমানের মত রাজনৈতিকভাবে সমকালীন ব্যক্তিত্বের নির্মোহ ঐতিহাসিক মূল্যায়ন সম্ভব নয়। আজকাল তাকে নিয়ে যা কিছু লেখা হচ্ছে তা তাকে দেবতায় পরিণত করছে অথবা একজন খলনায়কে পরিণত করছে। এরকম মূল্যায়ন জাতির জন্য কোন কাজে আসবে না।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্কুল-কলেজে পাঠ্য ইতিহাস, সমাজবিদ্যা ও সাহিত্য পুস্তকের বিষয়বস্তুতে বিরাট পরিবর্তন এনেছে। যে অধ্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রসঙ্গ আছে সে অধ্যায়ে এই পরিবর্তনের চিহ্নটি স্পষ্ট। এর ফলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসের কতটুকু সততার সঙ্গে পরিচিত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ইতিহাসের উপর এই অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ আমাদের জাতীয় ঐক্যকেও দূর্বল করছে। প্রশ্ন হল, আজ পর্যন্ত যেখানে বাংলাদেশ সরকার, পাকিস্তান সরকার, ভারত সরকার, বৃটিশ সরকার, মার্কিন সরকার ও রুশ সরকারের গোপন রাষ্ট্রীয় দলিল-দস্তাবেজ গবেষকদের জন্য সম্পূর্ণভাবে উন্মূক্ত করা হয়নি, সে ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন আদৌ সম্ভব কি?
১৯৭১-এর মার্চ মাসে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে আপস-সমঝোতার উদ্দেশে আলোচনা হয়েছিল। সে আলোচনায় শেখ মুজিবুর রহমান ও তার উপদেষ্টারা কি বলেছিলেন, অন্যদিকে ইয়াহিয়া ও তার উপদেষ্টারা কি বলেছিলেন তা আজও অজ্ঞাত। সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত জে. এন. দীক্ষিতের 'লিবারেশন এন্ড বিয়ন্ড' বই থেকে জানা যায়, ২৩ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের উপদেষ্টারা তাকে আত্মগোপন করতে এবং আত্মগোপন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সেই অনুরোধে কর্ণপাত করেননি। এই প্রসঙ্গে এক সময় শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে কথা বলেছিলেন, এমন একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে আমি সম্প্রতি জানতে পেরেছি - শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ভারতে যাওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। তিনি আশংকা প্রকাশ করেছিলেন, ভারতে গেলে তার নিহত হবার সম্ভাবনা আছে। অন্যদিকে একই আলোচনায় তিনি জানিয়েছিলেন ঐ সময়ে দেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী প্রবেশ করেছে। ফলে তার পক্ষে কোন প্রকার আপস-সমঝোতায় আসাও সম্ভব ছিল না। সে সময় যে পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী প্রবেশ করেছিল সে সম্পর্কে জেনারেল নিয়াজীর 'বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান' বইতে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এ থেকে যা বুঝা যায় বাংলাদেশী ও পাকিস্তানি উভয় সূত্র থেকেই এ ধরণের তথ্যের সমর্থন মিলে। তবে পাকিস্তানি সূত্রটি বাংলাদেশে গণহত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় অনেকেই তার তথ্যকে আমলে আনতে চাইবেন না।
যাই হোক না কেন, একাত্তরের মার্চের দিনগুলো শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষার সময় ছিল। ইতিহাসের এই কঠিন পরীক্ষার দিনগুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমান কি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছিলেন, কেন করেছিলেন এবং কোন লক্ষ্যে করেছিলেন, সেই সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের জন্য আমাদের হয়ত আরও অনেককাল অপেক্ষা করতে হবে। আমরা এটাও জানি, একাত্তরের মার্চে পৃথিবীর অনেক দেশের রাষ্ট্রদূতবৃন্দ শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক আলোচনা করেছিলেন। সে সব আলোচনার বিষয়বস্তুও আমাদের অজানা। সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে এসব আলোচনার বিষয়বস্তু সংগ্রহ করা যেতে পারে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন। সে সময় তার পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কোন আলোচনা হয়েছিল কি না তাও জানা দরকার।
শোনা যায়, কিসিঞ্জার চীন সফরে যাওয়ার পথে পাকিস্তানে বন্দী তার অন্যতম উপদেষ্টা ড: কামাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। আদৌ বলেছিলেন কি? বলে থাকলে তার বিষয়বস্তু কি ছিল তাও জানা দরকার। ড: কামাল হোসেন এখনও জীবিত আছেন। তিনি এ ব্যাপারে আলোকপাত করলে আমাদের সমকালীন ইতিহাসের ঘাটতি কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে। দূর্ভাগ্যের বিষয় হল, শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারাও প্রায় সবাই নিহত হয়েছেন। ফলে তাদের কাছ থেকে যে সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেত তা আজ আমাদের আয়ত্ত্বের বাইরে॥" - ১৫/০৮/১৯৯৯ইং
- ড: মাহবুব উল্লাহ (অধ্যাপক,অর্থনীতিবিদ) / নির্বাচিত প্রবন্ধ ॥ [ শিকড় - ফেব্রুয়ারী, ২০০২ । পৃ: ২০৫-২০৬ ]
২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২১
জুল ভার্ন বলেছেন: আমার একার দেখা বা মূল্যায়ন কোনো ফ্যাক্টর নয়।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪০
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
শেখ মুজিবুরকে আপনি কীভাবে দেখেন?