নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জুলভার্ন কল সাইন.......

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:২২

“জুলভার্ন কল সাইন”.......

২৭ অক্টোবর ২০১৮ সাল। পিরোজপুর যাচ্ছি। কয়েকদিন আগেই বি আই ডব্লিউ টি এ ষ্টীমারে একটা কেবিন রিজার্ভ করে রেখেছি। সন্ধ্যা ছয়টায় ছেড়ে যাবে জাহাজ।
তবে রাজধানী মানে ট্রাফিক নামের এক অনন্ত দুঃস্বপ্ন। তাই সাড়ে তিনটাতেই উবার ডেকে বেরিয়ে পড়েছি।
সায়েন্সল্যাব থেকে শুরু- একদম বাম্পার টু বাম্পার জ্যাম।
গাড়ি থেমে আছে, হর্ণ বাজছে, ধোঁয়া আর ধৈর্যের পরীক্ষা চলছে সমান তালে।

এই সময়ই পরপর কয়েকবার একটা অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসতে লাগল। প্রথমে উপেক্ষা করেছিলাম। তারপর বিরক্ত হয়ে ধরলাম।

“হ্যালো, হুমায়ুন কবির স্যার বলছেন?”- একটা অচেনা কণ্ঠ।
“জ্বি বলছি, কে বলছেন?”
“স্যার, আমি বি আই ডব্লিউ টি এ রিজার্ভেশন অফিস থেকে বলছি। আপনার কেবিন রিজার্ভ ছিল না? যদি না যান, ক্যান্সেল করলে অন্য যাত্রীকে দিতে পারি, টাকাও ফেরত পাবেন।”

আমি কিছুটা স্বস্তি নিয়ে বললাম, “না না, যাচ্ছি।”
“ঠিক আছে স্যার। জাহাজ ছাড়ার আধঘণ্টা আগে চলে আসবেন। ধন্যবাদ।”

লাইন কেটে গেল।
একটু পর আবার নতুন নম্বর থেকে ফোন।

“হুমায়ুন ভাই, কেমন আছেন?”
“ভালো আছি, কে বলছেন প্লিজ?”
“চিনতে পারলেন না ভাই? আহা, এখন আর কে কাকে চেনে...”
একটু লজ্জা লাগল। “দুঃখিত ভাই, চিনতে পারছি না।”
“কোনো সমস্যা নাই। আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন?”
“হ্যাঁ, সদরঘাট যাচ্ছি। স্টীমারে উঠব।”

লাইন কেটে গেল।
আমি অবাক। কে এই মানুষটা? কণ্ঠটা অচেনা, কিন্তু আমার নাম বললো...

২০ মিনিট পর আবার ফোন।

“হুমায়ুন ভাই, চিনতে পারলেন? না চিনলে কোনো সমস্যা নাই। ভাবী-বাচ্চারা কেমন আছে?”

“ভালো। কিন্তু আপনি কে?”

“রাজীব নামটা কি মনে আছে? আমি রাজীব।”

“রাজীব?” আমি একটু থেমে বললাম, “অনেক রাজীবকেই তো চিনতাম ভাই। কোন রাজীব আপনি?”

“থাক, এখনই চিনবেন না, সামনে দেখা হবে...”

লাইনটা আবার কেটে গেল।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম- রাজীব নামটা মাথায় বাজতে থাকল, কিন্তু কোনো মুখের সাথে মিলাতে পারলাম না।

বিকেলের আলো শেষে সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে। সদরঘাটের ভিড়, চায়ের গন্ধ, স্টীমারের হুইসেল- সব মিলিয়ে এক ধরনের শান্তির ক্লান্তি।
কেবিন নম্বর ০৭, দোতলায়। আসরের নামাজের ওয়াক্ত প্রায় শেষ। তাই রুমে ঢুকেই আগে নামাজ আদায় করে লাগেজ রেখে ফ্রেশ হচ্ছি।
ঠিক তখনই দরজায় টোকা।

একজন বয়স্ক, পরিপাটি মানুষ দাঁড়িয়ে- কাঁধে কাপড়ের ব্যাগ, মুখে হালকা হাসি।
“আমার নাম মোরশেদ আলী খান। সাংবাদিক। এখন ডেইলি স্টারে, আগে বিবিসি-তে কাজ করতাম। কাউখালী যাবো- কিন্তু কেবিন পেলাম না। কাউন্টার থেকে জানলাম- আপনি একাই যাচ্ছেন একটা ডাবল কেবিনে। একটা অনুরোধ ছিল- আপনি যদি কেবিনটা শেয়ার করেন...”

আমি একটু ইতস্তত করলেও তার ভদ্রতা ও সাংবাদিক পরিচয়ে রাজি হয়ে গেলাম।
“ভাড়া নিয়ে ভাববেন না, আমি দিয়েছি আগেই। চলুন, গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে।”

মোরশেদ আলী সাহেবকে একটা বেড ছেড়ে দিয়ে ট্রলি থেকে টাওয়েল, সাবান ব্রাশ টুথপেষ্ট বের করে রাখছি। তখন মাগরিবের আজান দিচ্ছে। আমি নামাজ পড়তে গেলাম, উনি কাঁধের ব্যগটা ওনার বেডে রেখে লাউঞ্জে বসার জন্য চলে যান।

যাত্রী এবং স্টাফদের সাথে আমরা ১০/১২ জামায়াতে নামাজ শেষে কফি শপ থেকে দুই মগ কফি নিয়ে গেলাম লাউঞ্জে, এক মগ মোরশেদ সাহেবকে দিয়ে বললাম- নিন গরম গরম।
লাউঞ্জে দশ-বারোজন যাত্রী, নারী -পুরুষ ছয়জনই বিদেশি। তাদের সাথে পরিচিত হলাম। ওনারা ইতালি, স্পেন থেকে এসেছে, সুন্দরবন দেখতে যাচ্ছে।
পরিবেশটা হালকা, মোলায়েম, নিরুদ্বেগ। সবার হাতেই কফি- কফির গন্ধে মৌ মৌ করছে!

হুইসেল বাজিয়ে জানান দিচ্ছে- ষ্টীমার ছাড়ার সময় হয়েছে।
বাম হাতে আমি কফির মগটা মুখে নেবো ঠিক তখনই-
একজন লোক এসে দাঁড়াল আমার সামনে। হাত বাড়িয়ে বলল,
“হ্যালো হুমায়ুন কবির, কেমন আছেন?”
স্বাভাবিক এবং অভ্যাসগত ভাবে আমি হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়াই।

চমকে উঠলাম। মুখটা চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে করতে পারছি না।
লোকটা একদম সময় না দিয়েই বলল,
“হুমায়ুন কবির জুলভার্ন... ওঠেন।”

"জুলভার্ন"!
শব্দটা কানে আসতেই শরীরে একটা ভয়ার্ত শীতল শিহরণ বয়ে গেল। মুহূর্তেই মনে পড়ল- এই কণ্ঠ! ফোনে যার সাথে আজাইরা কথা হচ্ছিল, এটাই সেই মানুষ!
আবার বললো- "হুমায়ুন কবির ওঠেন'।

আমার পৃথিবী ব্লাক আউট...। দাঁড়িয়ে কিছু বলার আগেই চারজন লোক এসে আমার চারপাশ ঘিরে ফেলল। মুহূর্তেই আমার শরীরে ঠান্ডা ধাতব ছোঁয়া....
পাঁজরে, কানের পাশে ঠেকানো স্মল আর্মস।
তাদের একজন শাসিয়ে বলল,
"কোনো কথা বলবি না। চুপচাপ চল।"

চারপাশে কেউ কিছু টের পাচ্ছে না। সবকিছু এমন নিখুঁতভাবে ঘটছে, যেন আমরা বন্ধুরা আলাপ করছি।
তবুও শেষ সাহসটা সঞ্চয় করে আমি বললাম,
“আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে- হেল্প মি!”

পেছন থেকে এক বিদেশি নারী বললেন,
“Hey! What are you doing to him?”

সম্ভবত মোরশেদ সাহেব প্রতিবাদ করল-
"আপনারা ওনাকে এভাবে কেন নিয়ে যাচ্ছেন? আপনারা কারা?"

"আমরা ডিবি'র লোক"- বলে তারা আমাকে টেনে সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে- আমি শেষ কথাটা বলাম- " কেবিনে আমার লাগেজ ট্রলি..."।

বাইরে পার্কিংয়ে উজ্জ্বল আলোতে ঝলমল করছে। একটা সাদা অথবা সিলভার রঙের মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খোলা....
মাঝের সিটে আমাকে বসিয়ে দুই পাশে দুজন বসে।
আমার দুই হাত পিছমোড়া করে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে চোখের চশমাটা খুলে নিয়ে ভেজা গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ফেললো।

শেষ যে শব্দটা আমি শুনেছিলাম-
ইঞ্জিনের গর্জন, আর কেউ একজন ঠান্ডা গলায় বলছে,
“মিশন ক্লিয়ার। চালাও।”

তারপর সব অন্ধকার।
গন্ধ ছিল শুধু ভেজা গামছার,
আর নিজের শ্বাসের শব্দ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:৩০

আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: পড়লাম, সত্য ঘটনা মনে হচ্ছে!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.