| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
বিপ্লব-পরবর্তী সমাজে "বেয়াদব শ্রেণী"র উত্থানঃ ইতিহাসের আয়নায় একটি পর্যালোচনা....
ইতিহাস সাক্ষী- প্রত্যেক বিপ্লবই একটি জাতিকে বদলে দেয়, ভেঙে দেয় পুরোনো কাঠামো, আবার গড়ে তোলে নতুন সমাজচেতনা। কিন্তু সেই পরিবর্তনের ঢেউ সবসময় শুভ নয়। অনেক সময় বিপ্লব-পরবর্তী সমাজে জন্ম নেয় এক নতুন শ্রেণী- যাদের মধ্যে থাকে সুযোগসন্ধান, নৈতিক অবক্ষয়, এবং কর্তৃত্ববিরোধিতার নামে অনিয়ন্ত্রিত আত্মপ্রকাশ।
ফরাসি বিপ্লবের পর যেমন ‘জ্যাকোবিনদের উন্মাদনা’ নতুন এক অরাজকতার জন্ম দিয়েছিল, তেমনি রুশ বিপ্লবের পর লেনিনের রাশিয়ায় দেখা দিয়েছিল এক নতুন এলিট গোষ্ঠী- যারা জনগণের নামে ক্ষমতা ভোগ করেছিল। বিপ্লবের নাম করে যারা পুরোনো অন্যায়ের জায়গায় নতুন অন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছিল।
কিউবার চে গুয়েভারা ও ফিদেল ক্যাস্ট্রো এক অর্থে ছিলেন দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রতীক, কিন্তু সেই বিপ্লবও কিছুদিন পর জন্ম দিয়েছিল "বিপ্লবের রক্ষক" নামের কঠোর আমলাতন্ত্র। ভগৎ সিং ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের মতো বিপ্লবীরা ছিলেন নৈতিকতার উচ্চতম প্রতীক- কিন্তু তাদের পরবর্তী প্রজন্ম সেই আদর্শে স্থির থাকতে পারেনি।
মহাত্মা গান্ধীর অহিংস বিপ্লব ভারতে রাজনীতি ও নৈতিকতার নতুন দিগন্ত খুললেও, স্বাধীনতার পরের ভারত হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় বিভাজন, শ্রেণী বৈষম্য ও সুবিধাবাদের নতুন ঠিকানা।
আমাদের ইতিহাসও এই বাস্তবতা থেকে মুক্ত নয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণআন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, পচাত্তরের সিপাহী-জনতার বিপ্লব, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন- প্রতিটি ছিল এক একটি গৌরবগাথা। এবং সর্বশেষ জুলাই ২০২৪-এ বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম আবারও দেখিয়েছে, ইতিহাস কখনো ঘুমিয়ে থাকে না।
কিন্তু তার পরপরই, আমরা লক্ষ্য করছি এক নতুন শ্রেণীর আবির্ভাব- যাদের বলা চলে “বেয়াদব শ্রেণী”। ওরা বিপ্লবের সন্তান নয়, ওরা ফ্যাসিস্ট সরকারের কোলে জন্ম নেওয়া বিকৃত প্রজন্ম। They talk too loud, but think too little.
ওদের চোখে নেই শ্রদ্ধা, নেই বিনয়, নেই নৈতিকতা। এরা বিপ্লবের আদর্শকে ব্যবহার করছে ক্ষমতাশ্রয়ী, প্রতিশোধ, আত্মপ্রচারণা ও হীন মনোবাসনার জন্য প্রতিপক্ষকে অসম্মান করার প্রতিযোগিতা। ইতিহাসের অন্য কোনো বিপ্লবে এমন শ্রেণীর বিকৃতি খুব কমই দেখা গেছে। অধিকাংশ বিপ্লবই নতুন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে ফ্যাসিস্ট শাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা এক বিকৃত মানসিকতার তরুণ শ্রেণী, বিপ্লব-পরবর্তী পরিস্থিতিকে পরিণত করেছে ব্যক্তিগত উল্লাস আর নৈতিক বিশৃঙ্খলার উৎসবে।
এ যেন এক “বিপ্লব-বিকৃতি”- যেখানে সাহস আছে, শৃঙ্খলা নেই; প্রতিবাদ আছে, মূল্যবোধ নেই; স্বাধীনতা আছে, কিন্তু দায়িত্ববোধ নেই।
ইতিহাসের শিক্ষা স্পষ্ট- প্রত্যেক বিপ্লবের আসল শক্তি আসে আত্মশুদ্ধি থেকে। তরুণ প্রজন্ম যদি এই বেয়াদব সংস্কৃতির বেড়াজাল ছিঁড়ে আবার নতুন করে আদর্শ, নৈতিকতা ও দায়িত্বের পথে ফিরে আসে, তবে এই জুলাই বিপ্লব সত্যিই জাতির ইতিহাসে এক স্থায়ী মোড় হয়ে থাকবে।
কারণ প্রকৃত বিপ্লব কেবল রাস্তায় নয়- মানুষের চেতনায়, নৈতিকতায়, এবং কর্মে ঘটতে হয়। আর সেই চেতনার আগুন এখনো নিভে যায়নি- শুধু প্রয়োজন তাকে আবার জ্বালিয়ে তোলার সাহস।
১৩ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২
জুল ভার্ন বলেছেন: একদম সত্যি কথা!
শ্রদ্ধা, বিনয় আর নৈতিকতা- এই তিনটি গুণই মানুষের প্রকৃত পরিচয় দেয়। ক্ষমতা, খ্যাতি, অর্থ- সবই ক্ষণস্থায়ী; কিন্তু এই মূল্যবোধগুলো হারালে মানুষ হয়ে যায় ইতিহাসের সবচেয়ে করুণ চরিত্র।
যারা আজ অহংকারে অন্ধ, তারা ভুলে যায়- সময় কাউকে ছাড় দেয় না। একদিন ইতিহাসই তাদের বিচার করবে, আর নিক্ষেপ করবে সেই আস্তাকুঁড়ে, যেখানে জায়গা হয় মূল্যবোধহীনদের।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৫
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: শ্রদ্ধা, বিনয় ও নৈতিকতা না থাকলে ইতিহাস তাদেরকেও আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে।