নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডিজিটাল দেশঃ ডিজিটাল মানুষ

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:০৭

সবে মাত্র বাসে উঠে বসেছি। বলা নেই কওয়া নেই কোত্থেকে একটা কালো হাত আমার দিকে এগিয়ে এল। বুঝলাম টাকা দিতে হবে। ব্রীজ মোড়ের এটি একটি অতি পরিচিত দৃশ্য। একই ব্যক্তি বারবার একই অযুহাতে একই ভাবে আপনার কাছে সাহায্য চাইবে আর আপনি একইভাবে তাকে খুচরো নেই বলে ফিরিয়ে দেবার ব্যর্থ চেষ্টা করবেন। কারো মেয়ের বিয়ে, কেউ মেয়েকে মহিলা মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন আবার কারোর মার অপারেশন করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব দেখতে দেখতে এ তিন বছরে মোটামুটি অভ্যস্থ হয়ে গেছি। তাই হাতওয়ালার দিকে না তাকিয়েই তাকে জানিয়ে দিলাম যে টাকা খুচরো নেই! কিন্তু নাছোড়বান্দা কালো হাতওয়ালা আমাকে খুচরো টাকার ডিপো দেখিয়ে জানিয়ে দিলেন তার কাছে আছে!!



এবার হাতওয়ালার দিকে না তাকিয়ে পারলাম না। সুস্থ্য-সবল স্বাস্থ্যবান যুবক। গায়ে মুখে কালি লাগানো। দেখে মনে হচ্ছে এইমাত্র কোন বিউটি পার্লার থেকে তাড়াহুড়ো করে মেকআপ করে এসেছে। জিজ্ঞেস করলাম ‘সমস্যা কি? সাহায্য কেন?’ কালু (কালির আধিক্য দেখে অন্যকোন নাম মনে এল না) মিয়ার সহজ এবং সাবলীল উত্তর- ‘ভাই হার্টের সমস্যা!’ বাক্যটা শুনেই আমার হার্ট যেন নিঃশব্দে নড়েচড়ে বসল! চরম বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার? কবে থেকে?’ ‘দশদিন!’ বুঝলাম লোকটা মিথ্যেও ঠিকভাবে বলতে জানেনা। কালুর মিথ্যায় কেন যেন খুব মজা পাচ্ছিলাম। পাশের সিটে বসা বন্ধুকে দেখিয়ে বললাম, ‘ডাক্তার দেখাইছেন? ইনি কিন্তু খুব ভালো ডাক্তার!’ কালু অপ্রস্তুত! খুচরো টাকা গুণতে গুণতে ভাঙা গলায় মিনমিন করে বলল, ‘জি ভাই। বড়ি খাচ্ছি!’ হেসে ফেললাম। :D কি অদ্ভুত ব্যাপার। কালু মিয়া যেখানে শুধু বড়ি দিয়েই হার্ট ভালো করে ফেলতে পারেন সেখানে আমাদের ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন বসে বসে আঙুল চোষে কেন? ফাটা ঠোট দু’টো ডানে বামে প্রসারিত করে কালু মিয়ার হার্টের দিকে তাকালাম। বেচারা কালু মনে হয় একটু বিপদেই পড়েছে। তড়িঘড়ি করে ৯৫ টাকা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েই হার্ট বিশেষজ্ঞ ডাঃ কালু মিয়া তৎক্ষণাৎ কেটে পরল। কিছুক্ষণ একা একা হাসলাম। টাকা খুচরো করার পদ্ধতিটা একেবারে খারাপ না! আমার পছন্দ হয়েছে! ;)



দীর্ঘ সাড়ে ছয় ঘন্টার বাস জার্নি শেষে বাড়ির উদ্দেশ্যে রিক্সায় চেপে বসলাম। অনেকদিন পর বাড়ি ফিরে ভালোই লাগছিল। হঠাৎ রিক্সাওয়ালা রিক্সা থামিয়ে দিলেন। লক্ষ্য করলাম এদিক-ওদিক কি যেন খুঁজছেন। রিক্সা থেকে নেমে দোকানে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে হতাশ কন্ঠে বললেন, ‘ফ্লেক্সির দোকান বন্ধ!’ কে যেন তাকে অনবরত মিসড কল দিচ্ছিল! :P



রিক্সা থেকে নামলাম। মানি ব্যাগ বের করে দেখি খুচরো টাকা নেই! রিক্সাওয়ালার কাছেও নেই। কালু মিয়ার খুচরো টাকায় ফুড ভিলেজে লাঞ্চ করেছি। সাদা ভাত আর রুই মাছ খেয়ে বকশিস সহ ৯০ টাকা গুণে দিয়েছি! বললাম, ‘মোবাইলের কার্ড নেবেন?’ রিক্সাওয়ালা দেখি হাসে! ‘দ্যান! মোবাইলে তুলি দ্যান!’



মোবাইল কার্ড দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রিক্সা ভাড়া পরিশোধ করলাম। একি! দশটাকা দেখায় কেন? বিপদে পরলাম না তো আবার? বাকী দশটাকার হিসেব এনাকে কে বুঝিয়ে দেবে? ‘ধার নিয়েছিলেন নাকি ১০ টাকা?’ রিক্সাওয়ালা বলে কিনা – ‘হু!’



লোক দেখি আমার থেকেও ডিজিটাল! :O





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.