নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি বিয়ে...

০৯ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫১

‘তোদের কি যাওয়ার কোন ইচ্ছে আছে? তোরা থাক! ট্রেন চলে আসছে...’



মনীষার জরুরী তলব। আকিব নাস্তা করছিল। আতিক সবেমাত্র শেষ করেছে। আর আমি বসে বসে ওদের সঙ্গ দিচ্ছিলাম। ফোনটা ঠাস করে কেটে দিয়ে অন্ধের মত একটা দৌড় দিলাম! এক দৌড়ে বাকৃবি স্টেশন! লাল-সাদা চকচকে ডেমু ট্রেনটা চলে এসেছে।



বান্ধবীর বিয়ে! আমরা ছেলে মেয়ে মিলে দশ জন। এই ডেমুতে করেই আমরা বিয়েতে যাব। প্রতিদিন সকাল বিকাল ডেমুকে দেখলেও কখনো ওঠা হয়নি। সত্য বলতে গেলে এটাই আমার প্রথম ট্রেন জার্নি! :P



সিট গুলো প্লাস্টিকের হলেও প্লাটফর্ম থেকে প্রায় আড়াই ফুট উঁচু মেঝের ট্রেনটা একদম খারাপ না। সমস্যা একটাই। বউ ফর্সা হয়েও কালো! মানে ট্রেন শতভাগ লোকাল! কে কখন উঠছে নামছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। টিটি বাবুও উদাসীন। বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণের অপরাধে আমার থেকে হাফ ভাড়া রাখলেও পাশের বগীতে থাকা ফ্রেন্ডদেরকে ফুল ফ্রী প্যাসেঞ্জারসীপের সার্টিফিকেট তিনি দিয়ে দিয়েছেন! টিটির পকেট ভরাতে আমার আপত্তি নেই। কালো বিড়ালের পেট ভর্তির চেয়ে সাদা কাপড়ের টিটির পেট ভর্তি করা অনেক ভালো!



বিয়ে বারিতে! বারি মানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। ছিমছাম নিরিবিলি পরিবেশ। বাকৃবির সাথে অনেকটাই মিল আছে। পরিবেশটা আমার পছন্দ হয়েছে।



শুভ লগ্নে বিয়ে শুরু হল। হিন্দু বিয়ে অনেক জটিল একটা বিষয়। হাবার মত শুধু দেখেই গেলাম কিন্তু কিছুই বুঝলাম না। তবে সাত পাকে ঘোরার সময় বর কনের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখে কিছু একটা আন্দাজ করেছি। আশির্বাদ করি তোমাদের মুখের এ হাসিটা অনন্তকাল বেঁচে থাকুক।



মশার পপ সঙ্গীতের মুর্ছনায় ভোর বেলাতেই ঘুম ভেঙে গেল। বিয়ে রাতেই শেষ হয়েছে। সকালের আনুষ্ঠানিকতা সেরে বর বউ নিয়ে বাড়ি চলে যাবে। আমরাও ব্যাগ বোঁচকা নিয়ে প্রস্তুত। সকালের ইন্টারসিটিতেই ফিরতে হবে আমাদের। বর কনের থেকে শেষ বিদায় নিয়ে ঘুম ঢুলুঢুলু দু’ডজন চোখ নিয়ে এক ডজন আমরা জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত হলাম।



‘ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জ গামী তিস্তা এক্সপ্রেস কিছুক্ষণের মধ্যে এক নম্বর লাইনে ঢুকবে। আপনারা যারা টিকেট সংগ্রহ করেননি তারা অতি সত্ত্বর টিকেট সংগ্রহ করুণ। ট্রেনে বিশেষ চেকিং চলছে...’ কিছুক্ষণের মধ্যে ঝন ঝন শব্দ করে তিস্তা এক্সপ্রেস এল। কিন্তু একি! তিল ওঠারো তো যায়গা নেই! দাড়িয়েই যখন যেতে হবে তখন টিকেট করে কি লাভ?



ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাওয়া যতটা কষ্টের ভেবেছিলাম ততটা না। তবে অতিমাত্রায় বিরক্তিকর। ফেরিওয়ালাদের উৎপাতে শান্তিমত দাঁড়িয়েও থাকতে পারবেন না! ‘ওই এক জোড়া পাঁচ টাকা... এক জোড়া পাঁচ টাকা’- বলে শশাওয়ালা পাঁচ মিনিট পর পর শশার গুণকীর্তন করতে আসবে আর আপনাকে তার যাওয়ার রাস্তা ক্লিয়ার করে দিয়ে হবে। শশাওয়ালার পিছু পিছু আসবে কমলাওলা- ‘কমলা... হস্তা কমলা...’! হস্তা কমলাওয়ালা চলে যেতে না যেতেই পপকর্নওয়ালা পপকর্নের প্যাকেট হাতে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দেবে। যোগ দেবে ঠান্ডাপানি, কলা, গরম চা, চকলেট, পান-সিগারেট, চাবির রিং, গরম সিঙ্গারাওয়ালারাও। ডজন ডজন সংগীত শিল্পী আসবেন আর আপনাকে সসম্মানে তাদের জন্য রাস্তা করে দিতে হবে। বিনিময়ে পাবেন ব্যতিক্রমী সুর ও কন্ঠের সুমিষ্ট সংগীত- ‘চানাচুর... এই ঝাল চানাচুর...’ ‘সিংগারা... গরম গরম সিংগারা...’ ‘চা লাগবে চা... গরম চা...’ ‘ পানি... ফ্রীজের ঠান্ডা পানি...’ ... ...



মানুষের কাছে আরাম অনেক বড় একটা বিষয়। একটু চেপে বসতে তার কষ্ট হয়, কিন্তু বাচ্চা নিয়ে কোন মহিলাকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখলে তার কষ্ট হয় না; আয়েশী কায়দায় সিটে বসে পা ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ গুলোকে দেখতে তার ভালো লাগে কিন্তু ওই মানুষদের একজনকে পাশে বসতে দিলে তার ভালোলাগায় ভাঁটা পরে; কপালে চুন মাখা গেঁড়ুয়া বসনের ঠাকুরের কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনলে জাত যায়না কিন্তু একটা দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ের জন্য সিট ছেড়ে দিলে তার জাত যায়! সত্যি সেলুকাস এ দেশ! তবে... তবে বাঙ্গালীদের নাকি একটু দেড়িতে বিবেকবোধ জাগ্রত হয়। এ জন্যই হয়তোবা শেষ সময়ে এসে অনেক বিবেকবান মানুষ তাদের সিট শেয়ার করেছিলেন। ধন্যবাদ আপনাদেরকে।



‘তোমরা কই?’ সদ্য বিবাহিতা বান্ধবীর ফোন। ‘অটোতে... ট্রেন পাইনি তো তাই অটোতে যাচ্ছি! এখন ভালুকায়!’ ‘তোমরা বাসে যাচ্ছো?’ ‘না, অটোতে!’ বান্ধবী দ্বিধায়। অন্যদিন হলে হয়তো আরেকটু মজা করতাম। কিন্তু আজ হঠাত করেই মুখ ফস্কে সত্যটা বেড়িয়ে এল -‘আরে অটোতে করে ক্যম্পাসে যাচ্ছি!’ বান্ধবীও লং ড্রাইভে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে!!!



হ্যাপি ড্রাইভিং বান্ধবী!! হ্যাভ এ গ্লোরিয়াস জার্নি... :)



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.