নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ চিল্লা

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৩২

খুব মনোযোগের সাথে পঞ্চম বারের মত একটা এফোর সাইজে শিট পড়ছে জিওন। কালো কালো ইংরেজি হরফের লেখাগুলোর মর্ম অনুধাবনের সম্ভবত এটা শেষ চেষ্টা। কাগজটার শুরুতেই মোটা হরফে লেখা আছে- ‘Question for the Degree of BSc Food Engineering ; Level-4, Semester-2 (Jul-Dec/2014)/Final Examination’ । প্রশ্নপত্রের এ অপ্রয়োজনীয় অংশটা এর আগে কোন দিনই পড়ে সময় নষ্ট করেনি জিওন। কিন্তু আজ জিওনের দৃষ্টি আটকে আছে এখানেই, নিচে নামছে না। নিচে নেমে যে কোন লাভ হবে না সেটা অনেক আগেই বুঝেছে সে। অনার্স লাইফের শেষ পরীক্ষা আজ। পরীক্ষা শেষ হলেই লাগেজ গুছাতে হবে জিওনকে। কয়েকজন বন্ধু মিলে কক্সবাজার যাবে। বেকার হওয়ার প্রথম দিনটা একটু ভিন্নভাবে সেলিব্রেট করার ইচ্ছা ওদের।



‘দেখি বাবা তোমার খাতাটা?’ জাবেদ স্যার খাতা সাইন করার জন্য স্যার এসেছেন। একগুচ্ছ সাদা দাড়ি আছে জাবেদ স্যারের। দেখলেই কেমন যেন সম্মান করতে ইচ্ছে করে। স্যারকে সালাম দিয়ে ভয়ে ভয়ে খাতাটা এগিয়ে দেয় জিওন।

‘আইডি লেখনি কেন? আইডি না লিখলে তো খাতা বাতিল হয়ে যাবে!’ জাবেদ স্যার উদ্বেগের সাথে খাতাটা এগিয়ে দেয়।

অস্ফুট একটা শব্দ বের হয় জিওনের মুখ থেকে- ‘যাক...!’

- ‘কিছু বললে?’

- ‘না স্যার। প্রশ্ন পেয়ে আর কিছু মনে ছিল না’

- ‘পাগল ছেলে! প্রশ্ন ভালো হয়েছে নিশ্চয়?’

- ‘জ্বি স্যার।’

স্যার আলতো করে পিঠ চাপড়িয়ে দেয় জিওনের। খচ কচ করে Montblanc ব্রান্ডের কলমটা দিয়ে আইডি লেখে জিওন। কলমটা গতকালই পৃথা গিফট করেছে ওকে। পৃথার প্রথম গিফটার উদ্দেশ্য এভাবে ব্যর্থ হচ্ছে বলে খারাপ লাগছে জিওনের।



জীবনে খারাপ পরীক্ষা কম দেয়নি জিওন। কিন্তু এমন পরিস্থিতি কোনদিনই হয়নি। ক্লাস সিক্সের প্রথম ইংলিশ পরীক্ষার কথা মনে পড়ছে ওর। পরীক্ষা দেয়ার আগেই জানত ফেল করবে সে। স্যার ক্লাসে সম্ভাব্য প্রশ্ন বলে দিতেন তবুও দলবেঁধে ফেইল করত সবাই। কিন্তু সেবার ৩৪ পেয়ে পাশ করেছিল জিওন। একাই। কিন্তু এবার বোধহয় সেটাও সম্ভব না।



স্যারের কোন দোষ নেই। স্যার ক্লাসে বলেই দিয়েছিলেন ‘এবার কিন্তু প্রশ্ন কঠিন হবে!’ মজা করে উত্তর দিয়েছিল জিওন-‘প্রশ্ন তো কঠিনই হয় স্যার! কাগজ কঠিন, প্রশ্নও কঠিন!’ উত্তর শুনে স্যার মুচকি হেসে বলেছিলেন- ‘প্রশ্ন ভালো হয়েছে। আশা করি তোমরা কেউ ফুল এন্সার করতে পারবে না!’ কথাটাকে সেদিন উড়িয়ে দিয়েছিল জিওন কিন্তু আজ এর মর্ম হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সে। ‘প্রশ্ন ভালো হয়েছে!’



না, প্রশ্ন ভালো হয়নি। কিন্তু তাতে তো ফুল এন্সার আটকানোর কথা না। লেখা শুরু করে জিওন। পৃথার দেয়া কলমাটার সঠিক ও পরিপূর্ণ ব্যাবহার যাকে বলে। এক থেকে সাত নম্বর পর্যন্ত নন স্টপ হিটে লিখে যায় সে। উত্তর না, প্রশ্ন! না, এ ফোর কাগজটি নকল করেনি জিওন। গত তিনদিন ধরে যা পড়েছিল সেগুলো থেকে একটা সুন্দর প্রশ্ন সাজিয়েছে সে। যে প্রশ্ন বোঝা যায়, লেখা যায় এবং লিখে পাশ করা যায়।



পরীক্ষা শেষ। কয়েকজনের মুখ ছাড়া সবার মুখ কালো। জিওন একে একে তানভির, পিয়াস এবং লেবিনের দিকে তাকায়। কালো কালো এবং কালো! Cox’s Bazar trip has been cancelled successfully! মানে কক্সবাজার যাওয়া বন্ধ। তবে জিওনকে এবার চিল্লায় যেতে হবে! চল্লিশ দিনের চিল্লা; বেকার হবার শেষ প্রচেষ্টা!



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৪২

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: ইন্টারেস্টিং। গল্পটা আরেকটু শার্প করা যায় কিন্তু।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৪৬

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ :) কিন্তু কি?

২| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৯

বাকপ্রবাস বলেছেন: আপনার লিখার হাত ভাল, সুন্দর হয়েছে গল্পটা, তবে অণুগল্প আরো একটু ছোট হয়, অণুগল্পের অনেক ধরন হতে পারে তবে অণগল্পে যে ব্যাপারটা আমি ব্যাক্তিগত ভাবে আশা করি তা হল, গল্প শেষ হবার পর পাঠক এর চিন্তা শুরু হবে, এমর জায়গায় শেষ হবে সেকান থেকে যেন শুরু, যেমন ধরুন মৃত্যু, মৃত্যু মানে শেষ, কিন্তু অন্য একটা জীবন সেখান থেকেই শুরু, আপনার লিখা ভাল লেগেছে তাই একটু বকবক করলাম আশা করি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:০২

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। গল্পের চিল্লা মানে কিন্তু তাবলীগ জামাতের চিল্লা না। এটা সেই চল্লিশ যা চার বছরে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন না করতে পারা ছাত্রদের জন্য আবার সেই পরীক্ষাগুলো দিয়ে পাশ করার জন্য দেয়া হয়। ভালো থাকবেন। :)

৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৪৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


বেশ লিখেছেন।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৫৩

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.