নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছিনতাইকারীর সাথে একদিন

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৫৬

বছর তিনেক আগে একবার ছিনতাইকারীর কবলে পরেছিলাম। কোচিং নামক ভর্তিবিদ্যালয়ের পাঠ চুকে গেছে। ঢাকার ঢাকনীর নিচে অলস সময় কাটাতে কাটাতে মোটামুটি ক্লান্ত। বিশুদ্ধ অক্সিজেনের লোভে দূষিত ফুসুফুস বাড়ি যাবার জন্য সময়ে অসময়ে তাগাদা দিচ্ছিল। অবশেষে এক শুভ দুপুরে বিশাল এক ব্যাগ হাতে ফার্মগেটে হাজির হলাম। কিন্তু দুপুরটা শুভ হল না। আধা ঘন্টার চেষ্টায় কোন বাস না পেয়ে অবশেষে মিরপুর-১ এর একটা মুড়ির টিনে উঠে ঝুলতে লাগলাম। চলন্ত মুড়ির টিন হালকা স্লো করে আমাকে কল্যাণপুরে নামিয়ে দিল। দেরী অনেক হয়ে গেছে। দ্রুত টিকেট কাউন্টারের দিকে হাঁটছি। সামন থেকে একজন হাক ছাড়ল –‘এই যে ব্যাগওয়ালা ভাই! পেছনে আপনাকে ডাকছে’। কথাটা কানে তুললাম না। ‘ছোট ভাই দাঁড়াও! এতক্ষণ ধরে যে ডাকছি শুনতে পাওনা?’ পেছন ফিরে দেখি আমার সেই অনুসন্ধানকারী একজন চেলা সহ আক্রমনাত্নক ভঙ্গী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।



- দেখে শুনে পথ চলতে পার না? আমার পায়ে পারা দিয়ে আসলে কেন?

- সরি ভাইয়া। বুঝতে পারিনি

- আমি যে পায়ে দুঃখ পেলাম তার কি হবে?



দুঃখপ্রাপ্তের দুঃখ প্রশমনের জন্য তৎক্ষণাৎ কোন উপায় খুঁজে পেলাম না। তাই হতভম্ভ হয়ে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।



- ছোট ভাই থাক কোথায়?

- ফার্মগেটে



বড় ভাইয়ের চেলা বুক ফুলিয়ে সামনে এসে সিনেমার ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল, - ‘বড় ভাইকে চেন?’

কনফিডেন্সের সাথে ডানে বায়ে মাথা নাড়ালাম।

ভাই মনে হয় হালকা অপমানিত হলেন।

‘আমাকে কোথাও দেখনি? পেপার-পত্রিকা? রেডিও- টেলিভিশন কোথাও না?

কনফিডেন্স লেভেল আরেকধাপ বাড়িয়ে পরিষ্কার কন্ঠে বললাম- ‘নাহ!’

ভাই রেগে গেলেন- ‘গতবার বাংলা কলেজে পাঁচটা মার্ডার হইছিল মনে আছে? মার্ডার গুলা আমি করছিলাম!’

হাসি পেল। কষ্ট করে হাসি চেপে কৃত্রিম বিস্ময় নিয়ে বললাম- ‘ও... জানতাম না তো!’



কই থেকে যেন একটা কোর্ট-টাই পড়া ভদ্রলোক এগিয়ে এল। বড় ভাইকে সালাম দিয়ে কন্ঠ দিয়ে উদ্বেগ স্প্রে করল- ‘ভাই কোন সমস্যা? কিছু করতে হবে?’

‘আরে না। ছোট ভাইয়ের সাথে কথা বলছি’ – ভাই বিষয়টাকে বাতাসে উড়িয়ে দিলেন!



সুযোগটা কাজে লাগালাম। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,- ‘আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগল। বাসের দেরী হয়ে যাচ্ছে। আমি যাই’



- বাসা কই তোমার?

- রংপুরে।

- পথে ঘাটে অনেক বিপদ আপদ হতে পারে। আমার ফোন নাম্বারটা রাখ। বিপদে পড়লে ফোন দিও



বুঝলাম বড় ভাই আমার ফোন দেখতে চায়। ব্যাগ খুলে কাগজ বের করার অপচেষ্টা চালালাম।



- কাগজ খোঁজ কেন? সাথে ফোন নেই?

- না ভাই!

- ঐ মিথ্যা বলিস ক্যান? পকেটে ওটা কি?



আমার মিথ্যা বলার প্রতিভায় নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। পকেট থেকে আমার মহামূল্যবান নোকিয়া-১৬০০ সেটখানা বের করলাম। বড় আবার রেগে গেছেন। আমার হাতটা ধরে ওনার কোমরে রাখা পিস্তলটা স্পর্শ করিয়ে বললেন, -‘আমার সামনে মিথ্যা বললি ক্যান? আমি যদি এখন ঠুস করে তোর খুলিটা উড়িয়ে দেই কেউ তোকে বাঁচাতে আসবে?



আশেপাশের মানুষ গুলোর দিকে তাকালাম। বড় ভাইয়ের চেলা ছাড়া কেউ আমার দিকে তাকিয়ে নেই। একটু ভয়ে ভয়ে বললাম- ‘সরি ভাই!’



- পকেটে কয় টাকা আছে বের কর!



পকেট ঝেড়ে ঝুড়ে যা পেলাম বের করলাম। বড় ভাই অভয় দিলেন – ‘তুই আমাকে যে রকম ভাবছিস আমি তেমন কেউ না। আমি তোর টাকা ফোন কিছুই নেব না। তোর টাকা তুই গোণ’।



টাকা গুণলাম। মোটেই ৮৩০ টাকা!



- তোর ব্যাগে আরো টাকা আছে।



ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বললাম,- ‘বিশ্বাস না হয় তো চেক করে দেখেন!’



- তোর বিশ্বাস নেই। শুরুতেই মিথ্যে বলেছিস! দে টাকা আর ফোনটা আমার হাতে দে।



বড় ভাইয়ের আদেশ সাথে সাথে পালন করলাম।



- তুই যে এতক্ষণ আমার সাথে বেয়াদবী করলি এজন্য যদি আমি এগুলো আমার কাছে রেখে দেই তোর কোন আপত্তি আছে?

- আপত্তি থাকবে কেন? আপনি বড় ভাই হিসেবে রাখতেই পারেন। কিন্তু ভাইয়া সিমগুলো যে আমার দরকারী। অ্যাডমিশনের জরুরী কিছু মেসেজ আছে!



ফোনের পেছনে তিনটি ও ভিতরে একটি সিম ছিল। বড়ভাই ফোন খুলে রীতিমত অবাক হলেন। শাসনের দৃষ্টিতে কড়মড় করে তাকিয়ে সিমগুলো আমার হাতে দিলেন।



ভাই কথা শুনছেন! ঝোপ বুঝে আরেকটা কোপ দিলাম,- ‘ভাইয়া আমার কাছে তো কোন টাকা নেই। বাড়ি যাব কি করে?’



ভাই পড়লেন বিপদে। একডজন সাঙ্গ পাঙ্গর দিকে তাকিয়ে হাতের টাকাটা আরেকবার গুনলেন।

তারপর আমার হাতে হাতে দশটাকার তিনটে নোট গুজে দিয়ে বললেন, -‘সোজা কাউন্টারে চলে যা। পেছনে তাকাবি না। তাকালে পায়ে গুলি করে দেব। মনে রাখবি তোর পেছনে আমার সতেরটা ছেলে যাবে। কতটা ছেলে যাবে?’



- সতেরটা!



আমিও সুবোধ বালকের মত সোজা কাউন্টারে চলে এলাম। ভাই মিথ্যে বলেন নি! সত্যিই আমার বিশ্বাস নেই! ব্যাগ খুলে টাকা বের করে টিকেট করলাম। তারপর...



তারপর আর কি? ছিনতাই শেষ, আমার গল্পও শেষ!

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:১২

ইমাম হাসান রনি বলেছেন: হাচা নি :-& :-&

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:২০

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: হাচা মানে নির্ভেজাল হাচা!

২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৩:১১

ফয়সাল খালাসী বলেছেন: ভাগ্য ভাল সিম আর ভাড়ার টাকা দিছে। :) ছিনতাইকারীটা ভাল ছিল :-P :-P

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:১২

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ভাড়ার টাকা দিল কই? ৩০ টাকায় কি রংপুর যাওয়া যায়?

৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৭:৪১

মোমের মানুষ-২ বলেছেন: শুরুতেই থামা উচিত হয়নি, অপরিচিত কেউ ডাক দেওয়া মানেই ফ্যাসাদ, মহা ফ্যাসাদ

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:১১

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: আসলে তখন করার কিছু ছিল না

৪| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:৪৮

আজীব ০০৭ বলেছেন: শুরুতেই থামা উচিত হয়নি

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:১৩

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: হুম। এখন শুরু শেষ কোথাও থামি না

৫| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৫৬

আমিনুর রহমান বলেছেন:



বড় ভাই বড় ভালো লোক ছিলো :P

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:১৪

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: :-P বড় ভাইকে আজও খুব মিস করি!

৬| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:১৩

ডেমোনিয়াক ম্যাডম্যান বলেছেন: বড়ভাইডা বড্ড ভালা আছিলো :D

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:১৫

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: :D :D

৭| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:২০

আদম_ বলেছেন: ঈমানদার, দয়ালু, স্নেহপ্রবণ, ভদ্র, দায়িত্ববান, সুবোধ, যোগ্য এবং ভালো বড়ভাই।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: :D ভাইয়ের বিশেষণ একটু কম হ্যে গেল না! :#)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.