নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : প্রত্যাবর্তন

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২৯

অসহ্য গরম। দু’ঘন্টা যাবত বাসটা স্টার্ট বন্ধ করে মাঝ রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ত্রিশ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট! বাসে ওঠার সময় দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফেরার যে উচ্ছ্বাসটা কাজ করছিল সেটা অনেক আগেই মাইনাসে নেমে গেছে। একটা দু-তিন বছরের মেয়ে ‘আম্মু... আম্মু...’ বলে ভেউ ভেউ করে কাঁদছে। মেয়েটার বা গালে কষে একটা চড় দিতে ইচ্ছে করছে। মেয়ে হয়েছে বলে সারা রাস্তায় এভাবে নন-স্টপ কাঁদবে নাকি? মেয়েটার মা সাথে নেই। দাদুর সাথে যাচ্ছে। ‘লক্ষ্মী দাদু কাঁদেনা। একটু পরেই তোমার আম্মু আসবে!’ মাথার মগজ টগবগ করে ফুটটেছিল। মেয়ের দাদুকে জিজ্ঞেস করলাম, - ‘আঙ্কেল আপনার এ একটু পরটা কোথায়?’

আঙ্কেলের চোখে মুখে বিরক্তি। ‘অ্যা... লন্ডনে!’

বুঝলাম ভদ্রলোককে ঘাটিয়ে লাভ নেই। কানে হেডফোন লাগিয়ে ফুল ভলিউমে গান শুনতে লাগলাম। বাস আস্তে আস্তে চলা শুরু করেছে। জানালা দিয়ে শির শির করে বাতাস আসছে। কখন যে চোখ বুজে ঘুম চলে এসেছে টেরই পায়নি। এখন বাস বেশ দ্রুতই চলছে। মেয়েটার কান্না বন্ধ হয়েছে। টুপিওয়ালা দাদুকে দেখা যাচ্ছে না। কচুপাতা রঙয়ের শাড়ি পড়া একটা মহিলা মেয়েটার মাথায় পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মহিলার মুখ দেখা যাচ্ছে না। জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। ভুল বললাম। বাইরে তাকিয়ে কথা বলছে।



- তোমার মেয়েটা এত কাঁদে ক্যান?

- ... ...

- কখনই না। আমি ছোটবেলায় কাঁদতাম না

- ... ...

- বিয়ের দিন মানুষ অমন একটু আধটু কাঁদেই

- ... ... ...

- বলছে তোমাকে!

- ... ...

- উহ!



আড়ি পাতার অভ্যেস আমার নেই। তবুও আজ আড়ি পাততে ইচ্ছে করছে। কন্ঠটা এত পরিচিত লাগছে কেন আমার? মহিলাটা কি আমার পরিচিত? মহিলার মনে হয় কথা শেষ হয়েছে। কৌতূহল দমাতে পারলাম না।



- এক্সিকিউজ মি। আপনি কি আমার পরিচিত?

- ভাই একটু আস্তে কথা বলুন। দেখছেন না মেয়েটা ঘুমাচ্ছে?

- সরি...



ধুর! এভাবে বোল্ড হয়ে যাব আশা করিনি। তের বছর পর দেশে ফেরা এই বঙ্গ সন্তানের প্রতি একটু সদয় হওয়া উচিৎ ছিল মহিলার। সত্যিই মহিলা কি আমাকে চিনতে পারেনি? নাকি চিনেও না চেনার ভান করছে? মিররে মহিলার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। না,মহিলা ভান করেনি। তূর্ণা হয়তোবা আমাকে এখানে আশা করেনি।



তূর্ণা! আমার কাছের বন্ধু বলে যদি কেউ থাকে সেটা তূর্ণাই ছিল। আমাকে একটা মশা কামড়ালেও সেটা তূর্ণা জানত। অতীত ‘আমি’ থেকে বর্তমানের এই ‘আমি’তে পরিবর্তনের ইতিহাসটাও তূর্ণার দখলে। কানাডা যাওয়ার আগের রাতে তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হল। সাথে সাথে আমাকে ফেসবুকে ব্লক করে দিল। আমিও পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ওর ফোন নাম্বারটা ব্লাক লিস্টে দিয়ে দিলাম। এয়ারপোর্টে আশা করেছিলাম তূর্ণাকে। কিন্তু আসেনি। রাগ আমারও কম ছিল না। কানাডায় গিয়ে দেশের সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম। আম্মু ছাড়া কাউকে ফোন দিতামও না, কারো ফোন রিসিভও করতাম না। একটা ছোট বিষয় যে এতদূর গড়াবে সেটা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করিনি, তূর্ণা করেছিল কিনা জানিনা। জেদ জিনিসটার ভয়াবহতা আমার মত করে উপভোগ করার সৌভাগ্য বোধহয় আর কারো হয়নি। আজ তের বছর দেশে ফিরছি। ছয় মাস চুল দাড়ি কিছুই কাটিনি। উদ্দেশ্য আত্নগোপন। দেশে আসার ব্যাপারটা কেউ জানেনা, এমনকি আম্মুও না।

যে মেয়েটাকে কিছুক্ষণ আগে চড় মারতে চেয়েছিলাম সেটা তূর্ণার মেয়ে! তারমানে তূর্ণার বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। আমাকে ছাড়াই। অথচ হলুদের স্টেজ সাজানোর দায়িত্ব আমার কাঁধেই দিয়েছিল তূর্ণা। শাহেদের সাথে রিলেশন ছিল ওর। বিয়েটাও কি সাহেদের সাথেই হয়েছে তুর্ণার? ঐ ভদ্রলোকটা যদি তূর্ণার শ্বশুর হয় তবে ওদের রিলেশনটা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় নি। শাহেদের বাবাকে আমি চিনি। তারমানে অনেক কাহিনীই ঘটে গেছে।



- এইযে কচু আপা, মেয়ের নাম কি রেখেছেন?

- কচু!

- আহা রাগেন কেন? অপরিচিত মানুষকে রাগ দেখাতে নেই

- আপনি এত নির্লজ্জ কেন?

- নির্লজ্জ ছিলাম না কবে ভূতের মা?



হঠাৎ বজ্রাহত হলে একটা জীবিত মানুষ যেমন চোখের পলকেই মূর্তি হয়ে যায় ভূতের মা’ও যেন হঠাৎ মূর্তি হয়ে গেলেন। মুখ ফিরিয়ে নিলেন অন্যদিকে। হয়তো এমন আচমকা শকের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না তিনি!



হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে বসে আছি। তূর্ণার সাথে আর কথা হয়নি। এমন কি ভুল করে একবার আমার দিকে তাকায়ও নি। এটা ঘৃণা না অতিরিক্ত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ বুঝতে পারছি না।

‘মামনি আংকেল কে হাই বল!’ চমকে মুখ তুলে তাকালাম। তূর্ণা আমার টেবিলে বসে আছে। পিচ্চি মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছে। কি করব বুঝতে পারছি না। মেয়েটার থুঁতনিতে হাত দিয়ে বললাম,- ‘কুতুকুতু মামনি! দেখি তোমার দাঁত দেখি!’



- তুমি কি আজীবন গাধাই থাকবা মৃদুল? ওর দাঁত দেখে তুমি কি করবা?

- দাঁত গুলা তোমার মত হয়েছে নাকি ইঁদুরের মত হয়েছে সেটা দেখতে হবে না?

- মারব একটা! চেহারার এ অবস্থা করছো ক্যান?

- চেহারার উপর আমার কোন হাত নেই! সবি উপরওয়ালার ইচ্ছে!

- চোর চোর লাগছে!

- চোরকে কি তবে ডাকাতের মত লাগবে?

- ঝগড়া করার অভ্যেসটা এখনও ছাড়তে পারলে না?

- না। ঝগড়ী যেখানে, ঝগড়া হবে সেখানে! অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন!

- থামো! বেশী কথা বলে সবসময়! ভাবছিলাম তোমার সাথে আর কথাই বলব না

- বললে কেন?

- তোমার অসহায় মুখটা দেখে মায়া হল! সবাই খাচ্ছে আর একটা গাধা মাথা নিচু করে বসে আছে!

- তোমার সাথে ‘মায়া’ শব্দটা ঠিক বুঝতে পারলাম না!

- বিয়ে করলে দয়া-মায়া সবকিছুরই মর্ম বুঝতে পারবে! কপালে কেউ জুটেছে নাকি কপাল আগের মতই পুড়ে খাক হয়ে আছে?

- নো চান্স! সাথে ভূতের মায়ের বদদোয়া আছে না! আমার না হয় কপাল পোড়া কিন্তু তোমার সাদা কপালটা পুড়লো ক্যান?

- মানে??

- ভূতের বাপের সাথে তোমার বিয়ে...

- চুপ! তাইলে এ বাচ্চাটা কার? ভূতের নানার?

- আমি কি জানি?



ওয়েটার খাবার নিয়ে এসেছে। মোগলাই স্টাইলে মুরগীর রানে কামড় দিচ্ছি আর তুর্ণার গল্প শুনছি। বছর পাঁচেক আগে পালিয়ে বিয়ে করেছে ওরা। বাসে যে ভদ্রলোককে দেখেছি উনি তূর্ণার শ্বশুর না, বাড়িওয়ালা! ভদ্রলোক মানুষ হিসেবে অনেক ভালো! তূর্ণা একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করছে। অফিসের সামন থেকে বাসে উঠেছে সে। বাড়িওয়ালা ভদ্রলোক ওর মেয়েকে অফিস পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে নেমে গেছে। বিয়ের পর এই প্রথম তূর্ণা বাবার বাড়ি যাচ্ছে। অসুস্থ মা তূর্ণাকে দেখতে চেয়েছে তাই। শাহেদ সাথে আসেনি। এভাবে চোরের মত শ্বশুরবাড়ি যাবে না সে। শাহেদের কথা বলতে বলতেই শাহেদের ফোন আসে। তূর্ণা ফোনটা আমার কানে ধরিয়ে দেয়!



- জানু কোথায় এখন?

- আকাশে ভূতের বাপ!

- মৃদুল! তুই??

- হ আমি! তোর বউ টা একটা গাধী! আধ ঘন্টা কথা বলেও আমাকে চিনতে পারেনি... ...



কথা শেষ না হতেই দুম করে পিঠে একটা ঘুসি বসিয়ে ফোনটা কেড়ে নেয় তূর্ণা! ‘শাহেদ তোর বউটা একটা দজ্জাল!’

তূর্ণা ফোনে খিলখিল করে হাসছে। ঘুসিটা ভালই লেগেছে! লাস্ট কবে এমন ঘুসি খেয়েছিলাম ভুলে গেছি। তূর্ণার মেয়েটা একটা লাল আপেল হাতে দাঁড়িয়ে আছে! ওকে লাল আপেলটার মতই দেখাচ্ছে! মেয়েটার হাতে কষে একটা চড় খেতে ইচ্ছে করছে!

‘আঙ্কেল তুমি এত পঁচা কেন? এক থাপ্পর দিয়ে তোমাকে ভালো বানিয়ে দেব!’



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৪৭

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: চমৎকার গল্প

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:০০

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:১৫

আজীব ০০৭ বলেছেন: চলুক.........।

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:১৩

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: কি চলবে ভাই?

৩| ০৮ ই মে, ২০১৪ সকাল ৮:০৫

মোঃ সুমন রানা বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর। পড়ে ভালো লাগল

০৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:০৪

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.