নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি বেনামী গল্প

০৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৩৬

[এটি একটি বেনামী গল্প। সময় অভাবে গল্পটির আকিকা করা সম্ভব হল না বলে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।]



‘স্যার হরলিক্স খাবেন?’



এই মেয়েটা কিছু খাওয়ার কথা বলা মানে ঘোর বিপদ। মতামত জানতে চাওয়াটা একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। হরলিক্স মেফতাকে খেতেই হবে। টেবিলে পরিষ্কার কাঁচের গ্লাসে বাদামী রঙয়ের কিছু তরল রাখা আছে। তরলটা হরলিক্স কিনা সে বিষয়ে বিস্তর সন্দেহ আছে মেফতার। মেয়েটা গতকালই ঝাল সেভেন আপ খাইয়েছে ওকে। সেভেন আপের সবুজ বোতলে কাঁচা মরিচ কুঁচি কুঁচি করে কেটে দিয়েছিল। এইটুকুন একটা মেয়ের মাথায় এত শয়তানী বুদ্ধি আসে কোথা থেকে? সবে তো টুতে! রাকা জন্ম থেকেই ফাযিল নাকি?



‘স্যার... কি হল? খান? হরলিক্স বাচ্চাদের বানায় টলার, স্ট্রঙ্গার এন্ড শার্পার!’

হেসে ফেলে মেফতা। ‘আমার টলার হওয়ার বয়স চলে গেছে। তুমি খাও’

‘না খেলে কিন্তু আম্মুকে বলে দেব আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে বিড়ি খান!’



কি বীভৎস আক্রমণ! বিড়ি! মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি। সিগারেট হলেও একটা কথা ছিল! কিছু বলাও যাবে না। পান থেকে চুন খসলেই ভেউ ভেউ করে কান্না জুড়ে দেবে। জীবনের প্রথম টিউশনি। আর যাই হোক মাসটা শেষ না করে ইতি টানা উচিৎ হবে না। তাই বলে তো এতটুকুন একটা মেয়ের বর্বর মিথ্যাচারকে প্রশ্রয় দেয়া যায় না।



- ‘মিথ্যা বল কেন? মিথ্যা বললে দাঁতে পোকা হয় জাননা?’

- ‘আমার হবে না। আমি প্রতিদিন পেপসোডেন্ট দিয়ে দাঁত মাজি’

- ‘খুব পাকনা হইছো না?’

- ‘স্যার কিসের পাখনা? ময়ূরের নাকি মাছের?’

- ‘তোমার মাথার পাখনা! বই বের কর! ফাযিল মেয়ে কোথাকার!’

- ‘আম্মু... অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ...’

শুরু হয়ে গেল। কখন থামবে কে জানে। মেয়ের মা এসে তোলো তোলো করবে। কিন্তু আহ্লাদী মেয়ে কিছুতেই থামবে না। এ মেয়ে যে বড় হলে কি পরিমাণ ঢঙ্গী হবে সেটা কল্পনা করতেও মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে মেফতার।



‘চুপ! একদম চুপ!’



মেফতা ব্যর্থ। মেয়ের ‘মামনী’ চলে এসেছে। ‘আম্মুটা আমার কাঁদে কেন রে?’



একে তো নাচনী বুড়ি তাতে পড়ছে ঢাকে বাড়ি! মেয়ের ফোঁসফোঁসানী আর চোখের জল দেখলে যে কেউ ভাববে যে ভদ্রমহিলার মেয়েকে মেফতা মেরে তক্তা বানিয়ে দিয়েছে।



- ‘কি হয়েছে? স্যার মেরেছে?’

- ‘হরলিক্স... অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ...’



ও বুঝতে পেরেছি। স্যার হরলিক্স খায়নি।

‘বাবা হরলিক্সটা খেয়ে নাও। ওর যাকে পছন্দ হয় তাকেই হরলিক্স খাওয়ায়’

না বলতে যাচ্ছিল মেফতা। হঠাত কান্না ভুলে রাকা বলে ওঠে,- ‘মামনী, স্যার বি...’



অবস্থা বেগতিক। দ্রুত ডিসিশন বদল করে মেফতা। ‘কে বলল আমি হরলিক্স খাই না? এইতো খাচ্ছি... ’



রাকার মা চলে যায়। এক চুমুক হরলিক্স মুখে নিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রাখে মেফতা। জিনিসটা পিওর হরলিক্স না। কি যেন মেশানো হয়েছে। তবে খারাপ লাগছে না। আল্লাহর নাম নিয়ে আস্তে আস্তে মুখে আটকে রাখা তরলটাকে সোজা পাকস্থলীতে চালান করে দেয় সে।

- ‘এবার খুশি? সত্যি করে বলতো কি মিশিয়েছিলে হরলিক্সে?’

- ‘শাহী মুরগীর মশলা!’

- ‘কি?? ডাকো তোমার আম্মুকে ডাকো। তোমার মত ইবলিশকে পড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব না’



রাকার কোন ভাবান্তর নেই। অন্য সময় হলে ঠিকি কেঁদে দিত। মেয়েটা পারেও বটে।



শেষ! টিউশনি টা গেল। টেবিলের ওপরে রাখা ব্যাগটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় মেফতা। দু’পা এগিয়েও যায়।



হঠাৎ নীরবতা ভাঙ্গে রাকা। ‘আমি কিছু করিনি। সব দোষ আপুর!’



‘আপু মানে??’



দরজা খুলে কেউ একজন রুমে ঢোকে। রাকার আব্বু।

- ‘বাবা চলে যাচ্ছ? তোমাকে একটা কথা বলতে ভুলে গেছি’

- ‘জ্বি বলুন’

- ‘আমার বড় মেয়েটা এবার অ্যাডমিশন টেস্ট দেবে। ও তোমার কথা বলছিল। ওকে একটু কেমিস্ট্রিটা দেখিয়ে দিতে হবে তোমার’



অফারটাকে সরাসরি না করে দেয়া উচিৎ মেফতার। কিছুক্ষণ আগে যে ডিসিশন নিয়েছে তার সাথে এটা সাংঘর্ষিক। তাছাড়া সামনে সেমিস্টার ফাইনাল। তবে মুরগীর মশলাওয়ালীকে শায়েস্তা করার সুযোগটা হাত ছাড়া করাটাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কত্ত বড় সাহস! মেফতাকে মুরগীর মশলা খাওয়ায়!



- ‘কিন্তু আংকেল আমার যে শুক্র-শনিবার ছাড়া সময় হবে না।‘

- ‘তাতেই হবে। ও পড়ালেখায় এমনিতেই অনেক ভাল!’

- ‘তাহলে তো ভালই। ’

- ‘এইচএসসিতে গোল্ডেন এ+! শুক্রবারে আসতে আবার ভুলে যেও না কেমন?’

- ‘ভুলে গেলে রাকাকে ফোন দিতে বলবেন! আংকেল আসি তাহলে’

- ‘ওকে। আস’



এ টিউশনিটার এই একটাই প্রব্লেম। ইচ্ছা না থাকলেও হেঁটে হেঁটে যেতে হয়। বাড়ির সামনে আধ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও একটা রিক্সা পাওয়া যায় না। কিন্তু আজ বাড়ির গেটের সামনেই একটা ফাঁকা রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে। কোন কথা না বলে রিক্সায় উঠে বসে মেফতা।



- ‘হ্যালো স্যার! আমার রিক্সায় উঠে পরলেন যে?’

- ‘তুমি! তুমি এখানে কি কর?’

- ‘দেখছো না দাঁড়িয়ে আছি! উজবুক কোথাকার। গার্ল ফ্রেন্ডের বাসাটাও চেন না!’

- ‘মানে কি?’

- ‘যেই একটা মেয়ের কথা শুনলে আর অমনি রাজী হয়ে গেলে! ক্যারেক্টার ঢিলা মফিজ...’

- ‘মানুষ এত খারাপ হয় কি করে?’

- ‘ক্যান ঝাল কোক ভালো লাগে নি?’

- ‘আমি কোন অভদ্র মেয়েকে পড়াতে পারব না’

- ‘মাইন্ড করো কেন? খিচুরীতে মুরগীর মশলা দিলে নাকি মুরগীর টেস্ট পাওয়া যায়! হরলিক্সে পাওনি বোধহয়?’

- ‘এটাই শেষ! আমি আর আসছি না...’

- ‘ঢং কত? না আসলে গার্ল ফ্রেন্ড চালানোর টাকা আসবে কোত্থেকে জনাব?’

- ‘কথায় কথায় এত ঝগড়া কর কেন? তুমি না আমার গার্ল ফ্রেন্ড! ওঠো রিক্সায় ওঠো জাদুমণি... ঝুনঝুনী টুনটুনি!’



মৃত্তিকা রিক্সায় ওঠে। রিক্সাওয়ালা রিক্সার পেডেলে পা দিয়ে মিটিমিটি হাসে! ক্রিং ক্রিং...

‘আমার রিক্সা চলে হাওয়ার বেগে উইড়া উইড়া...’

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মে, ২০১৪ সকাল ৮:০৪

মোঃ সুমন রানা বলেছেন: ভালো লাগল

০৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:০৩

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.