নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: ছারপোকা

১৪ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:২৯

একটা কালো কুচকুচে উকুনের মত পোকা রাহাতের পা বেয়ে উপরে উঠছে। পোকাটার নাম ছারপোকা। চুপচাপ রক্ত খায়। অন্যদিন হলে পোকাটাকে দু’আঙুল দিয়ে ধরে কলমের হেড দিয়ে টিপে মারত রাহাত। বিশ্রী একটা গন্ধ এসে নাকে বাঁধত ওর। গা গুলিয়ে উঠত। কিন্তু আজ পোকাটাকে বিন্দু মাত্র বাঁধা দিচ্ছে না সে। কতটুকুই আর খাবে বেচারী? খাক না! টেবিলের উপর থেকে পিন ভর্তি স্ট্যাপলারটা হাতে নেয় রাহাত। একনাগারে কিছুক্ষণ ফাঁকা স্ট্যাপল করে। স্ট্যাপলারের মেটালিক সাউন্ডটায় একধনের মাদকতা আছে। অসহায় পিনগুলোকে কষ্ট দিতে অদ্ভূত ধরনের আনন্দ পায় সে। রাহাতের প্রতিটি চাপে পিন নয়, যেন অন্য কিছু পিষ্ট হয়। খচ-খচ খচ-খচ....



সকালে ফোন করেছিল রাফা। ধরবে না ধরবে না করেও শেষ পর্যন্ত ফোনটা ধরেছিল রাহাত।

- রিসিভ করলে কেন?

- বল...

- মানুষের তো একটা কমন সেন্স থাকে। কাল থেকে কতবার ফোন দিয়েছি?

- আমার নেই

- মানুষ এত খারাপ হয় কি করে?

- তুমি যেভাবে হয়েছো

- তোমার সাথে রিলেশন করার সিদ্ধান্তটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত!

- এতদিন পর তোমার বোধদয় হল নাকি অনেক আগেই হয়েছে?

- আমাকে অ্যাভয়েড করছো কেন?

- কারণ অ্যাভয়েড করার সময় চলে এসেছে

- মানে??

- দেখো রাফা। আমি অবোধ বালক নই আর তুমিও সেই জাতীয় কিছু নও। আমি মুখ খুলতে চাচ্ছি না। কারণ ন্যাকা কান্না দেখলে আমার পিত্তি জ্বলে

- তুমি কি বলতে চাচ্ছ?

- সেটা কি সংবাদ সম্মেলন করে জানাতে হবে? তোমাকে অভিনন্দন জানানোটা বাকী ছিল। সেটা জানাতে চাচ্ছি।

- বুঝলাম না

- বোঝাটা তোমার কাজ নয়। আমাকে তো বুঝতে পারোই নি। কষ্ট করে হলেও রাতুলকে বোঝার চেষ্টা করিও। তারপর নাহয় অন্য কাউকে...



রাফা হয়তো কিছু একটা বলত। কিন্তু সেই কিছু একটা শোনার মত ধৈর্য রাহাতের ছিল না। ঠাস করে ফোনটা কেটে দিয়েছিল রাহাত। আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্কটা ছিন্ন করার দরকার ছিল। আজ তা হয়ে গেছে। এটাকেই বিশ্বাস বলে! কষ্টে মুখে হাসি চলে আসে রাহাতের। বাবা অসুস্থ্য ছিল রাহাতের। মাস দুয়েক সময় দিতে পারেনি রাহাত। এরই মাঝে রাতুলের সাথে সম্পর্ক হয়ে গেল! কি ভেবেছিল রাফা? রাহাতের চোখকে ফাঁকি দেবে সে? ভালোবাসার মানুষের চোখ ফাঁকি দেয়া যে পৃথিবীর অন্যতম কঠিন কাজ সেটা হয়তো রাফা নামক মেয়েটার জানা ছিল না। একবার ইচ্ছে করছিল ইচ্ছেমত অপমান করে রাফাকে। কিন্তু লাভ কি তাতে? মরা মানুষকে অপমান করেই বা কি হবে? মরা মানুষ! মরাই তো! রাফা মরে গেছে। রাহাতের পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোন পৃথিবীতে নিষ্পাপ শিশু হয়ে জন্ম নিয়েছে রাফা।



- রাহাত নৌকায় ঘুরবে?

- এখন?? এই ঝড়ের মধ্যে?

- ঝড় কই? সামান্য বাতাসে তুমি ভয় পাচ্ছ?

- তোমার মাথায় বড় ধরনের সমস্যা আছে

- থাকুক। সেটা আমার মাথা বুঝবে। তুমি নৌকায় উঠবে কিনা বল?



না বলার সুযোগ থাকত না রাহাতের। দমকা বাতাস উপেক্ষা করে নৌকা ছেড়ে দিত মাঝি। নদীর বিদ্রোহী পানিগুলো এসে সজোরে নৌকায় আঘাত করত। মাঝরাতের মদ্যপের মত দুলত নৌকা। নদীর উত্তাল ঢেউগুলোতে পা ভেজাত রাফা। রাহাত ভয় পেত।



- পড়ে যাবে তো!

- গেলে যাব। তাতে তোমার কি?

- তাতে কি মানে? আমার একমাত্র বউটা হারিয়ে গেলে বউ পাব কই?

- বউয়ের শোকে তুমিও হারিয়ে যাবে!



হা... হা... হা...। ছারপোকাটার দিকে তাকিয়ে পাগলের মত খটখট করে হাসে রাহাত। বউ! রাহাত তোর বিয়ে হল কবে?



বিয়েটা সেদিন করতেই পারত রাহাত। সেদিন বলতে ছ’মাস আগে, রাফার একুশতম জন্মদিন ছিল যেদিন। সেদিনই প্রথম শাড়ি পড়ে এসেছিল রাফা। সাজুগুজুও কম করেনি। রিক্সায় করে ঘুরছিল দু’জন।



- শাড়িতে তোমাকে সুন্দর লাগছে

- একটা বউ বউ ভাব আছে না?

- হুম!

- তাহলে চল বিয়ে করে ফেলি!

- কোথায় ফেলবে? নদীতে!

- আমি কিন্তু সিরিয়াসলি বলছি

- আমিও সিরিয়াস। বউ পালবে কে? আমি নাকি আমার শ্বশুর আব্বা?

- আহা আমরা তো জাস্ট বিয়ে করব, সংসার না!

- তোমাকে সাইক্রিয়াটিস্ট দেখানো দরকার

- তুমিই তো আমার সাইক্রিয়াটিস্ট! দেখ...



আবার খটখট করে হাসে রাহাত। ছারপোকাটার রক্ত খাওয়া বোধহয় শেষ হয়েছে। রক্ত ভর্তি পেট নিয়ে কিছুক্ষণ ঘাপটি মেরে বসে ছিল বেচারী। এখন সুরসুর নেমে যাচ্ছে। প্রয়োজন ফুরালে সবাই এভাবে সুরসুর করে চলে যায়। স্ট্যাপ্লারটা আবার হাতে নেয় রাহাত। খচ-খচ খচ-খচ... ...



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৩২

ডেমোনিয়াক ম্যাডম্যান বলেছেন: অদ্ভুত সবাই

১৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৫৯

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: হুম :)

২| ১৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৫৪

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: প্রথম প্রেমের বিচ্ছেদ বেদনা হলে ঠিক আছে। তীব্রতা থাকা উচিত।

১৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১:০১

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: B-) B-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.