নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি বৃষ্টিস্নাত দিনের উপলব্ধি

২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৪৫

গতকালের ঘটনা। কয়েকজন বন্ধু মিলে হাঁটছিলাম। পথে একটা জাম গাছ ছিল। এক বন্ধু বলল, গাছে থেকে নাকি টুপটাপ করে জাম পড়ে! জাম দেখতে উপরে তাকালাম। ব্যস! চোখের মধ্যে টুপ করে একটা জাম পড়ল! স্যরি! জাম না, ধুলো-বালি টাইপের কিছু হবে। চোখ বন্ধ করলাম। কিন্তু খুলতে পারলাম না। পানি দিলাম, চোখের পাপড়ি তুললাম। কিছুতেই কিছু হল না। বন্ধু সহ গেলাম হেলথ কেয়ার। ডাক্তার যদি কিছু করতে পারেন! ডাক্তারও পারলেন না। এন্টিব্যাক্টেরিয়াল ড্রপস আর নাপা দিয়ে বিদায় করলেন। টিএসসি তে এসে অনেক্ষণ পানি দিলাম। কিন্তু বিদেশী বস্তুটা স্ট্রাইক করে চোখের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকল, বের হল না। হলে এসে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলাম আর মাঝে মাঝে উঠে পানি ঝাপ্টা দিতে থাকলাম। অবশেষে দীর্ঘ দু’ঘন্টার পরিশ্রমে সফলতা এল। সফলতা এলেও আমার ক্লাস খাতাটা আমার সাথে আসেনি। মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমার যে একটাই ক্লাস খাতা!



আজ সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো গুড়ি গুড়ি, কখনো বা ঝুম। বিকেলটায় একটু কমেছে। হারানো খাতাটার কথা মনে পরতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। ছাতা হাতে বেড়িয়ে পরলাম হারানো খাতা অনুসন্ধানে। ‘খোঁজ – THE SEARCH’! হলের সামনে এক বৃদ্ধ রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃদ্ধ পলিথিন বের করে আমার পা ঢেকে দিলেন। রিক্সা হেলথ কেয়ারের উদ্দেশ্যে চলছে। বৃষ্টির গতিবেগ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সত্তর-পচাত্তর বছরের এক বৃদ্ধ কাকভেজা হয়ে রিক্সা চালাচ্ছেন আর আমি ছাতা হাতে হুড উঠানো রিক্সায় পলিথিন মুরি দিয়ে সেই অভূতপূর্ব দৃশ্যটা উপভোগ করছি। কেমন যেন ইতস্তত লাগছিল।

বললাম, -‘মামা, আমার কাছে ছাতা আছে। নেবেন?’

বৃদ্ধ না বললেন। কিন্তু সে না বলায় কোন জোড় নেই। ছাতাটা মেলিয়ে এগিয়ে দিলাম। বৃদ্ধ কেঁদে ফেললেন। হঠাত আমাকে আব্বা বলে সম্বোধন করলেন। তারপর বললেন...



- গাড়ি চালাইতে পারি না আব্বা। খুব কষ্ট হয়। এনহেলার কেননের টেয়া নাই।

- আপনার ছেলে পুলে কেউ নেই?

- আছে। কেউ আমারে দ্যাখে না। বিয়া কইরা শ্বশুরবাড়ি থাকে

- ও...

- একটা লুঙ্গি কিনা চাইছিলাম। সেটাও দেয় নাই আব্বা...




বৃদ্ধ বিড়বিড় করে বলছিলেন আর কাঁদছিলেন। আমি চুপ করে থাকলাম। বৃদ্ধের কথাগুলো কান সহ্য করতে পারছিল না। আমার রেসপন্স না পেয়ে একটু পরে একাএকাই চুপ করলেন বৃদ্ধ। রিক্সা মৃদু গতিতে চলছিল। একহাতে ছাতা আর একহাতে হ্যান্ডেল ধরে রিক্সা চালাচ্ছেন বৃদ্ধ। দমকা বাতাসে ছাতাটা বৃদ্ধের হাত ফোঁসকে বারবার উড়ে যেতে চাচ্ছে। বৃদ্ধ নিরুপায় হয়ে ছাতাটা এগিয়ে দিলেন- ‘আব্বা বাতাসে ছাতা ধরন যায় না’। ছাতাটা নিয়ে বৃদ্ধের মাথার উপর শক্ত করে ধরে থাকলাম। বৃদ্ধ বা’হাত দিয়ে চোখের পানি মুছলেন।



হেলথ কেয়ারে আমার খাতা নেই। আলমারি, ডাক্তারের চেম্বার, এমারজেন্সি রুম কোথাও না। হতাশ মনে বেরিয়ে এলাম। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। রিক্সা নিয়ে সেই বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন।



- আব্বা যাইবেন?

- না। আপনি এই বৃষ্টিতে রিক্সা চালাবেন না। বৃষ্টি কমলে চালাবেন।

- বৃষ্টির দিকে দেখলে কি আর পেট চলবো?



বৃদ্ধের পেট চলবে কি চলবে না আমি জানিনা, তবে এই ঝুম বৃষ্টিতে সত্তর বছরের এক বৃদ্ধকে ভেজাতে মন সায় দিচ্ছিল না। ছাতাটা মেলে টিএসসি অভিমুখে হাঁটতে থাকলাম। খাতাটা ফিরে পাওয়া যে আমার খুব দরকার।



বাকৃবিতে ছুটির দিন টিএসসি ক্যান্টিন বন্ধ থাকে। তবুও গেলাম। দরজা বন্ধ। ভেতরে টিভি চলছে। শার্ট-প্যান্ট পরা এক ভদ্রলোক আর একটা পিচ্চি খুব মনযোগ দিয়ে টিভি দেখছে। দরজা ধাক্কালাম। দাঁড়িয়ে থাকলাম। কেউ দরজা খুলল না। জানালা খোলা ছিল। জানালায় গিয়ে দরজা খুলতে বললাম। শার্ট প্যান্ট পড়া ভদ্রলোক জানিয়ে দিল দরজা খোলা যাবে না। মালিকের নিষেধ আছে। পিচ্চিকে ডাকি পিচ্চিও শোনে না। অবশেষে পিচ্চিকে জানালায় আসতে বললাম। চরম বিরক্তি নিয়ে ভদ্রলোক বললেন, -‘ভাই বললাম তো খোলা যাবে না। আপনি মালিকের সাথে কথা বলেন!’



নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না। মাথায় রক্ত চড়ে গেল। ‘অই মিয়া! অত বেশি বুঝেন ক্যান? জানালায় আসতে মালিকের পারমিশন লাগে??’



ভদ্রলোক চুপ মেরে গেলেন। পিচ্চি উঠে গেল মালিকের পারমিশন নিতে! কিছুক্ষণ পর এসে জানাল দরজা খোলা যাবে না। বললাম, দরজা খোলা লাগবে না। জানালায় আয়। পিচ্চি জানালায় এল। পিচ্চিটাকে কষে একটা চড় মারতে ইচ্ছে করছিল। সব বাদ দিয়ে বললাম,- ‘কাল কোন খাতা পাইছিলি?’



পিচ্চি দেখি মাথা উপর-নিচ করে! বললাম, ‘তারাতারি নিয়ে আয়!’



পিচ্চি খাতা এনে দিল। মনটা ভালো হয়ে গেল। চড় মারার সিদ্ধান্তটা স্থগিত করলাম। তবে ঠাণ্ডা মাথায় যা বললাম, তাতেই পিচ্চি অনেক ভয় পেয়ে গেছে। পৃথিবীটা এমন হয়ে গেছে যে সোজা আঙ্গুলে ঘী একদম উঠতে চায় না! একটু বাঁকা করতেই হয়!



বৃষ্টি থেমেছে। হারানো খাতার জন্য মনের মোচড়ানীটাও বন্ধ হয়েছে। বৃষ্টিস্নাত কংক্রিটের পরিষ্কার রাস্তাটা যেন আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল।



‘হাঁটতে এত আনন্দ ক্যারে???’



মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:০০

ফা হিম বলেছেন:
বৃষ্টিতে ছাতা মেলে হাটতে খুব মজা, যদি রাস্তায় কাদা এবং গর্ত না থাকে। ভালো লাগল আপনার দিনলীপি। বৃদ্ধ রক্সাওয়ালার জন্য কষ্ট পেলাম খুব।

২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:০৮

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ :) বাস্তবতায় কষ্ট পেতে নেই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.