নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কর্পুর (ছোটগল্প)

০১ লা জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:২৭

শাকেরা,

অনেকদিন থেকে তোমার সাথে কথা হয় না। চমকে গেলে? ভাবছো দু’দিন আগেই তো কথা হল! হ্যা হয়েছে, স্বীকার করছি। তবে তা অনেকদিন আগের মত করে না, কেমন যেন খসখসে, অনেকটা গুড়ো দুধের মত। সবি ঠিক আছে শুধু ময়েশ্চার কম থাকায় গলা দিয়ে নামতে একটু অসুবিধা হয়। চিঠিতে সে প্রব্লেমটা নেই। তাই আজকের এ চিঠি আয়োজন, পুরনো কায়দায়, পুরনো বন্ধুকে।



একটা খারাপ খবর দিয়েই শুরু করি। আমার অনেক কাছের একটা বন্ধু হারিয়ে গেছে! না না, গুম টুম কিছু হয়নি, এমনি এমনি হারিয়ে গেছে। বাতাসে রেখে দিলে কর্পুর যেভাবে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় ঠিক সেভাবে। প্রতিদিন খাবার পর দাঁত ব্রাশটা ঠিকি করা হয়, শুধু বন্ধুর খবর নেয়া হয় না। আমি ফোন দিলে সে ব্যস্ত থাকে অথবা সে ফোন দিলে আমি। এর মাঝে যেটুকু কথা হয় সেটুকুও থাকে ব্যস্ততায় টইটম্বুর। ‘ওকে! পরে কথা হবে’ - বলে আমাদের কথা দেড় অথবা দু’মিনিটের মাথায় শেষ হয়। পরে আর কথা হয় না। অথচ আমরা এমন ছিলাম না। ছোট-বড়-মাঝারী সব ধরনের ভালো লাগা কিংবা খারাপ লাগার অনুভূতি গুলোতে ছিল আমাদের সমান অধিকার। ওর ছলছল চোখের রহস্যটাও যেমন আমার জানা ছিল তেমনি আমার ঠোঁটের কোণের বাঁকা হাসির কারণটাও অজানা থাকত না ওর। ছোট বড় প্রতিটি মুহুর্তই আমরা ভাগাভাগি করতাম। বাড়ির সামনের কাঁদায় পা পিছলে পড়ে যাওয়া, ক্রিকেট খেলতে গিয়ে ভীমরুলের কামড় খাওয়া, পরীক্ষার হলে অঙ্ক ভুল করা, প্রথম কোন মেয়েকে ভালো লাগা, বাদ যেত না কিছুই। ফেইসবুকের একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও আমাকে না জানিয়ে একসেপ্ট করত না সে। পারিবারিক অথবা ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো আমরা দু’জন মিলেই সমাধানের চেষ্ঠা করতাম। একদিন তো সে বলেই ফেলল, আমাকে নাকি ওর পরিবারের একজন মনে হয়। ছোট ছোট বিষয়গুলোও ভাগাভাগি করতে না পারলে অনেক খারাপ লাগে ওর। অথচ সময়ের কেমন রুঢ় আচরণ দেখ? এখন অনেক বড় বিষয় গুলোও আর ভাগাভাগি হয় না। পুরনো কোন সিমে জমে থাকা পুরনো দিনের কোন এসএমএস দেখলে নিজের অজান্তেই মনটা যেন কেমন করে ওঠে আজকাল।



মাস ছয়েক আগের কথা। সেদিন জন্মদিন ছিল ওর। বারোটা বাজার সাথে সাথেই টেক্সট করলাম। আগে ডিরেক্ট ফোন দিয়েই উইশ করতাম। এখন সিরিয়াল পাই না। নিজথেকেই ওর প্রিয়মানুষদের জন্য শুরুর সময়টাকে সংরক্ষিত করে দিয়েছি। বাবা-মা, ভাই বোন, ছেলেবন্ধু, মেয়ে বন্ধু, কাছের বন্ধু, দূরের বন্ধু, ব্লা... ব্লা... ব্লা...দের ঝামেলা চুকে গেলে তারপর ওকে ফোন দেব। এমনটাই ভেবে রেখেছিলাম। ভাবনা অনুযায়ী বারোটা বাজার অনেক পরে ফোন দিলাম। যান্ত্রিক কন্ঠে কেউ একজন জানিয়ে দিল আমি কল ওয়েটিংয়ে আছি। ফোনটা কেটে দিয়ে ঘুম ঢুলুঢুলু চোখ নিয়ে অনেক্ষণ অপেক্ষা করলাম। আশায় ছিলাম কিছুক্ষণ পর ফোন ও’ই ব্যাক করবে। আমি ঘুমিয়ে পরলাম, কিন্তু ফোন এল না। সকালেও না, রাতেও না। সব ভুলে প্রতিবছরের মত রাতে আবার ফোন দিলাম। বার্থ ডে কেমন কাটল জানার জন্য। কন্ঠে আবার সেই পুরনো সুরের পুনরাবৃত্তি। ব্যস্ততা! হু... হা... মোটামুটি... এক মিনিট... দেড় মিনিট... ওকে... পরে কথা হবে... বাই! ফিনিশ! এর দু’দিন পর অবশ্য ওর নাম্বার থেকে একটা ফোন এসেছিল। আমি আলতো করে মোবাইলের লাল বাটন টা টিপে দিয়েছি। ভালো করিনি শাকেরা?



চিঠি দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। অগোছালো দীর্ঘ চিঠি পড়া বিরক্তিকর। ইদানিং মানুষের বিরক্তির কারণ হতেও আর ভালো লাগে না। ছোট্ট একটা খবর দিতে গিয়ে এলোমেলো ভাবে কিসব আবোল তাবোল বকলাম। কিছু মনে কর না। খবরটা কাউকে জানাতে খুব ইচ্ছে করছিল। চারদিকে ঘুরে ফিরে অবশেষে তোমার শরণাপন্ন হতে বাধ্য হলাম। তুমি ছাড়া আমার যে কোন বন্ধু নেই শাকেরা!



‘কেন বাড়লে বয়স ছোট্ট বেলার বন্ধু হারিয়ে যায়?’ এ প্রশ্নটা সায়ান আমাকে প্রতিদিন করে। আমি উত্তর দিতে পারি না। সায়ানের মত আমারও উত্তরটা জানতে খুব ইচ্ছে করে। কেন হারিয়ে যায় শাকেরা? উত্তরটা কি তোমার জানা আছে?



ভালো থেকো।



ইতি

পুরনো কোন বন্ধু



চিঠিটা দুপুরে দিয়ে গেছে পিয়ন। হলুদ খামের চিঠিটা দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিল শাকেরা। খামের উপর প্রেরকের নাম-ঠিকানা কিছুই লেখা নেই। ইলেক্ট্রনিক্স এর এ যুগে ওকে মান্ধাতা আমলের চিঠি লিখবে কে? কেউ ফান করছে না তো? কিছুটা কৌতূহল আর কিছুটা তাচ্ছিল্যের সাথে খামটা খুলেছিল শাকেরা। কে জানত শাকেরার সেই কৌতূহল আর তাচ্ছিল্যের মেঘ চোখের কোণে ঘনীভূত হয়ে টুপটাপ করে ঝড়ে পড়বে?



এ পর্যন্ত চেতাল্লিশ বার ফোন দিয়েছে শাকেরা। প্রতিবারই আলতো করে লাল বাটনটা টিপে দিয়েছে সৃজন। চুয়াল্লিশতম ফোনটা দেয়ার আগে চিঠিটা পঞ্চম বারের মত পড়ছিল শাকেরা। ঠিক সেই মুহুর্তে এসএমএস করে সৃজন-



‘কার্বাইডে নয়, ফল যেদিন ন্যাচারালি পাকবে ফোনটা সেদিনই রিসিভ করব পুরনো বন্ধু!’



হতভম্ভ হয়ে একবার মোবাইলটার দিকে আর একবার হাতের চিঠিটার দিকে তাকিয়ে থাকে শাকেরা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১০

ভোরের বাতাস বলেছেন: খুব সুন্দর হয়েছে. . শেষ হয়েও হলো না শেষ!

০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:২৩

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৪২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: বেশ লাগল গল্পটা!

০২ রা জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:২২

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ শঙ্কু ভাই :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.