নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প: কুরবানি

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:২২

ঈদের দিনটা যেন কেমন কাটল রিদনের। কোন কিছুই ঈদের মত করে হল না এবার। এমনকি ঈদের নামাজটাও তাড়াহুড়ো করে হল। এটা নাই, ওটা নাই, এটা আন, ওটা আন এসব নিয়েই সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয়েছে ওকে। ঈদের দিনে কেউ বিয়ে করে? ওর আব্বুটা আসলে একটা পাগল!



না না, বিয়েটা রিদনের আব্বুর না, রিপার। রিপা রিদনের বড় বোন। গতবছর এসএসসি পাশ করেছে। মনে প্রবল ইচ্ছে থাকলেও আর কলেজে ভর্তি হওয়া হয়নি রিপার। কান্নাকাটি, অনশন কিছুতেই কিছু হয়নি। মেয়ে মানুষ মেট্রিক পাশ করেছে এটাই অনেক। এত পড়ে হবেটা কি? এবার বিয়ে শাদি করে সংসার করুক। ছেলে পুলে মানুষ করতে হবে না? মেয়েকে মোতাহার মিয়া এভাবেই শাসায়। মেয়ে ভেউ ভেউ করে কাঁদে, মোতাহার মিয়া ভাঙা বাইসাইকেলটা নিয়ে রাগে গড়গড় করতে করতে দোকানে চলে যায়। বাজারে একটা থান কাপড়ের দোকান আছে তার।



সেই গত বছর থেকে মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজছেন মোতাহার মিয়া। মোতাহার মিয়ার পছন্দ করা পাত্র পছন্দ হয়না রিদনের মার। কোথাও না কোথাও ঘাটতি থেকেই যায়। ছেলের মা আছে তো বাবা নেই, বাড়ি ঘরের অবস্থা ভালো না, পরিবেশ খারাপ, বড় সংসার, ছেলে বয়স বেশী ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই এবার জেরিনা বেগমের ভেজালে না গিয়ে একাএকা বিয়ে ঠিক করে এসেছেন মোতাহার মিয়া। ছেলে গার্মেন্টসের বড় অফিসার। ঢাকায় থাকে। অনেক দিল দরিয়া ছেলে। মেয়েকে না দেখেই বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। এমন ছেলে লাখে একটাও পাওয়া যায় না। তিনদিনের ছুটিতে বাড়ি এসেছে। হাতে সময় নেই, তাই ঈদের দিন বিকেলেই বিয়ে! ছেলের কোয়ালিফিকেশন এভাবেই সবাইকে বলেন মোতাহার মিয়া। কথাগুলো কেন যেন বিশ্বাস হয়না জেরিনা বেগমের।



বরযাত্রী এল টেম্পুতে করে। আত্নীয় স্বজনরা সবাই হায় হায় করে উঠল। এসব কি? মান সম্মান বুঝি আর থাকে না! নাক ছিটকানোর শব্দে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠল! বিষয়টাকে সূক্ষ্ম মাথায় সামলে নিলেন মোতাহার মিয়া। টেম্পু গুলো দ্রুত বিদায় করে তিনটা মাইক্রোবাস এনে দাড় করে রাখলেন বাড়ির সামনে। বিষয়টা পছন্দ হলনা বরের চাচার। এত বড় অপমান কেন করবেন মোতাহার মিয়া? তারা টেম্পু নিয়ে আসুক আর উড়োজাহাজ নিয়ে আসুক সেটা তাদের ব্যাপার। টাকার গরম দেখায় ইলিয়াস আলীকে? মোতাহার মিয়ার দৌড় জানা আছে ইলিয়াস আলীর। এদিকে টেম্পু থেকে কালো ভুঁড়িওয়ালা বরকে নামতে দেখে মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন রিদনের ফুফু। পরীর মত একটা মেয়েকে কোথায় ভাসিয়ে দিল মোতাহার? মেয়ে কি বানের জলে ভেসে এসেছে নাকি? জেরিনা বেগম চুপচাপ। গতরাত থেকে পণ করে রেখেছেন জামাইকে বরণ করতে যাবেন না তিনি। মোতাহার মিয়া একাই নাচুক তার জামাইকে নিয়ে! আর রিপা? সে তো বউ সেজে জড় পুতলের মত বসে আছে। ভীতরে বাইরে কি ঘটছে কোন দিকেই যেন ভ্রুক্ষেপ নেই তার।



বরকে রিদনেরও পছন্দ হয়নি। দজ্জালের মত একটা লোক ওর দুলাভাই হয় কি করে? এর চেয়ে তারেক ভাই লাখো গুণে ভালো ছিল। লম্বা, ফর্সা আর কি স্মার্ট তারেক ভাই! হরহর করে ইংরেজি বলতে পারে। চাকরি ছিল না তাতে কি? চাকরি তো পেতই একদিন। আব্বুটা কিছুতেই বুঝল না। একে তো বেকার ছেলে তার উপর আত্নীয়! আত্নীয়ের সাথে কিছুতেই আত্নীয়তা করবেন না। এখন এই ভুঁড়িওয়ালা অনাত্নীয়কে নিয়েই তুষ্ঠ থাকুক আব্বু!



বাদ আসর বিয়ে হয়ে গেল। তবে সুষ্ঠুভাবে না। কবুল বলার আগ মুহুর্তে বরকে থামিয়ে দিলেন বরের মামা। মোটর সাইকেলটা কবে দেয়া হবে সেটা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ভাগ্নেকে কবুল বলতে দিবেন না তিনি। মোতাহার মিয়া রেগে গেলেন। এটা কোন ধরনের ছোটলোকি? সামান্য একটা মোটর সাইকেলের জন্য বিয়ে থেমে থাকবে নাকি? আজকেই টাকা দিয়ে দিবেন তিনি। বউ বিদায়ের আগে তার থেকে যেন নিজ হাতে টাকা গুণে নিয়ে যায় বরের মামা। শ্বশুরের প্রতিশ্রুতি শুনে একটা মুচকি হাসি দিয়ে কবুল বলল বর। বরপক্ষ বিয়ের তবারক এনেছিল গুড়ের মুঠো! গুড়োর মুঠো দেখে রিদনের চাচা তো মহাগরম। জাত ছোটলোক! শালাদের আজ শুধু গুড়ের ডাল খাইয়েই বিদায় করবেন তিনি।



সব মিটে যেতে রাত বারোটা বেজে গেল। এবার বিদায়ের পালা। আসবেন না আসবেন না করেও মেয়েকে বিদায় দিতে এলেন রিদনের মা। এসেই মেয়ের গলা জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি। সাথে যোগ দিলেন রিদনের চাচি-ফুফুরাও। মরার বাড়ির মত ননস্টপ কান্নাকাটি চলল কিছুক্ষণ। মোতাহার মিয়া চোখ মুছলেন। রিদনের চোখও ঝাপসা হয়ে এসেছিল। ঝাপসা চোখেই বোনের দিকে তাকাল রিদন। একি! রিপা মানুষ না অজগর? চোখে তো পানির ‘প’ ও নাই রিপার!



বাড়ি ভর্তি মানুষ, তবুও বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে রিদনের। আপুটাকে ধরে বেঁধে কুরবানির গরুর মত কুরবানি করে দিল আব্বু! আব্বুটা আসলেই একটা পাগল! রাত অনেক হয়েছে। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে রিদন। ঘুম আসছে না। সারাদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বারবার চোখের সামনে বিক্ষিপ্তভাবে ভেসে আসছে ওর। আচ্ছা তারেক ভাই বিয়েতে এলো না কেন? তারেক ভাই! তারেক ভাইয়ের কথা মনে হতেই চিঠিটার কথা মনে পড়ে গেল রিদনের। গতরাতে তারেক ভাইয়ের কাছে চিঠিটা পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল ওর। বিয়ের আনন্দে ভুলে গেছে রিদন। ধুর! এটা কিছু হল? এজন্যই বোধহয় তারেক ভাই আসেননি। দাওয়াত ছাড়া এমনি এমনি কি কেউ বিয়েতে আসে? চিঠিটা তো রিদনের পকেটেই ছিল। পকেট থেকে চিঠিটা বের মোবাইলের মৃদু আলোতে পড়তে থাকে রিদন-



‘তারেক,

নির্লজ্জ্বের মত তোমাকে চিঠি লিখছি। সব জেনে শুনেও স্বার্থপরের মত ফোনটা অফ করে রেখেছো কেন? একটুকুও অবাক হইনি। কিয়ামতের দিন মানুষ কেন ইয়া নফসি ইয়া নফসি করবে সেটা বুঝতে আর আমার বাকী নেই। বাবার সামনে না বলার মত সাহস আমার নেই। শুধু আমার কেন আমার পরিবারের কারুরই নেই। জীবনের চৌমাথায় দাঁড়িয়ে আছি আমি। আমার সামনে তিনটি রাস্তা। প্রথম রাস্তাটা খুব সরল। এ রাস্তায় চলতে কোন বাহন লাগেনা, কোন খরচও লাগে না। একটা ওড়না, সিলিং ফ্যান আর সময়মত সুযোগ পেলেই মই বেয়ে তরতর করে স্বর্গে চলে যাওয়া যায়। স্বর্গে কে না যেতে চায় বলো? ‘মায়া’ নামক দু’অক্ষরের শব্দটাই আমার সাথে শত্রুতা শুরু করে দিয়েছে, পথ আগলে ধরছে বারবার। সে কিছুতেই আমাকে এ নরক ছেড়ে স্বর্গে যেতে দেবে না। দ্বিতীয় রাস্তাটাও নির্ভেজাল। এ রাস্তার পথিককে কিছুই করতে হয় না। শুধু কুরবানির পশুর মত ধারালো ছুরির নিচে নিজেকে সঁপে দিতে হয়। কুরবানির গরুর কোন চাওয়া পাওয়া থাকতে নেই। মালিকের হাসিমুখ মানে তারই হাসিমুখ। বাকী থাকল তিন নাম্বার রাস্তা। এ রাস্তাটা অনেকটা দুর্গম, হিংস্র জন্তু জানোয়ারে গিজগিজ করছে। রাস্তাটা তোমার দিকে বাঁক নিয়েছে। এ রাস্তায় যেতে হলে আমাকে স্বয়ংবরা সাজতে হবে তারেক। তোমার হাত ধরে নির্লজ্জ্বের মত পালিয়ে যেতে হবে আমাকে। জানি একটা বেকার ছেলের জন্য এ পথ কতটা বন্ধুর! কিন্তু আমি যে নিরুপায় তারেক। বাবা বিয়েতে রাজি হলনা বলে তুমি আমাকে নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে চেয়েছিলে। আমি রাজি হইনি। তোমার কি সে কথা মনে আছে? যদি মনে থাকে তবে আমি ভোর পর্যন্ত তোমার অপেক্ষায় থাকব। তুমি হাত বাড়ালে তোমার হাতটা শক্ত করে ধরে বেড়িয়ে পরব। আর যদি তোমার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে সকালের আলো ফুটে যায়, তাহলে হয় প্রথম রাস্তার পথিক হব অথবা স্বেচ্ছায় কুরবানি হয়ে যাব। তোমার রিপা কুরবানি হয়ে যাবে তারেক...’






মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:২৮

রাজু মাষ্টার বলেছেন: হায়রে ছুডু ভাই,কি করলো এইডা......
সময়মত চিঠীডা দিলে সব কিছুই ঠিক হইতে পারতো... :(

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৩

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ছুডো তো! বুঝে নাই :(

২| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:১১

একজন আবীর বলেছেন: ভালো লিখেছেন...

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৫

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৩| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০০

আরজু মুন জারিন বলেছেন: এই ব্লগের যাবতীয় কর্মকান্ড জুনায়েদ খানের অনুর্বর মস্তিষ্কের অহেতুক পাগলামি !
ঠিক আছে তো। উর্বর মস্তিষ্কের কান্ডকারখানা। অনুর্বর মস্তিষ্কের পাগলামি কোথায়। লেখককে অনেক শুভেচ্ছা। গল্প টি ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ রইল অনেক অনেক বেশি। ভাল থাকুন বেশি বেশি।

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:১৩

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: এমন মন্তব্য পেয়ে এই রমজান মাসেও ফুলতে বাধ্য হলাম! :P আপনাকেও বেশি বেশি ধন্যবাদ।ভালো থাকবেন।

৪| ১৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:০১

অথৈ শ্রাবণ বলেছেন: গল্পটা সুন্দর ।বাস্তবতা এমন না হোক ॥

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ২:৫২

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.