নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প: ‘মামী’

২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:১৩

‘মামী, আপনার বাচ্চাটা না অনেক কিউট হইছে! গুল্লু গুল্লু চেহারা!’ – কথাটা বলে ক্লিনিকের সফেদ বিছানায় শুয়ে থাকা মামীর দিকে আড় চোখে তাকালো অনল। মামী একমনে সিলিঙয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনলের প্রশংসা বাক্যে বিশেষ কোন ভাবান্তর হলো না মামীর মুখে। ঠোঁট দুটো মৃদু কেঁপে হালকা প্রসারিত হল মাত্র। মামীকে আরো কিছু বলা উচিৎ অনলের। রোগীকে দেখতে এসে অন্যদিকে তাকিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকাটা অন্যায়।



‘মামী কিছু খাবেন?’



এবার মামীর দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে প্রশ্নটা করে ফেলল অনল। ফিক করে একটা শব্দ হলো! না, অনলের মামী ফিক করে হাসার পাত্রী নন। শব্দটা বেড়িয়েছে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট খালার মুখ থেকে! ছোটখালা চোখ দু’টো গরুর মত বিস্ফোরিত করে আকাশসম বিস্ময় নিয়ে অনলের দিকে তাকিয়ে আছেন।



‘মামী বলে ডাকলি অবশেষে?’ - বলে এবার ফ্যা ফ্যা করে হাসলেন ছোটখালা। ফ্যা ফ্যা হাসিটার শুরু শব্দ দিয়ে হলেও শেষটা হয় নিঃশব্দে। হাসিটা বিদ্রুপাত্নক ও ঝাঁঝালো।



এই প্রতিকূল পরিস্থিতে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কিছু করার নেই অনলের। ‘ভয়েস অব নানাবাড়ি’ খ্যাত ছোট খালা যখন খবরটা পেয়েই গেছেন তখন বিনামূল্যে ব্রডকাস্টিংয়ের ভারটাও নিজের কাঁধে তুলে নেবেন তিনি! গরম খবর... গরম খবর... “পাঁচ বছর পর জনৈক রমনীকে মামী বলে স্বীকৃতি দিলেন ভাগ্নে অনল!”



ছোট মামার বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর হয়ে গেল। এই পাঁচ বছরে একটি বারের জন্য মামীকে ভুলেও মামী বলে সম্বোধন করেনি অনল। কারণটা অজ্ঞাত। শুরুর দিকে এই অজ্ঞাত কারণটা অনুসন্ধানের চেষ্টা অনেক প্রত্নতাত্বিকই করেছেন বটে কিন্তু ধারাবাহিক ব্যর্থতায় তারাও আজ বড় ক্লান্ত! মামাও একদিন চেপে ধরেছিলেন –‘ কিরে, তুই আনিকাকে মামী ডাকিস না কেন?’



উত্তরটা অনলের মুখে সাজানোই ছিল, -‘ ডাকবো তো! মামী বড় হোক! তারপর ডাকবো!’



আজ মামী সত্যিকার অর্থেই অনেক বড় হয়ে গেছেন। অনলের মামাত ভাইয়ের মা হয়েছেন! সুতরাং মামীকে মামী ডাকতে সাংবিধানিক কোন বাঁধা থাকল না অনলের! তারপরেও মন যেন কেমন কেমন করে! ‘মামী’! মামার বউ মামীই তো!



স্কুল জীবনে মুখচোরা অনলের গুণের কমতি ছিলনা। গড গিফটেড একটা কুকিল কন্ঠ তো ছিলই, সাথে ছিল মেধা ভর্তি কোকড়া চুলের বড় একটা মাথা! ভালো ছাত্র বলতে অনল, ভালো গায়ক বলতে অনল এমনকি ভালো ফুটবলার বলতেও ঐ অনল। দোষের মধ্যে একটাই দোষ। মুখচোরা। ‘যদি তোর সামনে কোন মেয়ে থা...কে, তবে উলটো হাঁটো রে!’ রাস্তা দিয়ে কোন মেয়ে গেলে বন্ধুরা বলত,- ‘অনল, দ্যাখ দ্যাখ! রাস্তা দিয়ে কি যায়!’



অনল আগ্রহ নিয়ে তাকাত। যখনই দেখতো একটা মেয়ে রঙ্গ করে হেঁটে যাচ্ছে তখই মাথা নিচু করে বন্ধুদের উপদেশ বাণী শোনাত। ‘তোরা আর মানুষ হইলি না!’



অনলের দিনকাল এভাবেই চলছিল। এরই মাঝে হঠাৎ একদিন গল্পের পটপরিবর্তন হয়ে গেল। সময়টা দুপুরবেলা ছিল। টিফিন পিরিয়ড চলছে স্কুলে। লাইব্রেরীর সামনে কয়েকটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লাইব্রেরীতে একটা জরুরী কাজ ছিল অনলের। মেয়েগুলো থাকায় আপাতত সেটা হচ্ছে না। কয়েকবার দু’পা এগিয়ে গিয়েও তিন পা পিছিয়ে এসেছে সে। একটা মেয়ে অনলের দিকে মুখ করে অপলক নেত্রে তাকিয়ে আছে। লাইব্রেরীর দূরত্ব বেশী না। মুখটা ঝাপসা হলেও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দর। অনলের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছে মেয়েটা? ওকে দেখার জন্য লাইব্রেরীর দিকে তাকিয়ে আছে অনল? ভাবতেও পারে! সুন্দরী মেয়েরা নিজেদের নিয়ে আরো অনেক কিছুই ভাবে!



পরদিনও ঠিক একইভাবে মেয়েটা লাইব্রেরির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। একা। দৃষ্টি ছিল অনলের দিকে। অনলের দৃষ্টি যে অন্যদিকে ছিল তা বলবো না। সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের যে একটা আজন্ম দূর্বলতা আছে অনল যেন আজ সেটিই পুনঃপ্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। মেয়েটা শুধু সুন্দর নয়, ভয়াবহ সুন্দর! ভয়াবহ সৌন্দর্য বর্ণনা করার বিষয় নয়, অবলোকন করার বিষয়। অনল তাই করছিল। এক পা দু পা করে এগুতে থাকে অনল। আলোক উৎসের খুব কাছে চলে গেলে চোখ যেমন ধাঁধিয়ে উঠে অনলেরও তেমন চোখ ধাঁধিয়ে উঠছিল। মানুষের সৌন্দর্যের তো একটা লিমিট থাকা উচিৎ! মেয়েটার ক্ষেত্রে বোধহয় সব লিমিট ক্রস করেছেন বিধাতা। বেশিদূর এগুতে হয়না অনলকে। তার আগেই আলোক-উৎসটা উলটো ঘুরে সুরসুর করে ক্লাস রুমের দিকে চলে যায়। মেয়েটা অনলের জুনিওর, ক্লাস নাইনে পড়ে!



অনলের কুকিল কন্ঠের তারিফ আগেই করেছি। আবারো করছি। রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রবীন্দ্র-সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। গান তো গাইতেই হবে অনলকে। অনলের গান শুরু হতেই অডিটরিয়াম ভর্তি দর্শক সহসাই যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল-



‘আমারও পরাণও যাহা চায়

তুমি তাই গো... তুমি তাই’



দুরুদুরু বুক নিয়ে গান শেষ করে অনল। সামনের সারি থেকে একটা মেয়ে তালি দিতে দিতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায়! আরে! এ তো সেই!



তারপর একদিন সেই চোখ ধাঁধানো আলোক-উৎস্যটা একটা খাতা হাতে অনলের পাশে এসে বসে। অনল সেদিন লাইব্রেরী তে বসে একটা ম্যাথ সলভ করছিলো।



- অনল ভাইয়া! রাইট?

- কোন সন্দেহ?

- না! আপনি তো ইউনিক মানুষ। সন্দেহ হওয়ার অবকাশ নেই!

- তাই নাকি?

- তাই মানে একদম তাই! একটা মানুষের এত গুণ থাকে কি করে?

- কথাগুলো কিন্তু ভালো শোনাচ্ছে না। অন্য কোন কথা থাকলে বলতে পারো।

- ভাইয়া এ ম্যাথটা পারছি না। যদি একটু হেল্প করতেন!

- আমি ম্যাথ-ট্যাথ পারিনা!

- আমি জানি! আপনি পারেন। সাজেদুল স্যার আপনার কথা প্রায়ই বলেন! আপনার পা ধোয়া পানিও খেতে বলেন মাঝে মাঝে!

- মহা মুসিবতে ফেললে দেখছি!

- প্লিজ ভাইয়া...



এ ‘প্লিজ’ কে ফিরিয়ে দেয়ার সাহস হয়না অনলের। অঙ্ক সলভ হয়, মাঝে মাঝে টুকটাক অন্যকথাও হয়। পরদিন, তার পরদিন, তারও পরদিন।



মুখচোরা অনল কি তাহলে মেয়েটার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লো? সম্পর্ক তো বটেই তবে প্রেমের সম্পর্ক কিনা সেটা বলতে পারব না। কারণ প্রেম বিষয়ে অনলের চেয়েও আমার জ্ঞান সীমিত। তবে এতটুকু বলতে পারি সম্পর্কটা ভেংগে যাওয়ার দিন অনলের খুব খারাপ লেগেছিল।



দিনটার কথা এখনো মনে পড়ে অনলের। মামার বিয়ে। বরযাত্রী সেজে ফুরফুরে মন নিয়ে বিয়ে বাড়িতে এসেছে অনল। হাতে মিষ্টির প্যাকেট। বিয়ের পর সবাইকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে সে। মামার পাশে মাথা নিচু করে ঘোমটা দেয়া নতুন মামী বসে আছে। মামা অনলকে কাছে ডাকলেন।



‘কিরে! মামীকে মামার বিয়ের মিষ্টি খাওয়াবি না?’



মামী মুখ তুলে নতুন ভাগ্নের দিকে চাইলেন। চোখে চোখ পড়ল। তারপর...



তারপর... ক্লিনিক থেকে তখনি বেরিয়ে পড়েছিল অনল। একা একা উদ্ভ্রান্তের মত হেঁটেছে অনেক্ষণ। রাত অনেক হয়েছে। এখন বাসায় ফেরা দরকার। নানার বাড়িতে দেরী করে ফিরলে বদনাম হয়ে যাবে। ফোনটা ভাইব্রেট করে ওঠে। ছোট মামার ফোন!



‘কিরে কই তুই? ফেরার সময় ঘোষের দোকান থেকে পাঁচ কেজি মিষ্টি নিয়ে আসিস! বাসার সব মিষ্টি শেষ!’



মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৫৭

মুজাহিদুর রহমান বলেছেন: আহা রে....

২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:২২

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: :( :( :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.