নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ লালু (প্রথম অংশ)

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:০৯

এক

ওলিপুর গ্রাম ডিঙিয়ে আমতলা বাজার যাওয়ার পথে রাস্তার বা’দিকে যে কয়টি টিনের ছাপরা দেখা যায় তার একটির একচ্ছত্র অধিপতি লালু। আজ প্রায় ছয়মাস ধরে ঘরটাকে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা পাহারা দিচ্ছে সে। একটা নিম কাঠের সস্তা চৌকী, তেল চিটচিটে আঠালো বালিশ আর একটা ছেঁড়া কাঁথা ছাড়া পাহারা দেবার মত তেমন কিছুই নাই লালুর ঘরে। তবুও লালু ঘর ছেড়ে কোথাও যায় না। উত্তরের জানালাটা দিয়ে শির শির করে শীতের ঠান্ডা বাতাস এসে ঘরভর্তি মাকড়শার জালগুলোকে নাচিয়ে আধখোলা ভাঙা দরজাটা দিয়ে বেড়িয়ে যায়। লালু ছলছল চোখে জালগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ ছাপিয়ে দু’ এক ফোটা জলও গড়িয়ে পরে মাঝে মাঝে। মাকড়সার জালের অর্থহীন আন্দোলনে মাঠভরা ফসলের নাচন লালু খুঁজে পায় কিনা কে জানে?

বছর দুয়েক আগের কথা। রজব আলীর থেকে বর্গা নেয়া দু’বিঘার জমিটায় মাটি কাটছিল লালু। হাতির পা পিছলে পড়ার মতই সেদিন লালুর হাত পিছলে কোদালটা মুহূর্তের মধ্যেই বা পায়ের ইঞ্চিখানেক অংশ অধিকার করে নিল। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটলো। তৎক্ষণাৎ কিছু দূর্বা ঘাস চাবিয়ে পুরু করে পায়ে লাগিয়ে দিল লালু। কিছুক্ষণের মধ্যে রক্ত বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও যখন রক্ত বন্ধ না হয়ে উলটো রক্ত আর শুঁকনো মাটি মিলে বেশখানিকাটা কাদার তৈরী হলো তখন কাজ ছেড়ে অগ্যতা বাড়ির পথেই হাঁটতে হলো লালুকে।

বাড়িতে লালুর কেউ ছিল না। দুদিন আগে রুনুকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাপের বাড়ি রেখে এসেছে সে। লালুর ছেলের মা না হওয়া পর্যন্ত রুনু ফিরবে না। বাড়িতে ঢুকেই লালু কয়েকবার আহত স্বরে রুনু রুনু বলে ডাকলো বটে কিন্তু দরজার বড় তালাটা চোখে পড়তেই থেমে গেল সে। চুন আর ছেঁড়া লুঙ্গির ত্যানা পেঁচিয়ে নিজেই শক্ত করে বেঁধে ফেলল পা। তারপর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আবার মাটি কাটতে চলে গেলো সে।

রাতে জ্বর এলো লালুর। বা পা টা ফুলে ঢোপ হয়ে গেছে। টিনটিন করে ব্যাথা করছে। কোদাল দিয়ে কাটলে নাকি টিটি দিতে হয়। না দিলে ধনুষ্টঙ্কার হয়। ইনজেকশনের সূচ দেখলেই গা শিরশির করে লালুর। ধনুষ্টংকারের ভয়ে ভীরু মনটা ইনজেকশনের দিকে ভোট দিতে চাইলেও অতীতের একটি ঘটনা ভোটটাকে নিমিষেই নিজের করে নেয়। এর আগেও একবার দা দিয়ে হাত কেটেছিল লালুর। বিনা চিকিৎসাতেই সেরে গেছে। কই ধনুষ্টংকার তো হয়নি লালুর!

পরদিন সকালেও ফোলা পা আর জ্বর নিয়ে কাজে গিয়েছিলো লালু। সারাদিন সুস্থ্য মানুষের মত কাজ করেছে। সন্ধ্যায় পায়ের ব্যথাটা টনটন করে ওঠায় মোড়ের মুদি দোকান থেকে ডাইক্লোফেন আর প্যারাসিটামল এনে গিলেছে। ম্যাজিকের মতন ব্যাথা ও জ্বর দুটোই কমে গেছে। দুদিনের মধ্যে পা ফোলাটাও কমে গেছে লালুর। ওষুধ গুলো যে এত কাজে দেয় জানা ছিল না লালুর। নিজেকে হঠাৎ গুণী ডাক্তার মনে হয় লালুর। মানুষ কেন যে এত টাকা খরচ ব্যথা সারাতে ডাক্তারের কাছে যায়! লালুর কাছে আসলেই পারে! লালুর এক বড়িতেই বাপবাপ করে ব্যথা পালিয়ে যাবে। এক’শ পারসেন্ট গ্যারান্টি!

পা কাটার খবরটা শেষ পর্যন্ত আর রানুকে জানায়নি লালু। কাটা যায়গাটায় চুন আর কাপড় বেঁধে প্রতিদিন কাজে যেত আর ফেরার পথে সেই ডাইক্লোফেন আর প্যারিসিটামল নিয়ে ঘরে ফিরতো সে। এভাবেই প্রায় দুইমাস কেটে গেল। এ দুইমাসের দীর্ঘ সময়ে ধনুষ্টংকার লালুর দেখা পায়না, কিন্তু পা টা কেমন হয়ে যায় লালুর। কাটা জায়গাটা জোড়া তো লাগেইনি উলটো হা করে থাকে। দগদগে ঘা হয়েছে চারপাশে। মাঝে মাঝে পুঁজের মত ঘীয়ে রঙয়ের কিছু তরল গড়িয়ে পড়ে। বিষয়টাকে এতদিন উপেক্ষা করলেও শেষপর্যন্ত বাল্য বন্ধু রাখুর শরণাপন্ন হয় সে। তারপর রাখুর সাথে সেদিনই হাসপাতালে যায় লালু।

ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যা বললেন তার সারমর্ম টা ভয়ানক! পায়ে ইনফেকশন হয়েছে লালুর। ইনফেকশনটা গুরুতরই মনে হচ্ছে ডাক্তারের কাছে। শহরে গিয়ে বড় ডাক্তার দেখাতে হবে। বড় ডাক্তার যদি মনে করেন পা টা কেটে ফেলতে হবে তবে জীবন বাঁচাতে লালুকে তাই করতে হবে। আরেকটি ভয়ানক সন্দেহের কথা বলেছেন ডাক্তার। ক্যান্সার! হ্যা, পায়ে ক্যান্সারও হতে পারে লালুর! ডাক্তারকে মনে মনে শত শত গালি দেয় লালু। শালাদের সব ধান্দাবাজী! লালু সুস্থ। কিচ্ছু হয়নি লালুর পায়ে!

হাসপাতালে ডাক্তারের গোষ্ঠী উদ্ধার করলেও বাড়িতে এসে সত্যি সত্যি মূষরে যায় লালু। জমিতে ধান লাগানোর কথা থাকলেও লালু ধান লাগাতে যায়না। কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আকাশ পাতাল ভাবে সে। সত্যিই কি পা টা কেটে ফেলতে হবে লালুর? পা ছাড়া তো জমিতে কাজ করতে পারবে না সে। তবে? সংসার চলবে কিসে? লালু-রানু না হয় খেয়ে না খেয়েই কাঁটিয়ে দিতে পারবে কিন্তু লালুর অনাগত ছেলেটা না খেয়ে থাকবে কেন? ক্যান্সার হয়ে যদি লালু মরেই যায় তবে ওর ছেলেটাকে মানুষ করবে কে?

পরদিন সকাল সকাল লালুর শালা এসে সুসংবাদটা দিয়ে যায়। ছেলে হয়েছে লালুর!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:২৬

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো লিখেছেন :( অসমাপ্ত রেখে দিলেন !

ভালো থাকবেন ।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৮

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: হুম। সমাপ্ত হবে ইনশাআল্লাহ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.