নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ লালু (দ্বিতীয় অংশ)

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৪

প্রথম অংশ

দুই

খবরটা দু’দিন আগে শুনলে হয়তো চিৎকার করে শূন্যে লাফিয়ে উঠতো লালু কিংবা আনন্দে মাটিতে কয়েকটা ডিগবাজী খেত সে। কিন্তু ডাক্তারের পা কেটে ফেলার বিপদসংকেত শুনে ‘ও আচ্ছা!’ ছাড়া দ্বিতীয় কোন বাক্য উচ্চারিত হলো না লালুর মুখে। দুলাভাইয়ের এমন আচরণে যারপর নাই বিস্মিত হয়ে বজ্রাহতের মত চোখ বড় বড় করে লালুর দিকে তাকিয়ে থাকলো শালা বেচারা। সুখবরটা জানিয়ে দুলাভাইয়ের কাছ থেকে এক কেজি মিষ্টি উপঢৌকন পাওয়ার ইচ্ছাটা অপূর্ণ রেখেই হতাশ মনে ফিরে গেলো সে।

রাতে দু’চোখের পাতা এক হলেও ঘুম এলো না লালুর চোখে। নতুন অতিথি অসময়ে এসে যেন অকস্মাৎ বিপদেই ফেলে দিয়েছে লালুকে। খবর পেয়েই শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়া উচিৎ ছিলো লালুর। ঘা ওয়ালা পা নিয়ে ছেলের মুখোমুখি হতে ভয় করে লালুর। ছেলেটাকে দেখার জন্য মনটা সারারাত আকুপাকু করেছে ওর। ছেলেটাই বা ভাবছে কি? ওর বাবা পাষাণ? দয়া মায়ার ছিটে ফোঁটাও নেই পাষাণ লালুর মনে?

ঘরের কোণায় পুতে রাখা মাটির ব্যাংকটায় কিছু টাকা জমেছে। ব্যাংকটা রুনুর। প্রতিদিন কাজ থেকে ফেরার পর একেবারে জোর জবরদস্তি করে করে লালুর থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংকে রাখতো সে। বিপদ আপদে কখন কাজে লাগে কে জানে? সেদিন হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় ব্যাংটার কথা বার বার মনে হয়েছে লালুর। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল এ টাকা দিয়ে শহরে ডাক্তার দেখাতে যাবে সে। কিন্তু এই মুহুর্তে ডাক্তার দেখানোর চেয়ে ছেলেকে দেখতে যাওয়ার গুরত্বটাই অনেক বেশী লালুর কাছে। কেমন হয়েছে ছেলেটা? লালুর মত নাকি অন্যরকম?

দু’দিন পর যখন লালু শ্বশুরবাড়ি পৌঁছল তখন অনেক রাত হয়ে গেছে। লালুর তিন দিন বয়সী ছেলেটা মুখে আঙুল দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। রুনুরো তন্দ্রা এসেছিল। ঘরের মধ্যে হঠাৎ লালুর উপস্থিতি টের পেয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল সে। শাশুড়ি দেখেও না দেখার ভান করে ঘরের শিকল তুলে দিল। এমন অপরিচিত অবহেলার সাথে পরিচয় নেই লালুর। কর্তব্য উদাসীন বাবা হিসেবে এটাই বোধহয় প্রাপ্য ছিল ওর। কাঁধ থেকে কাপড়ের পুটলিটা নামিয়ে ভাঙা চেয়ারটায় ধুপ করে বসে পড়লো সে। ঘা ওয়ালা পা টায় তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছিল ওর।

চোখের জল মুছে রুনুই প্রথম নিরবতা ভাঙলো - ‘আসার কি দরকার ছিলো? মরে গেলে একবারে মাটি দিতে আসতে’

এমন প্রশ্নের উত্তর লালুর জানা নেই। ভাইভা বোর্ডে স্যারের করা কঠিন কোন প্রশ্নের মুখোমুখি ফাঁকিবাজ ছাত্রের মত চুপ করে ঘুমন্ত ছেলেটার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো সে। রুনু বলেই চলল, -
‘মরতেই ধরেছিলাম। হাসপাতালে নিয়ে না গেলে কি যে হতো সেটা আল্লাহই জানেন। দুই ব্যাগ রক্ত লাগছে! পুরা একদিন জ্ঞান ছিলোনা। ডাক্তার তো শহরে নিতে কইছিলো। আমি যেতে চাই নাই। মরলে এখানেই মরবো। শহরে ক্যান?’

আরো অনেক অভিযোগ অনুযোগ জানিয়ে প্রায় ঘন্টা খানেক পর থামলো রুনু। তারপর লালুর খাবারের জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলো সে। তবে বিছানা থেকে উঠলো না। ডাক্তারের বারণ আছে। যতদূর সম্ভব জোর গলায় একবার মাকে আর একবার ছোটভাইকে ডাকলো সে। রুনুর ডাকে সাড়া দিল না কেউ। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছিল লালুর। তবুও মিথ্যের আশ্রয় নিলো লালু। আসার সময় রুই মাছ আর মসুরের ডাল দিয়ে বাজারে ভাত খেয়ে এসেছে সে। লালুর পেটে চুল পরিমাণ জায়গা নেই! মাটির ব্যাংকটা ভেঙে যে হাজার দুয়েক টাকা পাওয়া গিয়েছিলো সে টাকা কয়েকটা রুনুর হাতে গুজে দিলো সে। রুনুর নিজের জন্য না হোক, নতুন ছেলেটার জন্য হলেও ভালো-মন্দ কিছু কিনে খাক রুনু।

বাইরে হাওয়া খাওয়ার কথা বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো লালু। বাজারে গিয়ে তেলাপিয়া মাছের ঝোল দিয়ে গপগপ করে দুইপ্লেট ভাত সাবার করে ফেললো সে। তারপর একটা বিড়ি ধরিয়ে বাস স্ট্যান্ডের দিকে হাঁটতে থাকলো সে। পা টা আগুনের মত দাউদাউ করে জ্বলছে। ব্যাথার ওষুধটা আজ ভুলেই খায়নি লালু। রাত বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যথা বাড়বে। ব্যাথায় চিৎকার করে কাঁদবে লালু। রুনুর কাঁচা ঘুম ভেঙে যাবে। না বুঝেই কাঁদতে থাকবে সে। তারপর লালুর পায়ের দগদগে ঘা দেখে মূর্ছা যাবে রুনু। লালুর অবুঝ ছেলেটা নাক লাল করে টোয়া টোয়া শব্দে আকাশ বাতাস ভারী করে তুলবে। লালু এসব হতে দেবে কেন?

বাস স্ট্যান্ডে লাস্ট টিপের বাস অপেক্ষা করছিল। সিট না পেয়ে ইঞ্জিন কভারের উপরেই চেপে বসে লালু। ভাঙা রাস্তায় ঝাঁকুনি দিতে দিতে ছুটে চলে বাস। লালুর মনের ভেতরেও কিসের যেন ঝাঁকুনি লাগে...

চলবে

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩২

মোঃ সুমন রানা বলেছেন: পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম :)

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০০

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: :) ধন্যবাদ

২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪২

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: চলুক ++++++

শুভেচ্ছা :)

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫০

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: চলবে ইনশাআল্লাহ! ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.