নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ লালু (শেষাংশ)

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫০

এক
দুই

তিন
এরপর প্রায় তিন মাস কেটে গেছে রুনুর সাথে লালুর সরাসরি কোন যোগাযোগ হয়নি। লালুর হয়ে যোগাযোগ করেছে রাখু। রুনু ও রুনুর ছেলে ভালো আছে। লালুর পায়ে এমন জটিল অসুখের কথা শুনেও রুনু কেন যে আসলো না এর কোন হদিস পায়না লালু। অথচ রাখু নাকি সবকিছুই খুলে বলেছে রুনুকে! তবে? রাখু কি মিথ্যা বলছে? নাহ! রাখু মিথ্যা বলবে কোন দুঃখে?

মাস খানেক আগে একটু হাঁটাহাঁটি করতে পারলেও এখন সে বলটুকুও পায় না লালু। সারাদিন ময়লা বিছানাটায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করে সে। ছেলেটাকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করে ওর। ছেলেকে নিয়ে কতই না পরিকল্পনা ছিলো লালুর! ঘাড়ে চেপে ছেলেকে মাঠে নিয়ে যাবে, মাঠের পাশে একটা মাদুর পেতে ছেলেকে বসিয়ে রাখবে, কোমল গায়ে যেন রোদ না লাগে সেজন্য একটা খুটি পুতে কালো ছাতাটাকে ঝুলিয়ে রাখবে সে। ছেলে একটু পর পরই হামাগুড়ি দিয়ে লালুর কাছে আসবে। লালু ছেলের কপালে চুমু খেয়ে বুকে জাপটে ধরবে! আর এখন? বুকে জাপটে ধরার জন্য একটা কোলবালিশও নেই লালুর পাশে!

সকাল বেলা রাখু এসেছিল। এভাবে বিছানায় শুয়ে শুয়ে জীবন নষ্ট করার কোন মানে হয় না! লালুকে একটা প্রস্তাব দিয়েছে রাখু। অনিচ্ছা সত্তেও সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাজি হতে হয়েছে লালুকে। পুকুরপারের ছ’কাঠা জমিটা বাঁধা রেখে চিকিৎস্যা হবে লালুর। বন্দোবস্ত সব রাখুই করবে। রাখুর পরিচিত এক ভদ্রলোক নেবেন জমিটা।

পরদিনই ভদ্রলোকের হয়ে টাকা নিয়ে হাজির হয় রাখু। সাথে একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা। ভীরের মধ্যে বাসে যেতে কষ্ট হবে লালুর। বন্ধুর স্বাচ্ছন্দের কথা ভেবে তাই অটোরিক্সার ব্যবস্থা করেছে রাখু। লালুর শহরে যাওয়ার খবরে বাড়ির সামনে ছোটখাট একটা জটলা বাঁধে। সবাই লালুর শুভাকাঙ্ক্ষী। পশ্চিম পাড়ার মন্টু, পাশের বাড়ির শাকিলের মা, আমতলা বাজারের হাসেম দোকানী সবার কাছ থেকে ছলছল চোখে বিদায় নেয় লালু। তারপর রাখুর কাঁধে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে অটোরিক্সায় গিয়ে বসে সে।

পাঁচদিন পর লালুর পায়ে অপারেশন হয়। গোড়ালি থেকে কেটে ফেলা হয় লালুর পা। জ্ঞান ফেরার পর অঝোরে অনেক্ষণ কাঁদে লালু। ডাক্তার, নার্স, রাখু সবাই মিলে অবুঝ লালুকে বোঝায়। পায়ের ঘা শুকালে প্লাস্টিকের পা লাগিয়ে দেয়া হবে! তবে টাকা লাগবে ঢের!

ওষুধ আর হাসপাতালের খরচ কুলোতে না পেরে তারাতারিই বাড়ি ফিরতে হয় লালুকে। বাঁধা রাখা জমিটা বিক্রি হয়ে যায়। বক্স ভর্তি ওষুধ আসে, পথ্য আসে। কিন্তু পঙ্গু লালুকে দেখাশুনার করার জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না!

কেন? রাখু আছে না? রাখুই দেখাশুনা করবে লালুর। কিন্তু লালু তা চায় না। রুনু থাকতে রাখু কেন? যে করেই হোক রুনুকে এনে দিক রাখু। রুনুকে দেখলে এমনি এমনি সুস্থ্য হয়ে উঠবে সে।

তিনদিনের তদবীরে রুনু আসে। এসে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেয় সে। তারপর খানিকটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে আর খানিকটা সুর করে কেঁদে ঘন্টাখানেক সময় পার করে সে। এত খবর রাখু দিয়েছে, কিন্তু লালুর অসুস্থ্যতার খবর কেন দেয়নি সে? কাচুমাচু করে রাখু। রুনুও তো অসুস্থ্য। এমন খবর শুনে রুনুর যদি কিছু হয়ে যেত! তখন তার দায়ভার কে নিত? রাখুকেই তো দোষারোপ করতো লালু। রাখু যা করেছে লালুর ভালোর জন্যই করেছে!

রুনু আসার পর থেকে পুরোদমে শুরু হয় লালুর সেবা শ্রুশ্রুষা। গরম পানি দিয়ে গোসল, গরম পানি খাওয়া, কাঁচ কলা আর কালিজিরা ভর্তা দিয়ে ভাত বাদ যায় না কিছুই। সারাক্ষণ মাথার পাশে বসে থাকে রুনু। ছেলেটা থাকে রাখুর কাছে। সন্ধ্যা হলে ব্যাগ ভর্তি করে বাজারের সাথে লালুর ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়ে যায় রাখু। রাখুর প্রতি কৃতজ্ঞতার অন্ত থাকে না লালুর। লালুর জন্য রাখু যা করছে নিজের মায়ের পেটের ভাইও যে এমনটা করে না!

এতকিছুর পরেও লালুর পায়ের কোন উন্নতি হয়না। পায়ের মধ্যে দাউ দাউ করে আগুণ জ্বলে। তীব্র ব্যথায় ছটফট করে লালু। ঝন্টু ডাক্তারের মেজ ছেলেটা এসে রোজ ব্যাথার ইনজেকশন দিয়ে যায়। ইনজেকশন দেয়ার পর কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে পড়ে লালু। তারপর মাঝ রাতে আবার চিৎকার করে কেঁদে ওঠে বেচারা।

রাতের পর রাত এভাবেই কেটে যায়। রুনুর সেবার হাত আস্তে আস্তে খাটো হতে থাকে। এখন লালুর চিৎকারেও কোন ভাবান্তর হয়না রুনুর মুখে। এতো স্বাভাবিক! ক্যান্সারের রোগীর প্রশ্নের এন্সার তো রুনুর কাছে নেই!

ক্যান্সার! হ্যা। পায়ে ক্যান্সারই হয়েছে লালুর। রাখু সব খুলে বলেছে রুনুকে। ক্যান্সারের চিকিৎস্যা করতে লাখ লাখ টাকা লাগে। টাকা যেহেতু নেই সেহেতু রুনুকে চুপ করে থাকার পরামর্শ দিয়েছে সে। লালু বাঁচবে না। একরোখা ক্যান্সারের ভাইরাসে সে ধীরে ধীরে মরে যাবে।

লালুর ছেলেটা সারাদিন বারান্দায় বসে আধো আধো বোলে আপন মনে কি যেন বলে। ঘরে ঢোকে না। লালুকে ভয় পায়। লালুর গগনবিদারী চিৎকারে সে চমকে ওঠে। ভেউ ভেউ করে কাঁদতে থাকে। ছেলেকে বুকে জাপটে ধরে আদর করার সাধটা পূরণ হয়না লালুর। দেড় বছর বয়সী ছেলেটাকে তাই আজ বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে রুনু।

রাখু নিয়মিতই আসে। রুনুর সাথে ফিসফিস করে জরুরী পরামর্শ করে। বোধ হয় লালুর চিকিৎসার ব্যাপারে কথা বলে ওরা। ঘন্টার পর ঘন্টা জুড়ে চলে সে পরামর্শ। হঠাত ফিক করে হেসে দেয় রুনু! লালু কি তাহলে সুস্থ্য হয়ে যাবে? হাসে কেন রুনু??

জবাবটা আরো কিছুদিন পরে পায় সে। ব্যাথার চোটে তন্দ্রা ভেঙে চিৎকার করতে থাকে লালু। পাঁচমিনিট যায়, দশ মিনিট যায়... ভোর হয়ে যায়। তবুও লালুর চিৎকারে কেউ সারা দেয় না!

রাখুও না, লালুর বউও না!

চার
তেল চিটচিটে বালিশ আর ছেঁড়া কাথাটাকে সঙ্গী করে নিম কাঠের সস্তা চৌকিটায় শুয়ে ঘরটাকে পাহারা দেয় লালু। বা দিকের ভাঙা জানালা দিয়ে উত্তরীও বাতাস এসে মাকড়শার জাল গুলোকে নাড়া দিয়ে যায়। দুলে ওঠে লালুর মন। কখনো বা ফসলের মাঠের সবুজ ধানগাছের মতন, কখনোও বা ভয়ে চমকে ওঠা অবুঝ ছেলেটার মতন আবার কখনো বা অমোঘ মৃত্যুভয়ে!

সমাপ্ত

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০৪

মোঃ সুমন রানা বলেছেন: গল্প ভালো লাগলো। শুভকামনা :)

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৬

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.