নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..
এক দুই তিন
চার
ময়মনসিংহ শহরে একটা স্বল্পমাত্রার জরুরী কাজ সেরে ক্যাম্পাসে ফিরছিলাম। বাহন যথারীতি অটোরিক্সা। আমি বসেছিলাম চালকের সহযোগীর আসনে! রাতের অন্ধকারকে ঢাল বানিয়ে দুই একবার হেল্পারের মত সুরকরে চিৎকারও করেছি – ‘এই ভার্সিটি – কেওয়াটখালি - ভার্সিটি!’ আমার চিৎকার শুনে চালক মহোদয় পুরো দুই সেকেন্ড আমার দিকে স্থির নয়নে তাকিয়ে ছিলেন! অবশ্য তখন পেছনের যাত্রীগুলোর কেউই ছিলো না!
পেছনের যাত্রীগুলো বলতে গোটা পাঁচেক ছেলেমেয়ে! প্রায় পনের মিনিট হয়ে গেল ওরা উঠেছে। এই পনের মিনিটে আমার কানের সাড়ে বারোটা বেজে গেছে! বলতে গেলে মাঝারী ধরনের একটা উদ্দেশ্যহীন রাজনৈতিক টকশো চলছে আমার পেছনে। কয়েকবার চেষ্টা করেও টকশোর টপিকসটা উদ্ধার পারিনি। তবে একটু পর পরই বিজ্ঞাপন বিরতি হচ্ছে। হুটহাট করে মোবাইল বেজে উঠছে আর নিমিষের মধ্যেই মাছের বাজারটা তেপান্তরের নির্জন মাঠ হয়ে যাচ্ছে!
একটা ফোন ভোঁ ভোঁ করে ভাইব্রেট করছে।
‘বাবা আমি এক ফ্রেন্ড এর রুমে এসেছি। একটু পর কথা বলি তোমার সাথে?’
বাবা কি বললেন শুনতে পেলাম না। তবে ফোন টা কেটে দিয়েই সেকেন্ডের মধ্যেই টকশোতে মেতে উঠলো মেয়ে! অটোরিক্সার গ্লাসটাকে হঠাৎ জানালার কাঁচ মনে হলো। একটা তিন চাকার ভ্রাম্যমান ঘর কাঁপতে কাঁপতে রাতের ঝাঁপসা অন্ধকার ভেদ করে মৃদু গতিতে ছুটে চলছে।
টকশো চলছে। আলোচনা চলছে খাবার নিয়ে। ভাবে বুঝলাম তারা বড় ধনের একটা ভোজন পর্ব সেরে এসেছে!
মেয়ে-১: ‘ডান মাখানি’ টা না পঁচা হইছে...
মেয়ে-২: একদম ঠিক বলেছিস! আমারও ভাল্লাগে নি
ছেলে-১: ‘কার পেটে যেন ঘী হজম হয় না?’
ছেলে-১ ও ছেলে-২: হা হা হা ...
ছেলে-২: আচ্ছা বলো ‘বিফ পাঞ্জাবী’ টা কেমন লেগেছে?
মেয়ে-১: ভালই। তবে আরো ভালো কিছু এক্সপেক্ট করছিলাম।
ওদের ‘পোস্ট ইটিং’ পর্যালোচনা আমার ‘প্রি-ইটিং’ স্ট্রাটিজিতে ব্যপক প্রভাব ফেলছিল। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। ওদের ডান-বাম মাখানি আর বিফ পাঞ্জাবী-গেঞ্জি-ফতুয়া সব অমৃত ভেবে মনে মনে গলাধঃকরণ করছিলাম। হঠাৎ বিজ্ঞাপন বিরতির সময় এসে গেলো। কিছুক্ষণের জন্য চুপচাপ হয়ে গেল কথিত ঘরখানা। এবার একটা ছেলের ফোন এসেছে..
ছেলে-১ : ‘ভালো আছি। তুমি ভালো আছো?’
অপরপ্রান্ত : ‘... ... ... ... ... ... ... ... ... ...’
ছেলে-১ : ‘খাইছি। ঐ ডাইনিং এর খাবার! মিষ্টিকুমড়া আর ডিম সেদ্ধ!’
... ... ...
মিষ্টি কুমড়ার কথা শুনেই কেমন যেন একটা অরুচি ভাব চলে এল। ছোট বেলায় লাখ টাকা দিলেও যে জিনিসিটা খেতামনা এখন বাধ্য হয়েই অখাদ্যটা গলাধঃকরণ করতে হয়। তবে আজ খেতে হবেনা বলে নিজেকে একটু হলেও সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। ছেলেটার জন্য আফসোস হচ্ছে। তাহলে কি বাকীরা ছেলেটাকে ছাড়াই গরুর পাঞ্জাবী খেয়েছে? আহা বেচারা!
অটোরিক্সা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পেড়িয়ে বেশ খানিকটা পথ চলে এসেছে। পেছন থেকে এক ছেলে বলে উঠলো- ‘তোমাদের ভার্সিটিটা এত বড় ক্যান? কোথায় শুরু কোথায় শেষ কিচ্ছু বুঝিনা!’
সঙ্গে সঙ্গে রেডিমেড উত্তর দিয়ে দিলেন ক্যাম্পাসের এক মেয়ে!
মেয়ে-৩: ‘মি. আসাদ! এটা কবুতরের খোঁপ না, ভার্সিটি!’
চমকে উঠলাম! প্রশ্নের উত্তর শুনে না, মেয়েটার কন্ঠ শুনে! মেয়েটা মানে সেই বাঁশ কন্ঠী মেয়েটা!
কালো চাঁদরটা শক্ত করে গায়ে জড়িয়ে নিলাম। অকারণেই বুকটা কাঁপছিলো। নির্ধারিত গন্তব্যের আগেই নেমে পড়লাম।
লাল বাতি দেখাতে দেখাতে মেয়েটাকে নিয়ে চলে গেলো অটোরিক্সাটা। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। দূরত্বও মাঝে মাঝে মানুষকে স্বস্তি দেয়।
চলবে
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৭
মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ শহীদুল ভাই :-)
২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:২৮
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: //দুরত্ব মাঝে মাঝেই মানুষকে স্বস্তি দেয়।//
কথাটা আপেহ্মিক।
ব্যক্তি বিশেষ ভিন্ন বোধ করি।
ভালো থাকবেন।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৮
মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: আমিও তাই মনে করি রাজপুত্র ভাই। তাই তো মাঝে মাঝে লিখছি :-)
৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৩২
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আমাকে কিন্তু ঐ ফাটাবাঁশকন্ঠি মেয়েটাকে ভালোই লাগে| তারপর? তারপরের ঘটনা লিখুন| তাড়াতাড়ি শেষ করার দরকার নেই| মজা লাগছে
২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫৪
মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ রাখাল ভাই :-)
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:২৪
প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার গল্প। ধন্যবাদ জুনায়েদ।