নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প: 'মেয়েটা'

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৯

এক দুই তিন চার

পাঁচ
মাঝে মাঝে দুপুরের ঘুমটা যে এত গভীর হয় ঘুম ভাঙার পরও চোখ খুলতে অস্বস্থি লাগে। একটু হাঁটাহাঁটি করে এসে হাশেম ভাইয়ের দোকানের আদা-চা না খেলে সত্যিকারের ফ্রেশনেস টা আসে না। ভার্সিটি লাইফের প্রথম দিকে ঘুরতে যাওয়ার লোকের অভাব পরতো না। এখন মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজেও একটা প্রাণীকে পাওয়া যায় না। কেউ সংগী নিয়ে ব্যস্ত, কেউ টিউশন নিয়ে আবার কেউবা ক্যারিয়ার নিয়ে। তাই চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম ভাঙানোর মহান ব্রত নিয়ে একাকিই বেড়িয়ে পড়লাম। আম বাগানের সবুজঘেরা রাস্তাটায় অনেক দিন থেকে হাঁটা হয় না।

শীত চলে গেছে। প্রকৃতিতে তবুও শীতের হালকা একটা রেশ থেকেই গেছে। মোটর সাইকেল চলে যাওয়ার পর পেট্রোল পোড়া গন্ধের রেশ যেমন থেকে যায় ঠিক তেমন। বসন্তের আগমনে গাছে গাছে একটা চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই বুঝি শাখা-প্রশাখা বিদীর্ণ করে আম গাছগুলো ফুলে ফুলে সুশোভিত হয়ে উঠবে। মৌমাছি আসবে, ভ্রমর আসবে, তারপর একে একে ক্ষতিকারক কীট-পতঙ্গও আসবে। বসন্তের প্রতিটি দিন গাছপাড়ার গাছদের জন্য একেকটা বিশেষ দিন। এসব দিনে প্রাপ্তীর আনন্দ যেমন আছে, হারানোর বেদনাও আছে। কখনো গাছতলায় বসে, কখনো বা উদ্দেশ্যহীন হেঁটে বেশ খানিকটা সময় পার করলাম। নির্জনতার সুখ যে এতটা তীব্র হতে পারে আমার জানা ছিলো না। গোধুলীর যে লাল সূর্যটা এতক্ষণ ধরে আমাকে সঙ্গ দিচ্ছিলো, দেখতে দেখতে সেও চুপ করে দিগন্তের আড়ালে কেটে পরলো।

সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসার সাথেসাথেই জংলী মশাগোষ্ঠীর প্রসিদ্ধ ব্যান্ডদল তাদের সুমিষ্ট পপ সঙ্গীত একটু পর পর আমার কর্ণকুহরে পৌঁছে দিচ্ছিল। আর ডাক্তারগোষ্ঠী উপুর্যুপরি সূচ ফুটিয়ে ডাক্তারী ভাষায় বলছিল, ‘হাজার মশার জীবন বাঁচাও... অথবা পালাও!’ পালিয়েই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পরে গেলাম বাঘের সামনে! যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই নাকি সন্ধ্যে হয়। নাকি সন্ধ্যে হয়েছে বলেই বাঘ চলে এসেছে! ভেবেছিলাম চোখ বন্ধ করে পাশ কাঁটিয়ে যাব। কিন্তু বাঘ আমাকে সে সুযোগ দেবে কেন?

বাঁশ ফাটা কন্ঠে হুংকার দিয়ে সরাসরি আক্রমণ করে বসলো।
‘এই যে সুইসাইড স্কোয়াডের প্রেসিডেন্ট! রাতের অন্ধকারে আমবাগানে কি? আমগাছে ঝুলে পরবেন নাকি?’

মৃদু হেসে মেয়েটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। মেয়েটা আজও নীল রঙয়ের শাড়ি পড়েছে। সন্ধ্যার আবছা আলোয় শাড়ির রংটা উদ্ধার করতে রীতিমত হিমশিম খেলাম। সদ্য ডুবে যাওয়া সূর্যটা মেঘের গায়ে যে গোলাপী আভাটা রেখে গেছে সেটিই যেন কয়েকগুণ বর্ধিত হয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে মেয়েটার মুখে। সৌন্দর্য আর মায়ার অপূর্ব সংমিশ্রণ সে মুখে। যে মুখের দিকে তাকালে চোখ ধাঁধিয়ে যায়, তবুও চোখ সরানো যায়না। মন্ত্রমুগ্ধের মত বললাম, - ‘ইচ্ছে তো সেরকমই ছিলো! আপনিই তো বাগড়া বাঁধালেন!’

‘তাই না? ভন্ডামী বাদ দেন! আসুন পরিচয় করিয়ে দেই...’ - বলে মেয়েটা তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সুদর্শন ছেলেটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির ছেলেটার নাম আসাদ।

আসাদকে গ্রহণ করার জন্য আমি সর্বোতভাবে প্রস্তুত ছিলাম। অবাক হলাম না। হাত মেলালাম ছেলেটার সাথে। অমায়িক ব্যবহার আসাদের। দু’ মিনিটের আলাপচারীতায় যে কাউকে মুগ্ধ করার ক্ষমতা ছেলেটা রাখে। মুগ্ধ হয়েও কেন জানি শেষমেষ মুগ্ধ হতে পারলাম না। মানুষের বৈশিষ্ট্যটাই এমন। প্রতিদ্বন্দ্বী কে কখনো মন থেকে গ্রহণ করতে পারে না। মনের অজান্তে তার সাথে একটা শীতল যুদ্ধ চলেই।

ভেবেছিলাম পরিচয় পর্বটা সেরেই কেটে পরবো। পারলাম না। দু’জনের জোরাজুরিতে ঘুরতে হলো ওদের সাথে। চটপটি, ফুচকা, চা বাদ গেলোনা কিছুই। পুরোটা সময় জুরে গাল ভরিয়ে গল্প করলাম আসাদের সাথে। ভাবখানা এমন ছিলো যে পুরনো বন্ধু আসাদকে পেয়ে আমি সব ভুলে গেছি। আমার স্মৃতিকোষে আসাদের পাশে বসে থাকা মেয়েটার কোন অস্তিত্ব নেই।

রুমে যখন ফিরেছি তখন প্রায় রাত এগারোটা বেজে গেছে। মাথা ব্যাথার শুরুটা তখন থেকেই। এখন রাত তিনটে বাজতে চলল অথচ ব্যথাটা একটুও কমছে না। সেকেন্ডের কাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে মিনিটে ষাটবার টিনটিন করছে। চেয়ারে রাখা টেবিল ফ্যানটা ভোঁ ভোঁ শব্দ করে ঘুরছে। চোখ বুজে আছি অনেক্ষণ থেকে। ঘুম আসছে না। বিকেলের ভারী ঘুমটা যে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে এতটাই হালকা হয়ে যাবে কে জানতো!

(চলবে)





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.