নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : অপেক্ষা

১১ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:১৯

অপেক্ষা! তিন অক্ষরের ছোট্ট একটা শব্দ, অথচ মাঝে মাঝে কতই না দীর্ঘ হয়ে যায়।

অপেক্ষা করছি। একটা ভালো খবরের জন্য দীর্ঘকাল থেকে অপেক্ষা করছি। কী সেটা? অপেক্ষা করতে করতে বোধহয় ভুলেই গেছি।

বহুকাল আগে একটা ভালো খবর শুনেছিলাম। আমার ছোটভাইটা ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলো। বহুকাল আগের সেই খবরটা শুনে প্রাণখুলে হেসেছিলাম। পাড়ার লোকদের পেটচুক্তি মিষ্টি খাইয়েছিলাম। তারপর ছোটভাইটা বখে গেলো। টেনেটুনে এসএসসি পাশ করলেও এইচএসসি টা পেরোতে পারলো না। ভাইটা এখন আমার একটা ইন্ডাস্ট্রিতে ডে লেবারারের চাকুরী করে। দিনপ্রতি দেড়’শ।

আমিই বা কি করলাম? গ্রাজুয়েশন শেষ করার সময় কতই না স্বপ্ন দেখেছিলাম। সে স্বপ্ন গুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। আজপর্যন্ত একটা চাকুরী জুটলো না!

চাকুরী একটা পেয়েছিলাম অবশ্য। বেশিদিন টেকেনি। বস একদিন কোন কারণ ছাড়াই মিষ্টি ভাষায় শাসালেন। মাথায় রক্ত চড়ে গেলো। সিদ্বান্ত নিলাম আর নয় দাসত্ব। নিজেই এবার কিছু একটা করবো। তারপর পাঁচ বছর কেটে গেলো, অথচ সেই কিছু একটাকে আজ পর্যন্ত খুঁজে পেলাম না। টাকা যখন একমাত্র আলোক উৎস্য তখন আমার ঘরে অন্ধকারের বাসা বাঁধাটা স্বাভাবিক।

একটা মেয়ের খপ্পরে পড়েছিলাম। সুন্দরী মেয়েদের খপ্পরে কম বেশি সবাই পড়ে। কিন্তু এ মেয়েটা আহামরি সুন্দরী ছিলো না। মাঝারি গড়ন, শ্যাম বর্ণের লম্বাটে মুখ, থ্যাপসা নাক, বিড়ালের মত ছোট ছোট দুইটা চোখ, আর মাথা ভর্তি কোঁকড়ানো চুল। প্রথম দেখায় ভালোলাগার মত মেয়ে নয়। তবুও কেন যেন খুব ভালো লাগতো আমার। মানুষের ভালোলাগা গুলো ঘোর ছাড়া তো আর কিছু না। আমিও বোধহয় ঘোরেই পরেছিলাম। অফিস যাওয়ার পথে প্রায়ই দেখা হত মেয়েটার সাথে। চোখাচুখি হতো। কিন্তু কোনদিন কথা হয়নি। হঠাৎ একদিন মেয়েটার মুখোমুখি হলাম। বললাম, ‘আমার সম্পর্কে একটু খোঁজ খবর নিন। দুদিন পর প্রপোজ করলে তো বলবেন, কে আপনি? আপনাকে তো চিনিনা!’ মেয়েটা হা করে কিছুক্ষণ চেয়ে ছিলো আমার দিকে।

প্রপোজটা আর করা হয়নি। এর কয়েকদিন পরেই মেয়েটা এক পয়সাওয়ালা জুনিয়র ছেলের সাথে ভেগে যায়। ইদানীংকালের প্রেমগুলো কেন যেন বয়স নিরপেক্ষ হয়ে যাচ্ছে। বয়স, ধর্ম, শিক্ষাগত যোগ্যতার পরওয়া আর কেউ করেনা। মিষ্টি যেদিকে পিঁপড়ারাও সেদিকে ছোটে।

পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি সেই কবেই। গত তিনটা ঈদ এই নোংরা রুমটার চার দেয়ালের মধ্যে কাটিয়েছি। গোটা চারেক ঘুমের বড়ি গিলে ভোর হওয়ার আগে আগে শুয়ে পড়তাম। ঈদ কোন দরজা দিয়ে এসে কোন দরজা দিয়ে চলে যেতো কিছুই টের পেতাম না। যার ঝুলিতে টাকা নেই, বাবা মাকে নতুন কাপড় দেয়ার মুরোদ নেই, যার কোন স্ট্যাটাস নেই, তার আবার কিসের ঈদ?

যখন চাকরি ছিলো, তখন পরিবারেও কদর ছিলো। সকাল বিকাল ফোন আসতো। ‘বাবা খেয়েছিস?’ ‘রাতে গোসল করিস না, ঠান্ডা লাগবে!’ ‘ভাইয়া, আমার কিছু টাকা লাগবে’... কত শত কথা! চাকরিটা ছেড়ে দেওয়ার পর থেকেই সব অতীত হয়ে গেছে। ঠান্ডা লাগা তো দূরে থাকলো, এখন জ্বর হয়ে বিছানায় দিনের পর দিন পরে থাকলেও কেউ খবর নেয় না। উপযোগ হারালে গায়ের জামাটাকেও মানুষ ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে।

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...

নিউজ প্রিন্টের খাতাটায় আর কিছু লেখা নেই। কমদামী বলপেনে সাতমাস আগে লেখা। তারিখ দেয়া আছে। সময় পরিক্রমায় লেখাগুলো কেমন যেন লালচে হয়ে গেছে।

ছেলেটা সুইসাইড করেছে! সুইসাইডের কারণ স্পষ্ট নয়। নিউজপ্রিন্টের খাতাটা অপ্রাপ্তীর সুর শোনালেও একে সুইসাইডাল নোট বলা যায় না। মিডল ক্লাস সেন্টিমেন্ট বড় জটিল জিনিস। খাতাটা সস্থানে রেখে রাইয়ান সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে সময় দেখলেন। রাত একটা আঠারো। লাশটা এতক্ষণে মর্গে চলে গেছে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:১৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: অপ্রাপ্তির বিষণ্ণতা ভয়ানক জিনিস।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:০৫

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: হুম। সত্যিই অনেক ভয়ানক :-(

২| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:২৬

সুমন কর বলেছেন: শেষটুকু ভালো লেগেছে।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:০৫

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন দা :-)

৩| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:০৩

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে। একটু পলিশ করলে সুন্দর গল্প হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। প্রথম দিকে মনে হচ্ছিল আত্মজীবনীমূলক লেখা, শেষে এসে বুঝা যায় এটা গল্প। যদিও শিরোনামেই বলা আছে এটা গল্প। :)

ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা রইল।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৫

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ। দোয়া রাখবেন। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.