নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : তাসের ঘর (শিশু নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে রচিত)

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:০৮

১.
সদ্য কেনা গোলাপী রঙের লুঙ্গীখানাকে বা হাত দিয়ে হাটু সমেত উপরে তুলে ডান হাতে একটা চার্জার টর্চ নিয়ে অতি সন্তপর্নে এগুচ্ছেন আফজাল আলী। ক’দিন থেকেই বিরামহীন বৃষ্টি হচ্ছে। টিপটিপ করে ঝরে যাচ্ছে অবিরাম। সাথে মাঝারী বেগের ঝড়ো বাতাস মিশে আবহাওয়াটাকে অসহনীয় করে তুলেছে। রাস্তাগুলো মানুষের ননস্টপ গালি শুনতে শুনতে রেগে গিয়ে ধানের জমি হওয়ার জন্য উঠেপরে লেগেছে। কাঁদার মধ্যে একবার স্যান্ডেল আটকে গেলে হাত দিয়ে টেনে তোলা ছাড়া আর কোন উপায়ন্তর থাকে না। দমকা বাতাসে শেষ ছাতাটা ভাঙার পর খালি পায়েই রওনা দিয়েছেন আফজাল আলী। গন্তব্য দেড় কিলোমিটার দূরের আমতলা বাজার। ওখানে একটা গালামালের দোকান আছে তার। বিরূপ আবহাওয়ার সাথে যুদ্ধ করে দোকানে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিলোনা ভদ্রলোকের। দোকানে দু’জন কর্মচারী আছেন। দুই শিফটে ভাগ হয়ে ওরাই সব দেখাশোনা করেন। কিন্তু দুঃসংবাদটা হলো যে এত দেখাশোনার পরেও আফজাল আলীর দোকানে চুরি হয়েছে। আফজাল আলীর ছোট ছেলে মিজান ফোন করেছিলো। মালপত্র সব ঠিক আছে, টাকার বক্সটাও ঠিক যায়গায় আছে কিন্তু বক্সে কোন টাকা নেই। খবর টা শোনার পর দু’বার পরে গেছেন আফজাল আলী। একবার মাথা ঘুরে আর একবার পা পিছলে! দু’বারেই উঠে দাঁড়িয়ে আবার হাঁটা শুরু করেছেন ভদ্রলোক। একটা দুইটা টাকা না! গুণে গুণে বিশ হাজার তিনশত পঞ্চাশ টাকা। গতকালই গুণে রেখেছেন তিনি।

২.
বিড়ির আগুণটা নিভে গেছি বাদশা মিয়ার। লুঙ্গীর প্যাঁচে রাখা দিয়াশলাইটা বৃষ্টিতে ভিজে অকেজো হয়ে গেছে। অথচ বিড়িটা খাওয়া এখন তার খুব দরকার। পরপর দুইটা দান হেরে তৃতীয় দানটা জিততে বসেছেন তিনি। এমন সময় বিড়ি ছাড়া কি মাথা ঠিক থাকে? একবার বিড়িটা জ্বলে উঠলেই জ্বলে উঠবেন বাদশা মিয়া। তারপর শুধু টাকা আর টাকা! না এতো টাকার দরকার আপাতত নেই তার। এক বোতল দেশী কিনতে পারলেই জন্ম সার্থক হয়ে যাবে বাদশার! বাদশা আর কতদিন প্রজাদের থেকে চেয়ে চিন্তে মদ খাবে?
দেখতে দেখতে তৃতীয় দানটাও হেরে যায় বাদশা মিয়া। মাথাটা চরকির মত বারকয়েক ঘুরপাক খায়। তারপর লুঙ্গীর প্যাঁচ থেকে শেষ সম্বল পঁচিশ টাকা বের করে এক ঝটকায় সামনে ফেলে দেয় বাদশা মিয়া! ‘নে! পঁচিশ!’

৩.
‘ফাইট্যা যায়... বুকটা ফাইট্যা যায়...’ ভুল ভলিয়মে গানটা তৃতীয়বারের মত বাজছে ইয়াছিনের নতুন মোবাইলে। একটু আগেই তেইশ শত নব্বই টাকা দিয়ে মোবাইলটা কিনেছে সে। রাত হয়ে যাওয়াতে ছবি তুলতে না পারার ক্ষতিটা গানে পুষিয়ে নিচ্ছে ইয়াছিন। মোবাইলটার জন্য মার হাতের কয়েকটা চড় আর ননস্টপ বকুনী হজম করতে হয়েছে তাকে। বকুনী অবশ্য এখনো চলছে। ‘ঘরত ভাত খাওনের চাউল নাই, আরেকজন আইছে মুবাইল নিয়া! বাপ ব্যাটা মিল্যা জিবনডা ছাতু কইরা দিলো...’ ইয়াছিনের কান অবশ্য গান নিয়ে ব্যস্ত, বাদশা মিয়ার বউয়ের বকবকানী শোনার সময় তার নাই। নিজের ক্মাইয়ের টাকা দিয়ে সে মোবাইল কিনেছে। খারাপ তো কিছু করে নাই। আর এই বয়সে একটু আনন্দ ফুর্তি না করলে কি চলে?

হঠাৎ করে গান বন্ধ হয়ে ইয়াছিনের নতুন মোবাইলটা বেজে ওঠে। খুশি হয়ে রিসিভ করে ইয়াছিন।

‘মামা তোরে এহনি দোকানে ডাকে... জরুলী কাম আছে!’ - ইয়াছিনের কলিগ শাহআলমের ফোন।
‘আইতাছি...’ বলে আলনা থেকে ময়লা গেঞ্জিটা কাঁধে নিয়ে বেড়িয়ে পরে ইয়াছিন। বাদশা মিয়ার বউয়ের ভাত খেয়ে যাওয়ার অনুরোধটা আর পূর্ণতা পায়না।

৪.
মদ খেয়ে প্রাইমারী স্কুলের বারান্দাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো বাদশা মিয়া। লোকজনের চ্যাঁচামেচিতে গভীর ঘুমে ছেঁদ পরে তার। চোখ কচলে উঠে পড়েন তিনি। ডান হাতটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোমরের লুঙ্গীর প্যাঁচে চলে যায়। গতরাতের অর্ধখাওয়া বিড়িটা মুখে নিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকেন বাদশা মিয়া। দেশলাইয়ের অভাবে এ যাত্রাতেও বেঁচে যায় বিড়িটা। বাদশা মিয়া দাঁড়িয়ে দেশলাইয়ের খোঁজে এদিক ওদিক তাকান। ছিপ ছিপ কর বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির মধ্যেও লোকজন দলবেঁধে মিয়া বাড়ির দিকে ছুটছে। কৌতূহল দমাতে না পেরে হাঁক ছাড়লেন বাদশা মিয়া, - ‘ঐ মিয়া কি অইছে? দৌঁড়াও ক্যান?’

রহিমুদ্দিন শেখ হাপাতে হাপাতে উত্তর দেয়, - ‘লাশ! মিয়া বাড়ির পুকুরে লাশ ভাইস্যা উঠছে!’

‘লাশ! কও কি!’ মুখের বিড়িটা ফেলে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে রহিমুদ্দিনের পিছু নেয় বাদশা মিয়া। যেতে দিনকালকে খুবকরে গালমন্দ করে সে।

৫.
তের- চৌদ্দ বছরের একটা ছেলের লাশের পাশে বসে বছর পয়ত্রিশের এক মহিলা চিৎকার করে কাঁদছেন। ‘ও বাবাআআআআআ... ও আল্লারে...এ এ এ এ এ... বাবা মোর কাইলক্যায় নয়া মোবাইল কিনছি... ও বাবাআআআআআ...’
কান্না শুনে থমকে দাঁড়ান বাদশা মিয়া। তারপর রহিমুদ্দিনকে অবাক করে দিয়ে আউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি।

৬.
বাদশা মিয়ার বাড়িতে তিল ফেলানোর মত যায়গা নেই। মিডিয়াকর্মী আর উৎসুক মানুষে গিজগিজ করছে চারদিক। উত্তেজিত গ্রামবাসী দুপুরেই আফজাল মিয়ার দোকানখানা জ্বালিয়ে দিয়েছে। আফজাল মিয়া সপরিবারে পলাতক। মিডিয়াকর্মীরা বাদশা নিয়ার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে বারবার ঘড়ি দেখছেন। মাগরিবের নামাজ পড়তে এত সময় লাগে? ভিক্টিমের বাবার কান্নাকাটি ছাড়া নিউজটাই যে পানসে হয়ে যাবে!

৭.
এজমালি কবরস্থানটা লোকালয় ছেড়ে অনেকটা নির্জনে। সন্ধ্যার পর জ্বিন ভূতের ভয়ে খুব একটা লোক এদিকটায় আসেনা। কবরস্থান থেকে ‘উ উ উ...’ করে কান্নার একটা মৃদু শব্দ ভেসে এসে বৃষ্টিভেজা বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। কান্নাটা আক্ষেপের, অভিযোগের নাকি প্রতিশোধের ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা।


মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:২৮

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার গল্প। ধন্যবাদ জুনায়েদ

২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:০২

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ শহীদুল ভাই :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.