নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

“আগে গেলে সোনা পাবে... পিছে গেলে বাঘে খাবে...”

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩১

দৌড়... দৌড়... দৌড়...

বড় হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা কাউকে হাতছানি দিচ্ছে আবার কাউকে পেছন থেকে ক্ষুধার্ত নেকড়ের মত ধাওয়া করছে। ছোট হয়ে যখন জন্মেছো বড় তোমাকে হতেই হবে বাপু...

চার বছরের যে বাচ্চাটা এখনো হাঁটতে গেলে মাঝে মাঝেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়, তাকেও দৌড়ের মাঠে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। ‘তোর পা আছে তো, তবে দৌঁড়াবি না কেন?’ । বাচ্চাটা সকাল বেলা ফিডার খেয়ে পাঁচ কেজি ওজনের একটা ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যায়। ফেরে দুপুর বেলা। তারপর লাঞ্চ সারে একগাদা হোমওয়ার্ক দিয়ে। বিকেলের খেলার আসরে হামলা চালায় প্রাইভেট টিউটর। রাতের বেলা এক হাতে খবারের প্লেট আর অন্য হাতে বই নিয়ে বাচ্চাটাকে দৌঁড়ের জন্য প্রস্তুত করায় মা। ক্লান্ত বাচ্চাটা হাই তুলতে তুলতে হয়তো পড়ার টেবিলেই ঘুমিয়ে যায়। তারপর পরদিন পূব আকাশে সূর্‍্য্য উঠলেই আবার দৌঁড়াতে শুরু করে সে...

বাচ্চাটা বাংলা সিনেমার মতই দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে শিশু থেকে কিশোর হয়, কিশোর থেকে তরুণ হয়। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসএসসি নামক প্রতিবন্ধকতা গুলো অমানুষিক শ্রম দিয়ে হাসিমুখে জয় করে ফেলে। হুট করে ‘ভর্তি যুদ্ধ’ নামক প্রেতাত্নার উদয় হয়। তরুণের মুখের হাসি ঠোঁটের কোণাতেই মরে যায়। প্রেতাত্মা কর্কশ কণ্ঠে বলে, - ‘তোর প্র্যাকটিসটা কেমন হয়েছে একটু দেখাতো দেখি!’ তরুণ ভয় পেয়ে আবার দৌঁড় দেয়। প্রেতাত্মার সাথে তুমুল যুদ্ধ হয় তরুণের। প্রেতাত্মা একসময় হার মানে। তরুণ বীরের বেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে পা রেখে বড় একটা হাফ ছাড়ে!

কয়েকটা দিন শান্তিতেই কাটে তরুণের। তারপর শুরু হয় ক্লাস,পরীক্ষা আর এসাইনমেন্টের পেছনে দৌঁড়াদৌঁড়ি। টানা চার বছরের সুদীর্ঘ দৌঁড়ঝাঁপ শেষে তরুণ ‘সার্টিফিকেট’ নামক একখানা কাগুজে বস্তুর মালিক হয়। রঙ মেখে সঙ সেজে বাদ্য বাজিয়ে পুরো পৃথিবীকে সে জানিয়ে দেয়, ‘ডোন্ট আন্ডার এস্টিমেট মি! আই য়্যাম এ গ্রাজুয়েট!’

কিন্তু বেকারত্ব নামক বিভীষিকা তরুণকে সময়ে অসময়ে আন্ডারইস্টিমেট করে। বিকট শব্দে বিদ্রুপের হাসি হাসে। তরুণ গায়ে মাখেনা। জবলিস্ট বেছে বেছে অনভিজ্ঞ তরুণ সিভি ড্রপ করে। তরুণ সকাল বিকাল মেইল চেক করে, একটা ফোন কলের জন্য অপেক্ষা করে, কিন্তু কোন রেসপন্স আসেনা। দু’দিন পর ‘বেকার যুবক’ তকমাটা তরুণের গায়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেপ্টে যায়। বেকার যুবক হতাশ হয়ে ফ্যালফ্যাল করে শূন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

আকাশ উত্তর করেনা। দৈব বাণী নিয়ে বাতাস এগিয়ে আসে। ‘ওরে পাগলা... এভাবে হবে নারে। ভুলে যা... যা পড়েছিস সব ভুলে যা... সোনার হরিণ যদি চাস তবে ‘সার্টিফিকেট’ নামক কাগজখানা নিয়ে দৌঁড় দে! দৌঁড়... ’

বেকার যুবক বাধ্য শিশুর মত মাথা নাড়ে। শরীরের সমস্ত শক্তিকে একীভূত করে সে আবার দৌঁড়ানো শুরু করে। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, এশিয়া-ইউরোপ হয়ে আফ্রিকা, ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি, মহাকাশ, বাংলা, ইংরেজী, সাধারণ জ্ঞান, অসাধারণ জ্ঞান... ... বাদ যায়না কিছুই। যুবক দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে হাফিয়ে উঠে। তৃষ্ণায় বুকের ছাতি ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়। তবুও হাল ছাড়েনা সে...

দৈব বাণী ফিসফিসিয়ে যুবকের কানে বলে যায়... ‘পাওয়ার লাগবে... পাওয়ার? নাকি টাকা নিবি! সাদা সাদা টাকা... কালো কালো টাকা!...’ যুবকের রক্ত টগবগিয়ে ওঠে। অলৌকিকভাবে দৌঁড়ের গতি বেড়ে যায় যুবকের! যুবক দৌঁড়াতে থাকে...

দৌঁড়... দৌঁড়... দৌঁড়...

দৌঁড়াও বাবা দৌঁড়াও...

“আগে গেলে সোনা পাবে...
পিছে গেলে বাঘে খাবে...”

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: এই দৌড়ে কিন্তু আমি আগে পিছে দু'টোতেই আছি।।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৪

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: তাহলে আপনি আগে সোনা পাবেন এবং তারপর আপনাকে বাঘে খাবে! ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.