নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি সিটের জন্য

২২ শে মে, ২০১৬ সকাল ৯:৫৬



দূরত্ব বেশী না হলেও ময়মনসিংহ আর ঢাকার আবহাওয়ার আচরণগত বৈষম্য আছে এটা আপনাকে মানতেই হবে। আপনি না মানলেও আমি মানি। সকালে ময়মনসিংহ এর ঠান্ডা বাতাস যে শরীরে কাঁপন তুলেছিলো, সেই একই শরীর বিকেলে ঢাকার গরম বাতাসে ঘেমে একাকার হয়ে গেলো! ঘামে ভেজা টি-শার্টসমেত বাসে ঝুলার মানুষিক প্রস্তুতি নিয়েই ৬ নাম্বার উঠলাম। বাসে উঠে যথারীতি দাঁড়িয়েই ছিলাম।

"ও ব্যাগওয়ালা ভাই! সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে পেছনে যান। সিট আছ তো। গিয়ে বসেন!"

বাসের সুপাইভাইজারের অনুরোধে ঢেকি গিলে অনিচ্ছা সত্বেও পেছনে গেলাম। একটি মাত্র সিট ফাঁকা। ঘামমাখা শরীরে ঐ সিটে বসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার ছিলো না। পাশের যে যাত্রীটি এতক্ষণ আয়েশ করে বসে ছিলেন তিনিও সঙ্কুচিত হয়ে আমার বসার জায়গা করে দিলেন। এত কিছুর পর তো আর না বসে উপায় নেই। বসতে যাবো সেই মুহূর্তে দেখি এক মধ্যবয়ষ্কা মহিলা এগিয়ে আসছেন। আমিও ভদ্র ছেলের মতন সরে গিয়ে বললাম, -"আন্টি বসেন!"

উনি যারপর নাই বিস্মিত হয়ে বললেন, - "আপনি বসবেন না? দাঁড়িয়ে যেতে আপনার তো কষ্ট হবে অনেক!"

আমি বললাম, - "আমার আবার কিসের কষ্ট! সমস্যা নেই। আপনি বসুন।"

ভদ্রমহিলা আবেগে আপ্লুত হয়ে পাশের ভদ্র লোকের সাথে অনুভূতি ভাগাভাগি করলেন কিছুক্ষণ। এমন ভদ্র ছেলে নাকি আজকাল বিরল! আন্টির কথা শুনে বাতাসভর্তী বেলুনের মত ফুলে উঠলাম।

আন্টি বললেন, -"আপনি তো ছাত্র। কোথায় পড়েন?"

সগৌরবে বললাম- "বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহে!"

বাস জ্যামে আটকে ছিলো। আন্টির সাথে টুকটাক কথা চলছিলোই। কথার ফাঁকে উনি আমার আমার গন্তব্য জেনে নিলেন। উনি কারওয়ান বাজার যাবেন।

বাসের সুপারভাইজার বকবক করতে করতে এগিয়ে আসছিলেন। একভদ্রলোক নাকি একটাকা কম দিয়েছেন। তেলের দাম কমার পড়েও ভাড়া কেন এখনো ৫ টাকা হবে? ভদ্রলোকের অকাট্য যুক্তির কাছে সে পরাজিত হয়েছে। সুপারভাইজার তখনো আমাদের কাছে আসেনি। ভদ্রমহিলা হাত বাড়িয়ে টাকা এগিয়ে দিলেন। "ফার্মগেট। দু'জন!"

এবার আমিই ইমোশনাল হয়ে গেলাম। বাসের সামান্য একটা সিটের বদলে এমন নির্ভেজাল ভালোবাসা! সত্যিই আমি ভাগ্যবান বটে।

আন্টি ফার্মগেটেই নামলেন। নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে আমাকে খুঁজলেন। আমি গিয়ে বিদায় নিলাম। তারপর একটা মিশ্র অনুভূতি নিয়ে ওভারব্রিজের সিঁড়ি ডিঙোতে লাগলাম।

এই আমিই কতবার নির্লজ্জের মতো সিটে বসে থেকে কত বয়ষ্ক লোককে বাসে ঝুলতে দেখেছি। কখনো তো কারো জন্য নিজের সিট ছেড়ে দাঁড়িয়ে যাইনি। এটাই তো স্বাভাবিকই ছিলো। যে আগে আসবে সেই তো সিটে বসবে। কিন্তু আজকে মনে হলো - "না! এটা অস্বাভাবিক! যান্ত্রিকতার যুগে আমরা সত্যি সত্যিই যন্ত্র হয়ে গেছি। আবেগহীন, বিবেকহীন, মনুষ্যত্বহীন মানব যন্ত্র!"

মানুষের ভালোবাসা পেতে তাজমহল গড়তে হয়না, শুধু একটুখানি সদিচ্ছা লাগে। আর যেটা আমাদের নেই।

লজ্জ্বা লাগে মাঝে মাঝে। খুউব.. :


২০ মে, ২০১৬


ছবি-ইন্টারনেট

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:১৬

ঢাকাবাসী বলেছেন: ওরকম ভদ্রমহিলা বা বলতে গেলে ওরকম বাঙালী মানুষ একেবারেই দুষ্প্রাপ‌্য, নেইই। দুনিয়াতে সবচাইতে অসভ্য করাপটেড অশিক্ষিত মানুষ হলাম গিয়ে আমরা, বাঙালীরা। ২০-২২ কোটির মধ্যে দুএকশ ভাল হলে তাকে ভাল বলেনা!

২৩ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:৪৯

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: তা ঠিক। তবে ভালো মানুষ গুলো আছে জন্যই ভালো হতে ইচ্ছে করে।

২| ২২ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১২:০৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সিট দিয়ে যে ভালোবাসাটুক পেলেন, অনেকের ভাগ্যে তা জোটেনা ।

২৩ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:৫০

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: এ জন্যই তো নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছি!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.