নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প : নীনা

২৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৭



নীনাকে দেখতে ইচ্ছে করছে ভীষণ। মাঝে মাঝে কোন কারণ ছাড়াই বিশেষ কোন ব্যক্তিকে দেখতে ইচ্ছে করে। খুব জটিল কোন রোগে ধরলে এমনটা হয়। মন আলগা হয়ে যায়, একটা ছটফটানি ভাব চলে আসে। পৃথিবী ছাড়ার আগে পরিচিত মুখ গুলোকে আরেকবার দেখতে ইচ্ছে করে। কে জানে ওপারে গিয়ে যদি আর দেখা না হয়!

নীনা! সেই পাথুরিয়া গ্রামের নীনা। ভুল করে একটা মিসড কল এসেছিলো। আমার তখন নতুন মোবাইল। একটা মিসড কল কিংবা এসএমএস এর শব্দে রোমাঞ্চিত হবার সময়। একটির বদলে পরপর তিনটি মিসডকল দিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ নিয়েছিলাম। শুরুটা সেদিন থেকেই হয়েছিলো।

নীনা ক্ষেপেছিলো ভীষণ। - ‘কোন ভদ্র মানুষ এভাবে মিসডকল দেয়?’
আমি টেক্সটের রিপ্লাই না দিয়ে পরপর আরো তিনটি মিসডকল দিয়েছিলাম! যথারীতি ঝাঁঝালো প্রতিক্রিয়া ছিলো। আমি এটাই চেয়েছিলাম। বলেছিলাম –
‘কোন ভদ্র মানুষের ভাষা এমন হয় ?’

তারপর সরাসরি ফোন করেছিলো নীনা।
মিসড কল থেকে এসএমএস, এসএমএস থেকে ফোনকল অতঃপর ইতিহাস!

নীনার তখন নিজস্ব মোবাইল ছিলো না। বাবার মোবাইলে লুকিয়ে সিম উঠিয়ে আমাকে টেক্সট করতো। আমিও এসএমএস পাঠিয়ে ডেলিভারি রিপোর্টের জন্য রাতভর অপেক্ষা করতাম। এসএমএস টা গেছে তো?

শুরুর দিক সব উদ্ভট আজগুবি খেজুরে আলাপ হতো। কোন আগা মাথা নেই। এসএমএস আসছে, এসএমএস যাচ্ছে এটাই ছিলো মূখ্য বিষয়।

মাসখানেকের মধ্যে ভার্চুয়াল সম্পর্কটা আরেকটু গভীর হলো। প্রতিদিনের ভালোলাগা-খারাপ লাগার খবর গুলো বিপ্‌ বিপ্‌ শব্দ করে আসতে শুরু করলো। একদিন আমি খবর না নিলেই পর পর দুই দিন টেক্সট এর রিপ্লাই করতো না নীনা। আমি অবশ্য ব্যতিক্রম ছিলাম। রিপ্লাই দেবো না দেবোনা করেও দুই মিনিটের মধ্যেই দিয়ে দিতাম!

এসব সেই সত্য যুগের কথাবার্তা। তারপর জল গড়াতেই থাকলো। নীনা মেডিকেল কলেজে চান্স পেলো আর আমি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় মানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তো ছিলামই। একদিন বিপুল পরিমাণ সাহস সঞ্চয় করে চুপিচুপি নীনার কলেজে গিয়ে উপস্থিত হলাম। অনেক তো লুকোচুরি হলো। এবার দেখা করলে ক্ষতি কি?

আমার ফোন পেয়ে নীনার তো ত্রাহী অবস্থা! ‘তুমি এখানে কেনো আসছো?? কেউ দেখে ফেললে আমার জীবন শেষ! না বাবা, আমি দেখা করতে পারবো না!’

নীনাকে মিথ্যে বললাম। ‘হা হা হা! ভয় পাইছো!! আমি আসছি তোমাকে কে বললো? তোমার কলেজ কি আমার বাসার পাশে যে হেঁটে হেঁটে চলে আসবো? আজব!’

তারপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলো নীনা।

মেডিকেল কলেজে ভর্তির কয়েকমাস পর্যন্ত ভালই ছিলো। তারপর থেকে নীনা যেন কেমন হয়ে গেলো। টেক্সট দিলে দু’ ঘন্টা পর রিপ্লাই করে, ফোন দিলে তো রিসিভই করেনা! কখনো বন্ধুদের সাথে আড্ডার অযুহাত কখনো বা পড়াশুনার। নিজ থেকে খবর নেয়া তো প্রায় বন্ধ করেই দিলো। আমি অভ্যস্ত হতে থাকলাম। একজন মেডিকেল ছাত্রী আর ন্যাশনাল ভার্সিটির ছাত্রের মাঝের ব্যবধান টা মেনে নিতে থাকলাম ধীরে ধীরে।

সম্পর্কটা হাই-হ্যালোময় সামাজিক সম্পর্ক হয়ে গেলো। একঘেয়ে, প্রাণহীন, ম্যাড়ম্যাড়ে সম্পর্ক।
একমাস খবর না নিলেও নীনা আর অভিমান করেনা। অনেক দিন পর ফোন দিলে ব্যস্ততার কণ্ঠে নীনা বলে, - ‘কিছু বলবা?’

আমার অভিমান গুলো তীব্রতা হারাতে থাকে। সময় বাড়ার সাথে সাথে ক্ষয়ে যায়। একপাক্ষিক গুরুত্বহীন অভিমানটা নিজের কাছেই বড় হাস্যকর মনে হয়। পৃথিবীতে অভিমান ছাড়াও অনেক কাজ করার আছে মানুষের।

একদিন নীনাকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম – ‘এমন কেনো হলো নীনা?’

নীনা আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় এটা বাচ্চামির বয়স না। আমরা বড় হয়ে গেছি! এখন আমাদের বড়দের মতো চলতে হবে!

দূরত্ব বাড়তে থাকে। স্বীয় জগতে লীন হয়ে যায় নীনা। আমি সরে আসি অলিখিত অধিকারের অনধিকার চর্চা থেকে। পরাজিত সৈনিকের মতো একদিন মোবাইল নাম্বারের পরিচয়টাও বদলে ফেলি। তারপর জল অনেকদূর গড়িয়েছে। গড়াতে গড়াতে একসময় শুকে গেছে। নীনা হয়তো টেরই পায়নি ব্যাপার টা!

আজ আট বছর পর সেই অদেখা নীনাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে । নীনা হয়তো এতদিনে প্র্যাকটিস শুরু করে দিয়েছে। টুকটাক নাম ডাকো হয়তো হয়েছে ওর। শুনেছি ডাক্তারদের নাকি আবেগহীন হতে হয়। পাথুরিয়া গ্রামের আবেগী নীনাও কি আবেগহীন পাথর হয়ে গেছে?

আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে গেছে নীনা এ হসপিটালেই আছে। শুধু আমার চোখেই ধরা দিচ্ছে না।

একটা কোমল হাত আলতো করে আমার হাত চেপে ধরে। এটা নিশ্চয় নীনার হাত! নীনাকে দেখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি। কে যেন ষড়যন্ত্র করে আমার চোখের উপর কয়েকটনি ওজনের বোঝা চাপিয়ে দেয়। বারবার আমি ব্যর্থ হই। চারদিকে অন্ধকার দেখি! নিকষ-কালো-ঘুটঘুটে অন্ধকার!

কোমল হাতটা আমার হাত ছেঁড়ে দেয়। একটা নিরুত্তাপ কণ্ঠ কানে এসে বিঁধে- ‘মালেক ভাই, লাশটা দ্রুত হিমঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন!’

আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতে থাকি! এ যে আমার নীনার কণ্ঠ!


ছবি-ইন্টারনেট

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৬

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: সুন্দর ভালো লাগল গল্প ।

২৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৭

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন :)

২| ২৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৮

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: অসাধারণ হইসে ভাই। প্রিয়তে নিলাম।

২৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৮

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই হাতুড়ে লেখক। ভালো থাকবেন।

৩| ২৯ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৪

অশ্রুকারিগর বলেছেন: ভালো হয়েছে।

২৯ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৮

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৪| ২৯ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো গল্প। একপাক্ষিক প্রেমের হতাশা যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

ধন্যবাদ ভাই জুনায়েদ খান।

২৯ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪০

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ :) ভালো থাকবেন।

৫| ২৯ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৪

সুমন কর বলেছেন: সাবলীল বর্ণনায় গল্প ভালো লাগল।

২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:৩২

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

৬| ২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:৫০

পুলহ বলেছেন: ব্লগে হরহামেশা ভালো গল্প আসে না, তাই এমন লেখাগুলোকে সৌভাগ্যক্রমে খুজে পেলে ভীষণ আনন্দ হয়।
আপনার লেখার হাত ভালো, গল্পের কাহিনী কোহেরেন্ট... ৮/৯ বছরের (অথবা হয়তো আরো বেশি) কাহিনী বর্ণনা করেছেন গল্পে- অথচ ডিসকন্টিনিউয়াস মনে হয় নি লেখাটা। নিঃসন্দেহে কাজটা প্রতিভাবান লেখকদের পক্ষেই সম্ভব।
ফিনিশিংটা অপ্রত্যাশিত হওয়ায় গল্পের আবেদন বেড়েছে, আটপৌরে ক্যাটাগরি থেকে বেরিয়ে এসেছে গল্প।
নীনা নামটা খুব একটা সুন্দর না হলেও পাথুরিয়া নামটা কিন্তু খুব সুন্দর! পাথুরিয়া! বাহ!!
শুভকামনা লেখক। ভালো থাকবেন

২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১০:৩১

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি আনাড়ি লেখক। এমন মন্তব্য আমাকে উৎসাহ দেবে সতত। ভালো থাকবেন। :)

৭| ২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১১:৫৯

শান্তির দেবদূত বলেছেন: খুবই ছোট একটা গল্প, কিন্তু কি চমৎকার! মনোযোগ চুম্বকের মত টেনে ধরে রেখেছিল পুরোটা সময়, ভাষার বুনট অদ্ভুত সুন্দর, ফিনিশিংটা অসাধারন; সবমিলিয়ে দারুন একটা ছোট গল্প পড়লাম। এমন লেখা আরও চাই। শুভেচ্ছা রইল সেই সাথে শুভকামনা।

৩০ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:১৪

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই দেবদূত :)

৮| ৩০ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:০৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ইসসসসস
গল্পটা পড়তে চাইনি। কিন্তু এসে আটকে গেলাম।
খুব সুন্দর

৩০ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:০৩

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই :)

৯| ৩০ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:১৮

নীলসাধু বলেছেন: বাহ। বেশ ভালো লাগলো গল্প। চমৎকার।



শুভেচ্ছা ভালোবাসা রইলো।

৩০ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:২৭

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ নীল দা। দোয়া করবেন :)

১০| ৩০ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৩

সায়ান তানভি বলেছেন: আপনার বয়স কত জাননি না,তবে সময়টা বোধহয় প্রেমের গল্প লেখার এ ধরনের।আপনার লেখনী ভাল।শুভ কামনা।চালিয়ে যান।

৩০ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৬

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: বয়সে কিবা এসে যায়! ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

১১| ৩০ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:২০

শুভ ইমতিয়াজ বলেছেন: গল্পে বাস্তবতা খুজে পেলে গল্পটা একদম মনে লেগে থাকে। অনেক ভালো ছিল।

৩০ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৭

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ইমতিয়াজ ভাই :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.