নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখার জন্যে কলম, পেন্সিল, মোবাইল, পিসি কিছু দরকার আছে বলে আমার মনে হয়না। লিখার মত একটা মন থাকলেই যথেষ্ট।

দিকশূন্যপুরের অভিযাত্রী

কেউ জানেনা আমি কত বাচাল। কারন মনের কথাগুলো কেউ শুনতে পায়না।

দিকশূন্যপুরের অভিযাত্রী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি পুরোনো দেশ এবং একটি নতুন দেশের গল্প।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫২

প্রথমেই বলে নেই যে আমি দেশের বাইরে থাকি। একদিন এক লোক আমাকে প্রশ্ন করল তুমি কোন দেশ থেকে এসেছ? আমি এ দেশের উচ্চারনে আমার দেশের নাম বললাম। এখানে বলে রাখা ভাল যে, আমি যেখানে থাকি এখানের লোকাল ভাষায় বাংলাদেশ কে (বানগুরাদেশু) বলে। আমার জবাব শুনে লোকটি আমার দিকে হতভম্বের মত তাকিয়ে রইল। আরেকটি ইম্পরট্যান্ট ইনফো হচ্ছে, আমাকে যে প্রশ্ন করেছে সেও এ দেশের স্থানীয় না। সে ছিল ভিয়েতনাম এর একজন নাগরিক। তাই আমি ভাবলাম সে বোধয় বাংগুরাদেশু শব্দটার সাথে পরিচিত না। সেজন্য 'বাংলাদেশ' বলে পুনরায় উত্তর করলাম। এবার তার ভ্যাবাচেকা ভাবটা যেন আরও বেড়ে গেল। সে আবার প্রশ্ন করল কোথায়? আমি আবার বললাম বাংলাদেশ। সে বলল, আমি ঠিক চিনতে পারছিনা তুমি কোন দেশের কথা বলছ। আমি বললাম, কেন তুমি এই দেশের নাম আগে কখনও শুনোনি? সে উত্তরে না বলল। প্রচন্ড রাগ হল তার উত্তর শুনে। রাগের চোটে ওর সাথে আর কথাই বললাম না। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করতে থাকলাম, এএএ বাংলাদেশের নাম শুনেনি??? এ কেমন আহাম্মক রে বাবা! তারপর, 'সে ছিল একটা মূর্খ' শিক্ষিত হলে নিশ্চই বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুনা কিছু জানত। কিছু না জানলেও অন্তত দেশের নামটা তো জানত। এরকম একটা চিন্তা মনে মনে করে নিজেকে নিজে সান্তনা দিলাম। তার কিছুদিন পর এক ফিলিপাইন মহিলা আমার দেশ সম্পর্কে জানতে চাইল। নাম বলার পর সেও লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, দুঃখিত আমি এই দেশের নাম আগে ঠিক শুনিনি। এরপর চায়না, পেরু আর আমি যে দেশে আছি সেখানের কিছু মানুষের সাথেও একই অভিজ্ঞতা হল। আমি প্রথম প্রথম খুব রাগ হতাম। কেননা নিজের দেশ সম্পর্কে বললে যখন কেও বলে এটা আবার কোথায়! তখন যে কেমন লাগে এটা বাংলাদেশে বসে বাঙ্গালীরা কখনও বুঝবে না।
প্রথমদিকে ওদের মূর্খ মনে করতাম। ভাবতাম ওরা বোধয় লিখতে পড়তে পারেনা। পারলে তো খবরের কাগজে কোন একদিন হলেও বাংলাদেশ সম্পর্কে কোন নিউজ পড়ে থাকতে পারত। পরে আবার ভাবলাম, পড়ালেখা না জানলেও তো সমস্যা নেই। এখন রেডিও, টিভি, ইন্টারনেট কত কি আছে। কোন একটা মাধ্যমেও কি শুনেনি আমার দেশের নামটা! প্রথমে ওদের দোষ দিলেও আস্তে আস্তে নিজে থেকেই বুঝতে পারলাম দোষটা ওদের থেকে বেশি আমাদের। কেননা স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও আমরা আমাদের দেশের নাম ওদের কানে পৌছাতে পারিনি, ওদের চোখে দেখাতে পারিনি। হতে পারে বাংলাদেশ খুব ছোট একটা দেশ। ধরুন একটা পিপড়া যে কিনা দেখতে খুবই ছোট। তারও কিন্তু হাত পা চোখ কান সবই আছে। আর বাংলাদেশ তো একটা গোটা দেশ! আমাদের দেশের যতটুকু পরিচিতি আছে সারা বিশ্বে নেগেটিভ দিকের উপর পরিচিতি টাই বোধয় বেশি।
তবু আমরা বাঙালিরা গর্বের অন্ত রাখি না। আমি দেশ ছেড়ে এসেছি দু'বছর হয়। এই দু'বছরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই নতুন এক দেশের জন্ম হয়েছে। যে দেশের স্বাধীনতার জন্যে কোন যুদ্ধ করতে হয়নি কারোর। শুধু কিছু বিকৃত আনন্দ বিলাসে মগ্ন মানুষরুপি আহাম্মকের তাড়নায় তৈরি হয়েছে এ দেশ। নিন্দুকেরা এর নাম দিয়েছে 'নোয়াখালী'। আমার খুব আসহায় লাগে এসব দেখলে। প্রথম দিকে ভেবেছিলাম নিছক মজা হচ্ছে। কিন্তু আস্তে ধীরে মজা টা সাজায় পরিনত হয়েছে। গরীবের ঘোড়া রোগ হয় বলে একটা কথা আছেনা? অনেকটা তেমন মনেহয় আমার কাছে। ৪৭ বছরেও আমরা যে দেশের নাম পৃথিবীর কাছে পরিচিত করতে পারিনি এখনও সেই আমরাই আমাদের নিয়ে হাসি তামাশা করছি। যারা নোয়াখালী কে নিয়ে প্রতিনিয়ত ট্রোল করেই যাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে আমার কিছু কথা হল: আপনাদের কাছে নোয়াখালী মানে খুবই ক্ষেত, আনকালচার্ড, গরিব এরকমই তো? ব্যাপারটা অনেকটা এরকম দাড়ায় তাহলে। মনে করুন আপনার শরীরের একটি হাত অথবা পা অথবা কোন একটি অংশ পঙ্গু। আর আপনি সেই পঙ্গু অংশটাকে নিয়ে হাসি তামাশা করছেন। এখানে আমি মোটেও নোয়াখালী কে ছোট করছিনা। আমি শুধু যারা ট্রোল করে তাদের চিন্তাধারার উপর ভিত্তি করে যুক্তি দেখালাম।
এটাতো গেল কেবল নোয়াখালী টপিক যেটা দেশজুড়ে ভাইরাল। কিন্তু এরকম আরও হাজারও টপিক দেশে ভাইরালের অপেক্ষায় সিরিয়ালে আছে। আমাদের সমস্যা হল যার যার রাজত্যে আমরা সবাই ঠিকই রাজা, তবে রাজত্য কি ঠিকঠাক ভাবে চলছে কিনা সে ব্যাপারে আমাদের কারও মাথাব্যথা নেই। আগে মূর্খের মত না বুঝলেও অন্তত দেশের বাইরে আসার পর বুঝতে পারি যে আমরা কতটা পিছিয়ে আছি এখনও! আমরা জিপিএ ৫ পাওয়ার জন্যে এখন রাত জেগে পড়া চেয়ে প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টায় থাকি বেশি। কি হবে এমন করে? একবার কল্পনা করে দেখুনতো, আপনি একটা এলাকায় ৪৭ বছর ধরে থাকলেন। তারপরও সে এলাকার অনেকেই আপনার নামটা পর্যন্ত জানলনা। তখন কেমন লাগবে। এরাই কিন্তু আবার আমেরিকা, লন্ডন, সিঙ্গাপুর এসব দেশের নাম শুনলে চোখ উজ্জল করে তাকায়।
তবে আশার কথা হল অনেকের মত আমার চোখেও বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার একটি দেশ। শুধু সবার জায়গা থেকে অল্প অল্প করে নিজ নিজ করনীয় গুলো করলেই হল। তাহলে একদিন হয়ত ভবিষ্যত প্রজন্মের কাউকে এরকম কষ্টকর, বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়তে হবেনা। বাঙালি হিসেবে আমরা যেমন গর্ববোধ করি। আমাদের দেখেও অনেকে হয়ত গর্বিত বোধ করতে পারবে নিজেকে। কিন্তু তার জন্যে দরকার অগাধ ন্যায়নিষ্ঠতা।
আমরা সবাই নিজের অথবা কাছের মানুষের ভালোর জন্যেই দুর্নীতি অথবা খারাপ কাজ করে থাকি। এবং তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের দেশ। আমরা এতটাই বোকা যে, আমরা এটা ভুলে গেছি দেশের অবস্থাই যদি নড়বড়ে হয় তাহলে নিজের অথবা কাছের মানুষের অস্তিত্বের কথা ভাবাটাও হাস্যকর। দয়া করে শুধু জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময়ই নয়। দেশকে ভালবাসুন জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি সেকেন্ডে সেকেন্ডে।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫৪

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: পড়লাম

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০৮

দিকশূন্যপুরের অভিযাত্রী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনার লেখার হাত নেই বললেই চলে, আপনি ন্যুডল রান্না করেছেন, আগা-মাথা কিছুই নেই

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০৮

দিকশূন্যপুরের অভিযাত্রী বলেছেন: মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ

৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কি আর বাংলাদেশে ফিরবেন না?

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪৬

দিকশূন্যপুরের অভিযাত্রী বলেছেন: অবশ্যই ফিরব! পারলে এখনই চলে আসতাম। কিন্তু অনেক বাধ্যবাধকতা আছে। গুছিয়ে নিয়ে ফিরে আসব ইনশাআল্লাহ। কিন্তু এই প্রশ্নের কারন কি ছিল ভাইয়া?

৪| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কি আর বাংলাদেশে ফিরবেন না?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.