![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলায়, মেঘালয়ের পাদদেশে প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ হাওর বাংলাদেশর দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি 'নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল' এবং 'টাঙ্গুয়া' নামেও পরিচিত। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরা (ঝর্ণা) এসে মিশেছে এই হাওরে। দুই উপজেলার ১৮টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি।পানিবহুল মূল হাওর ২৮ বর্গকিলোমিটার এবং বাকি অংশ গ্রামগঞ্জ ও কৃষিজমি।
বিস্তৃত জলাভূমি, হিজল গাছের সারি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব যেন একসাথে খেলা করে হাওর জুড়ে পুরো বরষার সময়ে। জলের মধ্যে এক ভিন্ন প্রকৃতির সম্রাজ্য খেলা করে, সেখানে রয়েছে করচ, বরুন, পানিফল, হেলেঞ্চা, বনতুলসি, নলখাগড়া, বল্লুয়া ও চাল্লিয়া জাতের উদ্ভিদ।
টাঙ্গুয়ারহাওরের জীববৈচিত্র্যের মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন জাতের পাখি। স্থানীয় বাংলাদেশী জাতের পাখি ছাড়াও শীতকালে, সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আগত পরিযায়ী পাখিরও আবাস এই হাওর। এ হাওরে প্রায় ৫১ প্রজাতির পাখি বিচরণ করে। পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে বিরল প্রজাতির প্যালাসেস ঈগল, বড় আকারের গ্রে কিংস্টর্ক রয়েছে এই হাওড়ে। স্থানীয় জাতের মধ্যে শকুন, পানকৌড়ি, বেগুনি কালেম, ডাহুক, বালিহাঁস, গাঙচিল, বক, সারস, কাক, শঙ্খ চিল, পাতি কুট। এছাড়াও ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৪ প্রজাতির সাপ, বিরল প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির কচ্ছপ, ৭ প্রজাতির গিরগিটিসহ নানাবিধ প্রাণীর বাস, এই হাওরের জীববৈচিত্র্যকে করেছে ভরপুর। প্রতিবছর নভেম্বর মাসের শুরুতেই সুদূর সাইবেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপালসহ বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে বাংলাদেশে ছুটে আসে অতিথি পাখি। শীতের তীব্রতা থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে নানা প্রজাতির এসব অতিথি পাখি আসে দেশের হাতে গোনা কয়েকটি জায়গায়। সেখানে তারা গড়ে তোলে ক্ষণস্থায়ী আবাস। তার মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওর অন্যতম।
ছয়কুড়ি কান্দা আর নয় কুড়ি বিল নামে পরিচিত এই বিশাল জলাভূমি শুধু পাখি নয়, মাছের জন্যও বিখ্যাত। একসময় টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ ছিল। এ হাওরের বিখ্যাত মাছের মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করা যায় মহাশোলের কথা। মাছটির দুটি প্রজাতি পাওয়া যেত এই হাওরে। এ ছাড়া রয়েছে গাং বাইম, কালবাউশ, তারা বাইম, বাইম, গুতুম, গুলশা, টেংরা, তিতনা, গইন্না, রুই, কাতল, চিতল, বোয়ালসহ আরো নানা প্রজাতির দেশি মাছ। এসব গুরুত্বের কথা বিচেবনা করে 'টাঙ্গুয়ার হাওর' কে 'রামসার সাইট' হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সরকার/ সংস্থা হাওরের সুরক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
স্থানীয় লোকদের মতে হাওরে সারাবছরে দুই ধরনের সৌন্দর্য লক্ষ করা যায়_ ১। বর্ষাকালে ও ২। হেমন্ত ও শীত কালে। যার একটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার গতমাসের ১৫তারিখের দিকে। বিস্তৃত জলরাশির বুকে মধ্যরাতে খোলা আকাশের নিচে নৌকায় শুয়ে থেকে বিশাল আকাশের ওই বিলাসী জ্যোৎস্না দেখাতে পারাটা যে কতটা তৃপ্তিকর তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। দিনের বেলায় শরতের উষ্ণ রোঁদে আকাশজুরে প্রকান্ড মেঘের সারি, অদূরে মেঘালয়ের পাহাড়ের দল, সত্যি অসাধারণ। নভেম্বরের শুরুতে হাওরে এক ভিন্ন রুপলাভ করে।
যাতায়াতঃ যাদের ঘুরেবেড়ানো শখ তারা অনেকেই ইতিমধ্যে স্থানটি ভ্রমণ করে ফেলেছেন আর যারা এখনো মিস করেছেন তারা সুযোগ করে বেড়িয়ে আসতে পারেন। অবশ্য হাওড়ের আশেপাশে আরো কয়েকটি দর্শনীয় স্থান আছে দেখার মত।
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ- বাস
সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর- টেম্পু/মটোর সাইকেল
তাহিরপুর ঘাট থেকে হাওরে বেড়ানোর জন্য নৌকা ভাড়া করতে হবে।
উল্লেখ্য যে ভ্রমণের আগে হাওরের নিরাপত্তা বিষয়ে কিছু সংকোচ থাকলেও পরে ভুল প্রমাণ হয়েছি। স্থানীয় মানুষগণ যথেষ্ট বন্ধসুলভ, উপকারী। সবকিছু ঠিক থাকলে শীতে আবার যাচ্ছি।
ছবিঃ মুঠোফোন দিয়ে তোলা (ডিভাইস রেডমি ৩, সেপ্টেম্বর ২০১৬)
©somewhere in net ltd.