![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
#১
১
এইতো কিছুদিন আগের কথা । সাত নম্বরে মসজিদের কাছে লেকপাড়ের ফাঁকা জায়গাটায়, তুমি আর আমি বসে ছিলাম। তোমার মনটা খুব খারাপ ছিল।
অনেকক্ষণ পাশাপাশি নিঃশব্দ হয়ে ছিলাম দুজনেই।
-এই কি হয়েছে তোমার? মনটা খুব খারাপ নাকি?
-নাহ !
- না না, এইতো, একি তুমি কাঁদছো ?
-কই নাতো। আমি কাঁদলেই বা কি ? তাতে কার কি যায় আসে!
- ও তাই! ঠিকাছে তাহলে কাঁদো। তবে শব্দ করে কাঁদো, যাতে মানুষ শুনতে পারে। এভাবে কাঁদলে মস্তিষ্কের গ্রন্থি থেকে একধরনের হরমন নিঃসৃত হয় যেটা দুঃখবোধ কমিয়ে দেয়। কেঁদে দুঃখবোধ কমাও। কে মানা করেছে? কিন্তু এভাবে নসিকা দিয়ে হিমবাহ নামিয়ে আনতেছো ক্যান? এ ছিঃ ...... এই কেও দেখে ফেলল!
-দেখ আমি ফাজলামি করতেসি না আমি সিরিয়াস।
-সেতো দেখছিই, তুমি ফাজলামি করছ না । নাকের জল ফেলছ। এভাবে নিশ্চয়ই কেউ ফাজলামি করতে পারে না। কারন আরবি ফাজিল শব্দের অর্থ জ্ঞানি কাজেই ফাজলামো মানে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। সেটা নসিকার ঢল নামিয়ে হয়না।
- আশ্চর্য !! তুমি কি মানুষ ? তুমি একবারও জিজ্ঞাসা করেলে না কেন কাঁদছি? কি হয়েছে আমার?
কথাগুলো বলার সময় আমার দিকে অদ্ভুত অভিমান নিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলে তুমি। তোমার চাপা কান্না আরাকটু বিস্তৃত হয়েছিল। চোখের মাশকারাগুলো জলে ভিজে আরাকটু একাকার হয়েছিলো। হয়ত আমিও নিজেকে থামাতে পারিনি। দুফোটা অশ্রু আমার চোখেও টলমল করছিলো। কিন্তু চেপে রেখেছি। সামলে নিয়েছি নিজেকে। বুকে পাথর রেখে মুখে ঠাট্টা নিয়ে তোমায় প্রতিত্তুরে বলেছি,
-কিছু একটা তো হয়েছে নিশ্চয়ই। হবে হয়তো গ্লোবাল ওয়ার্মিং। এর কারনেই হয়তো হিমবাহ গলছে।
-কাব্য প্লিজ! আর্তনাদের স্বরে তুমি অনুনয় করেছিলে...
-ওহো! সত্যিতো দেখছি সেটাই হয়েছে!
-কি হয়েছে? অবাক চোখে আমার দিকে তুমি তাকিয়ে ছিলে প্রশ্ন করার সময়। ভাবছিলে প্রিয়তমার কান্নার সময়েও কিভাবে আমি এতো মজা করতে পারি!
- ওমা! আমি কি দেবতা যে তোমার মনের খবর জানব? দেবতা হলেতো নেংটি পড়ে মন্দিরে বসে থাকতাম। তুমি কাদছ! তুমিই বল। আমি কিভাবে জানব তোমার কি হয়েছে?
- সবসময় ঠাট্টা করবা না। বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে!
- ওহ! ভালো। আমি একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বলেছিলাম।
- শুধুই ভালো?
- ছেলে কি করে?
- আর যাই করুক তোমার মতো বেকার না। তোমার মতো উদ্ভট সেজে পথে পথে ঘুরেও বেরায় না! টপ ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট। তিনটা গার্মেন্টস এর মালিক।
চোখ মুছতে মুছতে অভিমানের স্বরে তুমি বলেছিলে।
- উম!! তাহলে শুধু ভাল না, অনেক ভাল। ভালো টু দি পাওয়ার ২৮।
আমার প্রশস্থ হাসিমুখ দেখে তুমি যারপর নাই অবাক! কিন্তু সেই হাসির নিচে কষ্টের প্রকট পাথর আমার হৃদপিন্ডকে থেঁতলে দিচ্ছিলো সেটা তুমি দেখতে পাওনি। সেই পাথরের আঘাতে আমার ভেতরের আর্তনাদটা তুমি বুঝতে পাওনি।
- ব্যাস তুমি এটুকুই বলবে? তোমার আর কিছুই বলার নাই?
- বিয়ে কবে?
ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তোমার দিকে তাকানোর সাহস আমার ছিলো না। তাকিয়ে ছিলাম বহুদূরে শূন্যদৃষ্টি দিয়ে। তবুও, আমার প্রশ্ন শুনে তুমি আশাতুর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে। গভির আরোক্তি নিয়ে বলেছিলে-
-আগামি শুক্রবার। ওরা সকালেই চলে আসবে।
-মানে আগামি পরশু?
-হুম।
আমি কিছুই বলতে পারিনি। শুধুই একবার তোমার দিকে, আরেকবার দূরে অনিদৃষ্ট দৃষ্টিতে তাকিয়ে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে শীতল দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলাম।
- কাব্য! তুমি কিছু কর। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।
বলেই তুমি আমায় জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়েছিলে। আমার নীল পাঞ্জাবীর বুকের অংশটা ভিজে কালো হয়ে গিয়েছিল তোমার সে অশ্রুতে। সেই শিশুর মত কান্না আজও আমার চোখে ভাসে।
- আমি কি করতে পারি বল? তুমি আর কটাদিন সবুর করতে পারলে, না হয় কিছু করতে পারতাম।
- তারমানে তুমি কিছুই করবে না? তোমার কান্নার গতি দ্বিগুণ করে আমার পাঞ্জাবী আরো শক্তভাবে আক্রে ধরেছিলে । আমি বুঝেছিলাম সেদিন তোমার মনটা শুধু আমার একটা কথার প্রতিক্ষা করছিলো। "চল পালিয়ে যাই"।
তিনটা শব্দের একটা বাক্য। চলো পালিয়ে যাই। কিন্তু এটা আমি বলতে পারিনি। কারন আমার সামনে ছিলে তুমি। আর পিছনে ছিলো এক সাগর পিছুটান।
এইতো মাত্র আর দুটো সেমিস্টার। ইন্টারনি শেষ করে একটা চাকরি জুটিয়ে ফেলতে পারতাম। কিন্তু অতদিন তোমার বাবার সইবে না। সইলেও আমার মতো সল্প স্যালারির একজন ইঞ্জিনিয়ারের সাথে তিনি তোমার বিয়ে দেবেন, সেই নিশ্চয়তা নেই। আর আমিও পারবোনা আমার বাবা-মার স্বপ্ন চুরমার করে কিছু করতে।
আমার পরিবার, আমার দিকে তাকিয়ে। বৃদ্ধ বাবার চশমার ফ্রেমের টাকা আমায় টিউশনি করে যোগাতে হয়। ছোট বোনটার পরাশোনার খরচ মেটাতে হয়। আমার পরিবারকে খাদের কিনারায় ফেলে সেদিন তোমার হাত ধরে আমি চলে যেতে পারিনি। তোমাকে সান্তনা দিতে তোমার ঠোটে চুম্বন দিতে পারিনি। তোমার হাত ধরে বলতে পারিনি তুমি শুধুই আমার। মধ্যবিত্ত যুবক সবকিছু বলতে পারে না। তাঁদের বলা বারণ।
জীবনে প্রথমবারের মত মনের বিরুদ্ধে গিয়ে যুক্তি দিয়ে ভেবেছিলাম।
তোমার দিকে ঝুকে গিয়ে তোমার গালে হাতটা রেখে অনেককষ্টে চোখের জল আটকে বলেছিলাম............
-দোয়া করি সুখি হও।
সেদিন তুমি কেঁদে কেঁদে আমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে গিয়েছিলে
#২
সেদিন রাত দুটো। মুঠোফোন বেজে চলছে। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। এ অসময় আবার কে ফোন দিল! ফোন টা ধরতেই তোমার কন্ঠ শুনে চমকে গেলাম। তুমি শুধু একটা কথাই বললে
- জন্ম আমার আজন্ম পাপ! তুমি কি করতে পার? হে উদ্ভট বালক।
কি শীতল ছিলো তোমার সে কন্ঠ! কতটা পরিষ্কার আমি কথাটা শুনেছিলাম!
আমি হ্যালো হ্যালো করতেই ফোন কেটে সুইচ অফ করে দিলে। চিন্তায় আমার ঘুম আসল না। তবুও শেষ রাতে কিভাবে জানি ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও জানি না।
#৩
তারপর সকাল সাতটা। আবার ফোন! ফোন করেছ বিভা ............।
- বিভা বল, কি হয়েছে?
- তুই কিছুই জানিস না !
- নাতো ! কি হয়েছে?
-নদী
আমার বুকটা ছ্যাত করে উঠলো
- দোস্ত নদী কি? নদী কি করেছে?
- নদী গতরাতে বিষ খেয়েছে। হস্পিটালে নিতে নিতে মারা গেছে...............।
ওদিক থেকে বিভা হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। কিন্তু আমি কিছুই শুনতে পারছি না। মুহুর্তেই আমার গোটা জগতে যেন আধার নেমে এলো।
লেখক - আল মুকিতুল বারী
©somewhere in net ltd.