নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মায়াবতী বেঁচে থাকবে আমার গল্পে, গল্পেই তার জন্ম, গল্পেই তার অস্তিত্ব আর আমার অস্তিত্ব মায়াবতীর কল্পনায়...... অসাধারন কল্পনা থেকে বাস্তবতায় সাধারন বেশে হেঁটে হেঁটে পৃথিবীর ধূলিকণা খাই...

কাব্যপ্রেমী রিফাত

হিমু মত এলোমেলো পথে জোছনায় ময়ুরাক্ষীর পাড়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা, ধীরে নদীর পানি গ্রাস করতে থাকে আমাকে .....। ফেসবুকে আমিঃ https://www.facebook.com/hiimmuu

কাব্যপ্রেমী রিফাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

কৃষ্ণকলি

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৭

সঞ্চিতা ক্লাসে এক কোণেই পড়ে থাকে।কালো বলেই হয়তো কারো নজরে পড়ে না।অথবা কালো বলেই সংকোচে কাউকে কিছু বলতে সাহস হয় না তার।মেয়েটি ভালো স্টুডেন্ট।ম্যাথে তার যথেষ্ট ভালো দখল আছে।আছে দুর্বলতা ।অবসরে বসে নিজের ঘরে ছবি আঁকে আর অংক করে।

কিন্তু আজ তার মন খারাপ।



সে বাইরে তাকায় তবু ঝাপসা হয়ে আসে দৃষ্টি।কালো বলে তাকে অনেক উপহাস সহ্য করতে হয়।চেহারার জন্য প্রায়ই ক্লাসমেটদের বিভিন্ন নোংরা ইশারায় তাকে জর্জরিত হতে হয় ।

আজকের ব্যাপারটা ভিন্ন।



খানিকক্ষণ আগেঃ

জহির স্যারের কাছে গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য আবেদন পত্র দিতে গিয়েছিলো।ক্লাসের আরো কয়েকটা মেয়েকে স্যার ডেকেছিলেন।

ওরা ভেতরে বসে ছিলো।

স্যার কিছু একটাতে তাদেরকে জোর করছিলেন।সামনে বসা জারিনকে হাত ধরে পর্যন্ত অলিম্পিয়াডে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দিলো।তার চোখে মুখে নোংরা একটা হাসি।ছোট কুতকুতে চোখ দিয়ে সে দেখতে থাকে মেয়েটাকে।জারিনও কেমন অতিরিক্ত মাখামাখি করে।



হঠ্যাত্‍ স্যার সঞ্চিতাকে বলেনঃ এখানে কি কাজ ?

সঞ্চিতা বলেছিলোঃ

স্যার গণিত অলিম্পিয়াডে আমার নাম ...

স্যার যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেনঃ অলিম্পিয়াড বানান জানিস ?

সঞ্চিতাঃ স্যার আমি পারবো !



আগের কথায় অন্যরা হেসে উঠতেই স্যার আরো একটু উত্‍সাহ পেলেন।বিশেষ করে জারিনের চোখে চোখ রেখে বলতে লাগলেনঃ আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছিস কখনো?তোকে দেখলেই তো সব জ্ঞান হারাবে ! তুই তো পারবিই বটে !



সঞ্চিতা চলে এসে আগের সিটে বসে আছে।কিন্তু আজ তার খারাপ লাগছে।প্রতিভার চেয়ে কিনা তার চেহারাটাই বড়।



পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথেও বাইরে গেলে সবাই তাকে কিভাবে যেন উপেক্ষার দৃষ্টি দেখে।

নিজেকে অনেকটা আনএক্সপেক্টেড টাইপ একটা অনুভূতির সংমিশ্রণে গড়েছে।

কোথাও গেলে নিজে জড় বস্তুর মত লাগে তার।



ক্লাস টেনে এক ছেলের সাথে পরিচয় হয়।ফোন দিতো ছেলেটা।ঘন্টার পর ঘন্টা কথা হতো।অনেক অনুরোধ করতো দেখা করতে।

টেস্ট পরীক্ষার আগে দেখা করতে যায় দুজন।

সঞ্চিতা ছেলেটাকে চিনতো।

কিন্তু ছেলেটা ক্যাফেতে এসে অনেকটা না দেখার ভান করে চেয়ে থাকলো।গেটের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

হঠ্যাত্‍ একটা ফোন আসলো।হঠ্যাত্‍ একটা বাক্য সঞ্চিতাকে নির্বাক করে দিলো।

ছেলেটা বলছিলোঃ হ রে দোস্ত !হ ! ঐ মাইয়াডাই ! দেখছোস না মামা ? পুরাই আইটেম ! এক রাতের লাইগা পাইলেই জিন্দেগী কাবার !হ ঐ তো আমারে নাম্বার দিছে ! হ আদিবাই তো !



সঞ্চিতা অবাক হয়ে উঠে আসে।সঞ্চিতার ডাক নাম আদিবা । কেউ একজন মজা করে তার নাম্বার দিয়ে দিয়েছে !



সিমটা পাল্টে ফেলে সঞ্চিতা।আর কোন ছেলেকে কাছে ঘষতে দেয় নি সে।



ডাক্তারী পরীক্ষায় সে মেরিটে চান্স পায় কিন্তু পরিবারে তখনো চিন্তা তার বিয়ের । তার ছোট বোনের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে অথচ তার জন্য আসে না ।



মেয়েটা রোজ রাত্রীতে দেরি করে বাড়ি ফেরে।কেউ টেবিলে খাবার দেয় না।বাড়ির বুয়াও না।

অলুক্ষণে মেয়ে সে !

বাবার ঔষধের কথা মনে রাখে , মায়ের পায়ের ব্যাথার জন্য ম্যাসাজ করে।



তারপর ,

ঘরের দরজাটা নিশ্চুপে বন্ধ করে।আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে।হাসতে চেষ্টা করে কিন্তু চোখ বেয়ে কেবল জল নামে।

বাবার প্রতিটা দীর্ঘশ্বাস আর মায়ের আফসোসের কারণ সে !



বড় ভাই বাইরে থাকে।ছোট বোনেরও বিয়ে হয়ে গেছে।

কেউ বাবা মায়ের খোঁজ নেয় না ।এমনকি ঈদে আসা তো দুরে থাক ফোনও দেয় না ।



সঞ্চিতা সংসার চালায়।বাবা মাকে নিয়ে বাইরে যায় বেড়াতে।

এখন বাবা মার অনেক বয়স হয়েছে।খানিকটা শিশুদের মত।সঞ্চিতা শাসন করে তাদের।

জীবণের শেষ পর্যায়ে এসে অন্তত পরিবার কে নিজের মত পায় মেয়েটা।



আটত্রিশ বছর বয়স তার।বিয়ে হয়নি।অনেক অপবাদ আর কানাঘুষা চলে তাকে নিয়ে।

মেয়েটা থামতে চায়নি ।

থামেও নি!



আর হ্যাঁ সে গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছিলো।কারণ কেউ শেষপর্যন্ত অলিম্পিয়াডের প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি সঞ্চিতা ছাড়া।

সে প্রথম দ্বিতীয় বা তৃতীয় কোনটাই হয় নি।

কিন্তু সেদিনের পরীক্ষায় সে নিজেকে প্রমান করেছিলো।



মেয়েটা কখনো কারো ভালোবাসা পায়নি ,হয়তো সে কখনো চায়নিও কারো ভালোবাসা কিন্তু সে সুযোগ চেয়েছে বাঁচার জন্য।



সবার কাছে কালো একটা মাংসপিন্ড ছিলো সে।

কিন্তু

তার একটা সন্তানের শখ ছিলো।

ইচ্ছে ছিলো তার একটা মেয়ে হবে।অনেক স্বপ্নই দেখতো একসময়।



বাবা মা মারা যাওয়ার পর একাই থাকতে শুরু করে।

এতিমখানা আর বৃদ্ধাশ্রমগুলোতেই সময় কাটাতে ভালোবাসতো সে!

কিন্তু তার কষ্ট একটাই ।

কেউ কোনদিন তাকে মা বলে ডাকবে না।



শরীরের রঙটাই মেয়েদের সব।শিক্ষিত মেয়ের চেয়ে সুন্দর ফর্সা মেয়েই নজর কাড়ে আমাদের ।কালো মেয়েগুলোকে নিয়ে কেউ স্বপ্ন সাজায় না।চোখ ফিরিয়ে নেয়।

ভালোবাসা চায় না তারা।

শুধু তাদের চোখের করুণ আকুতি বলতে থাকেঃ

আমিও মানুষ !!!



লিখাঃ কাব্যপ্রেমী রিফাত ।।



[জানি খুব কম মানুষ লেখাটা পড়বে।শেষে হয়তো বলবে রাবিশ।তবু খুব লিখতে ইচ্ছে করছিলো।]

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৯

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: কে বলেছে ভাই, শেষে হয়তো বলবে রাবিশ?

আমার কাছেতো খুব ভালো লেগেছে, হৃদয় ছোয়া…হয়তো খুব সাদামাটা লেখনী, ঠিক গল্পের সঞ্চিতার মত… এমন আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম। শুভকামনা জানবেন।

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০০

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: কে বলেছে ভাই, শেষে হয়তো বলবে রাবিশ?

আমার কাছেতো খুব ভালো লেগেছে, হৃদয় ছোয়া…হয়তো খুব সাদামাটা লেখনী, ঠিক গল্পের সঞ্চিতার মত… এমন আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম। শুভকামনা জানবেন।

৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৪

আলম দীপ্র বলেছেন: সমাজের এই নিচু দৃষ্টির বিরুদ্ধে কি করা যায় বলেন তো ! আমার খুব ইচ্ছা হয় , যদি একটা বর্ণহীন পৃথিবী থাকত । কোনও রঙই দেখতাম না !

৪| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪৫

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: সামুতে স্বাগতম!!! যদিও একটু দেরি হয়া গেছে!!!

৫| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৩

বাংলার পাই বলেছেন: স্যার যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেনঃ অলিম্পিয়াড বানান জানিস ?
সঞ্চিতাঃ স্যার আমি পারবো !

আগের কথায় অন্যরা হেসে উঠতেই স্যার আরো একটু উত্‍সাহ পেলেন।বিশেষ করে জারিনের চোখে চোখ রেখে বলতে লাগলেনঃ আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছিস কখনো?তোকে দেখলেই তো সব জ্ঞান হারাবে ! তুই তো পারবিই বটে !
---------------কোন শিক্ষক তার ছাত্রীকে তার গায়ের রঙ এর জন্য এমন কথা বলতে পারে বলে আমার মনে হয় না।

হয়তো অবহেলা করতে পারে। কিন্তু সরাসরি এমন বলবে বলে মানতে পারি না।
শরীরের রঙটাই মেয়েদের সব।শিক্ষিত মেয়ের চেয়ে সুন্দর ফর্সা মেয়েই নজর কাড়ে আমাদের ।কালো মেয়েগুলোকে নিয়ে কেউ স্বপ্ন সাজায় না।চোখ ফিরিয়ে নেয়। --------------------আমাদের সমাজের নির্মম নিয়ম এমনই। স্বভাবের ভালো মন্দ বিচার না করে দেখতে কেমন তাই নিয়ে মাথা ঘামানোই চলে।

গল্প চমৎকার লেগেছে। শুভেচ্ছা রইলো।

৬| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০২

কালীদাস বলেছেন: লেখাটা আমার ভাল লাগছে। চালায়া যান :)

৭| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৬

কালীদাস বলেছেন: লেখাটা আমার ভাল লাগছে। চালায়া যান :)

৮| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২৫

কলমের কালি শেষ বলেছেন: বাস্তবতা অনেক কঠোর ।আমার মনে হয় এর সমাধান নেই ।কারন যেখানে ঘরের আপনজনেরাই দূরের লোক হিসেবে দেখা দেয় সেখানে বাহিরের লোক এর আর কি করার আছে । সমাধানহীন অংক । :(

৯| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১৩

মনের গহীনে বলেছেন: অসাধারন

১০| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩৪

কাব্যপ্রেমী রিফাত বলেছেন: আসলে অন্যজনের কাছে ফোকাস হতে গিয়ে করে অনেক শিক্ষক । খানিকটা বাস্তব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছি @পাই

১১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩৫

কাব্যপ্রেমী রিফাত বলেছেন: কখনো না আসার চেয়ে দেরি করা ভালা । #বর্ষন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.