![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের বন্ধু সাব্বিরের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে দুঃখটা আমিই পেয়েছিলাম সবচেয়ে বেশি। কারণ আমি তার বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে কাছের ছিলাম। তাছাড়া তার সাথে আমার বেশকিছু মিল ছিল। আমরা দুজনেই ক্রিয়েটিভ কাজের পাগল ছিলাম। এই যেমন লেখালেখি, কবিতা আবৃত্তি, গান- বাজনা, ছাবি আঁকা,নাটক তৈরী, বিভিন্ন রকমের সামাজিক সংগঠন করা- এইসব কাজে লেগে থাকতাম সারাক্ষণ। ভবিষ্যতে করার মতো দুজনের অনেক বড় বড় পরিকল্পনাও ছিল। তার মৃত্যুতে আমাদের পরিকল্পনাগুলি যে মাঠে মারা গেল এটা বলা বাহুল্য। ফেসবুক, মোবাইলের এই যুগে ক্রিয়েটিভ লোকজনের সাক্ষাৎ পাওয়া খুবই কঠিন- এটা আমার অজানা নয়। তাই মনটা আমার হুট করেই ভীষন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমি কিছুতেই তার এই অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই সাব্বিরে মৃতদেহটা কিডন্যাপ করার উদ্ভট পরিকল্পনাটা আমারই। হতে পারে আমার বন্ধুরা এ কাজে সাহায্য করেছিল। তবে তারা সেটা করেছিল তাদের নানা রকমের পুরস্কারের প্রলোভন দেখানোর পরে তবেই। আবার কিডন্যাপ শেষে পুরস্কারের আশা না করে পগার পার হয়েছে সাথে সাথেই। ভয়ে এখন আর তারা আমার আর সাব্বিরের মৃতদেহের কাছেও ঘেঁষবে না আশা করি। সেটা অবশ্য আমার আর দরকারও নেই। বাকি কাজটা আমি নিজেই করে নিতে পারব ঠিক।
কিডন্যাপের পর সাব্বিরের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাতটা বেশ হৃদয় বিদারক। সাব্বিরকে বিছানায় শুইয়ে হাত-পা শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধলাম। যদিও একটা মৃতদেহের ক্ষেত্রে এহেন সতর্কতা অবলম্বনের কোন প্রয়োজন ছিল না। তবু কাজটা করলাম কিডন্যাপ আবহটাকে একটু ভয়াবহ রূপ দেয়ার জন্য। তারপর মুখের মুখশটা খুলে যখন সাব্বিরের পাশে চেয়ার টেনে বসলাম সাব্বির চমকে উঠল।
কায়েস! এটা তুই! শেষ পর্যন্ত তুই আমার বন্ধু হয়েও আমাকে এভাবে কিডন্যাপ করলি। কিভাবে করলি এটা?
তোর ভালর জন্যই করলাম দোস্ত। চিন্তা করিস না।
ভালর জন্য! ভালর জন্য কেউ কিডন্যাপ করে বুঝি! তুই জানিস এখন আমার বাবা-মা, বউ কতো চিন্তা করছে। তারা কতই না জানি কান্না করছে! আমার সদ্য বিবাহিত বউটা...
সাব্বিরের কান্না দেখে আমার ভীষন হাসি পেল।
হাহাহাহাহা! ধুর! ডেড বডির জন বেশিক্ষণ কাঁদে না কেউ- এটা জানিস না? তুই যদি জীবন্ত থাকতি, তাহলে না হয় একটা কথা ছিল।
তুই কী চাস? সত্যি করে বলতো, তুই কী চাস? কত টাকা চাইছিস বাবার কাছে, আমাকে বল সেটা।
টাকা! তোর জন্য আমি টাকা চাইবো? তুই কি করে ভাবলি একটা মৃতদেহের জন্য তোর বাবা টাকা খরচ করবেন? তুই কি মরা হাতি? মানুষ তুই, মানুষ। একটা মৃত মানুষ। মৃত মানুষের কোন দাম নাই।
তাইলে তুই কী চাস? খুলে বল। কেন আমাকে এভাবে ধরে নিয়ে এলি?
আমি কী চাই? আমি তোর ভাল চাই, ভাল। আমি তোকে আবার আগের মতো জীবিত করে তুলতে চাই।
তুই কি সৃষ্টিকর্তা নাকি যে আমাকে জীবিত করিব? তুই কিভাবে করবি? দেখ কায়েস, এমন পাগলামি করিস না। ছেড়ে দে আমায়। আমাকে মরে যেতে দে। মরে গেলেই শান্তি। চির শান্তি। কোন চিন্তা নাই, ভাবনা নাই। আমাকে আমার মতো করে থাকতে দে প্লিজ। তোর পায়ে পড়ি। তুই বুঝিস না কেন, সবাইকে তো মরতে হয়ই। মরণ মানুষের ভবিতব্য।
চুপ! তুই চুপ মেরে থাক। তোকে কিভাবে জীবিত করে তুলতে হয় সেটা দেখা আমার কাজ। তুই শুধু চুপ থাক। কোন কথা বলবি না। দাঁড়া, তুই এভাবে চুপ হবি না। আমি বরং তোর মুখে স্কচ টেপ সেঁটে দিই।
অামি সাব্বিরের মুখে এমন ভাবে স্কচটেপ মেরে দিলাম যাতে সে হাজারো চেষ্টায় আর মুখ খুলতে না পারে।
দ্বিতীয় দিন থেকে কাজ শুরু করলাম। কাজটা শুরু করতে হবে চোখ থেকে। সাব্বিরের চোখ দুটো কোটর থেকে বের করে নিলাম। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে সেগুলো রেখে দেখলাম, যা ভেবেছিলাম তাই। সেখানে খালি টাকার ছবি। নতুন সরকারি চাকরি পাওয়া ছেলে। এতোগুলো টাকা খরচ করে ডাক্তার হয়েছে। তার চোখে টাকার ছবি থাকাটই স্বাভাবিক। তবে আমি তো পারি না বন্ধুর চোখটা এভাবে নষ্ট হতে দেখে চুপ করে থাকতে। আমারও তো একটা দায়িত্ব-কর্তব্য আছে। আমি তার চোখ দুটি ভাল করে ধুঁয়ে নিলাম। শুধু হুইল পাউডার এখন আর কাজ করে না। সবকিছুতেই ভেজাল। তাই সাথে সার্ফ এক্সেলও মেখে ভাল করে চোখ দুটি পরিষ্কার করে আবার সেগুলো অনুবীক্ষণে রাখলাম। এই তো! হয়েছে! এখন চোখ দুটি একেবাওর ধবধবে সাদা। আর কোন ময়লা নেই চোখে। এখন ঠিক আছে। চোখ দুটি এখন ঠিক একটা সদ্য জন্মানো শিশুর চোখের মতোই পরিষ্কার হয়ে দেখাচ্ছে। এখন অবলীলায় চোখ দুটোর আরো বিশ-বাইশ বৎসর সুস্থতায় কেটে যাবে। মানুষের চোখে টাকার ছবিটা একটু দেরীতেই আসে।
তার পরদিন আবার বসলাম মৃতদেহটা নিয়ে। এবার নাক কেটে গন্ধ শুকলাম। উমমম.,.একটা নারীর মিষ্টি মধুর গন্ধ লেগে আছে তাতে। নিশ্চয়ই তার সদ্য বিবাহিত অপরূপ রূপসী বউটার গন্ধ এটা! পুরষগুলো যে কি! বিয়ের পরই নারীদের গন্ধ নাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো শুরু করে! কিভাবে যে পারে! তাইতো আমি বিয়েই করলাম না এখনো। সাব্বিররা বুঝেই না যে নারীর গন্ধটাই একমাত্র কাম্য হতে পারে না। আরো অনেক অনেক সুগন্ধ রয়েছে জীবনে। আকাশ থেকে নেমে আসা বর্ষার বৃষ্টির শীতল গন্ধ, সোঁদা মাটির উষ্ণ গন্ধ, খেটে খাওয়া মানুষের ঘামের মিষ্টি গন্ধ, ভোকাট্টা হয়ে উড়া বেগুনি রংয়ের ঘুড়ির মুক্তির গন্ধ- কতোই না গন্ধ রয়েছে নাকে লাগিয়ে বেড়ানোর- এটা অবশ্যই সাব্বিরকে বুঝাতে হবে। নাক থেকে তাই তার অলফেক্টরি সেন্সরি নিউরনটি কেটে দিলাম এক ঝটকায়। কিছুদিন সে কোন গন্ধই আর পাবে না। তবে ভয়ের কিছু নাই। প্রকৃতি নিজে থেকেই আবার ঘ্রাণ নেয়ার এই নিউরনটি সাব্বিরের নাকে তৈরি করে দেবে নিশ্চয়ই।
তৃতীয় দিন সাব্বিরের বুক কেটে হৃদপিন্ডটা বের করলাম। এখানেও দেখি একটা মেয়ের ছবি ঝুলে আছে। কে এই্ মেয়ে? একে তো কখনো দেখিনি। সাব্বির কখনো তো আমাদের এর কথা বলেনি! তবে কি এ মেয়েটি সাব্বিরের গোপন কোন প্রেমিকা? মেডিকেলে পড়ার সময় অবশ্য তাকে অনেকেই দেখেছি ক্লাসে স্যারের লেকচার শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তে। তখন আমাদের কেউ কেউ ঠিক ঠিক ভেবে নিয়েছিল নিশ্চয়ই রাত জেগে মোবাইল কথোপকথোনের জন্য সকালে লেকচার ফাঁকি মারার এমন কৌশল অবলম্বন সাব্বিরের। ভাল ছাত্র হওয়ায় সাব্বিরকে একথা জিজ্ঞেস করার সাহস হয় নি আমাদের। সাব্বিরও নিজ থেকে কখনোই বলে নি। তাহলে দোস্ত কাহিনী তবে এটাই ছিল, না? এভাবে তো হবে না সাব্বির। এভাবে হতে পারে না। মেয়েদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা অঙ্গের ভেতর সঙ্গোপনে জায়গা করে দিলে এভাবেই তো অকালে ঝরে পড়তে হবে তোমাকে। তোমার তো অকাল মৃত্যু হবার কথাই। নাহ! এ মেয়ের ছবি কিছুতেই এখানে রেখে দেয়া চলবে না। এটাকে খুন করে এখনি কেটে ফেলে দিতে হবে। তাই করলাম। সাব্বিরের হৃৎপিন্ডের ভেতরকার নাম না জানা সেই মেয়েটিকে ধারালো একটা ছুরি দিয়ে হত্যা করে হৃৎপিন্ড থেকে আলাদা করে দিলাম। তারপর সাধারন মেহনতি মানুষের কিছু ছবি, দেশের কিছু ছবি, এ সমাজের কিছু ছবি, কিছু শিল্পীর কিছু চিত্রকর্ম, বিখ্যাত নাট্যকারদের কিছু নাটক, সত্যজিতের কিছু মুভি, মার্কেজ সহ নামী-দামী অনেক সাহিত্যিকের কিছু লেখা তার হৃৎপিন্ড চিঁড়ে ভেতর ঢুকিয়ে সেলাই করে দিলাম ভালমতো।
চতুর্থ দিন শেষ কাজ। সাব্বিরের মস্তিষ্কটা দুভাগ করে নিলাম। তারপর মাথার সাথে নাক, চোখ আর হৃৎপিন্ডের সংযোগটা পুনঃস্থাপিত করে দিলাম ভাল করে।
কিডন্যাপের পঞ্চম দিন সাব্বিরের সব বাঁধন খুলে দিলাম।
দোস্ত, আমি কি বেঁচে আছি?
হ্যা, এই মুহুর্তে আশা করি তুই বেচে আছিস। আমার মিশন সাকসেসফুল হবে আশা করি।
তবে আমাকে ছেড়ে দে না এবার। কতোদিন বাড়ি যাই নি।
তুই যদি আমাকে কিছু কথা দিস, তবেই ছেড়ে দেব তোকে।
কী কথা।
আগে বল তুই রাজী কি না।
হ্যা দোস্ত, হ্যা। আমি রাজী।
বল, টাকা রোজগারই তোর একমাত্র উদ্দেশ্য হবে না। তুই আগে যেমন করে সমাজ, দেশ নিয়ে ভাবতি, এখনো তাই ভাববি।
ওকে দোস্ত তাই হবে।
শুধুমাত্র কাজ অার পরিবারকে সময় না দিয়ে, এ সমাজের জন্য, এ জাতির জন্য, এ দেশের জন্য তোর আরো কিছু কাজ কারার আছে। সেগুলি করবি।
করব।
তোর প্রিয় সব পাঠক, যারা তোর লেখার পড়ার জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে, তাদের জন্য আগের মতো গল্প লিখবি।
লিখব। কথা দিচ্ছি দোস্ত।
গরিব রোগীদের কাছ থেকে কোন ভিজিট নিবি না।
না, নেব না।
আমাদের একটা লাইব্রেরি করার শখ ছিল।
অবশ্যই সেই শখটা পূরণ করব।
আমাদের ম্যাগাজিনটা সম্পাদনা করা ছেড়ে দিবি না। আগের মতোই সময় দিবি।
দেব দোস্ত, দেব। এবার আমায় ছেড়ে দে প্লিজ!
ওকে। থ্যাংকস। এবার তুই যেতে পারিস।
সাব্বির হাত বাড়িয়ে দিল। হাত ধরে তাকে টেনে তুললাম।
দরজা খুলে দিলাম।
যাই দোস্ত।
ওকে যা। সাবধানে বুঝে শুনে পথ চলিস। নয়তো আবার মরে যাবি।
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৬
কয়েস সামী বলেছেন: আবারো চমৎকার মন্তব্য পেলাম। অনেক ধন্যবাদ।
২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৭
আরজু পনি বলেছেন:
বাহ্ আপনার ভাবনাটা খুব ভালো লাগলো ।
লেখকরা, গল্পকাররাই এভাবে সমাজকে বদলে দিতে পারে ।
অনেক শুভেচ্ছা রইল।।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫১
কয়েস সামী বলেছেন: অনেক দিন পর!! বেশ ভাল লাগছে এতো দিন পর আপনাকে পেয়ে!
আচ্ছা, আপনি আগের মতো ফ্রি হবেন কবে?
৩| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৩
আরজু পনি বলেছেন:
নিজের কাজ ফাঁকি দিয়ে যদি পারি তবেই সম্ভব ।
তবে কাজ কিছু কমলে আবার ব্লগে নিয়মিত হ্ওয়ার ইচ্ছে আছে।
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪৭
কয়েস সামী বলেছেন: তাত্তাড়ি কাজ কমান!
৪| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৮
এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
ভাল লেগেছে।
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪৮
কয়েস সামী বলেছেন: অাপনি কি বেঁচে আছেন?!
৫| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২৩
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: আহা! এভাবে যদি হত! যদি পারা যেত শুদ্ধ হতে! অথবা করতে!
+++++++++
ইন্টারেস্টিং কনসেপ্ট।
ভালো থাকবেন
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪৯
কয়েস সামী বলেছেন: অপূর্ণকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!
৬| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:০১
জাফরুল মবীন বলেছেন: চমৎকার গল্প!
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:০৪
কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৪
মামুন রশিদ বলেছেন: আইডিয়াটা ভালো লেগেছে । শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে যদি মানুষের মনে সুচিন্তা ঢুকিয়ে দেয়া যেত, কতোই না ভালো হতো!
চমৎকার গল্পে ভালোলাগা++