নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি বর্ণনামূলক গল্প: দুই জীবন

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৬ সকাল ৭:৫৯

তাদের বিয়ের সময় রাহী ছিল তারুণ্যে ভরপুর উচ্ছল এক যুবক। হ্যান্ডসাম, সুপুরুষ ও এলাকার সকল তরুণীর স্বপ্ন-পুরুষ। অন্যদিকে নাদিয়া ছিল যথেষ্ট সুন্দরী ও শিক্ষিতা। এলাকার সকল উঠতি বয়সী যুবক তার বাসার সামনে জড়ো হতো প্রতিদিন বিকেলে অন্তত একবার তাকে দেখে নিজের ব্যাকুল মনটা জুড়ানোর জন্য। রাহী ছিল ব্যাংকার আর নাদিয়া ছিল শিক্ষক। নাদিয়াদের স্কুলের একটা অনুষ্ঠানে তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। তারপর থেকেই তাদের প্রেম এবং এক বছরের মাথায় বিয়ে। প্রেম ও বিয়ের প্রথম পর্বে তারা দুজন একে অন্যকে মুগ্ধ করার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকতো অহর্নিশ। কে, কাকে, কিভাবে সারপ্রাইজ দিবে- সে চেষ্টায় মরিয়া থাকতো তারা। তাদের জুটি ছিল ইর্ষা করার মতো। ভালবাসা, সুখ ও আনন্দে ভরা ছিল তাদের জীবন।

এক বছর পরের কথা।
রাহী তার অফিসের সবার কাছে চমৎকার এক মানুষ। সে অফিসে চুপচাপ থাকে, কারো সাথে ঝগড়া ফ্যাসাদে যায় না, অন্যের কাজে সবসময় সাহায্য করার চেষ্টা করে। অফিসে অনেকক্ষণ কাজ করে সে। অনেক সময় অন্য সহকর্মীরা বের হয়ে গেলেও তার কাজ থেকে যায়। অনেক দেরীতে বাড়ি ফিরে সে। বাড়ি যখন ফেরে তখন সে থাকে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। তাই এ সময়টা সে বিশ্রাম নিতে চায়। সে টিভি দেখে। বিশেষ করে খেলার চ্যানেলগুলো তার প্রিয় চ্যানেল। নাদিয়ার প্রতি এখন আর সে আগের কোন আবেগ টের পায় না। এক বছর সংসার করে সে ঠিক বুঝে নিয়েছে একজন আদর্শ স্ত্রীর কোন গুণাবলীই নাদিয়ার নেই। তার মতে একজন আদর্শ গৃহিণী তার স্বামীর দেখাশুনা করে ঠিকমতো, স্বামীর ভাল লাগার কাজগুলো করার চেষ্টা করে। সে বুঝতে পারে তাদের বিয়েটা ধীরে ধীরে ব্যর্থতায় পর্যবশিত হয়ে পড়ছে। সে তবু নিজেকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে। যা হবার তা তো হয়েই গেছে। নাদিয়ার চিন্তা সে মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে চায়। এজন্য সে মনের অজান্তেই নিজের একটা আলাদা জগত তৈরী করে। বাড়ি ফিরে সে টিভিতে খেলা দেখে, নিউজ চ্যানেল দেখে, পত্রিকা পড়ে। নিজেকে কেমন লাগছে সেদিকে আর মন দেয় না তেমন, নাদিয়ার সাথে কথা বলার সময় আগের সেই আবেগটাও আর প্রকাশ করে না। রোবোটিক একটা জীবন যাপন করতে করতে একসময় তার মনে হতে থাকে, সে যেন একটা খাঁচায় বন্দী হয়ে আছে। খাঁচা থেকে বেরুবার কোন উপায় জানা নেই তার।
তারপর সেই খাঁচা থেকে মুক্তি পেতে সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। সে স্বপ্ন দেখে নাদিয়া আসলেই তার আদর্শ স্ত্রী- কোমল, মোলায়েম, কেয়ারিং, সবসময় তার জন্য অপেক্ষারত- সত্যিকারের এক জীবনসঙ্গী । স্বপ্নটি তার জন্য দ্বিতীয় বাস্তব আাকারে ধরা দেয়। সে দুটি পৃথিবীতে বসবাস করা শুরু করে।

অন্যদিকে, নাদিয়ার পরিচিতজনরাও নাদিয়াকে চমৎকার এক মানুষ বলে মনে করে। অফিসে সে খুব মিশুক প্রকৃতির। ছাত্র-ছাত্রীরাও তাকে খুব পছন্দ করে। বাড়ি ফিরে সে গান শুনতে শুনতে বই পড়তে থাকে। রাহীর কথা মনে পড়লেই তার মনটা ভেঙে যায়। বুকের ভেতরটা কেমন জানি শুণ্য হয়ে যায়। তার মতে, একজন আদর্শ স্বামীর হওয়া চাই যথেষ্ট স্মার্ট, উদ্যমী ও কেয়ারিং। কিন্তু রাহীর এসব গুণ নাই বললেই চলে। তাই বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই নাদিয়াও বুঝে ফেলে তাদের বিবাহিত জীবনটা ধীরে ধীরে স্থবির ও বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। কিন্তু তবু সে মানিয়ে চলার চেষ্টা করে এবং অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকে। এ জটিল অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য সে নিজের পৃথিবীতে ডুব মেরে থাকে সারাক্ষণ। রাহীর মতো করে নাদিয়াও একসময় আর নিজের পোশাক, সাজগোজে আর মনোযোগ দেয় না। কী বললে, বা কী করলে রাহী খুশি হবে সেদিকেও কোন মনোযোগ থাকে না তার। একসময় তার মনে হয়, তার খুব করে মনে হয় সে আর খাঁচায় বন্দী একটা পাখির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

এবারে আসা যাক রাহীর দৈনন্দিন জীবনে। রাহী খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে। নিজেই নিজের নাস্তা তৈরী করে। তারপর পত্রিকা পড়ে এবং অফিসে যাবার সময় হলে তৈরী হয়ে রওনা দেয়। সন্ধ্যাবেলাটাও প্রায় একই রকম কাটে। বেশ দেরী করে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। যদি তখনও নাদিয়া রাতের খাবার তৈরী না করে থাকে, সে নাদিয়াকে কাজে সাহায্য করে। তারপর রাতের খাবার শেষে নাদিয়া যখন ছাত্রদের খাতা দেখে তখন সে টিভি চালিয়ে দেয়। কখনো সে খেলা দেখে, বা কখনো খবর শুনে, কালেভদ্রে কোন বাংলা নাটক দেখে সময় কাটিয়ে দেয়।
মাঝে মাঝে রাহী মনে মনে বলতে থাকে, ইশ! যদি মনের মতো একটা বউ পেতাম! কোন সুন্দরী তরুণী দেখলে সে খুব চমৎকৃত হয় এবং নাদিয়ার সাথে তুলনা করা শুরু করে।
সেই সাথে রাহীর স্বপ্ন দেখাও চলতে থাকে। স্বপ্নে সে ঘুম থেকে জেগে দেখে টেবিলে সকালের নাস্তা তৈরী করে হাসিমুখে নাদিয়া বসে আছে। অপেক্ষা করছে তার ঘুম ভাঙার। চোখ খোলা মাত্রই নাদিয়া দৌড়ে এসে হাত ধরে রাহীকে উঠে বসতে সাহায্য করে। রাহী নাদিয়ার চুলে আলতোভাবে স্পর্শ করে। দুজন একসাথে বসে নাস্তা করে। নাদিয়া রাহীকে পোশাক বাছাই করে দেয়। তৈরী হবার পর রাহী নাদিয়াকে চুমু দিয়ে বিদায় নেয় অফিসের উদ্দেশ্যে। অফিস শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলে নাদিয়া দরজা খুলে দেয়। সে ঠিক বুঝতে পারে, নাদিয়া এতোক্ষণ ধরে তার ফেরার অপেক্ষায় ছিল। তাকে তখন খুব কোমল ও মোলায়েম বলে মনে হয়। তার মতো মিষ্টি মেয়ে এ পৃথিবীতে নিশ্চয়ই অনেক কম আছে। রাহী নিজেকে বেশ ভাগ্যবান বলে মনে করে। তারা সন্ধ্যায় চা খেতে বসে অনেকটা সময় কাটিয়ে দেয় সারাদিনের কাজ নিয়ে গল্প করতে করতে। রাতে দুজন একসাথে রাতের খাবার তৈরী করে আর খাওয়া শেষে দুজন একসাথে টিভি দেখে গল্প করে কিছুটা সময় কাটিয়ে তারপর ঘুমাতে যায়। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে তারা ঘুমিয়ে পড়ে।

বাস্তবে কিন্তু ঠিক তা ঘটে না। নাদিয়া বেশ দেরী করে ঘুম থেকে উঠে। তার স্কুল দেরীতে শুরু হয়। রাহী আগেই চলে যাওয়ায় নাদিয়া নিজের জন্য সকালের নাস্তা তৈরী করে তারপর স্কুলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সন্ধ্যায় অবশ্য নাদিয়া আগেই ঘরে ফেরে। মাঝে মাঝে যখন রাহী অফিস থেকে ফিরতে দেরি করে নাদিয়া একাই তার রাতের খাবার সেরে নেয়। মাঝে মাঝে যখন একসাথে খেতে বসে, খুব প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া আর কোন কথা হয় না তাদের। রাতের খাবার শেষে নাদিয়া ছাত্রদের খাতা নিয়ে বসে এবং তারপর বই পড়ে। বই পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে সে টের পায় না।
মাঝে মাঝে সে ভাবতে থাকে, ইশ! যদি মনের মতো একটা বর পেতাম, কতোই সুন্দর না হতো আমাদের সংসার। সে অন্য পুরুষদের বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। আকর্ষণীয় কারো সাথে দেখা হয়ে গেলে সে রাহীর সাথে তার তুলনা শুরু করে। এতে রাহীর ত্রুটিগুলো আরো প্রকট হয়ে ধরা পড়ে। নাদিয়ার কষ্ট শতগুণ বেড়ে যায়।
মাঝে মাঝে নাদিয়াও স্বপ্ন দেখে। সে স্বপ্ন দেখে দুজন একসাথে সকালের নাস্তা সারছে। নতুন স্যুটটাতে রাহীকে যেন ঠিক রাজকুমার বলে হয় তার। এমন সুপুরুষ আর কটা আছে! তার কোম্পানিটা কেন যে তাকে এমডি করে দেয় না এটাই সে ভাবে। চা খেতে খেতে দুজন সারাদিনের কাজ সম্পর্কে জানে এবং পারিবারিক কিছু কাজ দুজন মিলে ভাগ করে নেয়। রাহী চলে যাবার পর আশেপাশের সবকিছু কেমন যেন মলিন হয়ে যায়। সন্ধ্যায় নাদিয়া অধীর হয়ে রাহীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। রাহী আজ কী ফুল নিয়ে আসবে তার জন্য ভাবতে ভাবতে সে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ে। রাহীর পায়ের ছাপ বারান্দায় শুনা মাত্র দৌড়ে গিয়ে নাদিয়া দরজা খুলে দেয়। রাহীকে কি যে সুন্দর দেখায় তখন! এমন লোককে সঙ্গী হিসেবে পেয়ে নাদিয়া নিজেকে খুব ভাগ্যবতী বলে মনে করে। তারা সেই সন্ধ্যায় অনেকক্ষণ বসে গল্প করে।


তারপরই অসম্ভব বিষয়টা ঘটে। রাহী একসময় স্বপ্নকে বাস্তব থেকে আর আলাদা করতে পারে না। সে স্বপ্নকেই বাস্তব বলে মনে করা শুরু করে। অফিস থেকে ফেরার সময় তার মনে হয় নিশ্চয়ই তার বউটা তার জন্য অপেক্ষা করছে বাড়িতে। এটা ভেবে সে সত্যি সত্যিই একটা ফুলের দোকানে দাড়ায়, দোকানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফুলের তোড়াটা কিনে ফেলে এক লহমায়। বাড়িতে প্রবেশের আগে সে গাড়ির আয়নায় তাকিয়ে নিজের চুল ঠিক করে নেয়। তারপর দৃঢ় পায়ে সে দরজায় পৌছে।

নাদিয়ার মনেও একই রকম ঘটনা ঘটে যায়। সে তার স্বপ্নটাকেই বাস্তব বলে মনে করতে থাকে। সে কাজ শেষে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এবং রাহীর আসার অপেক্ষা করতে থাকে। এক ফাঁকে গিয়ে সামনের বাগান থেকে এক গোছা ফুল এনে বসার ঘরের ফুলদানিতে রাখলে বসার ঘরটা কেমন জানি সজীব হয়ে ওঠে। স্বামীর জন্য তার প্রিয় নাস্তা তৈরী করে রাখে। নিজেকে পরিপাটি করে নেয়, যতটুকু সম্ভব। বাড়ির বাইরে যখন গাড়ির শব্দ শুনতে পায়, আয়নায় নিজেকে এক ঝলক দেখে নেয় সে। ডেস্কটপে গান ছেড়ে দেয়, এসো নীপবনে, ছায়া বীথি তলে এসো করো স্নান... তারপর দরজা খুলে দেয়...

একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে তারা- স্বপ্নটাকে বাস্তবে অনুভব করার জন্য, জীবনের উচ্ছল আনন্দ আবার উপভোগ করার জন্য, ভালবাসাটুকু বুঝে নেয়ার জন্য, নিজের ভালবাসার মানুষটাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য। আহ! আজি কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। প্রথমে তারা কোন কথা বলতে পারে না। রাহী নাদিয়ার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দেয় আলতো করে। নাদিয়া রাহীর হাত থেকে ব্রিফকেসটা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর দুজন এসে তাদের ছোট্ট ডাইনিং টেবিলে বসে,
-তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে নাদিয়া।
রাহীর কথায় নাদিয়া অবাক ও মুগ্ধ হয়ে বলে ওঠে, আমি তোমাকে ভালবাসি। অনেক ভালবাসি।
রাহীর ঠিক মনে পড়ে না শেষ কবে নাদিয়ার মুখে এ কথাগুলো শুনেছিল। খুব আনন্দ হয় তার। রাহীর চোখের দিকে তাকিয়ে নাদিয়া ব্যাপারটা বুঝে ফেলে। তীব্র আনন্দে তার মনটাও ভরে যায়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:২২

নাবিক সিনবাদ বলেছেন:

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:৩১

কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.