নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কী ভাবিয়া মনে এ দুটি নয়নে উথলে নয়নবারি-২য় পর্ব

১১ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:৫৯


৪.
প্রায় সকল প্রধান ধর্মগ্রন্থই আন্তঃধর্মীয় বিবাহের বিরূদ্ধে। আমাদের ধর্মগ্রন্থ কোরানে সুরা বাকারার ২২১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং মুমিন দাসী মুশরিক নারীর চেয়ে নিশ্চয়ই উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর, একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে।’ পরবর্তীতে যদিও সুরা মায়ীদার ৫ নং আয়াতের দ্বারা এ নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হয়েছে, ‘আজ তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো সব ভালো বস্তু এবং যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে, তাদের খাবার তোমাদের জন্য বৈধ এবং তোমার খাবার তাদের জন্য বৈধ। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের সাথে তোমাদের বিবাহ বৈধ।’ বলা হচ্ছে সচ্চরিত্র নারীটি আহলে কিতাবধারীদের কেউ হলে তাকে বিয়ে করা যাবে। আহলে কিতাবধারী বলতে তো বুঝায় কেবল খ্রীস্টান ও ইহুদী ধর্মের লোক যাদের উপর যথাক্রমে বাইবেল ও তাওরাত নাযিল হয়েছে। খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে আছে, ‘ কোনভাবেই অবিশ্বাসীদের সাথে মিলিত হওয়া চলবে না। কিসের জন্য ন্যায় ও অন্যায় একই সাথে থাকব? অথবা, আলোর সাথে অন্ধকারের কিসের সম্পর্ক? (কোরিন্থয়ান্স ৬:১৪)।’ হিন্দুধর্মে তো বর্ণের বাইরে বিয়ে করাটাই নিষিদ্ধ। ধর্মের বাইরে তো অসম্ভব প্রায়। তাহলে এটা দাঁড়াল যে, আমি মিস জয়ী দত্তকে বিয়ে করতে হলে,আমাদের দুজনের একজনকে তার ধর্ম ত্যাগ করতে হবে। আরেকটি উপায় অবশ্য আছে। সেটা হল, বিশেষ বিবাহ আইন ১৮৭২ অনুসরণ করা। এ আইন মতে, যে কনো ধর্মের লোকই তার ভিন্ন অন্য ধর্মের লোককে বিয়ে করতে পারবে। কিন্তু এখানেও সেই একই কথা চলে আসে। আগে প্রত্যেককে তার নিজ ধর্ম ত্যাগ করতে হবে, তারপর বিয়ে। ব্যক্তিগতভাবে এ দুটি উপায়ের কোনটিতেই আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্তু জয়ী তো রাজী হবে না। আমি খুব ভাল করে জানি, সে তার বাবা-মাকে কষ্ট দেয়ার মতো কোন কাজ কোনদিনই করতে পারবে না । সে আমাকে যতোই ভালবাসুক, বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে আমার কাছে সে কখনো আসবে না। একবার জয়ীর বাবা অসুস্থ হয়ে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেদিন আমার ইমার্জেন্সি ডিউটি। জয়ীর ভাই আমার ঘনিষ্ট বন্ধু, তার বাবার প্রতি এমনিতেই আমার আলাদা একটা দায়িত্ব বর্তায়। তাই প্রতি ঘন্টায় রোগীকে দেখতে আমি তাদের কেবিন ভিজিট করছি। রাত একটায় কেবিনে ঢুকে দেখি জয়ী জেগে আছে, দুইটায় গিয়ে দেখি তখনো জয়ী জেগে, তিনটার সময়ও একই দৃশ্য- ঘুমন্ত বাবার শিয়রে বসে পরম মমতায় সে তার বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। জয়ীকে বললাম, এখন তো কোন সমস্যা নেই। ঘুমিয়ে পড়। সে বলল, না আবীর ভাইয়া, বাবা সুস্থ হবার আগ পর্যন্ত আমার আর ঘুম হবে না। বাবার এ অবস্থার জন্য আমিই দায়ী। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন? সে জানাল, তার ভাই যে মুসলিম একটা মেয়েকে ভালবাসে আর তার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে এটা সে ঘটনাচক্রে তার বাবাকে জানিয়ে দিয়েছিল। তাই বাবা ভীষণ কষ্ট পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রাজের এ প্রেমের কথা আমি জানি। রাজকে মনে মনে এ প্রেমে সমর্থন দিয়ে এসেছি এটা ভেবে যে, রাজ যদি অন্য ধর্মের মেয়েকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় তবে আমার সাথে জয়ীর বিয়েতেও তার সমর্থন থাকবে। জয়ী আমাকে আরো বলল, আমি যেন তার ভাইকে জানিয়ে দেই বাবা-মা বেঁচে থাকতে ঐ মেয়েকে যেন সে বিয়ে না করে। বিয়ে করলে জয়ী আর তাকে ভাই বলে ভাববে না। কথাটা আমার বুকে এসে তীরের মতো বিঁধল। যে মেয়ে তার ভাইকে ভাই এর জায়াগা থেকে তাড়িয়ে দেবে সে মেয়ে নিজে কী করে একটা মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করবে? আর তাছাড়া জয়ী কি আমাকে পছন্দ করে? করে । অবশ্যই আমাকে সে পছন্দ করে। নয়তো সেদিন সে ও কথা বলতো না। সেদিন ছিল তার জন্মদিন। আমি তার জন্য মোটা একটা বই নিয়ে হাজির হলাম। আসলে চেয়েছিলাম, বিরাট সাইজের একটা ফুলের তোড়া তাকে উপহার দিব। ফুল সাধারণত প্রেমের উপহার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমি যদি ফুল নিয়ে যাই তাহলে কে কী ভাববে এটা ভেবে আর ফুল নিয়ে যাবার সাহস হল না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমি একট বই নিয়ে হাজির হলাম। সেদিন সবাই যখন গল্পে ব্যস্ত খুব, যখন কে কী করছে আলাদা করে আর কেউ খেয়াল করছে না, তখন জয়ী আমাকে বলে উঠল, আপানি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলেন, আবীর ভাই। আমি পুলকিত হয়ে বললাম, তাই নাকি? সে বলল, আপনার কথা শুনলেই যে কোন মেয়েই আপনার প্রেমে পড়ে যাবে। আরেকদিন আরেক বৈঠকে সে বলল, যে মেয়েটা আমার বউ হবে সে খুব ভাগ্যবতী হবে। আমার মতো কেয়ারিং মানুষ নাকি সে খুব কম দেখেছে। কথাগুলো আমাকে কতটুকু আনন্দিত করেছিল তা বলে বুঝাতে পারব না। এমন আরো অনেক টুকরো টুকরো ঘটনায় এটা আমার কাছে স্পষ্ট যে, জয়ী আমাকে ভালবাসে। আমি প্রপোজ করলে সে কখনই আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারত না, যদি...যদি আমাদের ধর্মটা আলাদা না হতো।

৫.
মাসুদ এসেছে। জয়ীর বিয়ের খবর দিলাম। মাসুদ আমার বন্ধু। জয়ীকে যে আমার ভাল লাগে তা শুধু মাসুদই জানে। নিজের প্রেমের খবর কাউকে জানাতে আমার ভাল লাগে না। কেবল মাসুদের সাথেই ব্যাপারটা শেয়ার করেছিলাম। মাসুদের সাথে দেখা হওয়ায় আমার ভেতরকার গুমোট ভাবটা কিছুটা কাটল অবশেষে। বরাবরই দেখেছি জয়ীর বিষয়ে কারো সাথে কথা বললে নিজের মনটা একটু হালকা হয়। এ দুঃসময়ে মাসুদের বাড়ি ফেরায় আমার জন্য বেশ ভাল হল। ছেলেবেলা থেকেই মাসুদ খুব সাহসী। সে বলল,
-আমি তোর ব্যাপারটা জয়ীকে জানিয়ে দেই আজ?
-কী বললি! খবরদার! এটা করতে যাবি না কখনো।
-কেন? করলে কী হবে? তোমরা দুজনই অ্যাডাল্ট। জয়ীও একটা চাকুরী করে। সে নিজেই নিজের ডিসিশন নিতে পারবে। সে হয়তো মনে মনে এতোদিন থেকে চাচ্ছে ত্ইু একটু খোলামেলা হ। সে নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে তোর কনফেশনের। তুই ব্যাপারটা কনফেস করলেই সে মুহুর্তে তোকে গ্রহণ করবে। তুই বল, আমি আজকেই জয়ীর সাথে দেখা করি।
-না! মাসুদ এ কাজ করিস না। আমি জানি জয়ী এমন মেয়ে না। জয়ী হয়তো আমাকে পছন্দ কওর, কিন্তু আমাকে সে বিয়ে করবে না। আমি জানি। সে তার বাবাকে কখনো কষ্ট দিতে পারবে না।
-তাহলে কী আর করা! বসে বসে তুই আঙ্গুল চোষ। আর আরেকজন এসে তাকে বিয়ে করে ফেলুক।
-জয়ী বিয়ে করে ফেলুক। আমি মেনে নিব। আমি তার ভাল চাই। ভাল হোক তার। কিন্তু মাসুদ, একটা ব্যাপারই আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। বিয়ের পর তো সে এখানে থাকবে না। সে চলে যাবে। অন্য কোথাও। দূওে কোথাও। তখন তার সাথে তো আর দেখা হবে না আমার। ওকে না দেখে যে আমি দীর্ঘদিন থাকতে পারি না রে!
-তাহলে এক কাজ করি চল।
-কী কাজ?
-ওর বিয়েটা ভেঙে দেই।
-ধুৎ! তুই এটা ভাবলি কী করে? নাহ! এ আমি পারব না।
-তাহলে তুই মর!

মাসুদ চলে গেল। মাসুদ রাগ করে চলে গেল। যবার আগে এ কী বলে গেল সে? তুই মর! আমাকে মরতে বলল সে! তাহলে তাই করব। মরেই যাব। মরে না গেলে এ কষ্ট থেকে আর মুক্তি পাব না আমি।
আমাকে মরে যেতে হবে। এক্ষুনি। কাদম্বিনী মরে গিয়ে প্রমান করেছিল সে মরে নি। আর আমি মরে গিয়ে প্রমাণ করব, আমি বেঁচে গেছি। মরে যাওয়াতেই বেচে যাওয়া!

কিন্তু মরে গেলে ওপারে কাকে নিয়ে থাকবো আমি? জয়ীকে তো পাব না ওখানে। মৃত্যুর পরে যদি জীবন থাকে? তাহলে সে জীবন কিভাবে কাটবে আমার? ধরা যাক মৃত্যুর পরে মানুষকে অন্য জীবনে চলে যেতে হয়। সে জীবনে মনটা গিয়ে প্রবেশ করে অন্যরকম কোন দেহের ভেতর। মন যেহেতু বেঁচে থাকল, সেহেতু যদি মনের মধ্যে জয়ীর সকল স্মৃতি থেকে যায়? তাহলে? তাহলে তো জয়ীও থেকে যাবে আমার মনের ভেতর। তখন আমি জয়ীকে কোথায় পাবো? আমি কি করে সে জীবনে বেঁচে থাকবো। সে জীবনে যদি মৃত্যু না থাকে? সে জীবনে যদি আত্মহত্যার কোন সুযোগ না থাকে? তাহলে? তাহলে কী হবে আমার? নাহ! তাহলে? কি করব আমি? মাসুদের কথাই কি ঠিক হবে? হ্যা মাসুদের কথামতোই চলব আমি। জয়ীর বিয়ে ভেঙে দিব। সিদ্ধান্তটা নেয়ার পর আমার বিছানার ডান দিকে রাখা আয়নায় তাকালাম আমি। মুখে আমার মুচকি ক্রুর হাসি দেখতে পেলাম। নিজেকে চিনতে বেশ কষ্ট হল। এ যেন অন্য এক আমি।
(চলবে)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৩৭

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুবই ব্যতিক্রমী একটা লেখা। গল্পের শুরুটাই ইন্টারেস্টিং!

পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি।

১২ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:০৫

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কা_ভা। প্রতিটা পর্ব শেষে আপনার সুচিন্তিত মতামত চাই। আপনার উপদেশ পেলে আরো ভাল করতে পারব আশা করি।

২| ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৭:০০

ছায়াপথের যাত্রী বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। পরের অংশের অপেক্ষায় রইলাম।

১৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:১৬

কয়েস সামী বলেছেন: পরের পর্ব দেয়া হয়েছে। গঠনমূলক সমালোচনা চাই।

৩| ১৭ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৭:৪৮

বিসমিকা সরকার বলেছেন: ভালোই লাগছে। ইন্টারেস্টিং

১৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:১৭

কয়েস সামী বলেছেন: সাথেই থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.