নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কী ভাবিয়া মনে এ দুটি নয়নে উথলে নয়নবারি-৩য় পর্ব

১৫ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৬


৬.
-বাবু, ভেতরে আসি?
আমার মা। আমার মা আমার রুমে ঢুকতে অনুমতি চান! বাবাও চান অবশ্য। তাদের মধ্যে এ পরিবর্তনটা খেয়াল করেছি আমি বিসিএস কমিপ্লিট করার পর থেকে। উনাদের ছেলে যে এখন ডাক্তার! ডাক্তার হয়েছি বলে তো কী হয়েছে? আমি ডাক্তার না হয়ে শিক্ষক বা কেরানী হলে কি এমন করে অনুমতি চাইতেন? মনে হয়, না। বড় ভাইয়া তো ব্যবসা করে। টুকটাক টিউশনি করে। তার রুমে ঢুকতে তো বাবা-মাকে কখনো অনুমতি নিতে দেখি না। তাদের এ ব্যাপারটা আমার একদম পছন্দ না। ডাক্তার হয়ে কি তাদের থেকে দূরে চলে গেলাম? মনে হয় একদিন রাগ করে বলেই ফেলি, তোমরা এখন আর আমাকে তোমাদের ছেলে ভাবো না, আমাকে তোমরা ডাক্তার ভাবো, কেবলই একজন ডাক্তার ভাবো। কষ্ট পাবেন ভেবে, কথাগুলো বলা হয় না।
-কী ব্যাপার মা বলতো?
-না, কিছু না। এমনি এলাম। তোকে দেখতে।
-মা মিথ্যে করে বল না তো! তুমি এমনি এমনি এভাবে আমার রুমে আসবে এটা এখন আর আমার বিশ্বাস হয় না।
-সত্যি রে, আমি এমনিতেই এসেছি। কী বই পড়ছিস তুই? দেখি।
-তেমন কোন বই না মা। হুমায়ূন আহমেদের একটা উপন্যাস।
-তুই তো এখন আর বই পড়ার সুযোগ পাস না। কতো ব্যস্ত তুই এখন!
যে মা আগে আমাকে বই পড়তে দিত না, সেই মা এখন পড়ার সময় পাই না বলে আফসোস করে! সময় কতকিছুই না বদলে দেয়। আমিও কতই না বদলে গেছি। আগে পড়ার মধ্যে না থাকলে পেটের ভাতই হজম হতো না। সবসময় কোন না কোন নতুন বই পড়ার মধ্যে থাকতে হতো। তাই অনেকেই আমাকে দেখলে প্রশ্ন করতো, এখন কোন বই পড়ছ। তারা জানতো এটা আমার প্রিয় প্রশ্ন। আমার সাথে কেউ গল্প করছে আর বই নিয়ে কোন কথা বলছে না এমন দেখলে লোকটাকে আমার আর পছন্দ হতো না। মনে পড়ে, আমি তখন ক্লাস সেভেনে। এলাকার পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রথম প্রবেশ আমার। এতো এতো বই দেখে তো আমার তো রীতিমতো বিহ্বল অবস্থা। জানতে পেলাম, এ লাইব্রেরির সদস্য হলে আমি সকল বই বাসায় নিয়ে পড়তে পারব। জিজ্ঞেস করলাম, সদস্য হতে কতো টাকা লাগে। বৃদ্ধ লাইব্রেরিয়ান উত্তর দিলেন, সাত টাকা। ওয়াও! মাত্র সাত টাকায় এতো এতো বই। বইয়ের জন্য তাহলে আমাকে আর বাবার টাকা চুরি করতে হবে না। পরের শুক্রবার সাত টাকা নিয়ে সদস্য তে গেলাম। লাইব্রেরিয়ান টাকা দেখে হা করে বসে থাকলেন। নেন। টাকাটা নেন আর সদস্য ফরম্ দেন। তাকে তাড়া দিলাম। উনি বললেন,
-বাবা কত টাকা দিচ্ছ?
-কেন? যা চেয়েছিলেন তাই তো দিলাম।
-আমি তো সাত টাকা বলিনি বাবা। বলেছি, যাট টাকা। ষাট।
আমি একদম চুপসে গেলাম। ও। ষাট টাকা? ষাট টাকা যে অনেক টাকা! এতো টাকা পাব কোথায়! গল্পের বই পড়ার জন্য তো মায়ের কাছ থেকে একটা টাকাও পাব না আমি। তাও আবার ষাট টাকা! আবার সেই চুরি করতে হবে আমাকে। ও.কে। চুরি যখন করতেই হবে, তাহলে এবার আর টাকা কেন, সরাসরি বই চুরি করেই পড়ি। বই চুরির মধ্যে নিশ্চয়ই কোন পাপ নেই।
তিন বছর পর এসএসসি পরীক্ষা শেষে সদস্য হয়ে গেলাম সেই লাইব্রেরির। প্রতি শুক্রবার বই আনতে যেতাম। একটা বই খাতায় লিখিয়ে আনতাম, আরেকটা বই আনতাম সামনের দিকে পেন্টের হাল্কা একটু ভেতরে ঢুকিয়ে। একটা গর্হিত কাজ একবার করে ফেললে ধীরে ধীরে সাহস বাড়তে থাকে। একসময় সাথে নিয়ে যেতাম বাজারের ব্যাগ। ব্যাগের ভেতর থাকতো ক্যামেস্ট্রি আর ফিজিক্স বই। লাইব্রেরিয়ান সাহেব জিজ্ঞেস করতেন, ব্যাগে কী? উত্তর দিতাম, প্রাইভেট পড়ে আসছি তো, সবগুলো বই হাতে জায়গা করা যায় না। তাই বইগুলো ব্যাগে করে আনি।
যথারীতি খাতায় লিখাতাম একটা বইয়ের নাম, ব্যাগে ঢুকাতাম ৩ টা! এভাবে সে বছর আমার অনেক বই পড়া হয়ে গিয়েছিল।
তো, মা আমার সাথে গল্প করার এক ফাঁকে দেখি আমাকে একটা কাগজ ধরিয়ে দিলেন। জিজ্ঞেস করলাম, ওটা কী। বললেন, একটা বায়োডাটা।
ও। তাহলে এই ব্যাপার? আগেই বলেছিলাম, মা ইদানিং কোন কারন ছাড়া আমার রুমে আসে না। কারণটা এতোক্ষনে জানতে পারলাম।
ছবি দেখে জানাস পছন্দ হয়েছে কি না। এ কথা বলে মা চলে গেলেন।
মাকে বলতে পারলাম না, মা তুমি কী করে ভাবলে তোমার ছেলের জয়ী ছাড়া আর কোন মেয়েকে পছন্দ হবে?
বায়োডাটা আর ছবিটা ছিঁড়ে ফেললাম। এমন কতো বায়োডাটা যে ছিঁড়েছি। না জানি যাদের ছবি আর বায়োডাটা ছিঁড়ছি আমি. তারা ব্যাপারটা জানলে কতোই না অভিশাপ দেবে। দিক। অভিশাপ দিক। আমার যে কিচ্ছু করার নেই। জয়ী ছাড়া আমি আর কাউকেই বিয়ে করতে পারবো না। কখনোই না। (চলবে)
কী ভাবিয়া মনে এ দুটি নয়নে উথলে নয়নবারি-২য় পর্ব
কী ভাবিয়া মনে এ দুটি নয়নে উথলে নয়নবারি

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.