নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কী ভাবিয়া মনে এ দুটি নয়নে উথলে নয়নবারি- ৪র্থ পর্ব

১৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:১৩

৭.
-হ্যালো, ডা. আবীর বলছেন?
একটা মেয়ে কণ্ঠ। নাম্বারটা অপরিচিত। ডাক্তার হওয়ার কারনে পরিচিত অপরিচিত অনেকেই কল করে আমাকে। প্রেসক্রিপশন চায়। প্রথম প্রথম বেশ বিরক্ত লাগতো ব্যাপারটাতে। এখন আর বিরক্ত লাগে না। উল্টো খুশি হই। ভাবি, আমাদের দেশের মফস্বল শহরের রোগীরা অসহায়। বড় বড় ডাক্তাররা সবাই বড় শহরে থাকেন। হঠাৎ জরুরী প্রয়োজনে রোগীরা কাছাকাছি কোন ভাল ডাক্তার পান না। যারা আছেন তারা পারতঃপক্ষে রোগীর বাসায় কলে যেতে চান না। তাই এ সময়গুলোতে একটা ফোন কলই ভরসা। আবার ডাক্তাররা কিন্তু অপরিচিত নাম্বারের ফোন রিসিভও করেন না। এ অবস্থায় রোগীরা যথেষ্ট বিপদে পড়ে যান। তাই আমি পরিচিত অপরিচিত সকল নাম্বারের কলই ধরি। ইদানিং ভাবছি স্কাইপ বা ভাইবারেও ভিডিও কলের মাধ্যমে রোগীদের সেবা দেব। মানুষের সেবা করার জন্যই তো এ পেশা। আমার মা কি কারনে তার ছেলেকে ডাক্তার করতে চেয়েছিলেন জানি না অবশ্য। আমাদের অধিকাংশ মা-বাবারা চান তার ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। হয়তো তারা টাকা রোজগারের কথাই ভাবেন। তারা মনে করেন ডাক্তার হলে টাকা পয়সার অভাব থাকবে না। কিন্তু আসলেই কি তাই? বাস্তবতাটা ঠিক উল্টো। ইদানিং এমবিবিএসদের সকলে প্রাইমারি পাশ ডাক্তার মনে করে। পসার বাড়াতে হলে এফসিপিএস করতেই হয়। আর এফসিপিএসে সুযোগ পাওয়াটা কতো যে কঠিন আর সময় সাপেক্ষ ব্যাপার তা কেবল যারা চেষ্টা করছে তারাই জানে। আমি বিসিএস পাশ করেছি বলে রক্ষা। নয়তো আজো আমাকে রোগীহীন চেম্বারে ঝিমিেিয় ঝিমিয়ে সময় কাটাতে হতো। যাই হোক, ফোন কলটাতে যাওয়া যাক।
বললাম, হ্যা আবীর বলছি। বলেন, কী সমস্যা?
-আপনার সাথে আমার একটা বিশেষ দরকার ছিল। একটু সময় হবে?
-হ্যা বলেন। দিনের এই সময়টাতে আমি একটু ফ্রি থাকি। তেমন একটা কাজ থাকে না। তবে আপানার পরিচয় দেন। আমি অপরিচিতদের সাথে কথা বলি না।
-আসলে...আসলে আমাকে আপনি চিনবেন না। আমার সাথে আপনার বিয়ের কথা চলছে। আপনি জানেন কি না জানি না। এ বিষয়ে একটু কথা বলতে চাই।
বিয়ের কথা? তবে কি এটা সেই মেয়ে যার বায়োডাটা আমি ছিঁড়ে ফেললাম সেদিন? মেয়েটা কেন আমাকে কল দিতে পারে? বুঝতে পেরেছি। মেয়েটি নিশ্চয়ই অন্য কোন ছেলের সাথে প্রেম করে। তার বাবা-মা ঐ ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন না। গল্প নাটকে এমন কত কত ঘটনা দেখেছি। শেষ পর্যন্ত কি না এমন ঘটনা আমার জীবনে ঘটতে যাচ্ছে! মনে মনে তৈরী হয়ে গেলাম। বললাম,
-আপনি কোন দ্বিধা না করে সরাসরি বলেন।
-না...তেমন কিছু না। আবার অনেক কিছু।
-কোন সমস্যা নাই। নির্ভয়ে বলেন।
-আসলে আপনার আমার বিয়ের কথা এক মিডিয়ার মাধ্যমে চলছে। লোকটা আমার ছবি বায়োডাটা সবই নিয়েছে বেশ অনেক দিন হল। কিন্তু আপনাদের থেকে সে কোন ডিসিশন জানচ্ছে না। এ নিয়ে আমার মা যথেষ্ট টেনশনে আছেন। তিনি সন্দেহ করছেন , লোকটা হয়তো আপনাদের কাছে আমার বায়োডাটা পৌছায় নাই। আর যদি পৌছিয়ে থাকে, তাহলে এতোটা দেরী করছেন কেন আপনারা? একটু তাড়াতাড়ি একটা কিছু জানান প্লিজ। আমাদের তো অন্য দিকেও কথাবার্তা বলতে হবে, নাকি?
মেয়ের কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না। মেয়ে নিজে তার বিয়ের খবর নিচ্ছে! কী বলা যায় তাকে? বলে দেব কি, গতদিন আপনার ছবি আর বায়োডাটা আমি ছিঁড়ে ফেলেছি? না, এটা বলার মতো যথেষ্ট কঠিন হৃদয় নাই আমার। তাই বললাম,
আমার বিয়ের ব্যাপারটা বাবা-মাই দেখছেন। আপনার ছবি এখনও আমার হাতে পৌছায় নি। তাই আমি ঠিক ঠিক বলতে পারছি না এ বিষয়ে।
-এতোদিনেও আপনার কাছে বিষয়টা পৌছালো না! আমরা আর কতো দিন অপেক্ষা করব? মেয়েটা বেশ বিরক্ত, বুঝা গেল।
-আমি দেখছি ব্যাপারটা। তবে আপনাকে বলে রাখি, আমি আসলে এ মুহুর্তে বিয়ের জন্য প্রস্তুত না। আমার আরো কিছু পড়াশোনা বাকি আছে। বিয়ের করার জন্য আমার আরো কিছুটা দিন সময় দরকার। তাই আপানারা আমার জন্য অপেক্ষা না করে অন্য আলোচনায় মনোনিবেশ করতে পারেন।
-এটা কেমন কথা! আপনার এমন মতামত থাকলে আপনার বাবা-মা এখনই কনে দেখা এখনই শুরু করেছেন কেন? এটা মোটেও ঠিক না। মেয়েটির কণ্ঠ আরো ঝাঁঝালো এবার।
-আমি তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আসলে দোষটা আমারই। ব্যাপারটা থেকে তাদের আমি থামিয়ে রাখতে পারছি না।
-থাক, ওতো কথার দরকার নাই। আপনি বলেন, আমরা কি করব? মেয়েটা এমনভাবে আমার সাথে কথা বলা শুরু করেছে যেন সে আমার কতোদিনের পরিচিত!
-না। আপনারা বরং আমার চিন্তা বাদ দেন।
-না। এভাবে আপনি না করে দিতে পারেন না। একবার অন্ততঃ এসে আমাকে দেখেন আপনারা। তারপর আপনাদের ডিসিশন জানান।
-মাফ করবেন আমায়। আমি আসলে দেখাদেখির ঝামেলাতে যেতে চাচ্ছি না। আর তাছাড়া পাত্রী দেখার ব্যাপারটা আমার একেবারে অপছন্দ।
-তাহলে যান আপনাকে আসতে হবে না। আমিই কাল আপনার অফিসে আসি।
-আপনি আসবেন? আপনি থাকেন কোথায়?
-আমরাও চিটাগাঙেই থাকি। আসতে পারবো। কোন সমস্যা নাই।
এ দেখি মহ যন্ত্রণায় পড়া গেল।
-না করবেন না প্লিজ। একবার আসি আমি। দুজন মিলে কিছুক্ষণ কথা বলি। মেয়েটি আবার বলল।
চাইলে আসুক সে। আমার কোন আপত্তি নেই। দেখার পরে না করে দিলে যদি মেয়েটার এমন ডিস্টার্ব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তাহলে ক্ষতি কী? তাহলে এটাই করি। মেয়েটাকে আসতে বলি। তাহলে বাবা-মাকেও আরো বেশ কিছুদিনের জন্য খোঁজাখুঁজি থেকে শান্ত রাখা যাবে তবে। বললাম,
আপানার ইচ্ছে হলে আসতে পারেন । (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.