![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
৮.
সকাল সাড়ে দশটা। হাসপাতালের বহির্বিভাগের ১৩ নং রুমে আমার চেম্বার। এখনো রোগীদের আনাগোনা তেমন একটা বাড়ে নি। অবসর পেয়ে পত্রিকায় চোখ বুলিয়ে নিচ্ছি। সহসা একটা মিষ্টি নারী কণ্ঠ আমার কানে প্রবেশ করল।
-আমি নুসরাত।
পেপার থেকে চোখ তুলে তাকালাম।
লাল-সাদা জামা পরা ২৩-২৪ বছরের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামনে। হালকা পাতলা গড়নের মেয়েটির রং উজ্জ্বল শ্যামলা। ডিম্বাকৃতি মুখের গড়নে কালো হরিণ চোখগুলোর পেনসিল-সরু ভ্রুগুলো নাচিয়ে মিটিমিটি হাসছে সে। ঝকঝকে সাদা দাঁতগুলো যেন আমার চেম্বারের ছোট্ট রুমটায় আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। মেয়েটিকে বসতে বলে জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে বলেন।
-কিছু হয়নি তো! আমি নুসরাত। গতকাল আপনার সাথে কথা হয়েছিল।
গতকালকের সেই মেয়েটি যে এভাবে ঠিক ঠিক চলে আসতে পারে এ আমি একেবারেই ভাবিনি। তাই কী বলবো ভেবে পাচ্ছি না। পত্রিকার দিকে চোখ পড়াতে আলাপের বিষয় খুঁজে পেয়ে গেলাম।
-দেখেছেন, সালমান খান তার খান অ্যাকাডেমি করে কী রকম বিখ্যাত হয়ে গেল!
-ও মা! আপনি জাদু জানেন নাকি? মেয়েটি চিৎকার করে উঠল।
-এখানে জাদু জানার কী হল? আমিও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
-আরে, সালমান খান যে আমার ফেভারিট নায়ক এটা আপনি জানলেন কিভাবে? আপনাকে তো এটা এখনো বলা হয় নি!
আমি আকাশ থেকে পড়লাম। কাকে কী বলছি আমি! খান একাডেমির সালমান খান যে নায়ক সালমান খান নয়- বুঝতে পারলাম এ বিষয়টা মেয়েটাকে বুঝিয়েও কোন কাজ হবে না। তাই বললাম,
-সালমান খান বুঝি আপনার ফেভারিট নায়ক?
-হ্যা। আমি রীতিমতো উনার ফ্যান। আর তাছাড়া...তাছাড়া আরেকটা কথা জানেন?
-কী?
মেয়েটির গালের উজ্জল শ্যামলা রং কিঞ্চিত লাল বর্ণ ধারণ করল। আমি শুনতে পেলাম,
-আপনি দেখতে অনেকটা সালমান খানের মতো! তাইতো আপনাকে আমার এতো পছন্দ!
-আমাকে পছন্দ! আমাকে কি আপনি আগে কখনো দেখেছেন?
-হ্যা। আপনি তখন মনে হয় নতুন ডাক্তার হয়ে এখানে এসেছেন। তখন আমি আমার মাকে নিয়ে এখানে এসেছিলাম। ঈদের সময় ছিল সেটা। আমাদের পারিবারিক ডাক্তার বেড়াতে গিয়েছিলেন বলে বাধ্য হয়ে এখানে এসেছিলাম। আপনাকে দেখে আমি তো রীতিমতো ক্রাশ! সালমান খানের সাথে এতো মিল আপনার চেহারার! কিন্তু! কিন্তু আপনি আমার দিকে একবারও তাকালেন না! আমাকে তো কোন ছেলেরাই এমনভাবে অবহেলা করতে পারে না কখনো। তাই খুব রাগ হল আপনার উপর। পরে যখন বিয়ের আলাপটা আসলো আমি তো অবাক! এমন কান্ডও বুঝি পৃথিবীতে ঘটে! কিন্তু ঐ ঘটক ব্যাটাটা মনে হয় বাটপার গোছের! ও বোধহয় আপনাদের কাছে আমার ছবি আর বায়োডাটাটা দেয় নি।
- না, সেটা নয়। লোকটা সবকিছুই দিয়েছে।
-তাহলে? এতো দেরী করছেন কেন আপনারা?
কী বলব ভেবে পাচ্ছি না। এমন সময় মুরুব্বী মতো একটা লোক চেম্বারে ঢুকে বলল,
-ও ডাক্তার ব্যাটা। আমার প্রেসারটা একটু মেপে দাও তো। লোকটা নুসরাতের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে দেখে তাকে আমার পাশের চেয়ারে এসে বসতে বললাম। কী যে একটা উদ্ভট গন্ধ বেরুচ্ছে লোকটার শরীর থেকে! তাড়াতাড়ি প্রেশার মেপে দিয়ে বললাম,
-প্রেশার ঠিক আছে। কোন সমস্যা নেই।
-কীইইই? আবার দেখ।
মুরুব্বী মানুষ। অগত্যা প্রেশারটা আবার মাপলাম।
-নাহ! প্রেশার ঠিক আছে।
-ওষুধ দিবা না?
-না। ওষুধ লাগবে না।
-কি কও? ওষুধ দিবা না? তাইলে তুমি কিয়ের ডাক্তার হইসো?
এই হল আমাদের দেশের বিনা পয়সার রোগীদের অবস্থা! এখানে বেশির ভাগ মানুষ রোগ দেখাতে আসে না। আসে বিনা মূল্যের ওষুধ নিতে।
অগত্যা এক পাতার একটা ভিটামিন ওষুধের নাম লিখে দিলাম।
এরপর এক সাথে পাঁচ-ছ জন হুড়মুড় করে এসে চেম্বারে ঢুকল যেন বা সবার আগে না ঢুকলে আর ডাক্তার দেখানো হবে না। তাদের অনেক করে বললাম, লাইনে দাঁড়াতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! সবাই হুমড়ি খেয়ে টেবিলের সামনে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে থাকল। আমি ওভাবেই রোগী দেখতে থাকলাম।
প্রথম জন এসে রিপোর্ট দেখাল। দেখলাম, সবগুলো ওসুধই রেজিসট্যান্ট হয়ে আছে। এদেশের রোগীরা ইচ্ছা মতো যার তার পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খায়, আর সে ওষুধ রেজিসট্যান্ট হয়ে যায়! অনেক ঘেঁটেঘুঁটে একটা ওষুধ পেলাম যেটা এখনো রেজিস্ট্যান্ট হয় নি। রোগীকে সেটা লিখে দিয়ে বললাম, ওষুধটা বাইরে থেকে নিতে হবে।
-বাইরে থেকে? কেন বাইরে থেকে নেব? হাসপাতালে এতো এতো ওষুধ আসে। ওগুলো কোথায় যায়?
-আরে, আরে! উত্তেজিত হচ্ছেন কেন? আসলে এ ওষুধটা হাসপাতালে নাই। থাকলে অবশ্যই ওখান থেকেই দিতাম।
-আরে ডাক্তার সাহেব! মনে করেছেন আমরা বুঝি না আপনারা ওষুধ সব কী করেন? আমরা সব বুঝি। আপনাকে মজা দেখাবো, দাঁড়ান।
হাসপাতাল হচ্ছে আসলে পাতি নেতাদের মাস্তানি করার ট্রেইনিং সেন্টার। এখান থেকেই এরা মাস্তানি শিখে নিয়ে পরে বড় বড় মাস্তান হয়। নুসরাত মেয়েটা না জানি কী ভাবছে! বেচারি! হাসাপাতালে না আসলেই পারতো।
ছেলেটি চলে গেলে অন্যরোগীদের দেখছি। এতো রোগী আর রোগী। আজ আবার রবিবার। টিকা দিবস। টিকা দিবসে রোগীদের সংখ্যা যেন আরো বেড়ে যায়। বেশির ভাগই কেবল ওষুধ নেয়ার জন্য আর ঝামেলা পাকানোর জন্য এখানে আসে। একটু পর এক হোমড়া চোমড়া গোছের লোক আর সাথে কয়েকজন সাঙ্গ-পাঙ্গ প্রবেশ করল। চোখে চশমা পরা সরু গোঁফওলা একটা ছেলে নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়ে বলল, গত মঙ্গলবার ইমার্জেন্সিতে আপনি ছিলেন না?
আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম। না জানি কোন আগ্নেয়াস্ত্র ধেয়ে আসছে আমার দিকে!
-আপনি তো উনার বড় ভাইকে শেষমেষ মেরেই ফেললেন!
-আমি! কিভাবে বলেন তো? (এমন আক্রমনে আমি অভ্যস্ত এখন।)
-উনার বড় ভাইকে আনার পর বললেন তাড়াতাড়ি রোগীকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য।
আমার ঘটনাটা মনে পড়ল। বললাম,. হ্যা উনার অবস্থা বেশ নাজুক ছিল।
-যাবার সময় একটা ওষুধ দিয়ে বলেছিলেন ওটা খাওয়াতে। ওটা খাওয়ানোর পরই রোগী মারা যায়।
আমি উনাদের বুঝাতে চাইলাম, ওষুধটার নাম ইকোস্প্রিন। ওটা হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের খাওয়াতে হয়। আমি ভুল কিছু করি নি।
-আরে মিয়া, তোমার ওষুধ খাওয়াবার পরেই রোগী মারা যায়। আর বলছো , ভুল কিছু করোনি! তোমার জন্য আমার বড় ভাইটা মারা গেছে! তুমি খুনি! তোমার ফাঁসী হওয়া উচিত।
-আপনার নামে আজকেই পত্রিকাতে রিপোর্ট করব আমি! এতো হৈ চৈ এর মধ্যে সাংবাদিকটার গলা আমি ঠিক চিনে ফেললাম।
কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে যার ভাই মারা গেছেন সেই লোকটি আমার কলার ধরে ফেলল। আমি ঝাঁকি মেরে তার হাত ছাড়িয়ে ফেললাম। ১৩ নাম্বার রুমের হৈচৈ শুনে হাসপাতালের স্টাফরা ছুটে আসল। নুসরাত ভয় পেয়ে দৌড়ে বের হয়ে গেল।
এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক। এমন ভয়াবহ ঘটনা দেখে নুসরাত নিশ্চয়ই আর আমাকে বিয়ে করার জন্য এমন পাগল হবে না! (চলবে)
২০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:০৯
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
২| ২০ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৭
তারেক৭০৭ বলেছেন: গল্পটা ভালোই হবে মনে হচ্ছে ।
২০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:১১
কয়েস সামী বলেছেন: সাথে থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:০৯
আহলান বলেছেন: ভালো ....চলুক !