![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় লোড শেডিং করার অনুরোধ করেছিল ছেলেটা।
এলাকায় ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির এজিএম গোলাম কিবরিয়া সাহেবের কাছে অনেকেই কল করে। কল দিয়ে তাড়াতাড়ি ইলেকট্রিসিটি দিতে বলে। অনেকে মোলায়েম কণ্ঠে অনুরোধ করে, আবার অনেকে ধমকের সুরেও কথা বলে। কিন্তু লোডশেডিং করার এমন অনুরোধ এর আগে কখনো কেউ করে নি তার কাছে। তাই তিনি বেশ খানিকটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। ঘাবড়ানোর কথাও অবশ্য। অনুরোধটি করেই কলটি রেখে দিয়েছিল ছেলেটা। কোন অনুরোধের কলে কখনোই ফিরতি কল করেন না তিনি। কিন্তু এই ছেলেটা কলটি রেখে দিলে আবার কল করেছিলেন কিবরিয়া সাহেব। উদ্দেশ্য ছিল, ছেলেটার উদ্দেশ্যটা বুঝার চেষ্টা করা। সে ঠিক কী কারণে এমন অদ্ভুত একটা অনুরোধ করলো সেটা জানার আগ্রহ বোধ করছিলেন তিনি। কিন্তু ছেলেটির ফোন বন্ধ থাকায় তাকে আর পাওয়া যায় নি। ফোন বন্ধ দেখে তার ভয়, আতঙ্কে পরিণত হল। আতঙ্কিত হবারই কথা অবশ্য। সময়টা যে খুব খারাপ তখন। সবে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গিরা আক্রমণ করেছিল। এখানে সেখানে প্রায়ই জঙ্গীদের আস্তানা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল। জঙ্গী -পুলিশে দু’দিন পরপরই বন্দুক যুদ্ধ হচ্ছিল। এমন অবস্থায় লোডশেডিং করার বিচিত্র অনুরোধ যে কাউকে আতঙ্কিত করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
গোলাম কিবরিয়া অত্যন্ত দায়িত্বশীল মানুষ। তিনি এই ফোন কলটাকে খাটো করে দেখলেন না । প্রথমেই তিনি তার ডিপার্টমেন্টকে নির্দেশ দিলেন কোনভাবেই যেন আজ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় লোড শেডিং না হয়। খানিক পর নির্দেশে কিছুটা পরিবর্তন আনলেন, গোটা শ্রীমঙ্গলের কোথাও যেন আজ লোড শেডিং না হয়। তারপর তিনি র্যাব-৯ এর পরিচালককে কল দিয়ে ব্যপারটা জানিয়ে বললেন, মনে হয় জঙ্গিদের আজ কোন পরিকল্পনা আছে। তারপর তিনি ডিসি মকবুল সাহেবকে কল করে ব্যাপারটা জানালেন। স্থানীয় এমপিকেও খবরটা দিতে ভুলে গেলেন না। প্রধাণমন্ত্রীর নাম্বার থাকলে খুব ভাল হতো। প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার একটা দুর্লভ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে দেখে তার মন খুব খারাপ হল।
র্যাবের সাথে পাল্লা দিয়ে ইদানিং পুলিশ বাহিনীও বেশ করিৎকর্মা হয়ে উঠেছে। গোটা শ্রীমঙ্গল শহরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হল মুহুর্তের মধ্যে। পুলিশ বাহিনী কিবরিয়া সাহেবের কাছ থেকে ছেলের ফোন নাম্বার নিয়ে ঘন্টার মধ্যে ছেলেটিকে গ্রেফতার করে ফেলতে সক্ষম হল।
ছেলেটির নাম মাহমুদ আলী।
ছেলেটি একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ে।
মাহমুদ আলীকে রিমান্ডে নেয়া হল। কিন্তু তার কাছ থেকে কোন কথা বের করা যাচ্ছিল না। মাহমুদ স্বীকার করছিল, কলটি সে নিজেই করেছিল। কিন্তু কেন সে লোডশেডিং করার অুনরোধ করেছিল- এ বিষয়ে একেবারে মুখ খুলছিল না। কেবল বলছিল, ব্যাপারটা তার একান্তই ব্যক্তিগত। দীর্ঘদিন রিমান্ডে রাখার পরেও যখন মাহমুদ মুখ খুলল না, তখন পুলিশ নিশ্চিত হয়ে গেল যে, মাহমুদ আলী নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে সদ্য বিকাশ লাভ করা জঙ্গী গ্রুপের মাস্টার মাইন্ডদের কেউ একজন হবে। তারপর উপরের মহলের সিদ্ধান্তে মাহমুদ আলী পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হয়ে গেল।
এতদিন ঘটনাটা কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে থাকলেও মাহমুদ আলী নিহত হবার পর সংবাদমাধ্যমে পুরো খবরটা প্রকাশিত হল। আগে এলাকার সবাই জেনেছিল মাহমুদ আলী নিখোঁজ। পত্রিকায় খবর আসার পর তারা ভয়াবহ ঘটনাটা জানতে পারল। তারা খুব অবাক হল।
কেউ কেউ মন্তব্য করল, প্রাইভেট ভার্সির্টিগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত।
কেউবা আতংকিত হয়ে বলে উঠল, মাহমুদ যে এতো বড় জঙ্গী আমরা তো এ ঘুণাক্ষরেও টের পাই নি। এখন তো দেখছি যে কেউ জঙ্গি মাস্টার মাইন্ড হয়ে যেতে পারে।
কেউ কেউ শুক্রবার মসজিদে শিরণি দিল মাহমুদের হাত থেকে তাদের এলাকাটা রক্ষা পেল বলে।
কিন্তু লিপি কাউকে কিছু বলল না। সে সরাসরি এজিএম কিবরিয়া সাহেবের সাথে দেখা করল।
কিবরিয়া সাহেব লিপির মতো সুন্দরী কম বয়েসী একটা মেয়েকে তার অফিসে দেখে অবাক হলেন।
-স্যার, আপনাকে দুটো কথা বলতে এসেছিলাম।
-বলো। কোন সমস্যা নাই।
-স্যার মাহমুদকে তো আপনিই ধরিয়ে দিয়েছিলেন, না?
-না। আমি ধরিয়ে দিতে যাব কেন, মেয়ে? আমি তো কেবল ইনফরমেশনটা দিয়েছিলাম।
-কোন ইনফরমেশন।
-ঐ যে... লোডশেডিং করার রিকোয়েস্ট করল- সেটা। পত্রিকায় তো সবই লিখেছে, পড়ো নি?
-সব লিখে নি, জনাব গোলাম কিবরিয়া। পত্রিকা যেটুকু লিখে নি সেটুকু আপনাকে জানাতে এলাম।
লিপির হিম শীতল কণ্ঠে ভয় পেয়ে গেলেন কিবরিয়া সাহেব। তিনি লিপির দিকে শূণ্য চোখে তাকিয়ে থাকলেন।
-মাহমুদ আপনার কাছে লোড শেডিং এর আবদার কেন করেছিল, জানেন?
-না।
-সে রাত ছিল, চাঁদনি রাত। ওর খুব ইচ্ছে হচ্ছিল, আমাদের বাসায় এসে আমার সাথে বসে চাঁদ দেখবে। তখন বাসায় বাবা-মা দুজনেই ছিল। বাবা বাসায় থাকলে সন্ধ্যার পর ছাদে উঠতে দেন না। তাই মাহমুদকে বলেছিলাম, ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলে তারপর আসতে। বাবাকে তখন গরমের কথা বলে ম্যানেজ করে নিতে পারতাম। তাই বোধ হয় অতিরিক্ত উৎসাহে মাহমুদ আপনাকে কলটা করেছিল।
লিপির চোখ থেকে টপ টপ করে জল পড়ছিল দেখে কিবরিয়া সাহেব হতচকিত হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ কোন কথা খুঁজে পেলেন না।
একটু পরে নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-তোমাদের বাসাটা কোথায়?
-বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়।
-মাহমুদ তবে সত্যি ঘটনাটা কেন বলল না?
-আমার বাবাকে আমি খুব ভয় পাই। তাই আমাদের কথা আর কাউকে না জানানোর প্রমিজটা আমিই করিয়েছিলাম ওকে।
কথা খুঁজে পাচ্ছিলেন না কিবরিয়া সাহেব। জটিল অবস্থায় পড়লে প্রায়ই এমন হয় তার। কথা খুঁজতে থাকেন, খুঁজতেই থাকেন। কোন প্রসঙ্গই তখন মাথায় আসে না। কী যে এক ঝামেলা বাঁধে তখন। তিনি খুব লজ্জায় পড়ে যান। ডান হাত দিয়ে মাথা চুলকাতে থাকেন। হঠাৎ একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন খুঁজে পেলেন। বলে উঠলেন,
-তা, মাহমুদ তোমার কী হয়?
লিপি কিছু বলল না। চেয়ারটা পেছনে সরিয়ে দিয়ে উঠে দাড়াল। কিবরিয়া সাহেবের চোখের দিকে তীক্ষ্ন দৃষ্টি নিয়ে তাকাল। কিবরিয়া সাহেব তার চোখ নামিয়ে নিলেন। লিপি ঝড়ো গতিতে পল্লীবিদ্যুৎঅফিস ত্যাগ করল।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪০
কয়েস সামী বলেছেন: প্রথম মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৬
প্রামানিক বলেছেন: অসাধারণ গল্প। ধন্যবাদ
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪৬
কয়েস সামী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই।
৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩২
তাজবীর আহােমদ খান বলেছেন: চরম
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩৭
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০
দ্যা ফয়েজ ভাই বলেছেন: আহারে জঙ্গি,সদ্য প্রেমিকের জীবনটাও খাইয়া নিল।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৬
কয়েস সামী বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৫| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০২
জনৈক অচম ভুত বলেছেন: মর্মান্তিক।
৬| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:০৭
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: 'তা, মাহমুদ তোমার কী হয়?'
এজিএম কিবরিয়া আসলে মনে হয় না বুঝবে। কী বুঝে সে এই প্রশ্ন করলো সেটাও ধরতে পারছি না।
যাই হোক - রোমান্টিক জনরায় নতুন প্লটের গল্প। গতানুগতিকের ধারায় না থাকায় বেশ খুশি আমি। তবে, গল্পটা খুবই দ্রুত এগিয়ে গিয়েছে। যুক্তিগুলোও খুব একটা শক্ত স্থান নিতে পারেনি।
যাই হোক - নতুনত্ব থাকায় প্লাস।
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:০৯
কয়েস সামী বলেছেন: বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। সাথে থাকুন।
৭| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০১
চেনা পথের অচিন পথিক বলেছেন: খুব ভালো লিখেছেন
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১৫
কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৮| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০১
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: বেশ লাগল। +
১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৫৩
কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪০
মানব অরন্য থেকে বলেছেন: অসাধারপ্ন লেখা।