নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কলাবাগান১

বিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা দেশপ্রেমের ই অংশ

কলাবাগান১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডেংগু চিকিৎসায় বিশাল আশার আলো

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১


ডেংগুতে বাংলাদেশে যে ভয়াবহ অবস্হা তা প্রতিদিনের পত্রিকা খুললেই দেখতে পাই। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা ডেঙ্গু ঝুঁকিতে বসবাস করে। সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো যে ডেংগুকে মোকাবিলা করার জন্য এখনো কোনো অনুমোদিত, বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিভাইরাল (antiviral) চিকিৎসা নাই। ২-৩ টা টিকা থাকলেও তা সব দেশে সহজলভ্য নয় এবং সবার জন্য উপযোগীও নয়, ডেঙ্গু হলে চিকিৎসা মূলত হয় সাপোর্টিভ কেয়ার – পানি ও স্যালাইন, জ্বর ও ব্যথা নিয়ন্ত্রণ, প্লেটলেট আর হেমাটোক্রিট মনিটরিং ইত্যাদি
অর্থাৎ, আজ পর্যন্ত আমরা মূলত ভাইরাসকে মারতে পারি না, বরং শরীরকে ধরে রাখি – যেন রোগী নিজেই লড়াই করে ভাইরাসকে হারিয়ে দিতে পারে।
সম্প্রতি (গতকাল) জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা একটা মুখে খাওয়ার এন্টি-ডেংগু পিল আবিস্কার করেছেন যেটা ফেইজ ২এ ক্লিনিক্যাল ট্টায়াল এ বিরাট সাফল্য দেখিয়েছে। যদিও ফেইজ ৩ ট্রায়াল এ সাফল্য আশার পরেই এটা বাজারে পাওয়া যাবে, তবে ফেইজ ২া এর সাফল্য বলছে যে এটা ফেইজ ৩তেও সাফল্য দেখাবে। ঔষুধটা ভাইরাস এর দুইটা প্রোটিন এর ইন্টারএকশান কে বাধা দিয়ে এর রিপ্লিকেশন কে বন্ধ করে।
লিড বিজ্ঞানী কে ইমেইল করেছি নিচের ভাষায়
"Congratulations, Prof. Durbin, on this much-needed development for dengue infection, which is causing catastrophic levels of harm in many tropical countries, including Bangladesh. Just last month, more than 100 people died due to the unprecedented dengue outbreak currently ongoing in Bangladesh. Daily infections and hospitalizations are skyrocketing, and I urge you to consider conducting the Phase III trial in collaboration with a medical school in Bangladesh."
পেপারটা পাবলিশ হয়েছে here

নিচের বাকী অংশটুকু চ্যাটজিপিটি লিখে দিয়েছে:

কী পরীক্ষা হলো মোসনোডেনভির নিয়ে?

এই গবেষণাটা ছিল একটি Phase 2a, double-blind, randomized trial – মানে: অংশগ্রহণকারীরা ছিল স্বাস্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক
সবাইকে এলোমেলোভাবে (random) ভাগ করা হয় চার দলে:
লো ডোজ: ৪০ মি.গ্রা. লোডিং, তারপর ১০ মি.গ্রা.
মিডিয়াম ডোজ: ২০০ মি.গ্রা. লোডিং, তারপর ৫০ মি.গ্রা.
হাই ডোজ: ৬০০ মি.গ্রা. লোডিং, তারপর ২০০ মি.গ্রা.
প্লাসিবো (নকল ওষুধ)
লোডিং ডোজ দেওয়া হয়েছে ৫ দিন এরপর মেনটেনেন্স ডোজ দেওয়া হয়েছে ২১ দিন
তারপর যা করা হয়েছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ –

Controlled human infection model

অংশগ্রহণকারীদেরকে day 1-এ (প্রথম মেনটেনেন্স ডোজের দিন) সাবকুটেনিয়াস ইনজেকশনের মাধ্যমে একটি ডেঙ্গু ভাইরাস টাইপ–৩ (DENV-3) স্ট্রেইন দেওয়া হয়। এই ভাইরাস হলো rDEN3Δ30, যাকে বলা হয় “underattenuated” – অর্থাৎ কিছুটা দুর্বল করা হলেও এখনো সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। এরপর গবেষকরা দেখেছেন: কার কার মধ্যে ডেঙ্গুর লক্ষণ ও ভাইরাস দেখা যায়, কতখানি ভাইরাস শরীরে থাকে (RNA load), ওষুধ খাওয়া নিরাপদ কি না (side effects, serious adverse events আছে কি না), রক্তে ওষুধের মাত্রা কেমন থাকে (pharmacokinetics)

প্রধান ফলাফল হিসেবে তারা দেখেছেন ১ থেকে ২৯ দিন পর্যন্ত ভাইরাসের মোট পরিমাণ
ফলাফলটা আসলে কী বলছে? গবেষণার সবচেয়ে সহজ ভাষায় ফলাফল দাঁড়ায় এই রকম:

ডেঙ্গু সংক্রমণ এড়াতে সক্ষম অংশগ্রহণকারীর হার: লো ডোজ: ০% (৬ জনের কেউই “infection-free” থাকেনি)। মিড ডোজ: ১৭% (৬ জনের মধ্যে ১ জন)। হাই ডোজ: ৬০% (১০ জনের ৬ জনের মধ্যে কোনো ডেঙ্গুর লক্ষণ বা ভাইরাস পাওয়া যায়নি)
প্লাসিবো: ০% (৭ জনের কেউই রক্ষা পায়নি)। অর্থাৎ, উচ্চ ডোজ মোসনোডেনভির স্পষ্টভাবে ডেঙ্গু সংক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে – অন্তত এই ছোট, নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষায়।
ম।

নিরাপত্তা (Safety)

এই ছোট Phase 2a ট্রায়ালে: কোনো serious adverse event পাওয়া যায়নি। ষুধের মাত্রা রক্তে ধীরে ধীরে বেড়ে day –5 থেকে day 1 পর্যন্ত স্থিতিশীল হয়। তারপর day 21 পর্যন্ত ভালোভাবে বজায় থাকে

ভাইরাসের জিনে পরিবর্তন (NS4B region): যাদের মোসনোডেনভির দেওয়া হয়েছে, সেই ১৪ জনের সবার ভাইরাসে NS4B অঞ্চলে নতুন অ্যামাইনো অ্যাসিড পরিবর্তন (mutation) দেখা গেছে। প্লাসিবো গ্রুপের ৭ জনের কোনো কারোর ভাইরাসে এই রকম পরিবর্তন পাওয়া যায়নি। এর মানে, ওষুধটি সম্ভবত ভাইরাসের NS4B প্রোটিনকে টার্গেট করছে, আর ভাইরাস এই চাপ এড়াতে নিজের জিনে সামঞ্জস্য আনার চেষ্টা করছে – যা অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগের ক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই দেখি।

বাংলাদেশের জন্য এর অর্থ কী? এখন মূল প্রশ্ন – এত সব তথ্যের সঙ্গে বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির যোগ কোথায়?

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক:

হাসপাতাল ব্যবস্থা চরম চাপে। প্রতি মৌসুমে হাজার হাজার মানুষ ভর্তি। প্লেটলেট, আইসিইউ বেড, ডাক্তার-নার্স – সবকিছুর ওপর অতিরিক্ত চাপ। প্রতিরোধে আমাদের হাতে এখনো মূলত মশা নিধন আর সচেতনতা। ফগিং, লার্ভিসাইড, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ঘরের ভেতর মশারি–কয়েল–র্যাকেট। এগুলো জরুরি, কিন্তু ঝড়ের পর জানালা বন্ধ করার মতো – ভাইরাসের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু করার উপায় নেই

যদি নিরাপদ ও কার্যকর মুখে খাওয়ার অ্যান্টিভাইরাল পিল পাওয়া যায়? ধরা যাক, ভবিষ্যতে বড় Phase 2b/3 ট্রায়ালেও প্রমাণিত হলো:
উচ্চ ডোজ মোসনোডেনভির সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়, বা সংক্রমণ হলেও ভাইরাসের পরিমাণ কমিয়ে রোগের তীব্রতা কমায়,
তাহলে বাংলাদেশে সম্ভাব্য ব্যবহার হতে পারে:

উচ্চ ঝুঁকির এলাকায় প্রফাইল্যাক্সিস (prophylaxis)। যেখানে ডেঙ্গু ক্লাস্টার/হটস্পট শনাক্ত হয়, সেখানে গৃহস্থালির সংস্পর্শে থাকা স্বজনদের জন্য। স্বাস্থ্যকর্মী, হাসপাতাল স্টাফ, ক্লিনিকাল ল্যাব কর্মীদের সুরক্ষা

ভবিষ্যতে, প্রমাণ আরও শক্ত হলে, প্রাথমিক পর্যায়ে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা – যেন ভাইরাস দ্রুত কমে, জটিলতা (severe dengue, plasma leakage, shock) কম হয়। অবশ্যই, এগুলো এখনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, কারণ:

এই গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে (Phase 2a), ছোট স্যাম্পল সাইজে, নিয়ন্ত্রিত মানব সংক্রমণ মডেলে হয়েছে।
বাস্তব জীবনে, বিভিন্ন বয়স, সহ-রোগ, ভিন্ন ভিন্ন সেরোটাইপ – এসবের উপর আরও বড় ও বৈচিত্র্যময় ট্রায়াল দরকার।

কেন এখন থেকেই বাংলাদেশের প্রস্তুতি জরুরি?

যদিও মোসনোডেনভির এখনই বাজারে আসছে না, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এখন থেকেই কয়েকটি কাজ শুরু করা উচিত:

আন্তর্জাতিক ট্রায়ালে অংশগ্রহণের আগ্রহ জানানো

ভবিষ্যত Phase 2b/3 ট্রায়ালে ঢাকার বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, icddr,b, IEDCR–এর মতো প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ

এতে বাংলাদেশের রোগীরা earliest stage-এ cutting-edge থেরাপির সুফল পেতে পারে

রেগুলেটরি প্রস্তুতি (DGDA, নীতিমালা)

ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দ্রুত কিন্তু নিরাপদভাবে পর্যালোচনার জন্য স্পষ্ট গাইডলাইন

আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদিত হলে বাংলাদেশে দ্রুত রেজিস্ট্রেশন ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার রোডম্যাপ

মূল্য ও প্রাপ্যতার প্রশ্ন আগেভাগে তোলা

ওষুধটি যদি কার্যকর প্রমাণিত হয়, তখন যাতে দাম আকাশছোঁয়া না হয়

লাইসেন্সিং, জেনেরিক উৎপাদন, স্থানীয় ফার্মা কোম্পানির সঙ্গে প্রযুক্তি হস্তান্তর– এসব নিয়ে আলোচনার প্রস্তুতি

ডাটা-ড্রাইভেন পাবলিক হেলথ স্ট্র্যাটেজি

কোথায় কবে ডেঙ্গু ক্লাস্টার শুরু হয়, কোন এলাকায় কেস বাড়তে থাকে – এসব তথ্য রিয়েল-টাইম ড্যাশবোর্ডে সংগ্রহ

ভবিষ্যতে অ্যান্টিভাইরাল প্রফাইল্যাক্সিস এলে টার্গেটেডভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে

কিছু প্রয়োজনীয় সতর্ক কথা

মোসনোডেনভির এখনো রুটিন চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত নয়

নিজেরা কোনোভাবে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ জোগাড় করে খাওয়া চরম ঝুঁকিপূর্ণ ও বেআইনি হতে পারে

সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বড় ট্রায়ালের ফলাফল

ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞ কমিটি–র সুপারিশের ভিত্তিতে

এই ব্লগের উদ্দেশ্য কাউকে নিজে নিজে চিকিৎসা করতে উৎসাহ দেওয়া নয়; বরং:

বাংলাদেশের মানুষ যে প্রতি বছর ডেঙ্গুতে অকারণে প্রাণ হারাচ্ছে, সেই বাস্তবতায় বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানের জন্য আমাদের কণ্ঠ জোরালো করা।

উপসংহার: বিজ্ঞানের আলোকে দ্রুত পদক্ষেপ চাই

মোসনোডেনভির নিয়ে NEJM-এ প্রকাশিত Phase 2a ফলাফল দেখিয়েছে:

উচ্চ ডোজে এই অ্যান্টিভাইরাল পিল ডেঙ্গু ভাইরাসের লোড কমাতে এবং অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমণই ঠেকাতে সক্ষম

ছোট এই ট্রায়ালে কোনো serious adverse event দেখা যায়নি

এটি কোনো “ম্যাজিক পিল” নয়, এবং ডেঙ্গু দমন করতে মশা নিয়ন্ত্রণ, নগর পরিকল্পনা, জনসচেতনতা– সবকিছুরই সমন্বিত প্রয়াস লাগবে।
কিন্তু মুখে খাওয়ার একটি নিরাপদ ও কার্যকর অ্যান্টিভাইরাল পিল হলে তা হতে পারে:

হাসপাতালের চাপ কমানোর

মৃত্যু কমানোর

আর হাজার হাজার পরিবারের কান্না শুকানোর এক বড় অস্ত্র।

বাংলাদেশের মতো উচ্চ ঝুঁকির দেশের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক, ন্যায়সঙ্গত ও দ্রুত অ্যাক্সেস চাই –
যাতে যখনই এই ওষুধ বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত ও অনুমোদিত হয়,
আমরা তখন আর পেছনের সারিতে দাঁড়িয়ে না থেকে প্রথম সারির সুবিধাভোগী হতে পারি।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.