নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন

কালের_কাব্ব্য

জানতে এবং জানাতে ভালোবাসি

কালের_কাব্ব্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষের গান

০১ লা মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০৫

(১)অক্ষর এবং অভ্র এলাকা এবং ভার্সিটির সবথেকে বেশি আলোচিত দুই চরিত্র। তারা সবথেকে বেশি আলোচিত হবার কারণ তাদের একজনের বাবা দেশের সবথেকে ধনী মানুষদের একজন আর অপরজন এতো ধনী না হলেও সে আলোচিত হবার কারণ তার গলা এবং সাথে থাকা গীটার। এলাকা কিংবা ভার্সিটির সর্বত্র যে কোন স্থানে ছোটো থেকে বড় যে কাওকে এই নাম বল্লেই চলে। এক বাক্যে ওদের সকল পরিচয় পেয়ে যাবেন। অক্ষর নিজেও যদি গান গায় তবে সকলের মতে অক্ষর সবদিক থেকে এগিয়ে থাকলেও এই একটা দিক দিয়ে অভ্রকে এখনো ছুতে পারেনি। অভ্রর আরও একটা ভালো গুন আছে, সে খুব ভালো সুর করতে পারে। যদিও অক্ষর একাজটা খুব খারাপ করে না। তারপরও অক্ষরের কোন আক্ষেপ নেই অভ্র যে তার বন্ধু, জানের দোস্ত।

(২)আজ অনেকদিন পর অক্ষর এবং অভ্র ভার্সিটি যাচ্ছে। তারা যে শেষ কবে ভার্সিটি গিয়েছিলো তা তাদের কারোরই মনে নেই। যাবার সময় ওদের বন্ধুরা অভ্রকে খুব অনুরোধ করলো একটা গান গাইবার জন্য কিন্তু অভ্রর এখন ভালো লাগছেনা, তাই বন্ধুদের অনেক অনুরোধের কারনে অভ্র বলল পরবর্তী কোন এক সময় সে গান গাইবে কিন্তু আপাতত না। বন্ধুরা এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে অক্ষরকে সাথে নিয়ে গান গাওয়া শুরু করলো। অক্ষরের মতে ভার্সিটি এসে আজকের দিনটা খুব ভালভাবেই নষ্ট করেছে কেননা ক্লাসে ঢুকতে না ঢুকতেই আজমিন স্যার তাদের ক্লাস শেষ হলে দেখা করতে বলল। তারা বুজতে পারল না স্যার কেন তাদেরকে দেখা করতে বলেছিল, তবে তাদের খুব বেশিক্ষণ এটা অজানা থাকেনি। স্যার এর রুমে ঢুকতেই স্যার বিশাল এক ঝারির সাথে কথা শুরু করলেন আর যখন স্যারের কথা শুনে রুম থেকে বের হল তখন ওদের মনে হল গত রাতে নিশ্চয় স্যার এবং উনার বউ এর মধুর ঝগড়া করেছে তা নাহলে কেও এভাবে নির্দয়ের মত বলতে পারে নিয়মিত ক্লাস এবং পরীক্ষা না দিলে নেক্সট সেমিস্টারের আশা বাদ দিতে হবে। প্রকৃতি কি ওদের মন ভাল করতেই নাকি ওদের ভিজানোর জন্য তার বর্ষণ শুরু করল তা কেও জানলো না তবে হটাত করে এই আগুন্তক বৃষ্টির হাত থেকে বাচতে ওরা পাশের টং দোকানেই ঢুকল। আর যেহেতু এখানে ঢুকা মাত্র বন্ধুদের পেয়ে গেলো তাই ওঁরাও আগের মত অভ্র কে গান গাইবার জন্য চেপে ধরল, তবে কেন জানি অভ্র এখন আর মানা না করে গান গাওয়া শুরু করল। এই গানে কিংবা এই গলায় কি আছে তা কেও জানে না তারা শুধু এতটুকুই জানে এই জাদু শুধু অভ্রর কাছেই আছে যা দিয়ে সে সবাইকে এক মুহূর্তে চুপ করিয়ে দিতে পারে ঠিক এখনের মত। অভ্রের গান কখন থামল তা কেও ঠিক বলতে পারবে না তবে তারা এটা বলতে পারে প্রকৃতিও যেন এই গান থেকে বঞ্চিত নাহয় সে কারনে সে তার বর্ষণ থামিয়ে দিয়ে অভ্রের গান শোনা শুরু করলো আর যেহেতু বৃষ্টি থেমে গেলো তাই সবাই ধন্যবাদ দিয়ে যাওয়া শুরু করলো। সবাই যাবার পর এক মেয়ে তাদের কাছে আসল এবং বলল আপনি নিশ্চয়ই অভ্র এবং উনি অক্ষর? আমি ইভা, আপনাদের এক ব্যাচ জুনিয়র। অভ্র এটা শুনে তেমন একটা অবাক হল না কেন না এখানে অনেকেই তাদের চিনে এবং নিজে থেকে পরিচিত হতেও আসে তবে অক্ষরকে দেখে কেমন যেন অন্যরকম মনে হল, সব সময়ের মত না।

(৩) ইভার সাথে এরপর তাদের আরও অনেকবার দেখা হল। প্রথম প্রথম খুব একটা কথা নাহলেও ধীরে ধীরে তাদের মাঝে দেখা হতে লাগলো আর সাথে সাথে কথার গাড়িও চলতে লাগলো। ও দুঃখিত তাদের মাঝে বললে ভুল হবে কথা প্রধানত অভ্র এবং ইভার মাঝে হতে লাগলো আর অক্ষর বরাবরের মতই নিঃশ্চুপ দর্শক হয়ে তাদের কথা শুনতে থাকল। কথার ছলে একদিন অভ্র জানতে পারলো ইভার বাসা তাদের পাশের এলাকাতেই এটা শুনে অভ্র অবাক হলেও অভ্রের কেন যেন মন হল অক্ষর অবাক হইনি। তবে যাই হোক সময়ের কারণেই হোক কিংবা ভুলে যাবার কারণেই হোক অভ্র আর এই বিষয়ে কিছুই অক্ষরকে জিজ্ঞাসা করেনি। ঐদিনের পর থেকে অভ্র, অক্ষর এবং ইভা একইসাথে নিয়মিত ভার্সিটি যাওয়া আসা শুরু করলো ফলস্বরূপ সময়ের পরীবর্তনে তারা বন্ধু হয়ে গেলো এবং ধীরে ধীরে খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেলো।

(৪) অর্কিড হাউস, দেশের শীর্ষ ধনীদের একজন জহিরুল ইসলামের বাসা। নেই বলতে এমন কোন জিনিস এই বাসায় নেই তবে হ্যা যদি কিছু না থাকে তবে বুজতে হবে সেইটা জহিরুল ইসলামের ছেলে অক্ষরের ইচ্ছাই নেই। তবে এখন এই বাসার ছাদে দাড়িয়ে অভ্র এবং অক্ষর দুরের পানে চেয়ে আছে। আজকাল ইভা না আসলে অভ্র প্র্যাকটিসই করতে চাই না। অক্ষর জানে কেন অভ্র এরকম করে। একটা ছেলে এবং একটা মেয়ে যে শুধু বন্ধু হতে পারে না এই কথার সত্যতা প্রমান করে অভ্র এবং ইভা ভালোবাসার সাগরে নৌকা ভাসিয়েছে আর এই কারণে অভ্র ইভা কে ছাড়া এখন আর গান গাইতে চাই না। দেরি করে হলেও ইভা আসলো এবং প্র্যাকটিস শুরু হল। অভ্র আজ তার একটা নতুন সুর করা গান শুনাল, যেটা শুনে অক্ষর বলল আমাদের প্রথম অ্যালবাম এ গানটা অবশ্যই থাকবে, বরাবরের মত অভ্র শেষ গান হিসেবে শিরোনামহীন ব্যান্ডের হাসিমুখ গান দিয়ে শেষ করলো। ইভা জিজ্ঞাসা করতেই অভ্র উত্তর দিলো কেন সে এই গান দিয়ে শেষ করে তা নিজেও জানে না তবে এই গান দিয়ে শেষ না করলে কেন যেন তার শেষ মনে হই না।

(৫) ভার্সিটির পরীক্ষা শেষ। এখন হাতে ফ্রী সময়। এই সময় যে তারা কিভাবে ব্যাবহার করবে তারা নিজেও বুজতে পারছিল না। একে একে সবার মত ভার্সিটির এই শেষ সময়ে এসে অক্ষরও বাবার ব্যবসা দেখা শুরু করলো। আর অভ্রর যেহেতু এই চারকুলে কেও নাই তাই তার এসব নিয়ে কোন চিন্তাও নেই। মৃত্যুর আগে যে পরীমান টাকা তার মা বাবা রেখে গেছে এই টাকার সদ্ব্যবহার করতে পারলে তার জীবন আরামে যাবে তার অনাগত ভবিষ্যতের জীবনও আরামে যাবে। যেহেতু অভ্রের এখন তেমন কোন একটা কাজ নাই তাই সে গেলো অক্ষর থেকে নতুন কেনা গল্পের বই আনতে। অক্ষরের রুমে ঢুকতেই অভ্র দেকল অক্ষর বাহিরে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে। জিজ্ঞাসা করতেই বলল ব্যবসার একটা মীটিং আছে ওখানে যেতে হবে। অভ্র এটা শুনে আর কিছু না বলে বইটা পরা হয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করলো? অক্ষর বলল আরে ধুর এখন আর এগুলা পরার সময় আছে। এই কথা বলতে বলতে অক্ষর তৈরি হয়ে গেলো আর ঠিক ওই মুহূর্তে জহিরুল ইসলাম সাহেব রুমে ঢুকে জিজ্ঞাসা করলেন বাবা তুই তৈরি হয়েছিস? অভ্র আঙ্কেলকে দেখে ছালাম দিলো। জহিরুল ইসলাম অভ্রকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি করছ বাবা? সামনে কি করবে কিছু ছিন্তা করেছ? তখন অভ্র বলল আঙ্কেল মাত্রতো পরীক্ষা শেষ হল কইটা দিন ঘুরে নেই পরে নাহয় চিন্তা করব। আঙ্কেল বলল হু এখনিতো ঘুরবার সময়। ঠিক আছে তোমরা কথা বল, আর অক্ষর বাবা প্লিজ দেরি কর না, আমি নিচেই আছি। অক্ষর বলল আচ্ছা বাবা, আমি এখনি আসছি। অক্ষরের বাবা বের হয়ে যেতেই বলল, শান্তি নাইরে। এই কথা বলে অক্ষর টাই বাধা শেষ করলো তখন অভ্র আবার বইটার কথা জিজ্ঞাসা করলো তখন অক্ষর বলল কোথাও আছে হইত খুজে নে প্লিজ। এই কথা বলে অক্ষরো চলে গেলো। অক্ষর বেরিয়ে যেতেই অভ্র বই খুজা শুরু করলো। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করার পর মনে হল না এই জীবনে আর এই বই খুজে পাবে না ঠিক তখনি অভ্ররের নজরে একটা ডাইরি পরলো। আর তখনি বলল যা আজকে হইত এই মুখচোরার বেপারে অন্তত কিছু একটা জানা যাবে। ডাইরিটা খুলে অভ্রকে হতাশই হতে হই কেননা এটা অক্ষরের অন্য গানের ডাইরিগুলার মতো একটা সাধারন ডাইরি, তবে কিসের টানে যেন অভ্র ডাইরিটার দেখতে লাগলো।কিছু পাতা উল্টানোর পর অভ্রের মনে হল না কষ্টটা বৃথা যায়নি। কেননা একটা পাতার শুরুতেই লেখা, আজ এক অদ্ভুত কিছু দেখলাম, কেননা আমার চোখের সামনে দিয়ে দিনের বেলায় পরী দেখলাম, প্রথমে কিছুক্ষণ মনে হল আমি হইত কল্পনা করছি টা নাহলে দিনের বেলায় পরী দেখবো কেনো? ঠিক তক্ষনি বাবা ডাক দিলো, আর এতেই মনে হল না আমি তো কল্পনাতে নেই তাহলে কি এই পরীটাকে সত্যি আমি দেখেছিলাম? ও তাহলে পরী না, জলজ্যান্ত একটা মানুষ! আর আমি এতক্ষণ কি ভাবছিলাম। শুধু বাবা সাথে তা নাহলে ঠিকই তক্ষনি ঠিকানা বের করে ফেলতাম। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে আমার পরী আমার আশেপাশে কোথাও থাকে। এরপর আর কিছু লিখা নাই। অভ্র লিখাটা পরে খুব মজা পাই তার এত কাছের একটা বন্ধু ডুবে ডুবে এতদিন ধরে জল খাচ্ছে আর অ এটার কিছুই জানতে পারল না? কিছু পাতা উল্টাতেই অভ্র আবার লিখা পেল,

আজ আমার স্বপ্নের পরীর সাথে আবার দেখা হল, তবে এটা সম্ভব হয়েছে শুধু মাত্র অভ্রের জন্য অভ্র যদি তখন গান না গাইত তাহলে হইত আমি কোনদিনও জানতে পারতাম না আমার পরীটা আমাদের ভার্সিটিতে পরে কি শুধু পরী পরী করছি আমিতো এখন আমার পরীর নামটা জানি, “ইভা” কি সুন্দর নাম, ধুর নাম কার এটা দেখতে হবে তো আর কি সুন্দর করে ইভা কথা বলে, আর যখন মুস্কি হাসি দিচ্ছিল তখন মনে হচ্ছিলো কোন অপ্সরী হাসছে। ।

এটুকু পরে অভ্র পাগল হয়ে যাই, এগুলো কি হচ্ছে, যে ইভাকে অ নিজের থেকেও বেশি ভালবাসে তাকে কিনা তারও আগে থেকে তার জানের বন্ধু আরও আগে থেকে ভালোবেসে বসে আছে। অভ্র পাগলের মতো হয়ে আর কোথাও কিছু আছে কিনা খুজতে থাকে খুজতে খুজতে অভ্র আরও একটি ডাইরি খুজে পাই। যেটার শুরুতেই লিখা,

অভ্র আজকাল আর ইভাকে ছাড়া কোন কথা বলে না, যে কথা বলুক না কেন যা দিয়ে শুরু হক না কেন সব কথার শেষ কথা ইভা থাকবেই। আমি বুঝি কেন এমনটা হচ্ছে অভ্র ইভাকে ভালোবেসে ফেলছে, এখন আর আমার কথা না বলাটাই উত্তম। আমি ছোট থেকে সুখ শান্তির মাঝে বড় হয়েছি আর অভ্র ছোট থেকে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে, ছোট থাকতে মা বাবাকে হারাল তারপর থেকে কি করে আজকের এই অভ্র হয়েছে টা আমার চেয়ে ভাল কেও জানে না। আর আমি এসব কি বলছি অভ্র আমার জানের দোস্ত, কোন কিছুর বিনিময়ে আমাদের এই বন্ধুত্ব ভাঙ্গা যাবে না অর এর জন্য আমি শুধু ইভা কেন দুনিয়ার সব কিছু দিয়ে দিতে পারি কিছু মানুষ আছে ভালোবাসাকে কাছে পাবার জন্য না দূর থেকে থাকবার জন্যই জন্ম নেই আর ত্রিপক্ষের ভালোবাসাই কাওকে না কাওকে কিছু হারাতেই হই এবার নাহয় আমি কিছু হারালাম পরেরবার নাহয় সৃষ্টিকর্তার কাছথেকে কিছু চেয়ে নেয়া যাবে।

(৬) অভ্র এরপর আর কি লিখা তা আর পরতে পারে না, সে কোন রকমে ডাইরিটা রেখে বাসায় চলে আসে, বাসায় আসা মাত্রই অভ্র কান্না শুরু করে, যে বন্ধু তাকে শুধু বন্ধু না নিজের ভাইয়ের চেয়ে বেশি ভাবে তাকে কি করে সে কষ্ট দিয়ে ইভাকে নিয়ে সুখি হবে? ঠিক তক্ষনি অভ্রের মনে হল ইভা তোমাকে ভালবাসে অক্ষরকে না কিন্তু অভ্রের আরেকটা সত্তা বলছে অক্ষর ইভাকে আমাকে তোমার আগে থেকেও ভালোবাসে। ঠিক তক্ষনি অভ্রের আরেক সত্তা বলে উটল, অভ্র তুমি আগে ইভাকে ভালবাসার কথা বলেছ অক্ষর না, তখন অভ্রের আরেকটা সত্তা বলল অক্ষর শুধু তোমার কারণে ইভাকে ভালোবাসি এই কথা বলে নাই, তখন অভ্রের আরেক সত্তা বলল দেখ অভ্র অক্ষরতো সব মেনেই নিয়েছে, সব মেনেই চাইছে তুমি ইভাকে নিয়ে খুসি থাকো আরে গাধা অন্যলোক তোমার ভালটা বুজছে আর তোমারটা তুমি বুজতেছো না? তখন অভ্রের আরেকটা সত্তা বলল অভ্র তুই স্বার্থপরের মতো কাজ করিও না তুমি বুজছ না কেন অক্ষর তোমার জানের দোস্ত। অভ্র বলল হা আমি বুজতে পারছি অক্ষর আমার বন্ধু আর ইভা আমার ভালোবাসা যাকে ছাড়া আমার বেচে থাকা সম্ভব না আর ইভার জন্য যদি আমাকে কিছুটা স্বার্থপর হতেও হই তাহলে আমি তাই হবো এই কথা বলে অভ্র তার এক দূরসম্পর্কের খালাকে জরুরি ভিত্তিতে আসার জন্য খবর পাঠানোর বেবস্থা করে।

(৭) বেশ কয়দিন অক্ষরের সাথে অভ্রের দেখা হই না, অক্ষরও কইদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিল তাই এই কথাটা মাথাতেও আসেনি যেই মাত্র মাথাই আসলো যে অভ্রের সাথে কইদিন দেখা নাই ওই মুহূর্তেই চলে গেল অভ্রের বাসায়, গিয়ে যে অভ্রের এই অবস্থা দেখবে তা অক্ষর কোনমতেই আশা করে নাই। অভ্রকে জিজ্ঞাসা করল কিরে তোর সমস্যা কি? কইদিন ধরে কোন যোগাযোগ নাই, দেখা সাক্ষাত নাই বেপারটা কি? অভ্র বলল না তেমন কিছুই না, শরীরটা ভাল না তাই বের হচ্ছি না। কিন্তু অভ্র ঘরে দরজা জানালা সব বন্ধ করে বসে থাকবে এটা অক্ষরের বিশ্বাস হচ্ছে না, না কিছু একটা ঝামেলাতো অবশ্যই আছে। অভ্র তুই ঠিক করে বলতো তোর কি হইছে? অক্ষর এত চাপাচাপি করার পরও অভ্র কিছু বলেনি, কিছুক্ষনপর ইভা এসে কান্না শুরু করল অভ্র এই কইদিন কোন যোগাযোগ করে নাই কেন? অনেক চাপাচাপির পর অভ্র একটা চিঠি দিলো এবং বলল ২ দিন আগে এটা পেয়েছি। অক্ষর চিঠিটা খুলে দেখল, “৩ দিন সময় ১০ লক্ষ টাকা” অক্ষর জিজ্ঞাসা করল এটা কি? অভ্র বলল আমিতো এটাই বলছি এটা কি? তখন ইভা বলল এটা কি যদি নাই জানো তাহলে গতকাল থেকে যোগাযোগ কর নাই কেন? আসলে আমি গত দুই দিন ধরে এটা নিয়ে চিন্তা করছিলাম, আর দেখ আমার মোবাইলটা নষ্ট হয়ে গেছে তাই কারো সাথেই যোগাযোগ করতে পারছি না, এই অক্ষরকে জিজ্ঞাসা করো? ইভা অক্ষরের দিকে এমনভাবে তাকালো যেন সব দোষ অক্ষরের। অক্ষরও এই চাহনি দেখে মিন মিন করে বলল হা তাই তো। তখন অভ্র বলল ওকে ওকে, ঝগড়া থামাও আমরা এখন বাহিরে খেতে যাব। ইভা তখন বলল ঠিক আছে, খেতে যাব কিন্তু একটা সত্য আছে, তোমাকে নতুন মোবাইল কিনতে হবে। অভ্র বলল আচ্ছা বাবা ঠিক আছে কিনব, এই বলে অভ্র রেডি হতে গেল।



(৮) ৫ বছর পর... ... ...

অক্ষর গাড়ি থেকে নামা মাত্রই একটা পিচ্চি মেয়ে অক্ষরের কাছে গিয়ে কোলে উঠে পরল আর বলতে শুরু করলো বাবা জানো মা না আজকে আমাকে একটা পাপ্পিও দেই নাই, অক্ষর তখন বাচ্চার মার দিকে তাকিয়ে বলল কি বেপার ইভা তুমি আজ আমার মামনিকে একটাও পাপ্পি দাওনি কেন? অক্ষর তার মেয়ের দিকে ফিরে ঠিক আছে আম্মু দেইনি তো কি হয়েছে আমি তোমাকে এতগুলো পাপ্পি দিয়ে দিচ্ছি এই বলে অক্ষর তার মেয়েকে পাপ্পি দেয়া শুরু করে আর এতে পিচ্চি মেয়েটা তার বাবার কোল বাদ দিয়ে তার মার কোলে গিয়ে আবার উঠে। এই দেখে অক্ষর হেসে উঠে। রাতের খাবার শেষ করে অক্ষর টিভি দেখা শুরু করে, দেখতে দেখতে হটাত একটা গান শুনে চ্যানেল ঘুরানো বন্ধ হয়ে গেলো, গানটা শুনার পর অক্ষরের মনে হল এইতো ওই সুর যেটা অভ্র ওদের ১ম এল্বামের গানের জন্য বানিয়েছিল না না এ কি করে সম্ভব? আমি নিজের হাতে ওকে মাটি দিয়েছি, না না এ অসম্ভব একথা ভাবতে ভাবতে অক্ষর ঘুমুতে চলে যাই কিন্তু তার যে ঘুম আসছে না তার বার বার মনে পরছে ৫ বছর আগের সেই কথা, মনে তো হচ্ছে এই তো সেইদিনের ঘটনা ওরা তিনজন একসাথে বাহিরে ঘুরে আসলো তার পরদিন সকাল ১১.০০ টা, ইভা অক্ষরকে কল করে বলল অভ্রের কোন খোজ নেই। সকালের দিকে মোবাইলে রিং হয়েছিলো কিন্তু এখন আর কল ঢুকছে না বলছে মোবাইল বন্ধ। ধুর ইভা এত টেনশান করো নাতো, হারামী মনে হই ঘুমাচ্ছে তুমি ঘন্টাখানেক পরে কল দাও দেখবে ঠিকই মোবাইল খোলা। আর কি হয় আমাকে জানিও। আচ্ছা ঠিক আছে ঘন্টাখানেক পর আমি জানাচ্ছি। ইভা আবার কল করল দুপুর ১ টা বাজে আর কল করেই বলল অক্ষর প্লীজ তাড়াতাড়ি অভ্রের বাসায় এসো, প্লীজ। অক্ষর বুজল না কি হয়েছে তাই সে দ্রুত চলে গেলো, গিয়ে দেখল ইভা দরজার সামনে দারিয়ে। অক্ষর আসতেই ইভা বলে উটল, আমি এতক্ষণ যাবত কলিং বেল দিচ্ছি কিন্তু অভ্র দরজা খুলছে না। অক্ষর কাছে এসে বলল এই অভ্র দরজা খোল, কি হইলো তোর? কিন্তু না অভ্র দরজা খুলছে না, এখন অক্ষরের চিন্তা হওয়া শুরু হল অভ্রের কিছু হই নাইতো আবার। অক্ষর আশেপাশের মানুষদের নিয়ে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকল, ভিতরে ঢুকে দেখল গতকাল যেমন রেখে গিয়েছে আজ ঠিক তেমনি আছে শুধু ব্যবধান এটাই গতকাল অভ্র ছিল আর আজ অভ্র নেই। অক্ষর সাথে সাথে পুলিশকে কল করলো। পুলিশ কিছুক্ষণ পরই আসলো, এতকিছু দেখে ইভা আর সহ্য আর করতে না পারে সেন্সলেস হয়ে গেলো। অক্ষর পুলিশকে রেখেই ইভাকে নিয়ে হাসপাতাল গেলো। ইভার সেন্স ফিরে আসলে অক্ষর আবার থানায় আসলো অভ্রের কোন খোজ পাওয়া গেলো কিনা জানতে? কিন্তু না থানায় গিয়েও অক্ষরকে হতাশ হতে হই অভ্রের কোন খোজ নেই যেন একটা মানুষ হওয়াই মিলিয়ে গেছে, তবু পুলিশ বলছে আমরা আমদের চেষ্টা করছি, আপনারাও একটু আমাদের হেল্প করুন, অক্ষর বলল আচ্ছা বলুন আপনারা কি কি জানতে চান? অভ্র সাহেবের সাথে আপনার পরিচয় কবে থেকে? অভ্র কে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি, ওরা আমাদের পারিবারিক বন্ধু ছিল। আচ্ছা তাহলে আপনি তো খুব ভাল বলতে পারবেন যে, উনার কোন বেক্তিগত শত্রু ছিল কিনা? না অভ্রের বা আমার কাররই বেক্তিগত তেমন শত্রু নেই আর শত্রু থাকলেও এমন কেও নেই যে ওকে কিডন্যাপ করতে পারে তবে গতকাল ওর বাসায় আমি আর ইভা গিয়েছিলাম তখন আমাদের একটা নোট দেখিয়েছিল যেখানে লিখা “৩ দিন সময় ১০ লক্ষ টাকা” এরপর আমরা একসাথে বাহিরে গিয়েছিলাম। ওহ বুজতে পারলাম, আচ্ছা অক্ষর সাহেব অভ্র সাহেবেরতো বাবা মা কেও নাই তাই না? হা অভ্রের বাবা মা কেও নেই। আপনি বলতে পারবেন উনার নামে উনার বাবা মা কি কি রেখে গেছেন? সব বলতে না পারলেও কিছু বলতে পারবো, ব্যাঙ্কে ওর নামে নগদ অনেক টাকা আছে আর একটা ব্যাবসা আছে তবে সেটা ওত বড় না। আচ্ছা ধন্যবাদ অক্ষর সাহেব আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য আর আমরা যদি কিছু জানতে পারি তবে আপনাদের জানিয়ে দেয়া হবে। আচ্ছা ধন্যবাদ ওছি সাহেব প্লীজ একটু দ্রুত খুজে বের করার চেষ্টা করুন। জি জি অবশ্যই আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি আপনি নিশ্চিন্তে বাড়ি যান। এরপর অক্ষর বাড়ি চলে যাই। ঐদিন দিন যাই তারপর দিন যাই কিন্তু ওছি সাহেব আর কোন খোজ দেই না, এদিকে ইভা মানসিকভাবে খুব ভেঙ্গে যাই অক্ষর সাধ্যমতো যা যা করা যাই তার সবটাই করলো। ২ দিন পরে থানা থেকে খবর আসে একটা ডেড বডি পাওয়া গিয়েছে এবং ওদের গিয়ে দেখে আসতে বলা হয়েছে কেননা লাশের পকেটে যে মোবাইল ছিল সেটা নাকি অভ্রের। অক্ষরের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে ওর বন্ধু মারা যেতে পারে, তবু অক্ষর থানায় গেলো। ওকে যে বডিটা দেখানো হল, ওটার মুখে প্রচণ্ড মারের দাগ শরীরে নানা স্থানে কাটা। ওকে বলা হল আপনি কি কোন চিহ্নের কথা বলতে পারবেন যেটা অভ্র সাহেবের শরীরে বা অন্যকথাও ছিল। না ওরকম কোন চিহ্নের কথা মনে পরছে না তবে ওর ডান বা বাম মাড়িতে একটা নকল দাত আছে। অক্ষর সাহেব লাশের মুখে অনেক দাঁতই নেই, ঠিক আছে আপনি আমাদের সাথে আসুন দেখি পোস্টমর্টেম রিপোর্টে কি আসে? লাশটার পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও ঠিক এক কথা আসলো, হা নিহত বেক্তির বাম মাড়িতে একটা নকল দাত ছিল যেটা এই মারের কারণে মুখ থেকে খুলে পরে গিয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্টের কথা অক্ষরকে জানানো হয়, অক্ষর এটা শুনে কান্নাই ভেঙ্গে পরে তবে সে দ্রুত নিজেকে সামলে নেই কেননা এখন ও যদি ভেঙ্গে পরে তাহলে ইভাকে সামলাবে কে? এরপর কত কিছু, অভ্র মারা যাবার ১ বছর পর ইভার সাথে অক্ষরের বিয়ে হয়ে যাই কেননা এই ১ টা বছর অক্ষর ইভার সাথে ছায়ার মতো ছিল তারপরতো যথানিয়মে আজকের এই অবস্থা।

(৯) জেমসের বাড়ি এ শহরেই, টেমসের তীরে তার ছোট একটা দোকান আছে। এই দোকান থেকেই তার রুটি রুজি আয় হই। পরন্ত বিকেল এখন জেমসের এখানে কাস্টমারে পরিপূর্ণ তবু জেমস দূর থেকে ওই আওলা ঝাওলা চুলের বড় বড় দাড়িওয়ালা মানুষটাকে দেখেই চিনতে পারলো ও তার দোকানের নিয়মিত কাস্টমার। তবে লোকটা খুব অদ্ভুত প্রায়ই এই টেমসের তীরে আসে কিন্তু কারো সাথে কোন কথা বলবে না শুধু কিছুক্ষণ গান গেয়ে চলে যাবে আবার এর জন্য কোন পয়সাও নেই না। এইতো আওলা ঝাওলা চুলের লোকটা তার দোকান থেকে একটা বেয়ারের বোতল কিনল এখন সে গান গাইবে আর প্রায় ওই একটা গানই গাই আজ যে করে হোক ওর নামটা জানতে হবেই। এসব ভাবতে ভাবতে জেমসের ডাক পড়ল দোকানে ভিড় বেড়ে গেছে কিছুক্ষণ পর যখন ওই লোকটার কথা মনে পড়ল তখন মাথা তুলে দেখল লোকটা আর নাই আজকেও আর লোকটার নাম জানা হল না। আচ্ছা থাক পরে আরেকদিন নাহয় জেনে নেওয়া যাবে। তবে লোকটার গান খুব সুন্দর গাই কি যেন গানটা হা হা মনে পরেছে,

তুমি যে আছ তাই আমি পথে হেটে যাই

হেটে হেটে বহুদুর বহুদুরে যেতে চাই... ... ...





বি.দ্র. আমি নিয়মিত লেখক নই কিংবা এর আগে কখনো লিখার চেষ্টাও করিনি, নতুন লিখালিখি শুরু করলাম। তাই যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। আর উৎসর্গের কথা যদি বলতে হই তাহলে বলবো কিছু লিখা থাকে কখনো একজন ব্যতিত কাওকে উৎসর্গ করা যাই না আর যখন তাকে করাই যাচ্ছে না তখন সবাইকেই উৎসর্গ করেদি এটাই ভাল। এই লিখাটা আপনাদের সকলকেই উৎসর্গ করলাম। কষ্ট করে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.