নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অর্ণব

কাল মানব

কাল মানব › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৈশাচিকতা(১ম পর্ব)

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১৩

ইন্টার ১ম বর্ষের কিছুই পড়া হয়নি জাহিদের।এরই মধ্যে ২য় বর্ষের বইয়ের চাপ।নিশ্চিত রেজাল্ট খারাপ হবে এইচ.এস.সি তে।আর রেজাল্ট খারাপ হলেই তাকে চলে যেতে হবে সিঙ্গাপুরে তার চাচার কাছে।তৎক্ষনাত ভেবে নিলো সে,'না এভাবে আর পারা যায়না'।বাবাকে অনেক কষ্টে রাজি করালো সে আবার ১ম বর্ষে ভর্তি হবে।বাবা প্রথমে কিছুতেই মানছিলনা।কিন্তু মা-মরা ছেলে তাই বাবা এতে জোর করলো না।এইবার জাহিদ একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেললো।সে ঢাকার বাইরের কলেজে পড়বে। আব্বু এইবারেও বাধ সাধল।কিন্তু একমাত্র ছেলে তাই কথা ফেলতে পারেনি।শেষে কুষ্টিয়ার একটা নামকরা কলেজে পড়ার সুযোগ হলো।যাওয়ার সময় খেয়াল করেছিলো আব্বুর চোখে পানি।আব্বুকে বোঝালো সে প্রতি ছুটিতে এখানে আসবে।আব্বুই তো তার সব।মা,বাবা,বন্ধু সব।
কলেজের হোস্টেলে সিট পেলেও হোস্টেলের অবস্থা খুবই সঙ্গীন।এখানে বড়জোর একমাস থাকলো।ভাল না লাগায় হোস্টেল ছেড়ে দিয়ে আলাদা বাসা ভাড়া নিতে চাইলো।রুমমেটদের এই ব্যাপারটা সম্পর্কে জানালো।রুমমেট হাবিব,সাজু রাজি হলো বাড়ি ভাড়া করে থাকতে।এখানে মফস্বল পরিবেশ,তাই বাড়ি ভাড়া পানির দামের মত।নতুন বাসাটা তাদের সবারই অনেক পছন্দ হয়েছে।কলেজ থেকে একটু দূরে তবে নদীর পাড়ের কাছে।তিনটি কক্ষ,এটাচড বাথরুম আর ডাইনিং ত আছেই।সব মিলিয়ে বাসাটা খুবই আকর্ষনীয়।আর ভাড়াটা অবিশ্বাস্যভাবে কম।যেনো বাংলালিংক রেটে।তাদের বাসা থেকে সূর্যউদয়,গোধূলী,পূর্ণিমার চাদের আস্ফালন,অমাবস্যার রাতের অন্ধকার সবই উপভোগ করা যায়।জানালা খুলে দিলে রাতের ফুরফুরে বাতাস ঘরে হানা দিত।এই বুঝি সব উড়িয়ে নিয়ে যাবে।সব মিলিয়েই বাসাটা সবারই বেশি পছন্দ হলো।প্রথম কয়েকদিন সবকিছু ভালভাবেই চলল।আড্ডা,ঘোরাঘুরি,কলেজ নিয়েই তারা ব্যস্ত থাকতে লাগলো।সবাই মিলে আড্ডা দিতে দিতে বেশি রাত হুয়ে যেত।তবে সেদিনের রাতের বিভীষিকা তাদের জীবন যাত্রা ওলোটপালোট করে দিলো।
২৪ জুন,২০১১(রাত ৩টে ৪০)
প্রচন্ড ভয় পেয়েছে সাজু।এমন ভয় যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।হাত-পা ঠান্ডা, অসাঢ়।শীতল একটা স্রোত মাথার পিছন থেকে শুরু হয়ে মেরুদন্ড বেয়ে নিচে নামছে । হরমোনের কার্যকারিতায় সড়সড় করে খাড়া হয়ে গেছে ঘাড়ের চুলগুলো।হৃৎপিন্ড যেন পাগলা ঘোড়া, লাগামহীন ছুটে চলেছে।খুলে গেছে শরীরের প্রতিটি লোমকুপ । আর সেগুলো দিয়ে ঘাম বেরুচ্ছে অবিরাম। ইতোমধ্যে ভিজিয়ে দিয়েছে শরীরের কাপড়- চোপড়, এমনকি তার পিঠের নিচের বিছানার চাদরও । অথচ ও ভয় পেয়েছে বেশিক্ষণ হয় নি ।ঘুমিয়ে ছিলো ও। ঘুম ভেঙ্গে যায় হঠাৎ করেই।ভাঙ্গার কারণটা অনুমান করতে কষ্ট হয় না মোটেই। ওর ঘরটা থিকথিকে কুয়াশায় ভরা । ঘন ধোয়ার মত সেই কুয়াশা পাক খাচ্ছে, কুন্ডলিত হতে হতে আবার তা ভেঙ্গে ছড়িয়ে যাচ্ছে । হিম ঠাণ্ডায় শরীরের রক্ত পর্যন্ত জমে যাবার জোগাড় । অথচ এখন এরকম হবার কথা নয় । একে তো এখন গ্রীষ্মকাল, তার উপর ঘরের ভিতর কুয়াশার এমন নৃত্যের কথা কে কবে শুনেছে!!
সাজু যখন পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে তখন কিছু একটা হঠাৎই স্থির হয়ে গেল । ঘন কুয়াশার ভিতর লাল লাল আকৃতি ফুটতে শুরু করেছে ।দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সেগুলো
চারিদিকে। বিদ্যুচ্চমকের মত আকৃতির রেখাগুলো পরষ্পরকে জড়িয়ে সংখ্যায় বাড়ছে। সাজুর মনে হল ওগুলোর নিজস্ব চিন্তা-চেতনা আছে ।কিছু একটা করার চেষ্টা করছে ওগুলো।কিছু কিছু রেখা আকারে মোটা
হচ্ছে ,আর বেশির ভাগই সূক্ষ্ম থেকে আরো সূক্ষ্মতর রেখায় বিভক্ত হচ্ছে। হৃৎপিন্ডের স্পন্দনসংখ্যা যদি ভয় নির্নায়ক হত তবে ও এখন তার চরম সীমায় অবস্থান করছে । চিৎকার করার চেষ্টা করে বিফল হল ও। হাত-পা কেউ যেন আঠা দিয়ে বিছানার সাথে সেটে রেখেছে ।আবার সামনে তাকালো ও । অজস্র রেখার জটিল বিন্যাস এবার কিছুটা বোধগম্য হলো ওর। মানুষের শরীরের শিরা-উপশিরা, ধমনীর সাথে বড় বেশি মিল ওগুলোর। আর চতুর্দিকে অবস্থান করা কুয়াশা যেন ত্বকের কাজ করছে। এখন ওর সামনে একটা অস্পষ্ট মনুষ্যাবয়ব ।হঠাৎ সাজু তার রুম লাগোয়া বাথরুম থেকে পানি পড়ার আওয়াজ শুনতে পেল। শব্দ শুনেই বুঝতে পারল বেসিন সহ বাথরুমের সমস্ত ট্যাপ হতে অঝোরে পানি পড়তে শুরু করেছে ।কিন্তু তার স্পষ্ট মনে আছে, সারা দিন ইলেক্ট্রিসিটি ছিল না তাই ট্যাংকে পানি নেই একটুও। তাহলে এত পানি আসছে কোত্থেকে!!
ইতোমধ্যেই পানি বাথরুম ছাপিয়ে রুমের ভিতর ঢুকে পড়েছে। দ্রুত বাড়ছে পানির উচ্চতা। এমন তো হবার কথা নয়।ভয়ে আধমরা হয়ে তৌফিক দেখল হাটুপানি হয়ে গেছে রুমের ভিতর ।হঠাৎ করেই প্রচন্ড শীতে কাঁপতে শুরু করল সে । দ্রুতই পানি যখন বিছানা স্পর্শ করল , তখনই সাজু বুঝতে পারল তার সময় সমাগত । কিন্তু কেন এমন হচ্ছে ?
বাকি বন্ধুদের কথা মনে পড়ল।পাশের রুমেই নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে তারা । ঘুনাক্ষরেও টের পাচ্ছে না সাজু নিজের রুমের ভিতরই মরতে বসেছে । শেষ চেষ্টা করল সে পানি তার শরীর স্পর্শ করতে । কিন্তু একচুলও
নড়তে না পেরে হতাশায় কেঁদে ফেলল ।এতক্ষণে আবার কুয়াশা মোড়া মনুষ্যমুর্তির দিকে চোখ ফেরাল সাজু । তীব্র আতংকে ওটার কথা মনেই ছিল না। দেখল আগের জায়গাতেই চুপচাপ ভেসে আছে সেটা ।যেন ধৈর্য্য ধরে উপভোগ করছে তার আতংক । সাজুর মনে হল এসব কিছুর পিছনে একটা কারন অবশ্যই আছে। কিন্তু হাজার চেষ্টায়ও মনে করতে পারল না । ঠিক তখনই মুর্তিটার মুখমন্ডল পরিষ্কার হতে শুরু করল, যেন ওর মনের অবস্থা বুঝতে পেরেই ।
সহসাই সে বুঝে ফেলল এসবের পিছনে কি কারণ রয়েছে । কিন্তু আর কিছুই করার নেই নিয়তিকে বরন করে নেয়া ছাড়া। পানি নাক ছুয়ে ফেলেছে ইতোমধ্যে । মাথা জ্বালা করছে ।পানিতে সম্পূর্ন ডুবে যাবার আগে লক্ষ্য করল ছায়ামুর্তিটা আর নেই, তার জায়গায় পরিচিত এক রক্ত-মাংসের এক মানবশরীর । কিন্তু মুখটা কি বীভৎস !!গাঢ় অন্ধকার গিলে ফেলবার আগে সাজু খ্যানখ্যানে একটা হাসির আওয়াজ পেল । বড়ই পৈশাচিক সে আওয়াজ ।সে বুঝতে পারছে তার সময় শেষ।
পরেরদিন সকালে হাবিবের চিতকারে সবার ঘুম ভাঙ্গলো।সবাই তার চিতকারে রুমে এসে দেখে সাজু বিছানায় পড়ে আছে এককোনে।মুখটা বীভৎস ভাবে হা করা।চেহারায় স্পস্ট ভয়ের ছাপ।চোখদুটো যেনো ঠিকরে বের হয়ে এসেছে।তারা খেয়াল করলো মেঝেটা পুরোই ভেজা,সাজুর শরীর এবং বিছানাটাও পর্যন্ত ভেজা।হাবিব এ্যাম্বুলেন্সকে ফোন করে আসতে বললো।তারা বুঝতে পারছে না কি করবে তারা।হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার জানালেন,তীব্র আতংকে হার্ট এটাক হয়েছে । তবে সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে ওর ফুসফুসে পানি পাওয়া গেছে।হাবিব আর জাহিদ অবাক হয়ে একে অপরের মুখ চাওাচাওয়ি করছে।“ কি বলছেন ?, ’’ অবাক হয়ে বলল হাবিব । “ওকে পাওয়া গেল বিছানায় , ফুসফুসে পানি আসবে কোত্থেকে ? ’’“ সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।"।জবাবে ডাক্তার বললেন। ডাক্তার তাদেরকে সাজুর মা-বাবকে ফোন করে জানাতে বললেন।জাহিদ ফোন করে সাজুর বাবা-মাকে এ ব্যাপারে জানালো।এ কথা শোনার পর থেকে নাকি সাজুর মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।পরেরদিন সাজুর বাবা এলেন ছেলের লাশ নিয়ে যেতে।সাজুর মার শরীর টা নাকি বেশি ভালো নেই।সাজুদের বাড়ি দিনাজপুর।জাহিদ সাজুর বাবার সাথে গেলো তাদের বাড়ি।বন্ধুকে কবরে নামানোর সময় পাশে ছিলো ও ।কান্নায় বুক ফেটে আসছিলো ওর।হয়তো এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কস্ট।নিজের হাতে নিজেরই বন্ধুর লাশ কবরে শোয়ানো।কিন্তু তার এই কস্টের মাঝে এক অজানা ভয় তাকে আকড়ে ধরেছে। সাজুর লাশ কবরে শোয়ানোর সময় হঠাৎ এক অদ্ভুত অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ।মনে হয় কবরের অন্ধকারটা অনেক বেশী গাঢ় হয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে । আতংকে পিছিয়ে আসে সে ওখান থেকে ।
.
.
চলবে...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.